কবিতার কালিমাটি ১৩৭ |
বৈষম্য পীড়িত একটি নদী
অজস্র দুঃখবতী রাত
খুলে যায় রুগ্ন চোখের পাতা
দুরূহ শীত ঘুমের মতো
অজান্তে জড়িয়ে ধরে
নিশাচর পাখনা
প্রতিকূলতা নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে
বৈষম্য পীড়িত একটি রোগা-নদী
দেখি আমার শক্ত মুঠি খুলে
নিঃসীম, চলে গেল অগ্যস্ত যাত্রায়
মুদ্রাদোষ
পিপাসা সমগ্র মহীরূহ হয়ে উঠে
আমি তবু নাতিশীতোষ্ণ ...
হাওয়া কার্নিশ ছুঁয়ে
প্রেমের মল্লিকা
চাঁদ নামিয়ে রাখি বিভাজীকায়,
অস্তরাগের চাদর জড়িয়ে
একে একে নৃত্য করে অষ্টসখি
'অধরম্ মধুরম্ বদনম্ মধুরম্'
দাঁড়ি কমা খুলে নিজেকে ভাসানোই
একান্ত তোমার মুদ্রাদোষ,
রমণের পিয়ানো বাজে গোপনে।
কয়েক খণ্ড বৈশাখী মেঘ
ছুটে বেড়ায় জলঙ্গীর উদোম বুকে।
বার্ধক্য
নির্জন উঠোন, ইতিউতি ঘাসফড়িং
শিরিষ গাছে সার বেঁধে পিঁপড়ে
বাগানের মহানিম ডালে
আটকে পড়েছে একটি ঘুড়ি।
বার্ধক্য কত অসহায়
ঠিক আটকে থাকা ঘুড়িটির মতো,
পাতার ফাঁকে আমার মায়ের
অভিমানী মুখ স্পষ্ট হয়,
কপালে উজ্জ্বল চাঁদটিপ
পান-রাঙা ঠোঁটে অমলিন হাসি
ক্যানভাসে ফুটে উঠল ঘুমপাড়ানি গান।
মায়ের গায়ের আটপৌরে ঘ্রাণ
জেগে থাকে সারাক্ষণ হওয়ার সাথে
তখন ঘুড়িটি ডানা মেলে নীল আকাশে।
চিঠি
তোমার শরীরময় ঘাসফুলের গন্ধ
অবগাহনের কথা বলে
মনে পড়ে ছোট বেলার হাতেখড়ি!
জলে বিলি কেটে চাঁদ আঁকি
সমুদ্র কপালে
বাংলা ভাষার মতো ফুটে উঠে
নিরুৎসাহী ঢেউ
পাতায় পাতায় শিশিরের কান্না।
ম্যাসেঞ্জারে, মেলে চ্যাট চলে
নিরন্তর
বারবার দুঃখ মাড়িয়ে জলপিপি হই
আর অপেক্ষা করি
একখানি সুগন্ধী চিঠি'র
তোমার আঙুল ছুঁয়ে থাকা কলমে।
নাভিকুণ্ডলী
একটা দুঃস্বপ্ন ফিরে ফিরে আসে
মস্ত নোট থেকে খুচরো হয়ে গেছি
বড় রাস্তার ওপর ঢেলে
বিক্ষোভ করছেন আমার ভক্তগণ
আমার এই হতশ্রী অবস্থা দেখে
আতঙ্কিত প্রিয় স্বজন
রাস্তা বদল করলেন
বিমূঢ় আমি গলায় জমে কাঁটা
নষ্ট হতে হতে নিজের প্রতি প্রেম জাগে
সোহাগে যত্নে তুলে রাখি নাভিকুণ্ডলী
যার ভেতর লক্ষ ভ্রূণের সংকেত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন