কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 


 

কালিমাটি অনলাইন / ১২৪ / দ্বাদশ বর্ষ : চতুর্থ সংখ্যা

সুদূর অতীতের কথা নয়, অদূর অতীতেও, আমাদের এই উপমহাদেশে বাঙালি জাতি একটা স্বতন্ত্র সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিল। সেই মর্যাদা ও সম্মানদান করেছিলেন এই উপমহাদেশে বসবাসকারী অন্যান্য  জাতির মানুষেরা। এবং শুধু এই উপমহাদেশেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সেই সম্মান ও মর্যাদালাভ করেছিলাম আমরা বাঙালিরা। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ধর্মভাবনা, আধ্যাত্মিকতা, দার্শনিকতা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের মানুষদের প্রভাবিত করেছিল, পথনির্দেশ করেছিল বাঙালিরা। বিশেষত বাঙালির ঘরে এমন কিছু মহাপুরুষ এবং প্রতিভাবান মানুষের জন্ম হয়েছিল, যাঁরা তাঁদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। একইসঙ্গে বাঙালিরা ছিল বিপ্লব ও আন্দোলনের প্রথম সারিতে। তাদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের ইতিহাস কখনও বিস্মৃত হবার নয়। আর তাই মহামতি গোপালকৃষ্ণ গোখলে একদা মন্তব্য করেছিলেন, আজ বাংলা যা ভাবে, কাল ভারত তা ভাবে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার কথা, আমরা বাঙালিরা আমাদের সেই সম্মান ও মর্যাদাকে রক্ষা করতে পারিনি। সময় যত অতিবাহিত হয়েছে, বাঙালিজাতি ততই নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ তাঁদের প্রতিভার দরুণ উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছেন, কিন্তু জাতিগতভাবে নয়। আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করি না, যেমন আমি বসবাস করি ঝাড়খন্ডে, প্রায়শই অন্যান্য ভাষাভাষির মানুষেরা বাঙালির সাম্প্রতিক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের কারণে বাঙালির প্রতি আর আগের মতো শ্রদ্ধাভাব পোষণ করেন না। কখনও বা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে থাকেন। তাঁরা পরিষ্কার উচ্চারণে বলে থাকেন যে, বাঙালিজাতির অতীত নিঃসন্দেহে গৌরবময়, কিন্তু বর্তমান অত্যন্ত হতাশাজনক। বাঙালিজাতি এখন পরিণত হয়েছে ভীরু ও সুবিধাবাদী জাতিতে। বস্তুতপক্ষে এই অভিযোগ অস্বীকার করারও নয়। তবু প্রত্যুত্তরে উল্লেখ করতেই হয়, দেশ স্বাধীন হবার পর পশ্চিমবঙ্গে যে সত্তর দশকের আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই আন্দোলন গড়ে তুলেছিল মূলত বাঙালিরাই, নেতৃত্বেও ছিল তারাই, শহিদের মৃত্যুবরণ করেছে অধিকাংশ তারাই। এই আন্দোলন কাঁপিয়ে দিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত। সত্তর দশকে মুক্তির দশকের স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা সবাই।

তবু বলতে হয়, সত্তর দশকের সেই আন্দোলন ছিল একটি রাজনৈতিক দল পরিচালিত আন্দোলন, যা কখনই গণ আন্দোলনে পরিণত হয়নি বা উৎসারিত হয়নি। কিন্তু এবছর আগষ্টমাসে কলকাতা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ডাক্তার তরুণী তিলোত্তমাকে নৃশংসভাবে হত্যা ও ধর্ষণের  প্রতিবাদে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জনসাধারণ যেভাবে বিচারের দাবিতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে সোচ্চার হয়ে উঠলেন, তা ছিল অভূতপূর্ব। বলা বাহুল্য, এই আন্দোলন তারপর ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে এবং বিস্তৃতিলাভ করেছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া অস্বীকার করে বাঙালিদের এই প্রতিবাদ দুরন্ত মাত্রা লাভ করেছিল মূলত  মহিলাদের রাত দখলের কর্মকান্ডে। তারই সঙ্গে বিভিন্ন পথমিছিল, পথসভা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের  কর্মবিরতি ও আমরণ  অনশন চলেছে সমান্তরালভাবে। সিনিয়র ডাক্তাররা তারই সমর্থনে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে গণ-ইস্তফা দিচ্ছেন। তিলোত্তমার বিচারের প্রক্রিয়া এখন চলছে সুপ্রিম কোর্টে এবং অনুসন্ধানকাজে নিমগ্ন আছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাসংস্থা সি বি আই। বিচার সম্পন্ন হলে আমরা যেমন জানতে পারব, এই নিকৃষ্ট হত্যা ও ধর্ষণকান্ডের অপরাধী কারা কারা এবং তাদের জন্য কোন শাস্তির আদেশ করা হয়েছে।

পরিশেষে একটা কথা উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি, তিলোত্তমার হত্যা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে যেভাবে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষেরা, বিশেষত মহিলারা ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন, তা বাংলা ও বাঙালির পূর্বগৌরবকে ফিরিয়ে এনেছে, বাঙালিজাতি তার স্বাভাবিক মর্যাদায় মহিমান্বিত হয়েছে।    

‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675