বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

অভিজিৎ মিত্র

 

সিনেমার পৃথিবী – ৪০



আজ বাকি সিনেমাটোগ্রাফারদের নিয়ে আমাদের ক্যানভাস। তবে তারা ক’জন, ৬জন না আরো বেশি, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আলোচনা এগোলে সেটা নিজের গতিবেগেই উঠে আসবে। একটা কথা বলে রাখি,  দেখুন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পরিচালকরা নিজেরাই ক্যামেরার পেছনে চোখ লাগিয়েছেন, কারণ  একজন পরিচালক সিনেমাটোগ্রাফি না বুঝলে ছবি হয় না। ফলে রেনোয়াঁ থেকে ত্রুফো বার্গম্যান গোদার অ্যান্তনিয়নি কিউব্রিক তারকোভস্কি সত্যজিৎ – সবাই এক অর্থে পরিচালক, আরেক অর্থে সিনেমাটোগ্রাফার। কিন্তু আমি এদের আলোচনায় আনব না। এমনকি শ্যাং ইমো-র (চিন) মত ফটোগ্রাফার থেকে পরিচালক হয়ে ওঠা কাউকে নিয়েও কলম ছোঁয়াব না। আগের পর্বে যেভাবে শুধুমাত্র ফটোগ্রাফারদের নিয়েই কাটাছেঁড়া করেছি, এবারেও তাই। এবং এবার গোটা পৃথিবী থেকে কয়েকজন ক্যামেরাম্যানকে বাছব। আগু-পেছু করে। ভৌগলিক জায়গা ধরে। ইউরোপ দিয়ে শুরু করব, আমেরিকা হয়ে এশিয়ার এসে থামব। ইউরোপের মাত্র ৩ জন। জার্মান এক্সপ্রেসনিস্ট ক্যামেরাম্যান ফ্রিজ আর্নো ওয়েগনার (১৮৮৯-১৯৫৮), এবং দুজন এই মুহূর্তের লিভিং লিজেন্ড - ইতালির ভিত্তোরিও স্টোরারো (১৯৪০-) ও ব্রিটেনের রজার ডিকিন্স (১৯৪৯-)।

জার্মান এক্সপ্রেসনিজম নিয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি। মুর্নাউ এবং ফ্রিজ ল্যাং-এর ছবি নিয়েও। ২০ এবং ৩০-এর দশকের বেশিরভাগ জার্মান এক্সপ্রেসনিস্ট ছবির ক্যামেরাম্যান ছিলেন ফ্রিজ আর্নো ওয়েগনার। বিশেষ করে আলো-আঁধারির খেলা ও দেওয়ালে ছায়ার কাজ (শ্যাডোগাফি), যা দিয়ে সাসপেন্স ফুটিয়ে তুলতে হয়, সেইসব কাজ ওয়েগনার গোটা পৃথিবীকে দেখিয়ে গেছেন। ধরুন মুর্নাউ-এর বিখ্যাত ছবি নসফেরাতু (১৯২২)। সেই ছবির আবহে শ্যাডোগ্রাফি বা স্টপ-শট ফুটিয়ে সেই সিনেমাকে ক্লাসিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, আবার ধরুন ল্যাং-এর বিখ্যাত ছবি এম (১৯৩১), তার মধ্যে শুধু সাসপেন্স নয়, ট্র্যাকিং শটের মাধ্যমে লং শট এবং তাও সেই ৯০ বছর আগে – এগুলোর জন্যই আজো গোটা সিনেমা জগৎ ওয়েগনারের কাছে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে। দুর্ভাগ্য, ১৯৩৩-এ নাৎসীরা জার্মানি দখল করার পর ওয়েগনারের মত প্রতিভাশালী লোকেদেরও চুপ হয়ে যেতে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উনি আবার কয়েকটা ডকু ফিল্মে ক্যামেরা ধরেছিলেন বটে, কিন্তু সেভাবে আর কোনদিন সিনেমাটোগ্রাফিতে ফিরে আসেননি।

ইতালির ক্যামেরাম্যান ভিত্তোরিও স্টোরারো তার ৭০ এবং ৮০-র দশকের কাজের জন্য বিখ্যাত। প্রায় পাঁচ দশকের কেরিয়ারে অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন, যার মধ্যে রোজি, বার্তোলুচি, ফ্রান্সিস ফোর্ড কোপালা, উডি অ্যালেন – এরা উল্লেখযোগ্য। ৩বার সেরা সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে অস্কার পেয়েছেন, অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ (১৯৭৯), রেডস্‌ (১৯৮১) এবং দ্য লাস্ট এম্পারার (১৯৮৭) ছবির জন্য। স্টোরারো এই মুহূর্তে জীবিত ৩ লিভিং লিজেন্ড-এর একজন যারা ক্যামেরার পেছনে চোখ রেখে ৩বার করে অস্কার পেয়েছেন। উনি, আমেরিকার রবার্ট রিচার্ডসন এবং লাতিন আমেরিকার এমানুয়েল লুবেজস্কি। বাকি দুজনের ক্যামেরা নিয়েও একটু পরেই আলোচনায় আসব। যাইহোক, আমাকে স্টোরারোর সেরা কাজ বেছে নিতে বললে আমি কিন্তু দ্য কনফরমিস্ট (১৯৭০) বাছব। খুব কম ছবিতেই আলো-ছায়ার এত ভাল কাজ দেখা গেছে। বড় বড় হলঘর ব্যবহার করে তার আলো-ছায়ার স্পেস থেকে ফ্রেমে ভেঙে সিন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, বিভিন্ন আর্কিটেকচার ব্যবহার করে সিনের ভেতরেই একাধিক সিন বানানো হয়েছে। এবং ক্যামেরা রাখা হয়েছে এমন কিছু ডাচ অ্যাঙ্গলে যা কখনোই সাধারণভাবে ব্যবহার হয় না। এর সাথে আছে ডিপ কালার কনট্রাস্ট। অনবদ্য।

সারা পৃথিবীতে একজনও সিনেমাপ্রেমী মানুষ পাওয়া যাবে না, যিনি রজার ডিকিন্স-কে চেনেন না। কারণ শশাঙ্ক রিডেম্পশন (১৯৯৪) থেকে শুরু করে ফারগো (১৯৯৬) হয়ে জেমস বন্ডের স্কাইফল (২০১২) অবধি এমন কোন ক্যামেরা প্রধান ছবি নেই, যার পেছনে ডিকিন্স ছিলেন না। অস্কার পেয়েছেন দু’বার, কিন্তু তার থেকেও বড় কথা নমিনেটেড হয়েছেন ১৬বার। মনে হয় এরপর আর ডিকিন্স সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। সবাই ফারগো সিনেমা মনে রাখে ফ্রান্সিস ম্যাকডরম্যান্ড-এর অভিনয়ের জন্য, কিন্তু ডিকিন্সের ক্যামেরাও সেই ছবির এক উল্লেখ্য ফ্যাক্টর ছিল। আবার ধরুন নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন (২০০৭) ছবির মাঝে মাঝে থমকে যাওয়া ক্যামেরা, অনেকটা হান্টিং মোডে, যা সাবলীলভাবে জেভিয়ার বারডেমের নিষ্ঠুরতা ফুটিয়ে তুলেছে, সেটার কৃতিত্বও ডিকিন্সকেই দিতে হবে। তবে আমার পছন্দ ডিকিন্সের অনেক আগের এক ব্রিটিশ ছবি, অ্যানাদার টাইম অ্যানাদার প্লেস (১৯৮৩)।

এবার আসা যাক আমেরিকায়। দুই আমেরিকা মিলিয়েও মাত্র ৩জন। আমেরিকার জোসেফ রাটেনবার্গ (১৮৮৯-১৯৮৩), রবার্ট রিচার্ডসন (১৯৫৫-) এবং লাতিন আমেরিকার এমানুয়েল লুবেজস্কি (১৯৬৪-)।

আজ অবধি মাত্র একজন ক্যামেরাম্যান ৪বার অস্কার পেয়েছেন। তার নাম জোসেফ রাটেনবার্গ। ক্যামেরায় ওয়েগনারের সমসাময়িক, কিন্তু কেরিয়ার অনেক দীর্ঘ। এবং সৌভাগ্যবানও বটে কারণ ক্যামেরার সামনে  লুইসি রেনার, গ্রিয়ার গারসন, জোয়ান ক্রফোর্ড, ডেবোরা কার, ইনগ্রিড বার্গম্যান-এর মত স্বর্ণযুগের সুন্দরী নায়িকাদের পেয়েছেন, তাদের ক্লোজ ইন মুখের হাসি দিয়ে ক্যামেরার ফ্রেম ভরেছেন। যাইহোক, রাটেনবার্গকে বলা হত সাদা-কালো ছবির গুরুদেব, কারণ উনি সাদা-কালো ফ্রেমে শুট করার পর সেগুলো ছবিতে প্রায়  ত্রিমাত্রিক বলে মনে হত। আরো অদ্ভুত লাগত সিলুয়েটের খেলা। কম আলোয় কালো রং যে ভেলভেটের মত ফুটে উঠতে পারে, এই সহজ তথ্য উনি গোটা পৃথিবীকে দিয়ে গেছেন। তবে রাটেনবার্গের কালোর মসৃণতা দেখতে চাইলে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ গ্যাসলাইট (১৯৪৪)। অবশ্য তার আরেক কারণ আমার রসিক পাঠকরা এতদিন পর নিশ্চয়ই জানেন – ইনগ্রিড বার্গম্যান – যে নায়িকা আমার অল টাইম ড্রিম গার্ল।

রবার্ট রিচার্ডসনের নাম একটু আগেই উল্লেখ করেছি। ওনার প্রায় সমসাময়িক ডিকিন্সের মত উনিও সেই আটের দশকে থেকে ক্যামেরার পেছনে সক্রিয়। নব্বইয়ের দশক থেকে ওনার কাজ সামনে আসতে শুরু করে। কোয়েন্টিন টারান্টিনো এবং মার্টিন স্করসেসির পছন্দের ক্যামেরাম্যান মানেই কিন্তু রিচার্ডসন। প্লাটুন (১৯৮৬), জেএফকে (১৯৯১), দ্য অ্যাভিয়েটর (২০০৪), হুগো (২০১১), দ্য হেটফুল এইট (১৯১৫) ওনার  উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ। উজ্জ্বল আলোর কাজে ওনাকে পথিকৃৎ মানা হয়। দ্য অ্যাভিয়েটর এবং দ্য হেটফুল এইট দেখলে সেটা খানিকটা বোঝা যায়। তবে একজন সমালোচক হিসেবে আমার মনে হয়েছে স্নো ফলিং অন সিডারস (১৯৯৯) ছবি ওনার ক্যামেরার কাজ যত ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছে, তোলার সুযোগ রেখেছে, বিশেষ করে আউটডোর শটে, সেটা অন্য ছবিগুলোতে হয়ত ততটা নেই।

লাতিন আমেরিকার এমানুয়েল লুবেজস্কি বয়সে এদের তুলনায় নবীন, কিন্তু এরমধ্যেই এমন কিছু কাজ করেছেন যে ইতিমধ্যেই ঐ ৩জন লিভিং লিজেন্ডে তার নাম উঠে এসেছে এবং কোয়ারনের পছন্দসই ক্যামেরাম্যান হিসেবে শুধু তিনি। ওনার যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো আমার চোখে পড়েছে - ন্যাচারাল লাইটিং-এ শুটিং পছন্দ করার জন্য আমার মনে হয়েছে উনি আর্নেস্ট হলারের সঠিক অনুসারী, একটানা লং-শট ব্যবহারের দিকে তিনি ভাদিম ইউসেভের সার্থক উত্তরসূরী এবং হাতে ধরা স্টেডিক্যাম নিয়ে শুটিং করার জন্য অ্যালকটের উত্তরসূরী হিসেবেও তার নামটাই উঠে আসবে। বয়স মাত্র ষাট, কিন্তু ইতিমধ্য্যেই উল্লেখযোগ্য কাজ প্রচুর। চিল্ড্রেন অব মেন (২০০৬), গ্রাভিটি (২০১৩), বার্ডম্যান (২০১৪), দত রেভেনান্ট (২০১৫), আমস্টার্ডাম (২০২২) ইত্যাদি। আমি যদি লুবেজস্কির অন্য সব কাজ ভুলেও যাই, শুধু বার্ডম্যান (২০১৪) ছবির জন্য ওনাকে মনে রাখতেই হবে। 

এবং সমস্ত উঠতি ক্যামেরাম্যানদের কাছে আমার অনুরোধ, এই ছবিটা খুব মনোযোগ দিয়ে দ্যাখো, প্রতি ফ্রেম, প্রতি শট। লং টেকগুলো এত সুন্দর যে মাঝে মাঝেই পুরো সেটের ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরায় উঠে এসেছে, এবং কালার কনট্রাস্ট। আধুনিক সিনেমার ইতিহাসে এই ছবি ক্যামেরার কাজের জন্য একদিন সবার ওপরে থাকবে। নিউ ইয়র্ক ফিল্ম আকাডেমি এই ছবিকে ‘a visual symphony in film making’ বলে অভিহিত করেছে।

এবার এশিয়ায় আসি। এশিয়ার মাত্র দু’জন। জাপানের কাজুও মিয়াগাওয়া (১৯০৮-১৯৯৯) ও দক্ষিণ কোরিয়ার হং কিয়ুং-পো (১৯৬২-)। এবং আগেরবার যার কথা বলেছিলাম, সবশেষে সত্যজিতের ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র (১৯৩০-২০০১)।

জাপানের কাজুও মিয়াগাওয়া বোধহয় একমাত্র সিনেমাটোগ্রাফার যিনি কুরোশাওয়া, ওজু এবং মিজোগুচি, এই তিন বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গেই সুনামের সাথে কাজ করেছেন। বিশেষ করে রশোমন (১৯৫০)-এর ট্র্যাকিং শটের জন্য মিয়াগাওয়া বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। মিয়াগাওয়া ক্যামেরাম্যান হিসেবে যেসব উল্লেখ্য ছবিতে কাজ করেছিলেন – রশোমন (১৯৫০), উগেৎসু (১৯৫৩), সানসো দ্য বেলিফ (১৯৫৪), ফ্লোটিং উইডস্‌ (১৯৫৯), হার ব্রাদার (১৯৬০), য়োজিম্বো (১৯৬১)। ১৯৬০ সালে হার ব্রাদার ছবিতে উনি এক অদ্ভুত পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন ছবিতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে – ব্লিচ বাইপাস বা স্কিপ ব্লিচ। এটার মোদ্দা ব্যাপার হল, রঙিন ছবির ওপরেই সাদা-কালো ফ্রেম ধরে রাখা। এবার আসা যাক রশোমন ছবির কথায়। আমি আগেই বলেছি, কুরোশাওয়া ছিলেন অদ্ভুত রকমের পরিচালক। উনি নিজের সেটে তিনটে করে ক্যামেরা তৈরি রাখতেন। যে কোন শটে তিনটে আলাদা অ্যাঙ্গলে তিনটে ক্যামেরা মুভ করত এবং উনি পরে এর ভেতর থেকে সেরা শটটা বেছে নিতেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওনার এক নম্বর ক্যামেরার পেছনের থাকতেন তাকাও সাইতো (১৯২৯-২০১৪)। দু’নম্বরে থাকতেন মিয়াগাওয়া। কিন্তু রশোমন ছবিতে মিয়াগাওয়ার স্বপ্নময় ফিল্টারহীন ফ্রেম আর ট্র্যাকিং শটগুলো এমন ছিল যে কুরোশাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোই ব্যবহার করেছিলেন। এবং আউটডোর শট, যেগুলো 3:4 অনুপাতে ওয়াইড স্ক্রিনে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ছিল রশোমন ছবির প্রধান আকর্ষণ। এখান থেকেই মিয়াগাওয়া শুরু করেন। এবং আস্তে আস্তে  নিজের কৌশল এমন জায়গায় নিয়ে যান যে পরিচালকরা ক্যামেরার জটিল কাজ ওনাকে ছাড়া করতে চাইতেন না। আমার পছন্দ কাগি (১৯৫৯) নামক এক ছবি, যেটা দেখলে বোঝা যায় মিয়াগাওয়া কতটা খুঁতখুঁতে ছিলেন ক্যামেরার পেছনে।

আমার বানানো এই সিনেমাটোগ্রাফারদের লিস্টে কাউকে যদি পাক্কা একুশ শতকের ক্যামেরাম্যান হিসেবে রাখতে হয়, তিনি হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার হং কিয়ুং-পো। কেরিয়ার শুরু করেছেন ২০০০ সালে। এবং তারপর  মাদার (২০০৯), দ্য ওয়েলিং (২০১৬), বার্নিং (২০১৮), প্যারাসাইট (২০১৯)-এর মত বেশ কিছু ভাল ভাল ছবির ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে গোটা পৃথিবীর সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছেন। প্রথমত, ডায়নামিক আউটডোর ক্যামেরা এবং দ্বিতীয়ত, দুটো সিনকে একসাথে কম্পোজ করে টানটান রহস্য ধরে রাখা - ওনাকে ক্লাসিক ক্যামেরাম্যানদের দলে অনায়াসে দাঁড় করিয়েছে। এবং এই ধারাবাহিকের একদম শুরুতেই বলেছিলাম, মূলত কোরিয়ান ছবির রহস্যময়তা ও সিনেমাটোগ্রাফি আমাকে সেই দেশের ছবি নিয়ে এত আগ্রহী করে তুলেছিল।

মাত্র ২১ বছর বয়সে ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫) শুরু করেছিলেন। আস্তে আস্তে সত্যজিতের থেকে শিখেছেন, নিজেও শিখেছেন এবং একসময় ভারতীয় সিনেমার ক্যামেরাম্যান বললে ওনার মুখটাই বোঝাত। সুব্রত মিত্র। ওনাকে ছাড়া আমার এই ক্যামেরা নিয়ে কূট-কাচালি নেহাতই বেমানান। ভারতীয় সিনেমায় ওনার বেশ কিছু অবদান আছে, কিন্তু এখানে আমি যেটা বলার জন্য কলম ধরেছি, তা হল বাউন্স লাইটিং-এর অবদান। ব্যাপারটা একটু বোঝানো যাক। ধরুন মেঘলা আকাশ, লাইট কম, আপনাকে সেই লাইটে শুট করতে হবে, কিন্তু কিউব্রিকের মত স্পেশাল লেন্স নেই। তখন আপনি যদি ফোরগ্রাউন্ডে যে বস্তু (বা মানুষ) রয়েছে, তার ওপর সোজা লাইট ফেলেন, তাহলে পেছনে খুব বিশ্রী রকমের একটা শার্প ছায়া নজরে আসবে। কিন্তু আপনি যদি অন্য একটা আয়না বা দেওয়ালের ওপর আলো ফেলে সেটার প্রতিফলন ঐ বস্তুর ওপর নিয়ে যান, দেখবেন ছায়া কমে যাবে এবং আলোর কনট্রাস্ট একদম প্রাকৃতিক মনে হবে। এটাই বাউন্স লাইটিং। এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কিছু ক্যামেরাম্যান এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সেটাকে নিজের টেকনিক বলে চালাতে চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু এক সাক্ষাতকারে সত্যজিৎ রায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এই পদ্ধতি তারা ১৯৫৪ সাল থেকে ব্যবহার করেছেন পথের পাঁচালি-তে। সুতরাং এর সন্মান কাউকে যদি দিতে হয়, তার পাওনাদার একমাত্র সুব্রত মিত্র, আর কেউ নয়। সত্যজিতের বয়ানে – ‘You know, about seven or eight years after “Pather Panchali” was made, I read an article in American Cinematographer written by Sven Nykvist – at the time of Bergman’s “Through a Glass Darkly” I think – claiming the invention of bounced light. But we had been using it since 1954.’ এর পরেও কি আর কিছু বলার থাকে?

তাহলে দু’পর্বে সব মিলিয়ে মোট ১৫জন সিনেমাটোগ্রাফার আমাদের আলোচনায় এলেন। যদিও জ্যাক কার্ডিফের মত আরো অনেকেই বাইরে রয়ে গেলেন। তো বাকিদের বিষয়ে, অনুরোধ, আগ্রহ জাগলে নিজেরাই একটু জেনে নেবেন।

 

 


1 টি মন্তব্য:

  1. খুব তথ্য সমৃদ্ধ লেখা । কোনও বিশেষ ফিল্মের কোনও সিনের মাধ্যমে যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে আরও ভালো লাগবে। যেমনটা bouncing light নিয়ে বলেছেন ।

    উত্তরমুছুন