সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

নভেরা হোসেন

 

কবিতার কালিমাটি ১৩৯






অভিশাপ

 

হৃদয়ের একূল-ওকূল  দুকূল ভেসে যায়

কারফিউর দমবন্ধ ঘরে

একদিন, দু-দিন, তিনদিন

বারান্দায় মানিপ্ল্যান্ট, পুদিনাপাতা

টেলিবার্তায় অগ্নিদ্বগ্ধ গাড়ির সারি

পতাকায় ঢাকা তরুণের লাশ 

আমরা পুড়িয়ে দিয়েছি আদিপুস্তক

গীতা রামায়ণ, ওল্ড টেস্টামেন্ট

সকল আসমানী কিতাব

নমরুদের অভিশাপে লন্ডভন্ড বদ্ধভূমি 

কোন পাতালে চলেছে স্বদেশ?

মরুভূমির  আভায় ঢেকে গেছে

লাল-সবুজ মানচিত্র

কোন কুটিল অঙ্কে

আঁকা হলো আজকের সকাল

অগ্নি-নির্বাপন গাড়ি পুড়ছে

শহরে পানির আকাল

কোথাও কি কোনো ভুল রয়ে গেল?

শুরুতেই নষ্টবীজ

সাত রাস্তার মাথায় টাঙ্গানো মনুষ্যকঙ্কাল

শ্রাবণ সন্ধ্যায়

নিজেরাই খুঁড়ছি নিজের কবর

 

স্বপ্নের মীনজাতক

 

আমাদের কালে চাঁদপুর ছিল                        

রুপালি ইলিশ জলের তরঙ্গ                         

বর্ষার মেরুন সকালে                                       

শত শত মীনজাতক ভেসে যেত ত্রিমোহনায়

তখনো বায়োস্কোপের বাকশে দেখা যেত কারবালার প্রান্তর 

হায় হাসান, হায় হোসেন                                 

শাপলার বিলে নীলপদ্ম                             

ব্যাঙমা-ব্যাওমীর গোপন কোটর                

আমাদের কালে কাজলরেখা  ছিল                 

সুঁই রাজপুত্রের মধুর ভুল                              

আকাশে তেত্রিশ কোটি দেবতা

দুর্গার বাহন সোনালী  সিংহ

একটা টানা রাস্তা ধরে হেঁটে চলা                             

একটা কাঠের সেতু পেরিয়ে স্বপ্নের বাড়ি               

আমাদের কালে স্বপ্ন ছিল ছত্রিশ রকম

গোলাপী আভা মেশানো বাদামের সরবত         

পরী, বেহুলার লোহার ঘর                        

আমাদের কালে অগাধ জল ছিল ডুব সাঁতারের

 

নীল সাগর ছিল ভেসে যাবার                       

স্বপ্নের মেঘদূত ফিরে আসার

 

মন খারাপ

 

মন খারাপের সময় তুমি চুপ করে বসে থাকো

কথা বলতে ইচ্ছে করে না

যদিও বলো, মনে হয় প্রতিধ্বনি হচ্ছে-

চারপাশে লোকজন হাসছে, কথা বলছে

খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে

তুমি শুধু দেখতে থাকো

শুধু ভাবতে থাকো

ভাবতে ভাবতে একবার নদীর কিনারে

আরেকবার তলদেশে

সেখান থেকে খুঁড়ে আনো পুরানো মনি-মাণিক্য

এইসব মনি -মাণিক্য তোমাকে আরো স্মৃতিকাতর করে তোলে

একটা ডিঙি নৌকায় ভাসতে ভাসতে মাঝদরিয়ায়

সেখানে ছিপ ফেলে বসে থাকো

নদীতে ঘন কুয়াশা

মন খারাপের তীব্রতায়

নদীর পাটাতনে পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকো ঘণ্টার পর ঘণ্টা, 

মাসের পর মাস

এক সময় কুয়াশা ভেদ করে রোদ ওঠে

প্রথমে মিষ্টি রোদ তারপর কড়া রোদ

একটু একটু করে রোদের তীব্রতা বাড়তে থাকে

চোখের পর্দা ভেদ করে ঢুকে পড়ে মগজের ভেতর

তুমি রোদ এড়াতে উল্টে শোও  

পিঠ পুড়তে থাকে

শেষে তপ্ত শরীর নিয়ে জলে ঝাঁপ দাও

নদীর ঠান্ডা জলে অবগাহন

পায়ে এসে ঠোকর দেয় মাংসাশী মাছেরা 

জল কেটে কেটে তীরে এসে ওঠো

আবার গা এলিয়ে শুয়ে পড়ো

ততক্ষণে মন খারাপ রোদে শুকিয়ে ড্রাই ফিশে পরিণত হয়েছে

বাড়ি ফিরে পেঁয়াজ আর সর্ষের তেল দিয়ে

ড্রাই ফিশ রান্না করে খাও

আর ল্যাপটপে চলতে থাকে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ 

 

 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন