ছাতিমতলা
প্রথমে
আট দশ লাইন লেখার পরই আমি ব্যাকস্পেস ব্যবহার করি। আবার আট দশ লাইন লেখার পর আর
একটা ক্ষুদ্র ব্যাকস্পেস। শূন্যের ভিতরে শূন্যকে আর দেখতে ইচ্ছে করে না তেমন। জানালায়
রোদ এসে আয়নার কাচে নিজের মুখ দেখে চলে যায়। বয়সের ছাপ মুখে পড়েনি, চুল এখনও কিছু
অবশিষ্ট আছে মাথায়, গালের কাছে ছোট তিলটাও হারিয়ে যায়নি। দরজায় বেল পড়তেই দৌড়ে আসে
চিঠি, ওরাই এখন দরজা খোলে। খামের
ভিতরে এখনও কিছু প্রকাশকের নাম ফোন নম্বর লিখে রেখেছি। লাল চায়ে চুমুক দিতে গেলেই
দেখি, চিনিতে পিঁপড়ে ভাসছে। ফেলে দিই। পিঁপড়ে
মরে না, মাটিতে নেমে আবার হাঁটতে শুরু করে কোনো সুগারকেনের রাজ্যে। আমার ভ্রু থেকে
এখন রোজ একটা দুটো করে চুল পড়ে যায়, যেমনটা গাছ থেকে পড়ে পড়ার ছেলে। হাতের বই
উল্টায়, মাটিতে অঙ্ক ও গ্রামারের উষ্ণতায়
ঘুমিয়ে যায় কেন্নো। ওরাই ভালো, ভয় পেলে নিজেকে জড়িয়ে ধরে। কাউকে জড়াতে যায় না। বরং
আমিই জড়িয়ে ফেলি তোমায় সব কিছুতে। রাতের অন্ধকারে আট দশ লাইন লিখে তোমাকে দায়ি
করি, ব্যাকস্পেস চলে... লম্বা
ব্যাকস্পেসের আওয়াজে দেয়ালের ঘুম ভেঙে যায়।
পলেস্তরা খসে, পাড়াপ্রতিবেশী রাত বিরেতে এসে খিস্তি শোনায়— কী দাদা শান্তিতে একটু ঘুমোতে দেবেন না? আমি বলি না
কাউকে আর কিছু। শুধু প্রতিনিয়ত আট দশ লাইন
লিখি, আর ব্যাকস্পেস চালাই, যেভাবে মাতালের মাথায় নাপিত কাঁচি চালায়। যদি নাপিতের
ভুলে ঘাড়ের মাংস কিছুটা খুবলে যায়, যদি নাপিতের ভুলে কানের লতিকা কিছুটা উড়ে যায়, মাতাল কোনোদিন কিছু প্রশ্ন করে না নাপিতকে। সে জানে কিছু বললেই, নাপিত বলবে, ও
তো আপনার নেশা করতে গিয়ে হয়েছে কাল রাতে! নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না! দেখুন
কোথায় গিয়ে উল্টে পড়েছিলেন...! কিন্তু রাস্তায় পড়ে গেলে কি আর কখনও ঘাড় কাটে? কান
কাটে?
পিছনে ছোট লাল বালতিতে এক বিহারী বালক কাঁচি ধুতে
থাকে। কাঁচির মাঝে মাতালের কান লেগে আছে। বালকটি কানটি নিয়ে নিজের মাথার পাশে
লাগায়। সে বোঝে একটু বড় হলেও কানটা তার সেট করে যাচ্ছে মাথায়। সে ছুটে বেড়িয়ে যায়
সেলুন থেকে। সামনে ছাতিম গাছের নীচে কাবুলমামা জুতো ছাতা সারাতে বসে। ওনাকে বললে
এই কানটাও অনায়াসে লাগিয়ে দিতে পারে তার মাথায়। শুধু একটু লাগবে, কিছুক্ষণ কষ্ট সহ্য করতে পারলেই আর
জীবনে ব্যাকস্পেস কেন, কম্পুটার না কি, তার দিকেও যেতে হবে না। কিন্তু আজ একটা
প্রশ্ন জাগে সেই বালকের মনে। আচ্ছা তার তো বয়স এখন দশ। সে তো কোনোদিন নেশা করেনি। সে
তো কোনোদিন তার বাবাকেও দেখে নি চোখে! তার বাড়ি ঝর্নার ধারে ছিল। চোখ বুজলে মা
বাবার মুখ মনে পড়ে না... কীভাবে সেই
ঝর্নার পাশ থেকে সে এই কলকাতায় এসে জুটল? আর কেই বা কেটে দিল এত ছোট বয়সে তার কান?
ভেবে লাভ নেই বলে সে ছাতিম গাছের নীচে আজ সারাদিন দাঁড়িয়ে।
মনের কথা...দারুন।
উত্তরমুছুন