![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৫০ |
বাঁচার মধ্যে কোনো সবুজ নেই
আকাশ খুঁড়লে পাওয়া যায় না কিছু,
শুধু হাহাকার আর শূন্যতা। তবু মানুষের
বিশ্বাস আকাশের ওপারে আছে স্বর্গ,
মাটি আর আকাশের মাঝখানে নরক।
মাঝে মাঝে কাক ডাকে। চেনা
যায় না কে জীবিত কে প্রেত!
পোশাক ঢেকে রাখে ভাঙাচোরা বুক।
দিবসে যত আলো তার চেয়ে বেশি অন্ধকার।
দিকে দিকে মন্দির মসজিদ গির্জার
চূড়া
সকাল সন্ধ্যা প্রার্থনা তবু রক্তে
ধিকিধিকি আগুন হিংসা কমে না।
আইন সবার জন্য সমান সাবেকি
বিশ্বাসের স্তম্ভ থেকে খসে পড়ছে
মোহ।
মিছিলের জনপদ বিমূর্ত চীৎকারে ভরা
এখন বাঁচার মধ্যে কোনো সবুজ নেই
কিছুটা অভ্যাসে ধূসর বেঁচে থাকা।
বাড়ি ফেরা
দুপুর গড়িয়ে অর্ধেক বিকেল
আলো ছায়া মাখা প্রান্তর বিষণ্ণ
করুণ বাড়ি ফেরার জন্য মাছরাঙা
পাখির ডানা মেলার তোড়জোড় শুরু
নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে ঢেউ গুনি
দেখি কিছু কিছু নৌকো ঘাটে অপেক্ষায়
আছে জল মাপছে মাছরাঙা পাখি
মৃদু ঢেউ টোকা দিচ্ছে নৌকোর গায়ে
বেদনা অমূল্য সম্পদ
বুকের বাঁ দিকে জমিয়ে রাখা ভালো
মুহূর্তে তুমুল বৃষ্টিপাত হলে
শোক বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়
পশ্চিমে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে
গোধূলির
শেষ চিহ্নটুকু তল্পিতল্পা গুছিয়ে
সম্পর্কের ঘরে তালা দিয়ে মাছরাঙা
পাখি
নিঃশব্দে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি
নেয়।
শান্তিনিকেতনে
একা একা
শান্তিনিকেতন। কাচের ঘর। ছাতিম
তলা।
ধ্যানমূর্তি। আনন্দ পাঠশালার
ক্লাস বসে আকাশের নিচে।
এক অদ্ভুত মায়া জড়ানো সুগন্ধী
বহমান
হাওয়ায়। ঐ তো আম্রকুঞ্জ, শালবীথী
উদাসীন ছায়ারোদ, হাঁটতে হাঁটতে
নন্দলালের ছবিঘর। সুজাতার মূর্তি
চোখ বুজে বসে আছেন বুদ্ধদেব
বোধি বৃক্ষের নীচে, এই নীরবতা গম্ভীর
মনে পড়ে রামকিঙ্কর। শান্তিনিকেতনে
আমি একা একা হাঁটি।
উৎসব টুৎসবে কক্ষনো আসি না এখন
বাজার দখল করেছে বসন্ত উৎসব
পৌষমেলা, খোয়াই সোনাঝুরি বন ঐতিহ্য
হারিয়ে কাপড়ের হাট ক্যানালের
পাড়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকে
টোটো।
রবিঠাকুরের গানে গানে আজো আমি
শান্তি পাই, খুঁজে পাই সবকটি ঋতু।
বিমর্ষ প্রাণে শুদ্ধ স্বরের ছোঁয়াটুকু
নিতে
পবিত্র শান্তিনিকেতনে আমি একা একা
হাঁটি, জীবনের মানে খুঁজি পায়ে
চলা
পথের ঝরাপাতাদর দলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন