সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

তৈমুর খান

 

কবিতার কালিমাটি ১৩৯




অবেলার ব্যালকনি থেকে

 

একে একে সব গৌরব চলে যাচ্ছে

আমার গৌরবীও আর থাকতে চাইছে না।

আর সে চাঁদ দেখবে না

সকালবেলা ফুল তুলবে না

বিকেলবেলা গিয়ে বসবে না বাড়ির বারান্দায়

 

আলো নিভিয়ে একাই আমি ঘুমের কাছে যাব

যে ঘুমের কোনো স্বপ্ন নেই

যে ঘুমের কোনো জেগে ওঠা নেই

একটি অন্ধকার আর একটি অন্ধকারে ঢুকে যাবে

 

কতটা পথ হেঁটে হেঁটে গৌরবদের ডেকে এনেছিলাম

কতটা রাত জেগে জেগে গৌরবীকে বুঝিয়েছিলাম

ভালোবাসার জাল বুনে বুনে কত বিস্ময়কে আপন করেছিলাম

এখন শুধু নিঃস্ব নাও ভেসে ভেসে চলে যাবে একা

 

ভাসমান হই

 

কার কথা ভেবে ভাসমান হই বারবার

নিজেও চিনি না তাকে, অথবা চিনি

এই অশ্রুসাগরে সাঁতার কেটে কেটে

আমিও তো পেতে চাই দ্বীপ দারুচিনি!

 

বিস্ময়ের এপান্ত জুড়ে তর্জন গর্জন শুধু

আর ভিড় জমে বন্যা কবলিত জীবনের

শরণার্থীরা সবাই পরিচয় দেয়

আমি শুধু পরিচয়হীন মনুষ্য বিজ্ঞাপনের

 

যদিও ঝড় থেমে যায়, শান্ত চাঁদ ওঠে

রাতের শিয়াল তবু ডাকে, দুর্ভিক্ষপাড়ায়

ফুটো থালার শব্দে ভাতেরাও জাগে

আমি তার গন্ধ চিনি, রোজ এসে দুয়ারে দাঁড়ায়

 

এক একটা বিপ্লব, জেলখানায় লুপ্ত হয়ে গেলে

ঘরসংসার নিয়ে ব্যস্ত নিয়তিরা তাদের ভবিষ্যৎ পালন করে

সন্তান-সন্ততিরা হাওয়া খেয়ে ফিরে আসে বাড়ি

 

আমি শুধু ভাসমান হই যুগান্তরে...

 

ভাষাহীন আজ

 

আজ হৃৎপিণ্ড কথা বলতে চাইছে

কিন্তু আশ্চর্য সে কথার কোনও শব্দ নেই

নিষ্পলক চোখ কোনও দূরের দিকে

তাকিয়ে আছে একা

কাকে খুঁজছে? কাকে?

কার সঙ্গে তার বহুদিন হয়নিকো দেখা?

 

অনুভূতি একা একা কাঁদে

ভাষা নেই তার, কোথা পাবে ভাষা?

নীরবতা নিরুত্তর প্রশ্নের কাছে আসে

প্রশ্ন শুধুই ব্যাকুল হয় উদাসীন বিকেলের কাছে

একখণ্ড মেঘ ভেসে গেলে

অলৌকিক ওড়নার গান মনে হয়

সন্ধ্যা নামার ছায়ায় হেসে ওঠে আবছা মুখ

দু-একটা নিশাচর অলক্ষে ফেলে যায় শ্বাস

শূন্য এসে ধরে এই হাত-ধরা হাত

গোলাপি হাতের তালু স্মৃতি এঁকে দেয়

রজনীগন্ধা দেয় অদ্ভুত ঠোঁটের ঘ্রাণ

পিচ্ছিল বেদনার কাছে বসে আনমনে ছুঁয়ে ফেলি এ মাটির বুক

 

আমার ভাষার শস্য এখনও অধরা

বেলা পড়ে আসে বলে লুকিয়ে রাখি যৌবনের দীপ্র সংরাগ

 

 

শুধু বিকেল হয়ে গেছে

 

ক্ষতগুলি শুকিয়ে যায়নি

শুধু বিকেল হয়ে গেছে

শেষ রশ্মিটুকু ঝরে পড়েছে ক্ষতের উপর

কয়েক ফোঁটা অশ্রুর শুকনো দাগ

সভ্যতার বারান্দায় চিহ্ন হয়ে আছে

 

পাখিরা চলে গেছে নিজস্ব বাসায়

যদিও সমস্ত বাসা জুড়ে অন্ধকার

 

আমি শূন্যতা নিয়ে খেলা করি শুধু

সমস্ত যুদ্ধের ইতিহাস কালের আবর্তে ঘুরপাক খায়

সেসব জানে না কেহ

মৈথুন ভরা ঘরে বিরামহীন মদনের শর ছুটে যায়

 

ক্ষতগুলি স্মৃতির বিস্ময়ে কেবলই নির্বাক হতে থাকে

সভ্যতা বদল করে বাঁক

আলো নিভে এলে কালের সীমানা জুড়ে বিষাদের কাক ডাকে

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন