আধ-গলা এক এক টাকার কয়েন
সব রকমের নোট পাওয়া যায়। দোল খেলা নোট, পেনের কালি চোবানো নোট, আঠা-জোড়া নোট, ইত্যাদি
ইত্যাদি। কিন্তু তা বলে গলা কয়েন? ইয়েস স্যার।
উয়ো ভি মিলতা হ্যায়!
মৃত্যুঞ্জয়কে আধ-গলা একটা এক টাকার কয়েন কেউ গছিয়ে দিয়েছিল।
নেওয়ার সময় খেয়াল করেনি। সেদিন জেরক্সের এক টাকা দিতে গিয়ে চোখে পড়লো। ধাতুর
শরীরের গলনচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক... সংখ্যাটা। কেমন নিবির্কার, নির্লিপ্ত। বুঝতেও পারছে না তার আর কোনো দাম নেই। দাম যা
ছিল,
গলে গেছে। ফেলে দিতেই পারতো কিন্তু কেন জানি না মৃত্যুঞ্জয়
ফেললো না কয়েনটা। ওয়ালেটে ঢুকিয়ে নিলো। অন্যান্য কয়েনের মধ্যে মিশে গেলো সেটা।
ওয়ালেট ঝাঁকালে সবকটা কয়েন মিলে যে কুচকাওয়াজ করে উঠলো, সেখানে কিন্তু জীবিত আর মৃত কয়েনের ফারাক বোঝা দায়। গলে
গিয়ে বেফালতু হয়ে যাওয়া এক টাকার কয়েন শব্দ করার বেলায় তার জীবিত বন্ধুদেরই মতো।
মরে গেছে বলে কি শব্দ করবে না নাকি? মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হলো ঐ গলেপচে ওঠা এক টাকার কয়েনটাই বাকি কয়েনগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে। মরা টাকাটা না থাকলে
কি আর বোঝা যেত অন্য কয়েনগুলোর বেঁচে থাকার দাম?
ক্রিমেটোরিয়ামের কাছে নতুন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছিল
গঙ্গার ধারে। দাম বেশ ঠিকঠাক। ইন ফ্যাক্ট অন দ্য লোয়ার সাইড। পরে বোঝা গেল কেন, যখন মৃতদেহের ছাই এসে যখন তখন থালার খাবারে ভাগ বসাতে
লাগলো। বারান্দায় দুলন্ত বাচ্চা মেয়েটার চোখে, বসার ঘরের কালো কফির ভেতর, ফুলদানির লাল গোলাপে,
অ্যাকোয়ারিয়ামের জলের ভেতর মাছের
খোলা হাঁ-মুখের আশেপাশে - সর্বত্র এসে জমা
হতে লাগলো মৃতের ছাই। মরে গেছে বলে কি জমা হবে না নাকি? বাসিন্দারা তিতিবিরক্ত হয়ে লোকাল কাউন্সিলারের কাছে আর্জি
জানাতে গেলো। তিনি এই বিদঘুটে সমস্যা শুনে
কনফিউজড হয়ে বললেন, ‘এতদিন তো
জীবিত লোকেদের সজুত করতাম! এবারে মড়াদেরও
ঠাণ্ডা করতে হবে দেখছি! কী গেরো মাইরি!’
মৃত্যুঞ্জয়ের এক বন্ধু এই গল্পটা করেছিল ওকে। প্রোমোটারদের
কেচ্ছা করতে বসে। গল্পটা শুনে কেন জানি না ওর ওয়ালেটের ভেতরকার মরা কয়েনের কথা মনে
পড়েছিল।
ধাতু পুড়লে কি আর ছাই হয়? সেসব তো প্রাণের নিয়তি। ধাতুর নিয়তি গলনে। মৃত্যুঞ্জয় মনে মনে একটা দৃশ্য
ভাবার চেষ্টা করছিল। একটা অ্যাপার্টমেন্ট যার
প্রতিটা ঘর গলে যাওয়া অজস্র কয়েনে ভরে উঠছে।
GST হওয়ার পর বাজারে প্রচুর খুচরো পয়সা আমদানি হয়েছে। চেঞ্জের
আর টানাটানি নেই।
গল্প শোনা শেষ হলে মৃত্যুঞ্জয়
ঠিক করলো আধ-গলা এক টাকার কয়েনটার সৎকার করে আসবে।
খুব ভালো লাগলো। সঠিক ঝুরোগল্প। গল্পের থিম বেশ অন্যরকম।
উত্তরমুছুন