গাছের ভ্রূণ
নাড়ী ছিঁড়ে
শেকড় পড়ে থাকে।
শেকড় আর বীজ মাটিতে পুঁতলে গাছের গন্ধে মম
করে আকাশ। অন্তত এ কথাই বোঝায় সে নিজেকে।
ওরা বলল বীজটাকে পুঁতে ফেলেছে মাটির গভীরে। এতদিন মিষ্টিটা ছিল তার বুকের ভেতর। নরম
ওমে ভরে থাকতো দুধের ফোয়ারা। ছোট্ট তালু নরম ছুঁয়ে থাকত শরীর। জানালার বাইরে
কয়েকটা ছাতারের কিচিরমিচির। নাভির
চারপাশে হাত বুলিয়ে বোঝে শেকড় শুকিয়ে গেলেও টান থেকে যায়। সেই টানের বিরুদ্ধে তারা
ছিঁড়ে নিয়ে গেছে ছোট্ট শরীরটাকে। বলল ওটা আসলে শরীর নয়, বীজ। কিছু বীজ আছে যে জন্ম
থেকেই শরীর ছুঁয়ে থাকতে চায় না। পছন্দ করে নির্জনতা, একাকীত্ব।
তবুও টান থেকে যায় মায়ের শরীরে, ঘুমে। স্নেহে বুক টনটন করে ওঠে। পাগলের মতো
ঘুরে বেড়ায়। আগাছার ভেতর খুঁজে বের করে বীজের শরীর। তার নিজের ভেতরেই ওর জন্ম, অন্ধকারে শরীর
খুঁড়ে খাবার নিয়েছে। জানে বীজ একদিন মহীরুহ হবে। এখন ছায়ার পাশে উঁচু একটু মাটি। সে
মাটির পাশে বসে। বাবুয়া রে! মাটির ওপর হাত বোলায়। কতদিন অনাদরে এককোণে পড়ে ছিল। সে
আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়। আর একটা চাতক অসহায় ডেকে ওঠে, জল দাও।
জল অন্তঃসলিলা স্নেহ দেয় বীজের শরীরে। এই শুকনো মাটির মধ্যে কোনো নদী নেই। সে
ব্লাউজ খুলে ফেলে। ভিজে দুধের গন্ধে চাতকের ডাক ফুঁপিয়ে কান্নার মতো কমে আসে, থেমে
যায়। মাটি সাদা হয়। মাটি সবটুকু দুধ খেয়ে ফেলে। তৃপ্তির শব্দ ওঠে।
সে রোজ নজর রাখে। মাটি, আগাছা, চাতকের ডাক। যত্ন করে, দুধ ঢালে। বীজ পড়ে থাকে
একাকী নির্জনে। খা, বাবুয়া খা। না খেলে বড় হবি কি করে! গাছ হতে হবে একদিন।
মাটি চুপচাপ শোনে সেই সব আর্তনাদ। মাটি শান্ত থাকে। জন্মের গভীর দাগ মাটি এমনি
করে ভুলে যেতে পারে? এতো এতো দুধ খাবার পর! দুধ শেষ হয়ে আসে। শরীরের টুকরোটুকু
পেটের গভীরে রক্ত খেয়ে বড় হয়ে উঠেছে। ছেঁড়া নাড়ী যদি খুঁজে পাওয়া যেত! নিঃশব্দে
খাবারের কণা পৌঁছে যেত মাটির গভীরে। ভ্রূণ বড় হতো, গাছ হয়ে উঠত একদিন। মাটিটাকে
কোলের কাছে রেখে সে আধশোয়া হয়, ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে হাতের শিরা।
হাত থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত খাবার বয়ে নিয়ে যায় মাটির গভীরে, বীজটার মুখে।
Punorjonmo
উত্তরমুছুনPunorjonmo
উত্তরমুছুন