কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১২৭

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১২৭

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ১২৭ / দ্বাদশ বর্ষ : সপ্তম সংখ্যা    



 

২১ ফেব্রুয়ারী। এই দিনটি আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে পরিচিত। একইসঙ্গে দিনটি শহীদ দিবস হিসেবেও পরিচিত। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মূলত  বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিশ্বের সর্বত্র বাংলাভাষী অঞ্চলে ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।

আমরা সবাই জানি যে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, যদিও দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত খন্ডিত হয় এবং পাকিস্তান নামে একটি নতুন দেশের জন্ম হয়। আবার এই পাকিস্তান দেশটিও ভৌগলিক কারণে দুটি নামে পরিচিত হয় -  পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। অবশ্য রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাকিস্তানের দুটি ভাগেই ঊর্দূভাষা প্রচলিত হয়, যদিও পূর্ব পাকিস্তান ছিল মূলত বাংলাভাষী অধ্যুষিত অঞ্চল। আর তাই স্বাভাবিক কারণেই পাকিস্তানের দুই ভাগের ধর্ম-পরিচিতি ইসলাম হলেও বাংলাভাষীদের ভাষাচেতনার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় ভাষা-বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ ক্রমশই দানা বাঁধতে শুরু করে এবং ১৯৪৮ সালে তা আন্দোলনের রূপ ও আকার ধারণ করতে থাকে, যা ক্রমশ বিস্তৃত হতে হতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী তার চরম প্রকাশ ঘটে।  

এই ঐতিহাসিক দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পুলিশের ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল করে বেরিয়ে আসে রাজপথে। আর তখনই সশস্ত্র পুলিশবাহিনী তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। আবুল বরকত,  আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরাও প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে। পরের দিন২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। বলা বাহুল্য, একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য  দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে 'বাংলা ভাষা প্রচলন বিল' পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে।

বাংলা মাতৃভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে প্রচলিত হয় আরও পরে। ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারছি – “কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্যকর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। পরে রফিক, আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনও-র কানাডীয় দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয়।

১৯৯৯ সালে তারা জোশেফের সাথে ও পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন, আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫টি সদস্য দেশ – কানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দানে ২৯টি দেশ অনুরোধ জানাতে কাজ করেন।

১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়”। (সংগৃহীত)

‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675