বড় পর্দায় ইংরজী ছবি
কলকাতায় কনিষ্ঠতম ৭০ মিমি প্রেক্ষাগৃহ
যমুনা |
কলকাতায়
চৌরঙ্গী-অঞ্চলে কনিষ্ঠতম – এবং এখন লুপ্ত – ৭০ মিমি পর্দাবিশিষ্ট হল ছিল মার্কী স্ট্রীটের
‘যমুনা। এখানে যে ছবি প্রথম দেখি তা যে শুধু ৩৫ মিমি ছিল তাই নয়, ছিল সাদা-কালো, এবং
আদতে গতানুগতিক পূর্ণদৈর্ঘের কাহিনিচিত্রই নয়! এটি ১৯৪৩ সালে তৈরি, ১৫ পর্বের একটি
‘সিরিয়াল! নাম এবং কেন্দ্রীয় চরিত্র আমাদের ছোটবেলার, প্রথমে অরণ্যদেব, পরে বেতাল,
The Phantom, নাম ভূমিকায় টম টাইলার। হারানো নগর Zoloz-এর খোঁজে অধ্যাপক ডেভিডসন, প্রতিপক্ষ
ডক্টর ব্রেমার। ব্রেমার ফ্যান্টমকে হত্যা করে, ফলে ফ্যান্টমের ছেলে – কমিক স্ট্রিপে
Kit Walker নামটি তখনও আসেনি – জিওফ্রে প্রেস্কট – বাবার স্থানে অভিষিক্ত হয়ে খল চরিত্রদের
সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায়। গোরিলার সঙ্গে কুস্তি, চোরাবালিতে ফ্যান্টমের পড়ে যাওয়া, কুমিরের
আক্রমণ, সবই ছিল ছবিটিতে। তবে, যতদূর মনে পড়ে, সিরিয়ালের পর্বগুলি ঠিকভাবে সাজানো ছিল
না, তাই কাহিনির অগ্রগতি খানিকটা এলোমেলো লেগেছিল।
সত্তরের
দশকে এই ছবি দেখা, মার সঙ্গে। নব্বইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে, তখন বিয়ে হয়ে গেছে, স্ত্রীর সঙ্গে
বাদানুবাদের ফলে তাঁকে বাদ দিয়ে, শ্যালককে নিয়ে আবার যমুনায় – ১৯৯৬ সালে তৈরি, রঙিন,
৭০ মিমি পর্দা জুড়ে Billy Zane-অভিনীত The Phantom দেখতে! উক্ত অভিনেতা ছাড়াও, অন্যান্য
চরিত্রে বেশ কিছু পরিচিত নাম পাওয়া যাবে। ফ্যান্টমের প্রেমিকা ডায়ানা পামারের ভূমিকায়
Kristy Swanson, প্রথমে femme fatale এবং মুখ্য খলনায়ক Xander Drax-এর সহকারিণী সালার
চরিত্রে Catherine Zeta-Jones, কিট যেহেতু ২১তম ফ্যান্টম, তাকে উপদেশ দিতে মাঝে-মাঝেই
আবির্ভূত হন তার বাবা, ২০তম ফ্যান্টম, অভিনয়ে Patrick McGoohan। পরে স্ত্রীকে নিয়ে
ছবিটি যমুনায় দ্বিতীয়বারও দেখেছিলাম।
যমুনায়
৭০ মিমি প্রোজেকশানে দেখা প্রথম ছবি ১৯৭৬-এর পুনর্নির্মিত রঙিন King Kong। মন্দ লাগেনি
(১৯৩৩ সালের অবিস্মরণীয় আদি ছবিটি দেখেছিলাম ১৯৬৮-তে, বেতের চেয়ারে বসে, মাথার ওপর
পাখা-ঘোরা টাইগার-এ!), তবে ডাইনোসরদের অনুপস্থিতি মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল!
১৯৮৮-তে
বিদেশ থেকে ফিরে যমুনায় দেখি, ওদেশে ভিডিওতে দেখা মজার ভূতের ছবি Ghostbusters-এর দ্বিতীয়
কিস্তি, Ghostbusters II। এটি বড় পর্দা জুড়ে ছিল। কিন্তু বিদেশে দেখা এবং যমুনায় দ্বিতীয়বার
দেখতে যাওয়া জেমস ক্যামেরন পরিচালিত Aliens ৩৫ মিমিতেই দেখতে হয়েছে। দুটি ছবিতে দুটি
ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন Sigourney Weaver।
যমুনায়
দেখা সবচেয়ে স্মরণীয় ছবি ১৯৯৩ সালে তৈরি স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত মাইকেল ক্রাইখটনের
উপন্যাসের চিত্ররূপ Jurassic Park! এটি কিন্তু ৩৫ মিমিতেই দেখতে হয়েছিল। দেখে সবাইয়ের
এত ভাল লেগেছিল – স্ত্রী, শ্যালক, শ্যালিকা – যে টিকিট কেটে শ্বশুর-শাশুড়ীকে দেখতে
পাঠাই!
বড়
পর্দায় যমুনায় দেখেছি সস্ত্রীক, আবার জেমস ক্যামেরন পরিচালিত Terminator 2:
Judgement Day। এই সিরিজের প্রথম ছবি The Terminator স্ত্রীকে নিয়েই দেখেছি ৩৫ মিমি
প্রোজেকশানে, নিউ এম্পায়ারে। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে এই জাতীয় ছবি দেখানোর ব্যাপারে
তাঁর ভাসুর – আমার দাদা – মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন!
যমুনায়
দেখা শেষ ছবি সম্ভবত আমার শ্যালকের সঙ্গে, ১৯৯৫ সালে তৈরি কল্পবিজ্ঞান-হরর Species।
৭০ মিমি প্রোজেকশানই ছিল।
(নবম পর্ব)
আমার সবচেয়ে প্রিয় দুটি ছবি। প্রথমটি কলকাতায় মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে, গ্লোব সিনেমায়। মনে হয় এক বছরের মতো চলেছিল, যা ইংরেজী ছবির পক্ষে অপ্রত্যাশিত। পরে, সত্তরের দশকে রাজ কাপুরের ববি বছরখানেক চলবে, আর প্রায় এক বছর চলবে ইয়াদোঁ কী বারাত।
The
Sound of Music চলচ্চিত্রায়িত হয় ১৯৬৫ সালে। উৎস ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত Maria Von
Trapp-এর আত্মজীবনীমূলক The Story of the Trapp Family Singers, যার থেকে ১৯৫৯ সালে
এক মঞ্চসফল সঙ্গীতবহুল নাটক প্রযোজিত হয়। লেখক ছিলেন Richard Rogers এবং গীত রচয়িতা
Oscar Hammerstein II। ১৯৬১-তে এইরকম সংগীতধর্মী নাটক West Side Story চিত্রায়িত করে
সফল Robert Wise এবার The Sound of Music-এর দায়িত্ব নেন। মুক্তি পাবার পর মিশ্র, অনেক
সময় নেতিবাচক, সমালোচনা সত্বেও ছবিটি অভূতপূর্ব দর্শকানুকুল্য পায়, যা ডলারের অঙ্কে
১৯৩৯ সালের Gone with the Wind-কেও ছাড়িয়ে যায়। আমেরিকার National Film Registry-তে
ছবিটি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা শৈল্পিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে সুরক্ষিত হয়েছে।
আমাদের
বাবা ১৯৬৫ থেকে সিনেমা দেখার ব্যাপারে এক নির্মম-সদয় রীতি চালু করেন। বছরের নির্দিষ্ট
সময় জ্বর-উৎপাদক এবং অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক T. A. B. C. ইনজেকশন নিতে হবে, এবং তার কষ্ট
ভোলার জন্য সিনেমা দেখা যেতে পারে! The Sound of Music প্রথমবার দেখা এই পীড়াদায়ক প্রতিষেধক
নেওয়ারই ফসল! ছবিটির ট্রেলার দেখে (১৯৬৬ সালে) তেমন কিছু লাগেনি। দেখার আগ্রহও ছিল
না। জ্বর আর ব্যথা নিয়ে দেখে অনিচ্ছাসত্বেও স্বীকার করতে বাধ্য হলাম, ছবিটি “মন্দ নয়”! সেটা ১৯৬৭ সাল। তারপর ঠিক মনে নেই কিভাবে, ছবিটি অভূতপূর্বভাবে ভালো
লেগে গেল। সেই গ্লোবেই দেখেছি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৫-এর মধ্যে চারবার! প্রায় প্রতি বছরেই ছবিটি
পুনর্মুক্তি পেত। তারপর, সত্তরের শেষের দিকে, টাইগার প্রেক্ষাগৃহে পঞ্চমবার দেখি। বড়
পর্দায় যে চারটি ছবি – বাংলা-হিন্দী-ইংরেজী মিলিয়ে – সবচেয়ে বেশীবার দেখেছি, তার মধ্যে
একটি এই Sound of Music।
ভালো
লাগার অন্যতম কারণ ইংরেজী গানের সম্বন্ধে বোধহয় আপামর মধ্যবিত্ত বাঙালী ছেলেমেয়ের ধারণা
পালটে দেওয়া। ছোটবেলা থেকে রেকর্ডে বা রেডিওতে যৎসামান্য ইংরেজী গান যা শুনেছি, সে
সবই অপেরাধর্মী – সেই হু-উউউউ আর হাআআআআআআ। কথাগুলো ইংরেজী, হিব্রু, গ্রীক না লাতিন
– বোঝা অসম্ভব! এর আগে, বোধহয় ১৯৬৫-তে, My Fair Lady এসেছিল, কিন্তু সেটা ঠিক ছোটদের
জন্য নয় বলেই আমাদের দেখানো হয়নি। The Sound of Music মুগ্ধ করলো গানের সুরে শুধু নয়,
গানের কথায় – যেমন সরল শব্দ, তেমনই মর্মস্পর্শী। দুটি উদাহরণ দেব। নাৎজি জার্মানির
আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়ে আল্পস পর্বতে ফোটা Edelweiss ফুলকে স্বদেশ অস্ট্রিয়ার প্রতি
দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে ছবির মুখ্য পুরুষ চরিত্র ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপ
গেয়ে ওঠেনঃ
Edelweiss,
Edelweiss – every morning you greet me.
Small
and white, clean and bright, you look happy to meet me.
Blossom
of snow, may you bloom and grow, bloom and grow forever!
Edelweiss,
Edelweiss – bless my homeland forever!
অথবা,
যে শীর্ষগান থেকে ছবির নামকরণ, গায়িকা-নায়িকা মারিয়ারূপিনী জুলি অ্যান্ড্রুজের উদাত্ত
মধুপ্রদ কণ্ঠেঃ
The
hills are alive with the sound of music –
With
songs they have sung for a thousand years!
The
hills fill my heart with the sound of music –
My
heart wants to sing every song it hears!
My
heart wants to beat like the wings of the birds
That
rise from the lake to the trees;
My
heart wants to sigh like a chime that flies
From
a church on a breeze;
To
laugh like a brook when it trips and falls
Over
stones on its way,
To
sing through the night like a lark who is learning to pray!
I go to the hills when my heart is lonely.
I
know I will hear what I've heard before –
My
heart will be blessed with the sound of music,
And
I'll sing once more!
কি নেই ছবিটিতে! প্রতিটি চরিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রীর নিখুঁত অভিনয়, এমনকি ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপের সাত-সাতটি মাতৃহীন সন্তানদের – যাদের বয়স ষোল থেকে পাঁচ! ছোট্ট গ্রেটেলের চরিত্রে পাগল করা মিষ্টি শিশু কিম ক্যারাথ অবধি অবিস্মরণীয়। ষোল বছরের লিসেল চরিত্রে একুশ বছরের Charmian Carr যেমন সুশ্রী তেমনই নিপুণ। আর দুই কেন্দ্রীয় চরিত্রে মারিয়ারূপিনী জুলি তো সবার প্রিয় গভরনেস-অবশেষে শিশুদের নতুন মা হিসেবে একেবারে মন কেড়েছিলেন। পত্নীবিরহে আপাত-কঠোর কিন্তু মারিয়ার প্রভাবে স্নেহের ফল্গুধারা নির্গত হওয়া ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় ক্রিস্টোফার প্লামার একদম যথাযথ।
এছাড়া
ইতিহাসের অমোঘ নির্দেশে সুখী পরিবারের জীবনে শত্রুর অন্ধকার উপস্থিতি, তাদের গ্রাস
থেকে রূদ্ধশ্বাস দৃশ্যে কোনক্রমে মুক্তিলাভ – প্রতিটি জিনিস স্মৃতিতে অত্যুজ্জ্বল আজও!
আর প্রায় প্রতিটি গান কণ্ঠস্থ হয়ে গিয়েছিল সেই দশ-এগারো বছর বয়সে!
এবার
আসি আমার প্রিয়তম ছবির প্রসঙ্গে। এর উল্লেখ আগে করেছি, যখন বলেছিলাম যে ১৯৬৪-তে আমি
প্রথম ওয়াল্ট ডিজনীর ছবি দেখি। ঐ ১৯৬৪-তেই তৈরি কিন্তু এদেশে ১৯৬৮-তে মুক্তিপ্রাপ্ত
ছবি হলো প্যামেলা ট্র্যাভার্সের চারখানা (ছবির পর তিনি আরও ২/৩ টি লিখেছিলেন) বই অনুপ্রাণিত
Mary Poppins। নাম ভূমিকায় সেই The Sound of Music-এর জুলি অ্যান্ড্রুজ। এটিই তাঁর
অভিনীত প্রথম ছবি, এবং প্রথম আবির্ভাবেই তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর ‘অস্কার’
জিতে নেন! ছবিটি ১৯৬৪-তে আমেরিকায় প্রথম মুক্তি পেলেও – অর্থাৎ
The Sound of Music-এর আগে – এই দ্বিতীয়োক্ত ছবি যে মঞ্চনাটকের ওপর আধারিত সেটি তো
১৯৫৯-এর। অতএব, Mary Poppins-এর চিত্র্যনাট্যে তখন এখানকার দর্শক The Sound of
Music-এর আখ্যানের যে প্রভাব লক্ষ করেছিলেন, তা যথার্থই মনে হয়। এবং এও ঘটনা যে দ্বিতীয়োক্ত
ছবির পরিচালক রবার্ট ওয়াইজ ৩০শে অক্টোবর ১৯৬৩-তে ডিজনী স্টুডিওতে গিয়ে তখনো অমুক্তিপ্রাপ্ত
Mary Poppins-এর কিছু ফুটেজ দেখেই গ্রেস কেলি, অ্যান ব্যাঙ্ক্রফট প্রমুখদের কথা বাতিল
করে জুলিকেই নির্বাচন করেন।
ব্যাঙ্কস
পরিবারের কর্তা জর্জ (ক্যাপ্টেন ভন ট্র্যাপ- এর নাম ছিল Georg!) ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ
কর্মচারী। তাঁর স্ত্রী উইনিফ্রেড স্বামীর অজান্তে সেই ১৯১০ সালে মেয়েদের ভোটাধিকার-আন্দোলনের
সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের দুই শিশু, বড় মেয়ে জেন আর ছোট ছেলে মাইকেলের জন্য বাবা-মার সময়
কোথায়? তারা মানুষ হয় গভরনেসের হাতে। এবং ভন ট্র্যাপ ছেলেমেয়েদের মতোই জেন-মাইকেলের
দস্যিপনায় এক গভরনেস যায়, আরেকজন আসে! এ ঘটনা অবশ্য ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস
Mary Poppins-এই আছে! শেষ গভরনেস কেটি ন্যানা বিদায় নেবার পর বাবা তাদের মাকে দিয়ে
খবরের কাগজের জন্য বিজ্ঞাপন লেখান এক কড়া, কঠোরভাবে নিয়মানুবর্তী গভরনেসের আবেদন ক’রে। তার মাঝখানে দুই ভাইবোন এসে তাদের পছন্দের গভরনেস কিরকম হবে লিখে
এনে তা বাবা-মাকে গেয়ে শুনিয়ে নার্সারিতে ফিরে যায়। চরম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে জর্জ ব্যাঙ্কস
তাদের লেখা কাগজটি ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ফায়ারপ্লেসে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু আমরা দেখি,
সকলের অজান্তে কুচোনো কাগজগুলোকে আপনা থেকে উঠে চিমনি দিয়ে আকাশে উড়ে যেতে! (এর আগে,
ছবির শুরুতেই দেখেছি লন্ডনের আকাশে মেঘের ওপর বসা অতি মিষ্টি দেখতে এক মহিলাকে!)
পরের
দিন ১৬ নম্বর চেরি ট্রি লেনের (ব্যাঙ্কসদের বাড়ী) বাইরে গোমড়ামুখো প্রৌঢ়া গভরনেসদের
লম্বা লাইন। হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় তারা সবাই উড়ে যায়! মাথায় ছাতা দিয়ে বাড়ীর সামনে উড়ে
এসে নামেন শিশুরা ঠিক যেমনটি চেয়েছিল, তেমনি মিষ্টি, গোলাপি গাল, সেই মেঘের ওপর বসে
থাকা মহিলা! জর্জ তাঁর মূল্যায়ন করবেন কী, তিনিই ঢুকে শিশুদ্বয়ের লেখা (কোন জাদুবিদ্যায়
কাগজের টুকরোগুলো সব জুড়ে গেছে!) চিঠি গৃহকর্তাকে গড়গড় করে পড়ে বলেন তাঁর পূর্ণ যোগ্যতা
রয়েছে, তিনি নার্সারিতে চললেন! এরপর সকলের অলক্ষ্যে সিঁড়ির ব্যানিস্টারে বসে ওপরদিকে
দিব্যি উঠে যান, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে উপেক্ষা করে – ইনিই মেরি পপিন্স!
‘সাউন্ড অব মিউজিক’-এ মারিয়ার স্নেহের
প্রভাবে ছেলেমেয়েরা এবং তাদের বাবা ক্যাপ্টেন পালটে যান। মেরি পপিন্স একই রকমের পরিবর্তন আনেন ব্যাঙ্কসবাড়ীতে
– তবে আক্ষরিক অর্থে ম্যাজিকের মধ্য দিয়ে! আত্মসর্বস্ব জর্জ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতে
শেখেন দুই সন্তানকে, তাদের সহজ-সরল শখ-আহ্লাদের মূল্য দেন নিজের হাতে তাদের খেলার ঘুড়ি
মেরামত করে তাদের এবং স্ত্রীকে নিয়ে জীবনে প্রথম পার্কে সেই ঘুড়ি ওড়াতে নিয়ে গিয়ে।
আর তাঁর অব্যক্ত ইচ্ছা – ছেলেমেয়েরা তাঁর সঙ্গে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকার মূল্য কী তা শিখুক,
অর্থনীতি, লাভ-ক্ষতির হিসেব করুক – কাজে লাগিয়ে ব্যাঙ্কে হুলুস্থুল ফেলে দিয়ে নিজের
যে আপাত সর্বনাশ – চাকরী থেকে বরখাস্ত হওয়া – ডেকে এনেছিলেন, তাও উল্টে যায়, মেরি পপিন্সের
সহযোগীদের বলা একটি মজার গল্পের কল্যাণে! ব্যাঙ্কস সসম্মানে ব্যাঙ্কে ফিরে আসেন কর্মচারী
হিসেবে নয়, পার্টনার রূপে!
এর
মাঝখানে এসেছে একের পর এক ম্যাজিকের ঘটনা। মেরির হাতের তুড়িতে নার্সারির যাবতীয় ছড়িয়ে
থাকা জিনিস, খেলনা ইত্যাদি নিজেদের গুছিয়ে ফেলে, মেরির বন্ধু বার্টের রঙিন খড়ি দিয়ে
ফুটপাথে আঁকা ছবির মধ্যে মেরি, বার্ট, জেন আর মাইকেলের ঢুকে গিয়ে জ্যান্ত কার্টুন চরিত্রদের
সঙ্গে খেলা করে, মেরির আত্মীয় আংকল অ্যালবার্টের ঘরে সবাই সিলিং-এ বসে চা খায়, আরও
কত কী!
‘সাউন্ড অব মিউজিক’-এর মতো ‘মেরি পপিন্স’-এর প্রতিটি গান সেই থেকে আজও কণ্ঠস্থ!
মেট্রোতে
ছ’ সপ্তাহ চলাকালীন ছবিটি দেখি
তিনবার, প্রথমে সপরিবারে, দ্বিতীয়বার মাসীমাকে নিয়ে দাদা আর আমি, তৃতীয়বার বাবার সঙ্গে।
এর কয়েক বছর পর, ঐ মেট্রোতেই রবিবার সকালে চতুর্থবার আর আরও পরে আরেক রবিবার সকালে
এলিট সিনেমায়, এই দু’বারেও বাবার সঙ্গে।
Mary
Poppins আজও আমার কাছে আমার সারা জীবনে দেখা শ্রেষ্ঠ ছবি – ইংরেজী, বাংলা, হিন্দী মিশিয়ে
। দ্বিতীয় স্থানে আছে The Sound of Music।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন