প্যালিনড্রোম
সাঁঝবাতি
(১)
কদিন ধরে নিজের ছায়াটাও ফেড আপ হয়ে যাচ্ছিল। নিজের অনুভূতির প্রতি আর রাশ থাকছে না। বুড়ো বাবা মা, পাগল প্রেমিকা এবং টিভির মোটা লোকটাও পর্যন্ত জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে, কখন কীভাবে থাকলে নিজের অনুভূতি বশে রাখা যায়। ছ’টা রিপু কীভাবে দাঁত নখ বের করে প্রেমিকার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিচ্ছে, মাঝে মাঝে খাবারের থালা ছুঁড়ে ফেলে প্রমাণ করে দিতে চাইছে শিশ্নের জোর।
ছোটবেলা থেকে আমার একটা লুকানোর জায়গা ছিল। বাথরুমে ঢুকে খুব জোরে কল চালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চার্লি চ্যাপলিন সাজতাম। সাদাকালো হয়ে আসতো চারদিকটা, আমি ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে দুনিয়াকে ওইটা দেখাতাম। আর আয়নাও ওপাশ থেকে আমায় ওইটা। একমাত্র এই জায়গাতেই আমি খাপ খুলতে পারিনি, রাগতে পারিনি।
সেদিন বাবাকে উত্তমমধ্যম দেওয়ার পর কান্নাকাটি, চেঁচামেচি পেরিয়ে কোনোমতে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। উদোম মাস্টারবেট করতে করতে আয়নার সামনে নিজেকে খুব বাবার মতো লাগছিল কি? মুছে দিলাম কাচটা। একবার, দু’বার, তিনবার। বারবার হাতটা পিছলে যাচ্ছিল। এত বাষ্প জমে কেন? আয়নাটা আজ পরিষ্কার হচ্ছে না। নিজের মুখের ওপর তিন চার বার হাত বোলালাম। কিছুদিনের বাসি দাড়ি, হাল্কা হয়ে আসা সাদাকালো চুল, ঢোকা চোখ, একটুও না ভালোবাসা পাওয়া মুখ-- আমার তো নয়! বন্ধুরা বলতো, আমি নাকি চিরঞ্জিতের মতো দেখতে। কী যে আলফাল দেখছি! হাতটা আবার পিছলে ঢুকে গেল। আয়নার গায়ে যেন কালো রঙের গর্ত তৈরি হচ্ছে! হাত দিতেই টেনে নিল, ব্ল্যাক হোলের মতো। খুব ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে নিলাম। আরেকবার কৌতূহল দেখাতে যেতেই ব্ল্যাক হোলটা আমায় ভিতর দিকে টেনে নিতে শুরু করল। ছটফট করছি, যেতে চাইছি না, তাও প্রাণপণে আমাকে অল্পক্ষণেই আরেকটা বাথরুমে এনে ফেললো। একই রকম দেখতে, শুধু সব কিছু উলটো। একটা ছেলে আমার পাশেই ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অনেকটা চিরঞ্জিতের মতো দেখতে। ভীষণ চেনা! চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম -- কী হচ্ছে এসব! আমি কোথায়? গলা থেকে আওয়াজ বেরোলো না। ছেলেটা মিষ্টি হেসে আমার মতোই আয়না ভেদ করে অন্য দিকে চলে গেল। ভয়ে চেঁচাচ্ছি আমি, ধাক্কা দিচ্ছি। দেখতে পেলাম আমারই ছায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবার হাসল। আমি ক্রমাগত কাঁদছি, রাগছি, আঁচড়াচ্ছি...
(২)
পাড়ার সকলে বলে, বাবাইয়ের মতো ছেলে হয় না। মা বাবাকে এই তো ফরেন ট্যুরে পাঠালো। কী যত্নআত্তি করে! মুখে হাসি ছাড়া কথাই নেই! সত্যি ছেলেটা পালটে গেছে একদম!
কেবল বাথরুমে ঢুকলে এখনও দেরি হয়ে যায় আমার। আমি নগ্ন হয়ে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাসতে শুরু করতাম। হাসতে হাসতে এভাবেই একদিন আয়নাটা ভেঙে ফেললাম। কয়েকটা চার্লি চ্যাপলিনের সাদাকালো টুকরো হাসতে হাসতে কীভাবে যে আবর্জনায় মিশে গেল, আর কেউ জানতেও পারলো না!
(১)
কদিন ধরে নিজের ছায়াটাও ফেড আপ হয়ে যাচ্ছিল। নিজের অনুভূতির প্রতি আর রাশ থাকছে না। বুড়ো বাবা মা, পাগল প্রেমিকা এবং টিভির মোটা লোকটাও পর্যন্ত জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে, কখন কীভাবে থাকলে নিজের অনুভূতি বশে রাখা যায়। ছ’টা রিপু কীভাবে দাঁত নখ বের করে প্রেমিকার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দিচ্ছে, মাঝে মাঝে খাবারের থালা ছুঁড়ে ফেলে প্রমাণ করে দিতে চাইছে শিশ্নের জোর।
ছোটবেলা থেকে আমার একটা লুকানোর জায়গা ছিল। বাথরুমে ঢুকে খুব জোরে কল চালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চার্লি চ্যাপলিন সাজতাম। সাদাকালো হয়ে আসতো চারদিকটা, আমি ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে দুনিয়াকে ওইটা দেখাতাম। আর আয়নাও ওপাশ থেকে আমায় ওইটা। একমাত্র এই জায়গাতেই আমি খাপ খুলতে পারিনি, রাগতে পারিনি।
সেদিন বাবাকে উত্তমমধ্যম দেওয়ার পর কান্নাকাটি, চেঁচামেচি পেরিয়ে কোনোমতে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। উদোম মাস্টারবেট করতে করতে আয়নার সামনে নিজেকে খুব বাবার মতো লাগছিল কি? মুছে দিলাম কাচটা। একবার, দু’বার, তিনবার। বারবার হাতটা পিছলে যাচ্ছিল। এত বাষ্প জমে কেন? আয়নাটা আজ পরিষ্কার হচ্ছে না। নিজের মুখের ওপর তিন চার বার হাত বোলালাম। কিছুদিনের বাসি দাড়ি, হাল্কা হয়ে আসা সাদাকালো চুল, ঢোকা চোখ, একটুও না ভালোবাসা পাওয়া মুখ-- আমার তো নয়! বন্ধুরা বলতো, আমি নাকি চিরঞ্জিতের মতো দেখতে। কী যে আলফাল দেখছি! হাতটা আবার পিছলে ঢুকে গেল। আয়নার গায়ে যেন কালো রঙের গর্ত তৈরি হচ্ছে! হাত দিতেই টেনে নিল, ব্ল্যাক হোলের মতো। খুব ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে নিলাম। আরেকবার কৌতূহল দেখাতে যেতেই ব্ল্যাক হোলটা আমায় ভিতর দিকে টেনে নিতে শুরু করল। ছটফট করছি, যেতে চাইছি না, তাও প্রাণপণে আমাকে অল্পক্ষণেই আরেকটা বাথরুমে এনে ফেললো। একই রকম দেখতে, শুধু সব কিছু উলটো। একটা ছেলে আমার পাশেই ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অনেকটা চিরঞ্জিতের মতো দেখতে। ভীষণ চেনা! চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম -- কী হচ্ছে এসব! আমি কোথায়? গলা থেকে আওয়াজ বেরোলো না। ছেলেটা মিষ্টি হেসে আমার মতোই আয়না ভেদ করে অন্য দিকে চলে গেল। ভয়ে চেঁচাচ্ছি আমি, ধাক্কা দিচ্ছি। দেখতে পেলাম আমারই ছায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবার হাসল। আমি ক্রমাগত কাঁদছি, রাগছি, আঁচড়াচ্ছি...
(২)
পাড়ার সকলে বলে, বাবাইয়ের মতো ছেলে হয় না। মা বাবাকে এই তো ফরেন ট্যুরে পাঠালো। কী যত্নআত্তি করে! মুখে হাসি ছাড়া কথাই নেই! সত্যি ছেলেটা পালটে গেছে একদম!
কেবল বাথরুমে ঢুকলে এখনও দেরি হয়ে যায় আমার। আমি নগ্ন হয়ে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাসতে শুরু করতাম। হাসতে হাসতে এভাবেই একদিন আয়নাটা ভেঙে ফেললাম। কয়েকটা চার্লি চ্যাপলিনের সাদাকালো টুকরো হাসতে হাসতে কীভাবে যে আবর্জনায় মিশে গেল, আর কেউ জানতেও পারলো না!
অনবদ্য । আচ্ছা আমাকে পোস্ট করা সেই শর্ট ফ্লিম ব্ল্যাকহোল কি এই লেখার বীজ ? তুমি Palindromeশব্দটি ব্যবহার করে একটা দিক নির্দেশ করেছ বলে নই , তোমার পাঠানো ওই সিনেমাটিতেও ওই শিল্পগুন আছে বলে মনে হই|কিন্তু কি সুন্দর তোমার narrative |
উত্তরমুছুনBhaaree unmukto (nijer kachhey) aar nishthur sotyo er kothaa likhechhen 'Saanjhbaati'Aapnaar shesh taa o besh appealing!! Aapnaar lekhaar niyomito paathok hoye uthchhi.
উত্তরমুছুনPshychology khub anoboddhyo touch na thakle e lekhata lekha jai na. Aina, bathroom, babai, kichu hote chaoar abar poriskar thik ki hoye chaiche. Ekta dondo ekta monostotwo er jotil dondo, khub anoboddyo bhabe fute utheche. Valo laglo. Chomothkar lekha
উত্তরমুছুন