কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০

শুক্তি ঘোষ



কবিতা 



নিরুপায়

হৃদয়পুরে নির্বাসন,
আঘাত ভয়ে কুঁকড়ে আছি --
কোথায় পাতি তোর আসন?

বৃষ্টি হয়ে পড়ছি ঝরে,
গ্লানির মেঘ ঢাকছে চাঁদ --
মাটির বুকে ঢেউ উঠেছে,
সর্বনাশের সমুৎপাত!

এই অবেলায় কেমন করে
কোন কমলে আসন পাতি,
সাঁঝ ঘনিয়ে সূর্য ডোবে
কোন পিদিমে জ্বালব বাতি?

তুই কি রে সেই হারিয়ে যাওয়া
বৃষ্টিভেজা মৌ-সুবাস?
তুই কি আমার একলা দেখা
অনিদ রাতের কাস্তে চাঁদ?

তুই কি আমার মন উচাটন
একলা দুপুর, গাঙশালিক --
তুই কি আমার শিউলি ঝরা,
শিশির ছেঁচা ভোর মানিক!

কোথায় যে তোর আসন পাতি,
হৃদয়পুরে নির্বাসন,
ভয়ের ছায়ায় চোখ ঢেকেছি --
ঢাকির বোলে বিসর্জন।

অন্ধকারের স্তূপ জমছে,
টুকরো কাচে কাটছে পা --
বন্ধ কবাট, আনাচ কানাচ
ঊর্ণনাভের আস্তানা।

হৃদয়হীনের ধারাপাতে
বেসুর বীণায় মৌন রই --
ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনায়
জ্বালব আলো, আগুন কই?

এই আঁধারে, বল তবে তুই,
কি করে তোর আসন পাতি?
শ্যাওলা ধরা মন মুকুলে
রাখ তবে পা, সর্বনাশী।                                                                      


একটি মেয়ের গল্প

আদিগন্ত সুফলা প্রান্তর --
সুবর্ণরেখার বাঁকে
ঘন আখ খেতে রোদ,
ছায়া মেঘ, গাঢ় নির্যাস;
আলপথে সাদা-কালো
ছাগলছানার খুরে
        ছুট! ছুট!
কিশোরী সময়।

কচি কচি দুই পায়ে
হেঁটে যাওয়া মাইল, মাইল --
দু’হাতে আঁকড়ে ধরে
শ্লেট আর খড়ির শোলোক;
বাদামী চুলের ফাঁকে
খঞ্জনা দুই চোখ নাচে --
নেচে চলে মধুমতী
        মৌমাছি ইচ্ছের ডানা।

একদিন দুই পায়ে
রক্ত জমে গিয়েছিল লাল,
বসন্তের উড়ো চিঠি
একদিন লিখেছে প্রলাপ --
সংসারের কত দায়
ছিল ওই কচি দুই কাঁধে,
তবুও ঘূর্ণি মেয়ে
        নেচে গেছে তা থৈ, তা থৈ!

তারপর কতদিন,
কেটে গেছে অযুত, নিযুত
কত পল, দিবস শর্বরী।
শ্যামভূমি জুড়ে যত
কিশলয় ছিল
তারা কেউ মৃত আজ,
আর কেউ বৃদ্ধদ্রুম
উঠে গেছে আকাশের দিকে;
পৃথিবীর বেড়েছে বয়স,
        সেও আজ জননী, গেহিনী।

নিকোনো উঠোন, তার
একপাশে নিরালা সে কুয়ো --
রোজকার জল তোলা,
কাচাকাচি,
                        স্নান সেরে নেওয়া।

ঝিমঝিমে দুপুরবেলায়
উড়ে আসে পাতা,
গরম হাওয়ার ঘূর্ণি
কানে কানে বলে যায়
        রক্ত আর বারুদের কথা।
মাঝরাতে গোল চাঁদ ওঠে,
তারাদের আলো বেয়ে
রাতপরী নেমে আসে কূপের গভীরে;
        আরো, আরো নীচে,
অথৈ সমুদ্র এক
ফুঁসে চলে, মাথা কোটে ঢেউ --
অশান্ত সময় শুধু
পাক খেয়ে যায় তৃপ্তিহীন,
উপরে সে শান্ত, স্থির,
        সকলেই কূপ বলে জানে।


পিছুটান

গড়ানে পুকুরের ধার ঘেঁষে
কল্‌মিলতা,
কছুরিপানায় বেগ্‌নি ফুলের ডালি --
কচুপাতাটির ঠিক নীচে
বসে আছে সোনাব্যাঙ;
একটা ডাহুক ডাক দিয়ে গেল --
চৈ চৈ করে পুকুর থেকে
উঠে এল পোষা হাঁসের পাল,
শাঁখের ডাকে তুলসীতলায়
        সন্ধ্যা হল।

সোনার থালার মত গোল চাঁদ
রাতের আকাশে,
বাতাসে ম’ ম’ করে
বকুল ফুলের গন্ধ --
ঝিঁ ঝিঁ ডাকে,
শুক্‌নো পাতা পায়ের নীচে
খচমচ করে বাজে;
নিস্তব্ধতায় টৈটম্বুর
উঠনের পাশে
ঝুঁকে পড়ে গন্ধরাজ --
এক ঝলক
ঠান্ডা হাওয়ায় ভর করে
        ভোর ফোটে।

সেখান থেকে অনেক দূরে
কোথাও বেজে চলেছে নগরসঙ্গীত --
সরু মোটা অজস্র চিৎকার
নিরন্তর পাক খায়,
বয়ে চলে যেন গলানো সীসার স্রোত;
বিজ্ঞাপনের নিয়ন আলোয়
ঢেকে যাচ্ছে মুখ --
অবান্তর ধূসর আকাশের গায়ে
আবছা চাঁদের দাগ
        ক্ষতচিহ্নের মত
            কেমন যেন পানসে!

আমি অন্ধ দু’হাত বাড়িয়ে দিই,
হাৎরে বেড়াই আমার প্রেম --
তাকে রেখে এসেছি পদ্মপাতায়,
পলাশকলির কঙ্কণে;
লেবুপাতার ঝোপে
জোনাকির মত জ্বলে, নেভে
        আমার প্রাণ।

আমি ফেরার পথ
         খুঁজে পাই না!

       

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন