কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৪

০১) অমিতাভ প্রহরাজ




দেশী বাবু,ইংলিশ মেম


অর্পিতা দাস প্রহরাজের সাথে আমার একটা ক্রিয়াভিত্তিক ভাষা নিয়ে আর্টিকেলের নিচে একটা ইন্টারেস্টিং কথোপকথন হলো।। যেটাকে আলাদা করে তুলে রাখা জরুরী মনে হলো... প্রবন্ধের শুরুতে আমি বলেছিলাম, বাংলা ভাষায় যতটা বিস্তার ও বহুমাত্রায় প্রকাশ করা যায়, তা ইংলিশে সম্ভব নয়। এর কারণ লেখকের নয়, দুই ভাষার চরিত্রগত পার্থক্য। ইংলিশ লোগোসেন্ট্রিক ল্যাংগুয়েজ এবং বাংলা ভার্বসেন্ট্রিক বা ক্রিয়াভিত্তিক ভাষা, যে কোনো ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় শব্দ অর্থের পরিসীমা ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে যেটা লোগোসেন্ট্রিক ল্যাংগুয়েজে সম্ভবপর নয়। অর্পিতা ইংলিশের খুবই মগ্ন ছাত্রী, তাই প্রবন্ধের শুরুতে ইংরেজি ভাষা নিয়ে আমার বলা কথাগুলো তার কাছে ভালো না লাগার জন্ম দিয়েছে... আমি সেজন্য দুঃখিত... হয়তো কোনো ভাষা সম্পর্কে এতটা কর্কশভাবে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা ঠিক নয়। তাই আমি একটা কথা অর্পিতার কাছে এবং অন্য পাঠকদের কাছেও স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি কখনই কোনো ভাষার বিরোধী নয়। কোনো ভাষাকেই ছোট চোখে দেখা যায় না, জুলু বা সোয়াহিলিও নয়। সেখানে অর্ধেক পৃথিবী কথা বলে যে ভাষায়, সাধারণ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে যে ভাষা স্বীকৃত, তাকে আমি কোন্‌ সুমহান জলহস্তী এসে উপস্থিত হলাম যে, ঘটি ডোবে না বিদ্যের লচক মচক দিয়ে তাকে এক্কেবারে নস্যাৎ করে দেব! আমি কি আন্তর্জাতিক মানের পাগল, না ফ্রেঞ্চকাট রামছাগল? তার ওপর যে ভাষায় আমার গুরুদেব (ব্যাপ্টাইজড-এর মতো সাহিত্যজীবনের শুরুতেই যিনি আমাকে একলব্যাইজড করে রেখেছেন আজীবনের মতো) জেমস আগস্টাইন আলোসিয়াস জয়েস মহাশয় কলমকারি করেছেন, সেই ভাষাকে আমি কি করে এক কথায় ঘ্যাচাং করে দিতে পারি?! যে ভাষাতে আমার প্রিয়তম দোস্ত ও দুশমন এবং আমার মতে ভাষা দ্বারা ক্রিয়েটেড পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্রিয়েশানটি ইউলিসিস রয়েছে তাকে ছোট দেখানোর কোনো উদ্দেশ্যই নেই। আমি শুধু পার্থক্যগুলো দেখাতে চেয়েছি যা আমাদের মাতৃভাষার আচার আচরণ বুঝতে অনেকটা সাহায্য করবে। পটচিত্র মায়াবী হয়ে ওঠে, তাকে যে প্রেক্ষাপট ধারণ করে আছে, তার জন্য।
লেখাটি কথোপকথনের রূপটিই বজায় রাখা হয়েছে, কারণ এতে একটি সাহিত্যমতভেদ থেকে উদ্ভূত তর্ক কীরকম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ও নিজস্ব চরিত্র তৈরি করে, তার আভাস পাওয়া যাবে। তো অর্জ করা হলো...

Arpita Das Praharaj boroder majhe ekta chhotto kotha boli... Amitava tui je prothome bolli je English-e 'Noun' er dadagiri chole r Bangla-te 'Verb' er dadagiri...seta kintu thik holo naa... actually, Bangla-te, alike Sanskrit, both Noun & Verb change hoe jae according to grammatical usage...jemon (Bari_house, Bari-te_in the house, Bari-r_of the house). English e eta hoe na...sekhane exta words use korte hoe... (like...'in' 'of' 'by' etc.) etake bole Declension in case of Noun & Conjugation in case of Verb( eg. - korchhi, korlam, korbo, 'kora' verb ta ichchhe moton change hoe jachchhe...English e jeta hoe na)...eta prachin Latin eo same...as Latin & Sanskrit are sister languages...Sanskrit eo achhe na..? Noro, Norong, Norah...(crudely bollam, as ami Sanskrit janina...samanyo Latin jani...tai bollam) English khub simple language...tai language e juktakkhor khub ekta nei...but English is one of those rare languages jatey maximum stock of adjectives achhe...je kono jinish prokash korar exact 'word' English e pawa jae... sob language e pawa jae na... r ekta kotha ekdom amar moner moto bolechhis...Word dekhe tar baba-maa-r porichoy pawa jae...sotyii..je kono word dekhe tar etimology bujhte para jae...eta darun mojar jinish...tar baba, thakurda...thakuma (tini hoyto pasher rajyo theke esechhen...tai ektu alada dialect use koren)...eta darun lagey bujhte... Actualyy language is an 'Audio-visual' medium...ete visual achhe (alphabets /characters)... er ekta sound o achhe (pronunciation)..mojar byapar na?

23 hrs · Like · 4 · Reply

·

জুয়েল মাজহার প্রমিথিউস বাউন্ড

22 hrs · Like · Reply

·

Amitava PraharajArpita Das Praharaj... ইংলিশ লোগোসেন্ট্রিক ল্যাঙ্গুয়েজ, সেখানে ভার্ব নাউন ছাড়া অচল... খুব সহজ একটা জিনিস দিয়ে বলি। বাংলায় বিশেষ্য ছাড়া, বিশেষণ ছাড়া, অব্যয় ছাড়া (যা ইংরেজি কাউন্টারপার্ট প্রিপোজিশান), শুধুমাত্র ভার্ব এবং একমাত্র ভার্ব দিয়েই একটা এক্সপ্রেসান তৈরি করা যায়। ধর একটা বাক্য "হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে এ এ এ এ, হবেই। হতেই হবে।"... তুমুল এক্সপ্রেসিভ বাক্য... ইংরেজি ভাষার ক্ষমতা নেই এই বাক্য তৈরি করার... শুধুমাত্র ভার্ব এবং ভার্বের টেন্স দিয়ে একটা ফুল ফ্লেজেড এক্সপ্রেসান তৈরি করার ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই ইংরেজি ভাষাতে... সেখানে রান রান বললে একটা লোলা আনতে হয় কমপ্লিট করার জন্য... ইংলিশ সাবজেক্ট প্রেডিকেট ছাড়া এক্সপ্রেসান কমপ্লিট করতে পারে না... এই সাবজেক্ট প্রেডিকেট ডিভিসান একটা ভার্বাওকে লিমিটেড করে দেয়, তার চৌহদ্দি হচ্ছে প্রেডিকেট, আর তার মালিক হচ্ছে সাবজেক্ট... "দেখতে দেখতে দেখতে দেখতে দেখতে পেলাম"। এই বাক্যের লিমিটলেসনেস কোনো লোগোসেন্ট্রিক ল্যাংগুয়েজ ক্রিয়েট করতে পারে না। বিজ্ঞানের নিয়মেই পারে না...। আর ল্যাটিন আর সংস্কৃত সিস্টার ল্যাংগুয়েজ, সংস্কৃত থেকে বাংলার উৎপত্তি এগুলো খুব মূর্খের মতো মিথ... জার্মান এয়ারলাইন্সের নাম লুফতহান্সা, আর সংস্কৃত লুপ্তহংস, এই মিল দেখে অনেকে মহা উল্লাসে কনক্লুড করে, জার্মান আর সংস্কৃত এক বাপের ছেলে...। এগুলো অর্ধজানার ফলে তৈরি হওয়া ধারণা... প্রো ইন্দো ইউরোপিয়ান গ্রুপ অফ ল্যাংগুয়েজের ভাগ... ইন্দো ইরানিয়ান, হেলেনিক, ইটালিক, সেল্টিক, বাল্টো স্লাভিক, জার্মানিক... এবার ইন্দো ইরানিয়ানের নাতি হলো বাংলা... প্রথমে ইন্ডিক ত্যারপর সেল্টিক, তারপর তার থেকে বাংলা... এবার কমপ্লিটলি অন্য জঁর, ইটালিক থেকে জন্ম নেয় ল্যাটিন... বেসিক ডিভিসানটা দেখাচ্ছি...




17 hrs · Like · 3 · Reply

·

জুয়েল মাজহার দারুণ অমিতাভ

17 hrs · Unlike · 1 · Reply

·

Amitava PraharajArpita Das Praharaj ইংলিশ লোগোসেন্ট্রিক ল্যাংগুয়েজ বলে বিরাট স্টক অফ এ্যাডজেক্টিভ থাকলেও, বিশেষ্য বা নাউন বা সাবজেক্ট ছাড়া অচল... এবং ল্যাংগুয়েজ খুব রিজিড হয়ে যায়... কিন্তু বাংলায় শুধুমাত্র বিশেষণ ও ভার্ব দিয়ে তুই এক্সপ্রেসান তৈরি করতে পারবি যা ইংলিশে অসম্ভব। "ব্যাপক, দারুণ, তুমুল, ফাটিয়ে বললে"...... এটা ইংলিশে সম্ভব নয়, একটা ইউ বা সেয়িং বা স্পীচ বা ম্যানার আনতে হবেই, বাধ্য... আর বিশেষ্য হলো ইঁট... তাই ইংলিশে নাউনলেস সেনটেন্স এ্যাবসার্ড হয়ে যায়... জয়েস এটাকে ব্যাপক কাজে লাগিয়েছেন ফিনেগান'স ওয়েকে... তুলকালাম... নর নরৌ নরাঃ আর করছি করলাম করবো'র মধ্যে পার্থক্য হলো hoarse ar whores এর মধ্যে পার্থক্যর মতো... একটা ক্রিয়াবিভক্তি আর আরেকটা ধাতুরূপ...। ভালো করে বোঝ, বাংলায় একটা ক্রিয়ার ফর্মেশান করতে গেলে তার সাথে স্বতন্ত্রভাবে অস্তিত্ব নেই, এমন ধ্বনি প্লাগিন ফিট করতে হয়... আর সংস্কৃতে নিউটন'স ল'এর মতো ধাতুরূপ আছে। ষষ্ঠী তৎপুরুষে কী হবে একদম ক্লিয়ার ডিফাইন করা আছে... কোনো কিছু এ্যাটাচ করতে হয় না, জাস্ট সূত্র মনে রাখতে হয়... ডিটো ইংলিশ, প্রেজেন্ট কন্টিনুয়াস হলে আই এন জি যোগ হবে... সোজাসাপটা কথা... কিন্তু বাংলায় ঘটমান বর্তমান এক লক্ষ উপায়ে প্রকাশ করা যায়... তুমি খাচ্ছো, তোমার খাওয়া হচ্ছে, তোমার খাদ্যগ্রহণ চলছে, তুমি একটা খাদ্যগ্রহণ করছো......। আরো কত কি!

17 hrs · Like · 1 · Reply

·

Amitava Praharaj থাংকু জুয়েলদা

17 hrs · Like · 1 · Reply

·

Amitava Praharaj বোঝ, বাংলায় ভার্ব আর নাউন কখনোই চেঞ্জ হয় না সংস্কৃতের মতো... বাংলায় যা হয় তা হচ্ছে নাউনের ভার্বাইজেশান হয় আর ভার্বের নাউনাইজেশান হয়... সেটা কোনো উপসর্গ, বিভক্তি, যোগ করে হয় না। যে উদাহরণ তুই দিয়েছিস, বাড়িতে, বাড়ির, বাড়িকে... এগুলো তো বিভক্তি ব্যবহারের উদাহরণ মাত্র... কিশলয়, সহজ পাঠের ব্যাপার... বাংলা ভাষা আমাকে এতটাই ইনফিনিটি দেয় নাউন ও ভার্বের ইন্টারট্রান্সফর্মেশানে যে আমি অনায়াসে বলতে পারি... "বহুদিন বাইরে বাইরে বেড়ানো হলো, এবার মন বড্ড বাড়িপনা করতে চাইছে / এবার একটু বিশুদ্ধ বাড়িবাজি হোক"...... অথবা "কতদিন থেকে সকালবেলা জগিং করছি একা একা, আমার নানান জগেরা একটা দৌড়োনোর মতো দ্রুত ও ঘামায়িত জীবনের মতো নড়তে চায়।" এগুলো শিফট নয়, মিউটেশান... শুঁয়োপোকা থেকে রাতারাতি প্রজাপতি... ইংরেজিতে মিউটেশান হয় না, এ্যাডাপটেশান বা অভিযোজন করে ইভোলিউওশান বা বিবর্তনের পারমিশান পাওয়া যায়...

অনেক ব্যাপারেই disagree করছি... ইংলিশে তুই একটা শব্দ দিয়ে intensely express করতে পারিস না বলে, একটা শব্দ দিয়ে এক্সপ্রেস করা যায় না, এটা ভুল। Recently আলোচ্য Hamlet এর ‘Words, words, words…’ পড়িসনি? এটা নিয়ে কিছু লোক সারা জীবন ধরে রিসার্চ করে... depth of expression আছে বলে নিশ্চয়ই! নেক্সট টাইম ওপেন ফোরামে কাউকে ‘মূর্খ’ বা ‘অর্ধ জানা’ বলার আগে একটু পড়াশোনা করে নিবি, ও কে? According to the chart u have urself provided here, Sanskrit and Latin are clearly showing as Sister languages. মাদার যদি এক হয়, তাহলে তো এরা সিসটার হবেই! আর language er sisterhood determined hoy according to its structure. তুই নিশ্চয়ই জন্মের বংশ লতিকা দেখার মতো এটাকে দেখছিস না! বাংলায় যেভাবে Declension and Congujation হয়, সেটা সংস্কৃত আকা ল্যাটিন-এর সাথে হুবহু মেলে। ‘Verbisation’ and ‘Nounisation’ are Wrong words. এটা তুই কবিতায় ব্যবহার করতে পারিস... এখানে কাজে লাগবে না। যে কোনো ভাষায় বহু নাউন ভার্ব হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বহু ভার্ব নাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়... seta ‘verbisation’ ba ‘nounisation’ na. বাড়িপনা বা বাড়িবাজি... এগুলো colloquial usage. তোর বোধহয় America ba London, বা যে কোনো ইংলিশ স্পিকিং লোকের সাথে আলাপ নেই, না? এরকম কারোর সাথে কথা হলে দেখবি... ওরাও এরকম স্মার্ট ল্যাঙ্গোয়েজে কথা বলে... হ্যাভ ইউ ‘বোঝাফাইড’ দিস? আর তুই তো স্কুল, কলেজে ডিবেটে খুব ভালো ছিলি বলে জানতাম, তাহলে ডিবেট করার সময় এত ফালতু, useless, verbose শব্দ use করিস কেন? এরকম ডিবেট করলে তো ফার্স্ট রাউন্ডেই স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়ার কথা! একজন প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি সবসময় একটা আলোচনার সেরা পয়েন্টসগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। আমি আমার পোস্টে বলেছিলাম language is an audio-visual medium… কী দারুণ thought এটা। আসলে তুই যে ভাষার intrinsic depth নিয়ে বলছিলি, সেটারই সূত্র ধরে আমি বলছিলাম। যে কোনো জায়গায়, মানুষ কীভাবে কথা বলে, কি খায়, কি কি করে, ওখানকার ক্লাইমেট কেমন... এই সব রিফ্লেক্ট করে একটা ভাষায়। Language actually reflects the ‘Ethos’ of a particular region. এটা নিয়ে যত পড়াশোনা করা যায়, তত সুন্দর বোঝা যায়... খুব মজার এটা। And next time you post a comment, please be a little more ‘professional’ and ‘specific’… …okay?

রাগিনী সাজেশানস-

বুঝতে পারলাম প্রচণ্ড খচে গেছিস। এবং সেইরকম রাগ যা ভালো না লাগার বাতাবরণ তৈরি করে। যাতে রাগটা আরো খুঁচিয়ে না খারাপ হয়ে ওঠে সেইজন্যই সকালবেলা ইচ্ছে করেই উত্তরটা দিইনি। অন্তত একটু শান্ত হোক। মানুষকে আনপ্লেজান্ট অনুভূতি সরবরাহ করে কোনোদিনই কোনোরকম ক্রিয়েটিভ এ্যাকটিভিটি সম্পন্ন হতে পারে না। লেখা তো ঘটতেই পারে না। কারণ যে কোনো লেখাই একটা ইমেন্স পজিটিভ ফোর্স। একবিন্দুও নেগেটিভিটি থাকলে লেখা দাঁড়ায় না। তোকে কিছু সাজেশান দিতে চাই, একটু ঠান্ডা মাথায় শোন। একজন সিনিয়র লেখক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। প্রথমতঃ মতান্তর বা মতবিরোধ কখনোই একটা খারাপ ব্যাপার বলে দেখিস না। আমি যেমন তর্ক বা মতবিরোধ হলে ব্যাপক খুশি হই, কারণ আমি জানি, তার মানে ওর থেকে আমার একটা লেখা তৈরি হবে। আর তোর মতের সাথে কেউ ভিন্নমত হলে রাগ কেন হবে, কৌতূহল হওয়া উচিত। রাগ কোনোভাবেই একটা ক্রিয়েটিভ ইমোশান নয়। আর রাগ হলেও তাকে কোলে বসিয়ে লিখতে নেই কখনো। যতক্ষণ না যুক্তিবোধ ফিরে আসছে, কলম ছুঁতেই নেই। কারণ সাইকো লিংগুইস্টিক্স অনুযায়ী কোন্নো ইমোশানের সোমাটিক নেচার তার থেকে ক্রিয়েটেড ল্যাংগুয়েজে প্রচ্ছন্ন থাকে। কেউ যদি রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ছোঁড়ার অভ্যেস থাকে, তাহলে দেখা যাবে তার লেখার বাক্যগুলো ছেঁড়া ছেঁড়া, শব্দগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারা। দ্যাখ রাগ তোকে দিয়ে কী লিখিয়েছে “হ্যাভ ইউ ‘বোঝাফাইড’ দিস? আর তুই তো স্কুল, কলেজে ডিবেটে খুব ভালো ছিলি বলে জানতাম, তাহলে ডিবেট করার সময় এত ফালতু, useless, verbose শব্দ use করিস কেন? এরকম ডিবেট করলে তো ফার্স্ট রাউন্ডেই স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়ার কথা!” এটা তো তোর মতো একজন ট্যালেন্টেড লেখকের কাছে মোটেও অভিপ্রেত নয়! এটা তোর অস্ত্র কেন হবে? সেন্স অফ হিউমার, উইট, শ্লেষ, ব্যাঙ্গ, পৃথিবীতে এই জিনিসগুলো থাকতে থাকতে! আরো দেখ, রাগের ফলে তুই এ্যাকচুয়াল কনটেক্সট থেকে ছিটকে চলে গেছিস এবং এতটাই বেকন্ট্রোল হয়ে গেছে লেখা যে, তুই লিখছিস আমি আমার পোস্টে বলেছিলাম language is an audio-visual medium… কী দারুণ thought এটা। মানে তুই নিজেই নিজের লেখাকে ভালো বলছিস!!! খেয়ালই করিস নি! এগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে একজন ট্যালেন্টেড লেখককে সাজেশান দিলাম, আশাকরি তার মন খারাপ হবে না। তবে এই বারে তুই যা যা বলেছিস, প্রত্যেকটিই ভুল ধারণা থেকে জন্ম নেওয়া। এত কনফিডেন্টলি কী করে বলছি, পুরো লেখাটা পড়লে বুঝতে পারবি।



কন্ট্রা নামক ডিকশান-

এবং যে কোনো মতবিরোধের বেস্ট পার্ট হচ্ছে, মতবিরোধ আরো একটু পড়াশুনো করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। প্রথম প্রত্যুত্তরের থেকে দ্বিতীয় প্রত্যুত্তর যদি কন্সেপচুয়ালি এবং ইনফর্মেশান অনুযায়ী বেটার না হয় এবং আরো নতুন না হয়, তার মানে তর্ক কোনো নতুন সিদ্ধান্তের দিকে জার্নি করছে না, হচ্ছে তর্ক ফর দ্য সেক অফ তর্ক বা ইগো ইনজ্যুরিতে ভলিনি লাগানোর জন্য চলছে... গতকালের আপত্তিপুঞ্জের পরে নব আপত্তিতে জাগা আজকের মন্তব্য থেকে টেক এ্যাওয়ে কিছু পেলাম না। বরং কয়েকটা অতি হাস্যকর ভুল ধারণা প্রকট হলো। এই মন্তব্য থেকে যে যে পয়েন্টগুলো পাওয়া গেল--



শব্দ এক্সপ্রেস / শব্দ লোক্যাল-

a) ইংলিশে তুই একটা শব্দ দিয়ে intensely express করতে পারিস না বলে, একটা শব্দ দিয়ে এক্সপ্রেস করা যায় না, এটা ভুল। Recently আলোচ্য Hamlet এর ‘Words, words, words…' (নাঃ, একটা শব্দ দিয়ে এক্সপ্রেস আমি বলিনি। একটা কেয়ারফুলি পড়লে দেখতে পেতিস আমি বলেছি শুধুমাত্র ভার্ব বা ক্রিয়াপদ দিয়ে বাক্য। এটা ইংরেজির বাবার ক্ষমতা নেই করার। আর সিংগল ওয়ার্ড এক্সপ্রেসান বলতে বলেছি, একটা শব্দ একবার। এই ক্যাম্পাসে ইংরেজির ক্যারদানি ও floccinaucinihilipilification অবধি। তাও যার অর্থের মধ্যে এক্সপ্রেশান নেই, ডেফিনেশান আছে কোনো কিছুর। আর বাংলার ভাঁড়ার ঘরে আছে “দ্বিধাথরোথরোআঁখি”... এনাকে ভাষান্তর করতে গেলেই ইংলিশবাবু প্রায় প্যারাগ্রাফ নিয়ে ফেলবেন। একটা শব্দ বার বার বলে গেলে তো এক্সপ্রেসান হবেই। তার জন্য বেচারা সেক্সপিয়ারেকে ডাকার কি দরকার ছিল??? এ তো রামপেয়ারেও জানে যে আমি যদি তোকে “গাধা” “গাধা” “গাধা” “গাধা” গাধা” “গাধা” একটানা বলে যাই (অবশ্যই ইংলিশে) তাহলে তুইও “তোর গাধায় ফুটো” বলে এক্সপ্রেস করে ফেলবি (এটাও ইংলিশে)।


মা-বোন তোলার পরে-

b) “According to the chart u have urself provided here, Sanskrit and Latin are clearly showing as Sister languages. মাদার যদি এক হয়, তাহলে তো এরা সিস্টার হবেই” –

এটা একটু ডিটেলে বলি--

এই প্রসঙ্গে একটু মাদার ল্যাংগুয়েজ আর সিস্টার ল্যাংগুয়েজ-এর কেসটা বুঝিয়ে বলি... প্রোটো- ইন্দো-ইউরোপীয়ান নামক একটি বিটকেল ভাষা (তখনো ফুল ভাষায় ফর্ম হয়নি, ডাক আর ভাষা মিক্সড) ৩০০০ বি সি তে ব্ল্যাক সীর উত্তরে একজন কেভম্যানের হাতে তলপেটে ঘুঁষি খেয়ে চার টুকরো হয়ে গেছিল... একটা টুকরোর নাম ছিল এ্যানাটোলিয়ান। এ্যানাটোলিয়ান ছিল এক রহস্যময় ভাষা, এখন তুর্কের সামান্য ছিটেফোঁটা ছাড়া বাকি সমস্তটাই অবলুপ্ত হয়ে গেছে। যার মধ্যে তুমুল মিস্টিরিয়াস Hittie আর Phrygian (পরে কখনো এই ভাষা দুটো নিয়ে আলোচনা করবো। কীভাবে রাতারাতি লোপাট হয়ে গেল দুটি ভাষা)। এবার আরেক টুকরো যেটা প্রাচ্যের দিকে হাঁটছিলো তারা নিজেদের তিনভাগে ভাগ করে নিল। ইন্দো-ইরানিয়ান, তোচারিয়ান এবং আর্মেনিয়ান। একটা ছোট্ট খন্ড ইউরোপের দিকে ছিটকে পড়েছিল। যেখান থেকে গ্রীক, বাল্টিক আর রাশিয়ান তৈরি হলো। ইউরোপের পশ্চিম দিকে যে টুকরোটা গেছিল সেটা ভাগ হলো না, বরং চেঞ্জ হয়ে গেল জার্মানিকে। ওখানে ইটালিক বলে যে টুকরোটা ছিল তার অনেকগুলো মেয়ে হয়েছিল, যার মধ্যে ল্যাটিন একটা... এই ল্যাটিনের বাকি যত বোন ছিল, সবাই মরে গেছে। ল্যাটিনের মেয়ে হলো French, Spanish, Italian -- যারা তিনবোন। আবার এদিকে বৈদিকের সংস্কৃতের মেয়ে ক্লাসিকাল সংস্কৃত, যার মেয়ে হলো হিন্দি উর্দ্দু, গুজরাটি, সিংহলি অর্থাৎ এইসব বোনেরা। (অবশ্য একটা ফর্মূলায় তুই প্রমাণ করতে পারিস সংস্কৃত ল্যাটিনের বোন, কারণ ল্যাটিনের সব বোন মারা গেছে আর সংস্কৃতও মারা গেছে। মরে যাওয়া মরে যাওয়া কাটাকুটি করে দিলে। ল্যাটিন সংস্কৃতের বোন)। ওই যে আদিম প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয়ান ছিল, ওকে বলা হয় কমন মাদার। এবার মন দিয়ে শোন, এই প্রোটো ল্যাংগুয়েজের বেশ কিছু শব্দ যেসব ভাষাগুলো চেঞ্জ সবচেয়ে অল্প হয়েছে, তাতে ধ্বংসাবশেষ হিসেবে জমে থেকে গেছে। ফলে সংস্কৃত, ল্যাটিন, জার্মানে আমরা কমন কিছু শব্দ দেখতে পাই, আর এর থেকে কিছু উদগাণ্ডু ধারণা জন্মায়। যেমন ১) যে সংস্কৃত থেকে ল্যাটিন শব্দ ধার নিয়েছে এবং ভাইসি ভার্সা ২) আসলে সংস্কৃত ল্যাটিন আর জার্মান একটাই ভাষা শুধু জিওগ্রাফির জন্য বদলে গেছে ৩) আর্যরা ইউরোপ থেকে এসেছিল এদিকে, আসার সময় ব্যাগে কিছু ল্যাটিন কিছু জার্মান ঢুকিয়ে নিয়ে এসেছে। ৪) গ্রীক দেবতারা আসলে হিন্দু দেবদেবীদেরই মডিফায়েড রূপ। একে সাপোর্ট করার জন্য কিছু মজার গল্পো আছে। যেমন বলা হয় হেরাক্লিস বা Herakles আসলে কৃষ্ণের আরেক নাম। হেরাক্লিস এর সন্তান ছিল না, বেশি বয়সে এক মেয়ে হয়। হেরাক্লিস নিজের মেয়েকেই বিয়ে করে আবার। যার সন্তানদের নাম Pandia. যেটাকে পাণ্ডবের অপভ্রংশ বলে বলা হয়। শালা, না জানা অনেক স্বাস্থ্যকর, কিন্তু মানুষের মধ্যে যে কল্প-বিশেষজ্ঞ থাকে, যারা কল্প-থিওরিতে ভরিয়ে দেয়, তারাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় আপদ... প্রসঙ্গতঃ বলি এই গ্রীক দেবতা Herakles তিনবার ভারত আক্রমণ করেন এবং Aornos নামে সিন্ধু নদীর ধারে একটি বিশাল পাথর আছে, এখনো, সেখান থেকে চুনকালি মেখে ফিরে যান তিনবারই। তো দেবতাবাবাজীর এই কাণ্ড লুকোনো থাকেনি, কারণ স্বয়ং মেগাস্থিনিস তাঁর ইন্ডিকাতে লিখে গেছেন।



এইসব ফেক ফান্ডা আমাদের ভাষাবিজ্ঞানের সঠিক এ্যানালিসিস ঘেঁটে দেয়। ডাক থেকে ভাষা হওয়ার প্রসেসটা দারুণ ইন্ট্রেস্টিং... বলা হয় যে, ওই আদিম মাদার বা কমন মাদার প্রোটো ইন্দো ইউরোপীয়ান শুনতে কেমন ছিল তা জানতে গেলে র‍্যান্ডম সংস্কৃত জার্মান ও ল্যাটিন বলে গেলে যে সাউন্ডটা হবে, তা প্রোটো ল্যাংগুয়েজের সাউন্ডের কাছাকাছি... এছাড়া বিন্দুমাত্র আত্মীয়তা নেই এদের মধ্যে। বরং সংস্কৃতের অনেক কাছের জ্ঞাতি বোন হচ্ছে লিথুয়ানিয়া লাটভিয়ার ভাষা। জোর করে সম্পর্ক করতে গেলে ল্যাটিন সংস্কৃতের মাসতুতো দিদির পিসতুতো বোন টাইপের হতে পারে।

3) বাংলায় যেভাবে Declension and Congujation হয়, সেটা সংস্কৃত আকা ল্যাটিন-এর সাথে হুবহু মেলে।

এটা হচ্ছে ফেক ফান্ডার অসাধারণ উদাহরণ। ডিক্লেনসান আর ইনফ্লেকশান বা কনজুগেশান জিনিসটা কী, পাঠকদের একটু শর্টে বলে দি... বিভিন্ন গ্রামাটিক্যাল ক্যাটাগরি (tense, mood, voice, aspect, person number gender and case) বোঝানোর জন্য একটা শব্দকে যেমন মর্ফ করা হয়, তাকে বলে ইনফ্লেকসান। এই মর্ফিং হয় নানা ভাবে, শব্দ বেঁকিয়ে চুরিয়ে, প্রিফিক্স, সাফিক্স দিয়ে ইত্যাদি শব্দের নানা অবতার দিয়ে... আর এই একই জিনিস নাউন আর প্রোনাউন এর ক্ষেত্রে হলে বলে ডিক্লেনশান। মানে ভার্বের ক্ষেত্রে ইনফ্লেকশান আর নাউনের ক্ষেত্রে ডিফ্লেকশান। সহজ ভাবে বললে I am doing, I did and I am done. অথবা chair এবং chairs. ডিফ্লেকসানের প্রসঙ্গ তুলে তুই বাংলা আর ইংরেজির মধ্যে কমপ্যারেটিভ স্টাডি করার একটা অপূর্ব জায়গা দিয়ে দিয়েছিস। এই জায়গা থেকে ভাষাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। এটা খুব ইন্টারেস্টিং এবং এতেই ইংলিশ আর বাংলার নেচার স্পষ্ট হয়।


১) High Synthetic Language- সংস্কৃত, জার্মান (এখানে সামান্য পান থেকে চুন খসলেই ক্রিয়া বা ভার্ব বদলে যায়... সংস্কৃতে ধাতুরূপ নিশ্চয়ই মনে আছে... সমস্ত ফর্ম একেবারে সূত্রের মধ্যে ষষ্ঠী তৎপুরুষ ইত্যাদি... জার্মানে কম্বাইন্ড ওয়ার্ড মানে খানিকটা সংস্কৃতের মতো একটা গাবদা ওয়ার্ড এ্যাসোসিয়েসান দিয়েই জলজ্যান্ত সেনটেন্স এক্সপ্রেস করা যায়।

২) Weak Synthetic language- English… যে ভাষায় ইনফ্লেকশান খুবই কম এবং যাতে variant থাকে... মানে এমন শব্দ যা টেন্স বা ভয়েস বা কোনো কিছুতেই চেঞ্জ হয় না... যেমন must.

3) Polysynthetic language- যে ভাষায় ইনফ্লেকশান অতি হাই... মানে ভয়েস বা টেন্স চেঞ্জ হলে গোটা বাক্যের ওপর এফেক্ট ফেলে, এবং প্রায়ই গোটা শব্দকে আমূল বদলে দেয়। এর উদাহরণ কি? না Anglicised Indian Language. অর্পিতা দেবী ডিফ্লেকসান না জানার জন্য আওয়াজ মেরে যে শব্দটি ফর্ম করেছিলেন 'বোঝাফায়েড' এটি একটি পলিসিন্থেটিক ভাষার ডিক্লেনশানের উদাহরণ। আমেরিকান ইংলিশ এবং ইন্ডিয়ান মর্ফড ইংলিশ হচ্ছে আরেক উদাহরণ। আমি যে ব্যবহার করেছিলাম nounisation, verbisation -- এগুলো হলো ইনফ্লেকশানের উদাহরণ (ভার্ব চেঞ্জ ডি, নন ভার্ব চেঞ্জ ই)।

4) Agglutinative language- যেখানে একটাই ইনফ্লেকশান বা ডিক্লেনশান একাধিক গ্রামারের ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ? সরি অর্পিতা... ল্যাটিন।

5) Fusional- যেখানে কোনো চেঞ্জই হয় না, ম্যান্ডারিন চাইনীজ।


এবার অর্পিতা, এই জায়গাটা ভালো করে শোন, অনেক কিছু ক্লিয়ার হবে...

প্রথমতঃ বাংলার ডিক্লেনশান আর কঞ্জুগেশান, ইংলিশের ডিক্লেনসান আর কনজুগেশান আর সংস্কৃতের ডিক্লেনসান আর কঞ্জুগেশান তিনটে ভিন্ন মেরুর। এবং তার সাইড এফেক্টও আছে।

সংস্কৃতে ডিক্লেনশান আর কনজুগেশান প্রচণ্ড রিজিড এবং নিয়মাবদ্ধ। ষষ্ঠী তৎপুরুষ কী হবে লতা শব্দের যা নারীবাচক বা গম বা কৃ ধাতুর, যা ভার্ব, সমস্ত রূপবদ্ধ করা আছে... কল্পনার কোনো জায়গা নেই, কোনো ফ্রী স্পেস নেই। ফলে ভাষাটিতে বাইরের ভাষার শব্দ ঢুকলেও উপসর্গ বা অনুসর্গ ঢোকার পারমিশান পায়নি। ফলে ভাষাটি আস্তে আস্তে মরে গেছে।


ইংলিশে ডিক্লেনশান বা ইনফ্লেকশান খুব উইক বলে এই ভাষাটির একটি অসাধারণ গুণ আছে যা অন্য ভাষার নেই... সেটা হলো, এই ভাষাটি আয়ত্ত করা সবচেয়ে সহজ। এবং এই সহজপাচ্যতাই ইংলিশকে বিশ্বভাষা করে তুলেছে। আরেকটা গুণ হচ্ছে ডিক্লেনশান বা কনজুগেশান খুব উইক, এবং অতি কম কনকর্ড (concord) [concord মানে যেখানে ইনফ্লেকশানের নিয়ম অনুযায়ী একটা গোটা বাক্যের প্রতিটি পার্ট কমপ্যাটিবল হয়। যেমন the battalion is moving বা the choir sings… এখানে ব্যাটালিয়ন প্লুরাল বা কয়ার প্লুরাল হলেও সিংগুলার হিসেবে আসছে তাই ইনফ্লেকশান sings হচ্ছে]... এইটির ফলে ইংলিশের মধ্যে প্রচুর বিদেশী ঢুকলেও তা ভাষায় খাদ মেশায় না বা বেসিক স্ট্রাকচার চেঞ্জ করে না। ফলে বেংলিশ আপনি শুনতে পেলেও 'ইংলা' কোনোদিন শুনতে পাবেন না, তা সম্ভব নয়। আরেকটা পয়েন্ট আছে... সেটা হলো ইনফ্লেকশান শব্দের সাথে যেটা জোড়ে তাকে বলে bound morpheme, বাকি যেটা থাকে তাকে বলে morpheme. এবার ইংলিশে Bound morpheme এর কোনো অর্থ থাকে না, মূল অর্থ morpheme ক্যারি করে। sing হলো morpheme, 's' হলো 'bound morpheme'. ইংলিশে ডিক্লেনশান অতীব রেয়ার, একমাত্র সিংগুলার প্লুরালের ক্ষেত্র ছাড়া। voice বা tenseএ কখনো noun পরিবর্ত্তন হয় না। এই প্রতিটি জিনিস ঘটে ইংলিশ লোগোসেন্ট্রিক ল্যাংগুয়েজ বলে।



এবার আসি বাংলায়। এক লক্ষবার বলেছি বাংলা ক্রিয়াভিত্তিক ভাষা। ফলে ইংলিশে যা যা হয় না তা বাংলায় হয় এবং ইংলিশে যা যা হয় তা বাংলায় হয় না। অর্পিতা দুম করে বলে দিলি সংস্কৃত ইংলিশ বাংলার ডিক্লেনশান, কনজুগেশান একইরকম। এইসব জারগন কনসেপচুয়ালি না বুঝে ব্যবহার করলে এমনই চরম অপদস্থ হতে হয়। বাংলার ডিক্লেনশান আর ইনফ্লেকশান প্রচণ্ড ফেক্সিবল। প্রথমতঃ সিঙ্গুলার প্লুরালে ক্রিয়াপদে কনজুগেশান বাংলায় হয় না।

বাংলায় যে কোনো প্রিপোজিশান বা অব্যয় হলো ভ্যারিয়েন্ট। বাংলায় আরেকটা কারণে প্রচুর প্রচুর ইনফ্লেকশান আর ডিফ্লেকশান ঘটে যা অন্য কোনো ভাষায় (জার্মান ছাড়া) এত পরিমান ঘটে না। সেটা হলো পার্টস অফ স্পীচগুলোর মধ্যে ইন্টারচেঞ্জ। ক্রিয়ার বিশেষ্যীকরণ (এবার তোর ভালো লাগবে, নাউনাইজেশান বলিনি), নামধাতু, জোড়শব্দ ইত্যাদি। যেহেতু বাংলা এখন এ্যাংলিসাইজড বাংলা, তাই এ্যাংলিফিকেশানও ডিফ্লেকশান আর কনজুগেশান আনে। ইংরেজি লোগোসেন্ট্রিক বলে যে কোনো ক্রিয়াপদের একটি চেঞ্জে, ধরা যাক টেন্স চেঞ্জে, এক ধরনেরই ইনফ্লেকশান ঘটে, gone, done। বাংলায় মজাটা দেখা যাক... রাম বেরোলো, রাম সেই বিকেল পাঁচটায় বেরোলো (চেঞ্জ হলো না)। এবার বাচ্য বা ভয়েস, রামের খাওয়া হলো, রামের খাদ্যগ্রহণ হলো, রাম খেয়েই চলেছে শেষ হলো। কত রকম ভ্যারাইটি। এটাই বাংলার সম্পদ।



3) ‘Verbisation' and ‘Nounisation’ are Wrong words. এটা তুই কবিতায় ব্যবহার করতে পারিস... এখানে কাজে লাগবে না। যে কোনো ভাষায় বহু নাউন ভার্ব হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বহু ভার্ব নাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়... seta ‘verbisation’ বা ‘nounisation’ না। বাড়িপনা বা বাড়িবাজি... এগুলো colloquial usage।

এটার সাপেক্ষে কিছু বলার নেই... এটা বস্তুতঃ একটা ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়... আমি আগে বহুবার বলেছি আমাদের বাংলাশিক্ষার মডেলটা এত ত্রুটিপূর্ণ যে বেশির ভাগ মানুষকে সাহিত্য-অশিক্ষিততে পরিণত করে। আমাদের পড়ানো হয় একটা ক্রিয়াভিত্তিক ভাষার ব্যাকরণ, কিন্তু মডেলটা লোগোসেন্ট্রিক ভাষার। ইংরেজি ব্যাকরণের কাঠামোতে আমাদের বাংলা ব্যাকরণ শেখানো হয় বলে অর্পিতা বিনা হিচকিচাহটে “রঙ ওয়ার্ডস, কবিতায় ব্যবহার করতে পারিস, এখানে নয়” জাতীয় হাফ বেকড ধারণাসঞ্জাত মন্তব্য করে যায়। আমাদের মনে আসে না মাইকেল বা নামধাতুর কথা, “উত্তরিলা বিভীষণ...”। তাই ভার্বাইজেশান বললে ভুল, ভুল চিৎকার করে ওঠে। মাথায় আসে না ক্রিয়ার বিশ্যেষীকরণ... আর সবচেয়ে মারাত্মক হলো “এসব কবিতায় চলতে পারে এখানে নয়”... কী চূড়ান্ত মিসকনসেপশান কবিতা সম্পর্কে আমাদের আকাদেমীগুলি মাথায় ঢুকিয়ে যাচ্ছে, ভাবা যায় না!!!!! বা ওই ব্যবহার, এগুলো 'colloquial usage'… আমাদের বলাও হয় না বাংলায় colloquial বলে কিছু হয় কি হয় না??? বাংলায় ফর্মাল ইনফর্মাল-এর ডিভিসান চলিত আর সাধু। কলোকিয়াল-এর কনসেপ্ট আসে জিওগ্রাফিক্যাল এফেক্ট থেকে, ভাষার ওপরে। বাংলায় জিওগ্রাফিক্যাল এফেক্টের ফলে তৈরি হয় ডায়ালেক্ট। সেই অর্থে বাংলার কলোকিয়াল হচ্ছে খাইসে!!

বাংলা আর ইংরেজির মর্ফোলজি যে কতটা আলাদা সিনট্যাক্সিং সহ, একটা সাধারণ বাক্য বললেই বোঝা যাবে। “রহিম হত্যা করেছিল করিমকে”। “করিমকে রহিম হত্যা করেছিল”। এখানে সাবজেক্ট চেঞ্জ হয়ে গেলেও দুটি বাক্য একই তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু ইংলিশে “Rahim killed Karim” আর “Karim killed Rahim.” দুটি বেজায় আলাদা বাক্য। দ্বিতীয়টায় রহিম বেচারা খুন টুন করে এসে ফের খুন হয়ে যাচ্ছে। এই একটা সাধারণ উদাহরণ বোঝায় প্রথম ভাষাটি ক্রিয়া ডিপেনডেন্ট, তাই নাউনের বাড়ি কোথায় তা নিয়ে কিচ্ছু এসে যায় না। কিন্তু দ্বিতীয় ভাষাটি নাউন নির্ভর। তাই নাউন সামান্য সরলেই অর্থ বদলে যাচ্ছে।

আরেকটা উদাহরণ-

আঁকা- verbal noun (‘act of drawing’)
আঁকতে - verbal infinitive (‘to draw’)
আঁকতে আঁকতে - progressive participle (‘while drawing’)
আঁকলে - conditional participle (‘if X draws’)
এঁকে - perfect participle (‘having drawn’)
এঁকে এঁকে - iterative participle (‘having drawn many times’)

ইংরেজিতে এই নানান সিচুয়েশানে ভার্বকে কব্জা করতে বেশ প্যাঁচ খেলতে হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় শুধুমাত্র আঁকা ধাতুটিকে যত রকম ভাবে বাঁকাবো তত রকম সিচুয়েশান তৈরি হবে। একটায় সিচুয়েশান অনুযায়ী ক্রিয়েট করতে হচ্ছে আর আরেকটায় যতভাবে কল্পনা করতে পারি একটা ক্রিয়ার ফর্ম, তত রকম সিচুয়েশান আমার হাতে। যে কোনো ক্রিয়েটিভিটির পক্ষে এর থেকে অপূর্ব আর কী হতে পারে??? কিন্তু যেহেতু আমাদের ব্যাকরণটি ওই ডানদিকের মডেলে পড়ানো হয়, আমরা বুঝতেই পারি না বাংলা ভাষায় সামান্য একটা ক্রিয়াপদ আমাকে বিধাতার সমান ক্ষমতা দেয়।

সোজা কথায় বলতে ইংরেজিতে SVO হচ্ছে word order মানে Subject Verb Object. আর বাংলায় হচ্ছে SOV বা Subject Object Verb. এই ছোট্ট ফারাকটি গভীর দর্শনের কথা বলে। ইংরেজিতে প্রথমে আসে মালিক, মালিকের অঙ্গুলি হেলনে ঘটনাটা সচল হয় বা প্রাণ পায়, কিন্তু তার প্রাণময়তা শেষ হয় বস্তুতে বা অবজেক্টে। একদিক থেকে মালিক আর অন্যদিক থেকে বস্তুর আকাঙ্ক্ষার জন্য আমার সচল অস্তিত্ব। একদম সোজাসাপটা পুঁজিবাদী বস্তুতান্ত্রিক কাঠামো।

বাংলায় দেখতে পাই মালিকের সাথে সম্পর্ক বস্তুর। মানে বস্তুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে মালিক আর সব মিলিয়ে অস্তিত্ব সচল হয় বা প্রাণ পায় এক্কেবারে শেষে। তাই প্রাণময়তার কোনো গন্ডি থাকে না। অসীম হতে পারে। এবং ঠিক তাই, বাংলা ভাষাকে এই ক্রিয়াভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বা দর্শন দেখলে দেখতে পাই, এতে সৃষ্টির অসীম সম্ভাবনা। অসংখ্য রূপে সামনে আসতে পারে একটি ঘটনা। পাখিটি গাছে বসেছিল, উড়ে গেল। এটি পাখিটি গাছ থেকে বাতাসে ঢুকে গেল। পাখিটির অবাধ্য ডানাগুলি ওঠাবসার শাস্তি পেয়েছে। পাখিটি গাছের বাইরে একটি ওড়া পরে নিল। এরকম অপরিসীম কল্পনাকে ধারণ করতে পারে বাংলা, যা সত্যিই ইংলিশের দ্বারা সম্ভব নয়।

8 কমেন্টস্:

  1. বাংলা যে কোন চটি ব্যাকরণ বইয়ে কারক, বিভক্তি, এইসব চ্যাপটার আছে। এগুলোর বদলে ডিক্লেনশন, কঞ্জুগেশন - এইসব অনর্থক ইংরাজী শব্দ ব্যবহার করলে মনে হয় বেশ নতুন কিছু বললাম। এই আর কী!

    উত্তরমুছুন
  2. আমি এই প্রবন্ধের একটা লাইনের সঙ্গেও একমত নই। পুরো জিনিসটাই গুলতাপ্পি।
    বাংলা কবিতায় ইমেজারি, যাকে রবীন্দ্রনাথ চিত্ররূপময়তা আখ্যা দিয়েছিলেন, সুপ্রতিষ্টিত করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ (কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাত, শীত হাতখান বা লাল লাল বটের ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা, এরি মাঝে বাংলার প্রাণ, ইত্যাদি), যিনি প্রবলভাবে এগুলো তুলেছিলেন টি এস এলিয়ট এবং এজরা পাউন্ডের কবিতা থেকে। অর্থাৎ ইংরাজীতেই (হয়ত অন্য ভাষাতেও) এগুলো আগে শুরু হয়েছিল, পরে বাংলায় এসেছে। শেষ লাইনে বাংলার যে অপরিসীম কল্পনার কথা বলা হয়েছে, যা নাকি ইংরাজীতে সম্ভবপর নয় - শুনলে অল্পস্বল্প ইংরেজী জানা লোকও (যাদের ইংরাজী জানার ভান করতে হয় না) হাসবে।

    উত্তরমুছুন
  3. "ইংলিশ লোগোসেন্ট্রিক ল্যাঙ্গুয়েজ, সেখানে ভার্ব নাউন ছাড়া অচল..."

    ইংরিজিতেও অনুজ্ঞাবাচক বাক্য কেবলমাত্র ক্রিয়াপদের সাহাযে বোঝানো যায়, য্যামন-- go, eat. এখানে কর্তা ও কর্ম (you go home and have food) উহ্য রাখা হয়েছে। যেভাবে আমরা বাংলায় বলি--যাও, খেয়ে নাও। এখন এই ধরণের বেনিয়ম সীমিতসংখ্যক বাক্যের ক্ষেত্রেই খাটে, এটা কোনো সাধারণ নিয়ম নয়--বাংলা বা ইংরিজি কোনো ভাষাতেই। বস্তুতঃ, ওপরের উদাহরণে যে বাক্যটি লেখা হলো--"go, eat", এটাও সদর্থে কোনো অর্থবোধক বাক্য নয়। অর্থাৎ, আমি যদি অকুস্থলে উপস্থিত না থাকি বা এই বাক্যোক্তির পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ সম্বন্ধে অনবহিত থাকি, তবে বক্তা কাকে এই নির্দেষ বা অনুজ্ঞা দিচ্ছেন (তাঁর শিশুকন্যাকে, না কি পোষা কুকুরকে), বা কী খেয়ে আসতে বলছেন (দুধ না কি ঘাস) তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয় না, ফলে অর্থপ্রকাশও সম্পূর্ণ হয় না।
    অনুরূপে, বাংলায় যে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে--"হচ্ছে, হচ্ছে, হবেই" বা "দেখতে পেলাম" সেক্ষেত্রেও এই যুক্তি খাটে এখানে কর্তা ও কর্ম নেই তা নয়, তারা উহ্য রয়েছে--"এবার আমার প্রমোশন হছে,হবেই" বা "তুমি যা দ্যাখাতে চেয়েছো, আমি তা দেখতে পেলাম"।

    ------------

    "নর নরৌ নরাঃ আর করছি করলাম করবো'র মধ্যে পার্থক্য হলো hoarse ar whores এর মধ্যে পার্থক্যর মতো... একটা ক্রিয়াবিভক্তি আর আরেকটা ধাতুরূপ..."

    লেখক সম্ভবতঃ সংস্কৃত ব্যাকরণের সঙ্গে ততোটা পরিচিত নন। "নরঃ, নরৌ, নরাঃ" ধাতুরূপ নয়, শব্দরূপ। ধাতুরূপ হলো--"গম" ধাতু যেভাবে "গময়ঃ", "গচ্ছন্তি" ইত্যাদি রূপ ধারণ করে।

    ----------------

    "কিন্তু বাংলায় ঘটমান বর্তমান এক লক্ষ উপায়ে প্রকাশ করা যায়... তুমি খাচ্ছো, তোমার খাওয়া হচ্ছে, তোমার খাদ্যগ্রহণ চলছে, তুমি একটা খাদ্যগ্রহণ করছো......।"

    পূর্ণতঃ মিসলিডিং কথাবার্তা। এখানে যে চারটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই ক্রিয়াপদ ভিন্ন। অর্থাৎ, একই ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে বাংলায় অসংখ্যভাবে ঘটমান বর্তমান প্রকাশ করা যায়, এমন দাবির কোনো সত্যতা উদাহরণগুলির মধ্যে নেই। চারটি বাক্যের ক্রিয়াপদগুলি যথাক্রমে--"খাচ্ছো", "হচ্ছে", "চলছে", "করছো"।
    ঠিক একই জিনিশ ইংরিজিতে করা যায়, আরো অনায়াসে--you are eating, you are having food, you are taking food, you are consuming food, you are partaking of food, you are devouring food ইত্যাদি প্রভৃতি।

    উত্তরমুছুন
  4. "বাংলায় ভার্ব আর নাউন কখনোই চেঞ্জ হয় না সংস্কৃতের মতো... বাংলায় যা হয় তা হচ্ছে নাউনের ভার্বাইজেশান হয় আর ভার্বের নাউনাইজেশান হয়... সেটা কোনো উপসর্গ, বিভক্তি, যোগ করে হয় না।"

    বাংলায় ক্রিয়ার বিশেষ্যীকরণ বা বিশেষ্যের ক্রিয়ারূপ ধারণ তাহলে কীভাবে হয়? ইংরিজিতে বরং অনেক ক্ষেত্রেই একই শব্দ verb ও noun হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণ "plough", "house", "name", "lie" আরো কত কত কত!

    ----------------

    "বাংলা ভাষা আমাকে এতটাই ইনফিনিটি দেয় নাউন ও ভার্বের ইন্টারট্রান্সফর্মেশানে যে আমি অনায়াসে বলতে পারি... "বহুদিন বাইরে বাইরে বেড়ানো হলো, এবার মন বড্ড বাড়িপনা করতে চাইছে / এবার একটু বিশুদ্ধ বাড়িবাজি হোক"।"

    এখানে "বাড়িবাজি", "বাড়িপনা" তো ক্রিয়াপদ নয়, এগুলি নতুন নতুন বিশেষ্যমাত্র। এই বিশেষ্যগুলি কর, হ, চা এই সব ধাতুর সমাপিকা রূপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তক্রিয়াপদ সৃষ্টি করেছে। যদি গোটা প্রবন্ধে লেখকের বক্তব্য হয় যে "বাংলা ভাষায় সীমিতসংখ্যক ধাতুর সমাপিকা ক্রিয়ারূপ অসংখ্য বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তক্রিয়াপদ গঠন করতে সক্ষম" তাহলে আমি সেই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। কিন্তু এর ভিত্তিতে বাংলাকে "ক্রিয়াভিত্তিক" ভাষা বলবো কি না, বা বাংলা ভাষার এই চারিত্রলক্ষণ তার ভয়ানক শক্তি বা দুর্বলতার প্রকাশক কি না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

    ------------------

    "একটা কেয়ারফুলি পড়লে দেখতে পেতিস আমি বলেছি শুধুমাত্র ভার্ব বা ক্রিয়াপদ দিয়ে বাক্য। এটা ইংরেজির বাবার ক্ষমতা নেই করার। আর সিংগল ওয়ার্ড এক্সপ্রেসান বলতে বলেছি, একটা শব্দ একবার। "

    এর কথা আগেও বলেছি। ইংরিজিতেও এভাবে একপদী বাক্য লেখা সম্ভব। তবে কি ইংরিজিতে আর কি বাংলায়, এই ধরণের বাক্যের অর্থপ্রকাশ অ স্পষ্টীকরণের ক্ষমতা খুবই সীমিত। ফলে, একে নিয়ম নয়, নিয়মের ব্যত্যয় হিসেবে দেখাই বুদ্ধিমান লোকের পক্ষে শ্রেয়।
    দ্বিতীয় কথা, লেখক কোথাও "শব্দ" আর "পদ", word আর parts of speechএর মধ্যে তফাত করেননি। অথচ, এটা না করার ফলে গোটা লেখায় অজস্র ধোঁয়াশা, হেত্বাভাস, অতিব্যাপ্তি ইত্যাদি নানান ত্রুটির উদ্ভব হয়েছে। যেহেতু শব্দ ও পদের পার্থক্য সামান্যতম ব্যাকরণ জানা লোকের কাছেই স্পষ্ট, তাই এখানে তার আলোচনা করা নিরর্থক মনে করে বিরত রইলুম।

    উত্তরমুছুন
  5. "সংস্কৃতে ডিক্লেনশান আর কনজুগেশান প্রচণ্ড রিজিড এবং নিয়মাবদ্ধ। ষষ্ঠী তৎপুরুষ কী হবে লতা শব্দের যা নারীবাচক বা গম বা কৃ ধাতুর, যা ভার্ব, সমস্ত রূপবদ্ধ করা আছে... কল্পনার কোনো জায়গা নেই, কোনো ফ্রী স্পেস নেই। ফলে ভাষাটিতে বাইরের ভাষার শব্দ ঢুকলেও উপসর্গ বা অনুসর্গ ঢোকার পারমিশান পায়নি। ফলে ভাষাটি আস্তে আস্তে মরে গেছে।"

    এটা একটা প্রচন্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষী বক্তব্য। আশা করি, এই বক্তব্যের পেছনে লেখকের গভীর সংস্কৃত জ্ঞান কাজ করছে। আমি দেবভাষা খুব ভালো জানি না। ফলে এই বক্তব্যের সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কোনোটাই করবো না। শুধু এটুকু বলবো যে, সংস্কৃত-বাংলা-ইংরিজি এই তিনটি ভাষাই যিনি মাতৃভাষার মতো বলতে ও লিখতে পারেন, সেই মহাপন্ডিত, অধ্যাপক ও বর্তমানকালের অন্যতম শ্রুতকীর্তি দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতেন না। এ বিষয়ে তাঁর লেখা পড়ে দেখতে অনুরোধ করি।

    ----------------

    "ইংরেজি লোগোসেন্ট্রিক বলে যে কোনো ক্রিয়াপদের একটি চেঞ্জে, ধরা যাক টেন্স চেঞ্জে, এক ধরনেরই ইনফ্লেকশান ঘটে, gone, done। বাংলায় মজাটা দেখা যাক... রাম বেরোলো, রাম সেই বিকেল পাঁচটায় বেরোলো (চেঞ্জ হলো না)। এবার বাচ্য বা ভয়েস, রামের খাওয়া হলো, রামের খাদ্যগ্রহণ হলো, রাম খেয়েই চলেছে শেষ হলো। কত রকম ভ্যারাইটি। এটাই বাংলার সম্পদ। "

    খুব খুঁতখুঁতে ভাষাবিদ যাঁরা, তাঁরা বলবেন "রাম বেরোলো" বাক্যটি ইংরিজি present perfect tense-এর অনুরূপ হলেও, "রাম সেই বিকেল ৫টায় বেরোলো" বাক্য হিসেবে খুব সঠিক নয়। দ্বিতীয় বাক্যটি আসলে হওয়া উচিত "রাম সেই বিকেল ৫টায় বেরিয়েছিলো (এখন ফিরলো)"। আমরা বাংলা কথ্যভাষায় এইসব সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিই না, এবং তার ফলেই এই ধরণের confusion তৈরি হয়, ও লোকজন নানারকম উল্টোপাল্টা মন্তব্য করেও পার পেয়ে যায়।

    বাচ্য বা ভয়েসের ক্ষেত্রে লেখকের বক্তব্যটিও বিচার করে দ্যাখা যাক। "রামের খাওয়া হলো", "রামের খাদ্যগ্রহণ হলো", "রাম খেয়েই চলেছে শেষ হলো"--এই বাক্যতিনটিতে ক্রিয়াপদ একটাই ("হলো")। এর মধ্যে শেষ বাক্যটি উদ্ভটবাক্যের উদাহরণ হিসেবে ডিসকাউন্ট করলুম। বাকি দুটি বাক্যই কর্মবাচ্যের উদাহরণ। এর কর্তৃবাচ্য রূপটি হবে--"রাম খাওয়া/খাদ্যগ্রহণ/উদরপূর্তি শেষ করলো"। লক্ষ করলে দ্যাখা যাবে, বাংলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে "হ" ধাতুর সমাপিকা রূপ ব্যবহার করে কর্তৃবাচ্যকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করা যায়। আর বলা বাহুল্য, কর্তার সঙ্গে তৃতীয়া বিভক্তি যুক্ত হয় (বা হলেও উহ্য থাকে)। বাংলায় কর্মবাচ্য-কর্তৃবাচ্যের রূপান্তর অসংখ্য উপায়ে হতে পারে এটা আমার মনে হয় না।
    এখন এই চারিত্রলক্ষণের ফলে বাংলাভাষার সম্পদ প্রকাশিত হলো, না তার দুর্বলতা, সেটা নির্বিকল্পভাবে বলে দেওয়াটা আমার কাছে একটু ছেলেমানুষি বলেই মনে হয়।

    উত্তরমুছুন
  6. "আমাদের মনে আসে না মাইকেল বা নামধাতুর কথা, “উত্তরিলা বিভীষণ...”। তাই ভার্বাইজেশান বললে ভুল, ভুল চিৎকার করে ওঠে। মাথায় আসে না ক্রিয়ার বিশ্যেষীকরণ... আর সবচেয়ে মারাত্মক হলো “এসব কবিতায় চলতে পারে এখানে নয়”... কী চূড়ান্ত মিসকনসেপশান কবিতা সম্পর্কে আমাদের আকাদেমীগুলি মাথায় ঢুকিয়ে যাচ্ছে, ভাবা যায় না!!!!! "

    আমিও অর্পিতা প্রহরাজের কথার ধুয়ো ধরেই বলবো যে, এসব নামধাতুর উৎপত্তি ও ব্যবহার বাংলা ভাষার চারিত্রলক্ষণ নয়। এটি একধরণের ব্যত্যয়ী প্রয়োগ, যা কবিতার ক্ষেত্রেই মানায় (তাও অতি-ব্যবহার ক্লান্তিকর লাগে, য্যামন এখনকার অধিকাংশ নতুন কবিতায় onomatopoeic শব্দের ব্যবহার, নামধাতুর ব্যবহার)। কবিতার/সাহিত্যের ভাষা বনাম ব্যবহারিক ভাষা নিয়ে ভাষাতাত্বিক ও ভাষা-দার্শনিকরা (প্রাচীন সংস্কৃত ব্যাকরণ-দার্শনিক ভর্তৃহরি, বররুচি থেকে আরম্ভ করে আধুনিক যুগের জাক দেরিদা, মাইকেল ডামেট অবধি) ঢের আলোচনা করেছেন। ও আমি যদ্দূর জানি, একটা সূক্ষ্ম পার্থক্যের অস্তিত্ব সকলেই স্বীকার করেছেন। অরিন্দম চক্রবর্তীর লেখায় এমনও পড়েছি, যে কবিতায় শব্দ, পদ বা বাগর্থের ব্যত্যয়ী ব্যবহার আসলে কথ্যভাষার নিয়মকেই মান্যতা দ্যায়। আমার এমন পান্ডিত্য নেই যে এইসব মহামতিদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাবো। বা এক অর্থে দেখলে, চ্যালেঞ্জ জানানোর কোনো কারণও এখন অবধি খুঁজে পাইনি।

    ---------------

    "“রহিম হত্যা করেছিল করিমকে”। “করিমকে রহিম হত্যা করেছিল”। এখানে সাবজেক্ট চেঞ্জ হয়ে গেলেও দুটি বাক্য একই তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু ইংলিশে “Rahim killed Karim” আর “Karim killed Rahim.” দুটি বেজায় আলাদা বাক্য।"

    এখানে কারক-বিভক্তি সম্পর্কে ধারণাগুলি স্পষ্ট করে নেওয়া দরকার। "রহিম হত্যা করেছিল করিমকে” আর “করিমকে রহিম হত্যা করেছিল”, এই দুটি বাক্যে শুধু কর্তা আর কর্ম তাদের স্থানপরিবর্তন করেছে, এই কথাটা খন্ডসত্যের দোষে দুষ্ট। প্রথমতঃ, এই বাক্যে দুটি কর্ম আছে--"করিমকে" আর "হত্যা"। "হত্যা" মুখ্যকর্ম, আর "করিমকে" গৌণকর্ম। এখানে স্থানপরিবর্তন করেছে কর্তা আর প্রাণীবাচক গৌণকর্মটি। আবার সেক্ষেত্রেও, শুধু কর্মবাচক শব্দটি নয়, গোটা পদটি (অর্থাৎ শব্দ ও তার সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিটিও) এখানে স্থান পরিবর্তন করেছে।
    দুটি সহজতর উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি--
    ১। "রুবাই বল নিয়ে খেলছে"--এখানে কর্তা = রুবাই, কর্তার বিভক্তি = শূন্য, কর্ম (শব্দ) = বল, কর্মের বিভক্তি = নিয়ে (অব্যয় ব্যবহৃত হয়েছে বিভক্তি হিসেবে)। এখন শুধু যদি কর্মবাচক শব্দ আর কর্তার স্থানপরিবর্তন করি, তাহলে বাক্যের অর্থ ঠিক থাকে না (বাক্যটি সেক্ষেত্রে হয় "বল রুবাই নিয়ে খেলছে")। কিন্তু যদি বিভক্তিসমেত পুরো কর্মপদটির স্থানান্তর ঘটাই, তাহলে বাক্যের অর্থ অটুট থাকে ("বল নিয়ে রুবাই খেলছে")।
    ২। "গোরু ঘাস খায়"--এখানে কর্তা = গোরু, কর্তার বিভক্তি = শূন্য, কর্ম (শব্দ) = ঘাস, কর্মের বিভক্তি = শূন্য (যদিও অনেকে বলতে পারেন, এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি "-কে" উহ্য আছে, অর্থাৎ বাক্যটি আসলে "গোরু ঘাসকে খায়")। তো যেখানে এইভাবে আসল বিভক্তি উহ্য থাকে, বা লুপ্ত হয়, সেখানে কর্ম ও কর্তার স্থানপরিবর্তনে গুরুতর অর্থভ্রান্তির সম্ভাবনা। য্যামন, এখানে, কর্ম ও কর্তার স্থানবদল করলে বাক্যটি দাঁড়াবে--"ঘাস গোরু খায়"।
    ঠিক একই যুক্তি ইংরিজির ক্ষেত্রেও খাটে। যেখানে প্রত্যক্ষত preposition ব্যবহার হয়, সেই বাক্যে subject-object স্থানপরিবর্তন করলেও করতে পারে। য্যামন, "Wolverine kills by his fangs" এই বাক্যটিকে এভাবে লেখা যায়--"By his fangs, Wolverine kills". কিন্তু যদি লিখি "Fang kills by his Wolverine" তাহলে বাক্যটি অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

    উত্তরমুছুন
  7. "ইংরেজিতে প্রথমে আসে মালিক, মালিকের অঙ্গুলি হেলনে ঘটনাটা সচল হয় বা প্রাণ পায়, কিন্তু তার প্রাণময়তা শেষ হয় বস্তুতে বা অবজেক্টে। একদিক থেকে মালিক আর অন্যদিক থেকে বস্তুর আকাঙ্ক্ষার জন্য আমার সচল অস্তিত্ব। একদম সোজাসাপটা পুঁজিবাদী বস্তুতান্ত্রিক কাঠামো। "

    ওপরের আলোচনার ভিত্তিতে, এইসব গভীর দর্শনের প্রস্তাবনা প্রায় নিরর্থক বলেই আমার মনে হয়। কিছু চাপিয়ে দেওয়া তত্ত্বের ছেঁদো যুক্তিজাল প্রয়োগ করে এইরকম ব্যাকরণ-দর্শন বা বাগার্থ-দর্শনের প্রস্তাবনা খুবই tall claim, ও আমার কাছে তেমন বিশ্বাসযোগ্য বলেও মনে হলো না।

    উত্তরমুছুন
  8. পুনশ্চঃ কলিম খান ও তাঁর সহকর্মীরা যেভাবে বাংলাভাষাকে ক্রিয়াভিত্তিক বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, সেই প্রকরণগুলির সঙ্গেও আমি একমত নই। আমার মনে হয়েছে, সংস্কৃত ব্যাকরণ-দর্শনের ও বাগার্থ-দর্শনের (বার্তিক, মীমাংসা ইত্যাদি) কিছু তত্ত্ব বা সিদ্ধান্তকে (শাব্দীভাবনা, অর্থীভাবনা ইত্যাদি) জোর করে বাংলার শরীরে চাপিয়ে একটি দো-আঁশলা বস্তু তাঁরা উৎপন্ন করেছেন বলেই আমার মনে হয়। একটি উদাহরণ দিই। শব্দের অর্থসংকোচ, অর্থপ্রসারণ, অর্থচ্যুতি (তার মূল ধাতুর থেকে) একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা, ও যেকোনো ভাষার ক্ষেত্রেই সত্য। ইংরিজিতেও "ruminate", "cultivate" প্রভৃতি শব্দ তার মূল ধাতু ও ব্যুৎপত্তিগত অর্থ থেকে সরে এসে আরো ব্যাপকতর বা সঙ্কীর্ণতর অর্থকে ধারণ করে। এই ঘটনাটিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে যেভাবে ক্রিয়াভিত্তিক ভাষার দর্শনে ব্যবহার করা হয়, তাতে ভয়ানক অতিব্যাপ্তি অ অতিরঞ্জনের দোষ ঢুকে পড়ে বলেই আমার মত। তাছাড়া, যেসব বিদেশী শব্দ (বাংলায় অসংখ্য মুন্ডা, কোল, ভীল ইত্যাদি দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীর শব্দ রয়েছে, রয়েছে পর্তুগীজ, ফার্সি, আরবি ও ইংরিজি থেকে আহৃত শব্দ) বাংলায় ঢুকে পড়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটাতে গেলে অনেক নতুন ধাতু আবিষ্কার করতে হবে, আর নয়তো সেই শব্দগুলিকে অস্বীকার করতে হবে।
    যদিও, এই প্রবন্ধে এ সব বিষয় নিয়ে একবিন্দুও আলোচনা হয়নি, তাই এ বিষয়ে অধিক বাগবিস্তার করা থেকে আপাতত বিরত রইলুম। তাছাড়া এসব আলোচনার জন্যে পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধের পরিসরও প্রয়োজন বটে।

    উত্তরমুছুন