কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

১০) স্বাগতা পাল

স্লিপিং পিল



খাট থেকে মেঝেতে নামতেই খুব কষ্ট হয় তুহিনার। অসহ্য ব্যথায় টনটন করছে

তার স্তন-যুগল, শিরদাঁড়া, যোনি আর ঊরু দুটো। নীলাভ নাইট ল্যাম্পের আলোয় দেখতে পায়, তার শাড়ি-সায়া-ব্লাউজ-ব্রেসিয়ার ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় সমস্ত মেঝে জুড়ে। সেগুলো একটা একটা করে তুলে বুকের কাছে জড়ো করতেই নতুন তাঁতের শাড়ির ঘষা লেগে চিড়বিড়িয়ে জ্বালা করতে থাকে সেখানটা। ড্রেসিংটেবিলের সামনের টুলটায় সেগুলো রেখে ঐ স্বল্পালোকেই আয়নায় নিজের নগ্ন দেহটার প্রতিবিম্ব দেখেই ভয়ে শিউরে ওঠে তুহিনা। তার শুভ্র-কবুতর স্তন আর মাঝখানের উপত্যকা ছেয়ে গেছে অসংখ্য নখের আঁচড় আর কালশিটেতে। প্রচণ্ড রাগে তুহিনার কপাল কুঞ্চিত হয়; চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় খাটের দিকে। ফুলের মালার বাহারী নক্সার জালে ঘেরা নতুন খাটের অপর প্রান্তে পাশবালিশ জড়িয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে উলঙ্গ এক পুরুষ শরীর। এটা ভাবতেই এখন খুব খারাপ লাগছে তুহিনার যে, এই পুরুষটা তার সদ্য বিবাহিত স্বামী! আর আজ তাদের ফুলশয্যার রাত্রি!

আস্তে আস্তে জামাকাপড় পরে ফ্রিজ থেকে খুব ঠাণ্ডা জলের বোতল বের করে ঢকঢক করে অনেকটা জল খায় তুহিনা। তারপর মন্থর পায়ে এগিয়ে যায় পশ্চিমমুখি জানালাটার দিকে। কপাট দুটো খুলতেই ভরা পূর্ণিমার চাঁদটা তুষারশুভ্র জ্যোৎস্না ঢেলে দেয় তুহিনার সারা দেহে। অতি কষ্টে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে জানালার সামনে বসে অপলকে চেয়ে থাকে সে মায়াবি-রূপোলী চাঁদের দিকে। তার চোখে ফুটে ওঠে কৃতজ্ঞতা। কারণ, আজকের বিশেষ তিথিতে চাঁদ তার সঙ্গে একটুও বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কিন্তু কী অনায়াসে সমস্ত প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে তুহিনার মনে গড়ে ওঠা

বিশ্বাসের ঘরটাকে নিমেষে ধূলোয় মিশিয়ে দিলো আজ রজত; তার স্বামী! অথচ আইবুড়ো ভাত খাওয়ার দিনেও এই লোকটিই ছিল তুহিনার কাছে রূপকথার রাজপুত্র!

বাংলা গান নিয়ে সদ্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রী পড়তে ঢুকে আলাপ হয়েছিল রজতের সাথে তুহিনার। তুখোড় তবলা-বাদক সে। তুহিনাও সুকণ্ঠী গায়িকা। আর তাই তাদের প্রেমে পড়াটা অস্বাভাবিক ছিল না মোটেই। তবে টানা দু-বছরের প্রণয় সম্পর্কে একমাত্র চুম্বন ছাড়া শরীরের সবটুকু রহস্য জেনে ফেলতে চায়নি তারা। এই সত্যিটা অবশ্য কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারতো না রজত আর তুহিনার কোনো বন্ধু। কারণ সকলেই জানত যে, তুহিনার সংগীত-চর্চার নিরিবিলি ঘরে অনায়াসেই লিপ্ত হওয়া যায় সঙ্গমে। আর তাই অবিশ্বাসীদের সামনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে তাদের রাগিয়ে দিতে খুব মজা পেত তারা। এবং সেইসঙ্গে সবার আড়ালে তারা মত্ত থাকত ফুলশয্যার রাতটাকে স্পেশাল করে তোলার পরিকল্পনায়। দুজনেই ভেবে রেখেছিল - ঐ দিনটিকে হাসি-গল্প-গান আর আদরে ভরিয়ে চিরস্মরণীয় করে রাখবে তারা।

অবশ্য বিয়ের মাস ছয় আগে এক দম্পতি বন্ধুর কাছে তুহিনা শুনেছিল, প্রায় একবছর ধরে রজত নাকি রোজ রাতে কড়া ডোজের স্লিপিং পিল খাচ্ছে! রজতকে এ কথা বলতেই সে তুহিনার গাল দুটো ভালো করে টিপে দিয়ে বলেছিল – “খুকুমনি আমার, ওরা চাইছে আমরা তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলি আর তোমার মাস্টার ডিগ্রী অর্জন শিকেয় উঠুক। এটুকুও বোঝ না?”

সেদিন রজত যে কত বড় মিথ্যে বলেছিল, তা আজ বুঝতে পারল তুহিনা। সব

নিয়ম-কানুন সাঙ্গ করে আত্মীয়েরা চলে যেতেই দরজা ভালো করে বন্ধ করে রজত তড়িঘড়ি তুহিনার আঙুলে আংটি পরিয়েই মাংসলোলুপ শিয়ালের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তুলতুলে নরম তুহিনার ওপর। নবোঢ়ার লজ্জা ভাঙানো তো দূরে থাক, ভয়ার্ত তুহিনার শরীরটাকে চরম ভাবে ভোগ করে পরম তৃপ্তিতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলো রজত। তুহিনার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দতেও রজত জাগলো না। বরং তুহিনা ধাক্কা মেরে তার ঘুম ভাঙাতে গেলে ঘুমজড়ানো কণ্ঠে সে নির্দ্বিধায় বলে উঠল - “ঘুমটা ভাঙিও না প্লিজ! আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। অনেকদিন পরে আজ স্লিপিং পিল ছাড়া ঘুম এসেছে। তোমার সব কথা আমি কাল সকালে শুনব”।

তার মানে? আজ থেকে তুহিনা রজতের কাছে শুধুই স্লিপিং পিলের বিকল্প মাত্র!


1 কমেন্টস্: