কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

তমাল রায়



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫



গুড্ডু আনসারি বাড়ি ফিরছে...

কাহে কাহে মুঝে জংলী কাহে...
বাড়িটা,বাড়ি মানে একটা খোলার চাল, মাটি নিকনো চাতাল, বাঁ দিকে কলাগাছের নীচে, চট আর কালো প্লাস্টিকে মোড়া ওপেন এয়ার বাথরুম, পায়খানা আরও একটু দূরে। তিন পরিবারের সাথে ভাগ করতে হয়! পঞ্চায়েত বানিয়ে দিয়েছিলো ২০১১সালে। সেই যেবার বুদ্ধ ভটচাজ শহীদ হলেন! তবু তো বাড়ি...
কাহে কাহে মুঝে জংলী কাহে...
বাড়িটা শাম্মী কাপুরের মত নাচছে। গুড্ডু ফিরছে আড়াইমাস পর...ইয়াহু...

তেরে মেরে মিলন কেয়া ইয়ে রহনা...
২৪মার্চ রাত আটটায় লোকটা যখন টিভিতে ভাষণ দিলো, গুড্ডু, পবন, নিত্য, রতনরা তখন মার্বেল বসানোর কাজ শেষ করে, নির্মীয়মান হোটেলটার নীচে বসে রুটি সেঁকছিলো। সাথে আলু চোখাও। রতন বলছিলো অখিলেশ শুনেছে কাল থেকে লকডাউন। সেটা খায় না মাথায় দেয়? ঘুমিয়ে যায় ওরা। ঘুমের মধ্যে ঢুঁ মেরেছিলো গুড্ডুর হাওড়া জেলার ডোমজুড় থেকে ২০কিমি ভেতরের নিশিকান্তপুরের এক চিলতে বাড়ি। বাড়ি মানে একটা খোলার চালের নীচে ঘর,সামনে মাটি নিকনো চাতাল,বাঁদিকে কলাগাছের নীচে বাথরুম...
বাড়ি গুড্ডুর দিকে হাত বাড়িয়ে গাইছিলো,তেরে মেরে মিলন ক্যায় ইয়ে রহেনা...

উসকি আঁখো মে বাতে,বাতো মে যাদু...
দশ বাহানে করকে লেগায়ে দিল
ট্রেনটার নাম শ্রমিক ইস্পেশাল না হয়ে ফেভিকল স্পেশাল হলে ভালো হত। সেই  যে ট্রাকটরটা যাচ্ছে,তার বনেটে,গায়ে,ছাদে,গেটে সর্বত্র থিকথিক করছে লোক। কেউ পড়ে যাচ্ছেনা! ফেভিকল দিয়ে আঁটা! গরীব মানুষেরও ফেভিকল আছে,নইলে এই কামরায় তিনশো লোক আঁটে কি করে! শ্বাস নেওয়া যায় না,বাথরুম করা যায় না,খাবার নেই,পানি নেই...তবু ফিরছে... গত আড়াই মাস একবেলা খাবার জুটেছে, জোটেওনি! তাতে কি! আরতো এক দিন বড়জোর। তারপর বাড়ি...বাড়ি মানে একটা খোলার চালের নীচে একটা ঘর,সামনে মাটি নিকনো চাতাল, বাঁদিকে কলাগাছের নীচে বাথরুম...
উসকি আঁখো মে বাতে,বাতো মে যাদু...
দশ বাহানে করকে লেগায়ে দিল
গুড্ডুকে হাতছানি দিচ্ছে বাড়ি, ওর বৌ আয়েশা দু বছরের কন্যা গুড়িয়া...
পাটনা জাংশন পার হলো। তিনদিন ট্রেনেই...

আয়া হু আজ মে
লেকে যাউঙ্গা দিল তেরা
রোকে কহি মুঝে,তকে কহি মুঝে
দুঙ্গা উসে জাহাঁ সে মিতা
মুহ কালা মুকাবলা 
লায়লা ওহো লায়লা
মুকাবলা সুভান আল্লা লায়লা
ওহো লায়লা! 

মারপিট হচ্ছিলো আসানসোল পার হবার সময়! কিছুনা,ওই খাবার,পানি নিয়ে... কারা যেন গুড্ডুকে বেধড়ক মেরেছে...
রক্তবমি করছিলো গুড্ডু। বাড়ি ডাকছে,আয়েশা ডাকছে, গুড়িয়াও...শ্বাস দ্রুত হয়ে এসেছিলো,চোখ জুড়ে ঘুম...এবার শ্বাস ধীর হয়ে আসছে...
ট্রেন চলছে হাওড়ার দিকে...বাড়ি গাইছে...
আয়া হু আজ মে
লেকে যাউঙ্গা দিল তেরা
রোকে কহি মুঝে,তকে কহি মুঝে
দুঙ্গা উসে জাহাঁ সে মিতা
মুহ কালা মুকাবলা 
লায়লা ওহো লায়লা
মুকাবলা সুভান আল্লা লায়লা
ওহো লায়লা! 

গুড্ডু একটু আগেও মুকাবলা করছিলো বাতাসের সাথে...
ট্রেন আর কিছু সময় পর হাওড়া ঢুকবে,সেখান থেকে বাস ধরে ডোমজুড়,তারপর ২০কিমি,নিশিকান্তপুর...
গুড্ডু বাড়ি ফিরছে...গুড্ডু নয়,গুড্ডুর শরীরটা ফিরছে। বাড়ি! বাড়ি মানে, একটা খোলার চালের নীচে একটা ঘর,সামনে মাটি নিকনো চাতাল,বাঁদিকে কলাগাছের নীচে বাথরুম...


6 কমেন্টস্:

  1. ...
    নির্মম চিত্র।
    শ্রাবণী

    উত্তরমুছুন
  2. অসামান্য ও নিষ্ঠুর সময়ের এক বাস্তব চিত্র। চমৎকার ভাবে ফিল্মি গানকে উপাদান করে নির্মম সময়ের দলিল।

    উত্তরমুছুন
  3. অসামান্য ও নিষ্ঠুর সময়ের এক বাস্তব চিত্র। চমৎকার ভাবে ফিল্মি গানকে উপাদান করে নির্মম সময়ের দলিল।

    উত্তরমুছুন
  4. অসামান্য ও নিষ্ঠুর সময়ের এক বাস্তব চিত্র। চমৎকার ভাবে ফিল্মি গানকে উপাদান করে নির্মম সময়ের দলিল।

    উত্তরমুছুন
  5. পড়লাম...এতো তীব্র লেখায় ঠিক মন্তব্য করা উচিত নয়....শুধু দুটো কথা মনে হল...প্রথমটায় এই যে বাড়ীর অনুসঙ্গ বার বার ব্যবহার হয়েছে লেখাটায় লেখাটাকে বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে।লেখাকেও তো শ্বাস নিতে হয়।পাঠকের অনুভবে সেই শ্বাস থেকে যায়।আর দ্বিতীয়ত মনে হল,শেষ প্যারাটা না থাকলেও চলত...যেহেতু পরিণতি আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল....সব মিলিয়ে কষ্টটা আমার সাথে মিশে গিয়েছে তমাল

    উত্তরমুছুন
  6. পড়লাম...এতো তীব্র লেখায় ঠিক মন্তব্য করা উচিত নয়....শুধু দুটো কথা মনে হল...প্রথমটায় এই যে বাড়ীর অনুসঙ্গ বার বার ব্যবহার হয়েছে লেখাটায় লেখাটাকে বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে।লেখাকেও তো শ্বাস নিতে হয়।পাঠকের অনুভবে সেই শ্বাস থেকে যায়।আর দ্বিতীয়ত মনে হল,শেষ প্যারাটা না থাকলেও চলত...যেহেতু পরিণতি আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল....সব মিলিয়ে কষ্টটা আমার সাথে মিশে গিয়েছে তমাল

    উত্তরমুছুন