সমকালীন ছোটগল্প |
করোনাকালের কেলেঙ্কারি
মাসীমা য়াসমিনকে পই পই করে শিখিয়ে দিয়েছেন বেল শুনেই হুট করে দরজা খুলবি না। আগে ম্যাজিক আই দিয়ে ভালো করে দেখে বুঝে নিবি - কে এসেছে? তারপর খুলবি। সেইমতো য়াসমিন ম্যাজিক আইতে চোখ দিয়ে দেখলো মাস্কে মুখ ঢাকা মানুষটার হাতে একটা প্যাকেট। আর পরনের পোষাকে কোম্পানির নাম ছাপা। য়াসমিন ইংরেজি পড়তে জানেনা। কিন্তু এই ই-রিটেইল কোম্পানির নাম লেখার ধরনটা ওর পরিচিত। বুঝলো দাদাবাবু নিশ্চয় অনলাইনে কিছু অর্ডার করেছিলো। সেটাই লোকটা ডেলিভারি দিতে এসেছে। এসব ডেলিভারির ব্যাপারে কি কি করনীয় তাও ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ও পুরোপুরি দরজা না খুলে দরজায় চেইন লকটা আটকিয়ে দিয়ে দরজাটা সামান্য ফাঁক করে প্রশ্ন করলো।
- কার নামে ডেলিভারি আছে?
লোকটা প্যাকেটের গায়ের উপর ঝুঁকে
পড়ে নামটা পড়ার চেষ্টা করলো
- অনি- অনি-।
য়াসমিন দাদাবাবুর নামটা জানে।
ও লোকটাকে সাহায্য করে
- অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত?
- হ্যা হ্যা বহি।
এই অবাঙ্গালী লোকগুলোর বাঙ্গালী
নাম উচ্চারণ করতে বেশ অসুবিধে হয়।
- এড্রেস?
নির্দেশের নড়চড় না করে য়াসমিন তার
জেরা জারি রাখে।
আবারো প্যাকেটের উপর ঝুঁকে পড়ে
লোকটা পড়ার চেষ্টা করে।
- F-2020, C.R.Park. New
Delhi.
- নম্বর তো ঠিক হি হ্যায়। কিন্তু
ব্লক F নহি E হোগা।
য়াসমিন সংশোধনী পেশ করে।
- হো সকতা হ্যায় E কা নিচলে হিস্যা
মিট কর F হো গয়া।
ডেলিভারী বয় ডেলিভারিটা করে দিতেই
আগ্রহী। অনেক কিছুই যখন মিলে গেছে ঐ একটু আধটুর জন্য সে আর মনে দ্বিধা আনতে নারাজ।
- আপহিকা হ্যায় জী। লে লিজিয়ে।
য়াসমিনেরও তাই মনে হয় - ঠিকই আছে।
ও লোকটাকে বলে
- বাহার যো টেবল হ্যায়। উসকা উপর
রাখ দেও। হাম লে লেগা।
লোকটা য়াসমিনের কথা মতো প্যাকেটটা
টেবিলের উপরে রেখে চলে যায়। য়াসমিন লোকটা একেবারে বের হয়ে চলে যাওয়ার পর হাতে গ্লাভস
পরে নেয়। তারপর দরজাটা পুরো খুলে প্যাকেটা নিয়ে ঘরে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে আবার দরজাটা
বন্ধ করে দেয়। করোনা কাল চলছে এখন। এরকম সাবধানতা তো নিতেই হবে। এর পরের করনীয় কাজগুলোরও
জন্যেও ওকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে। প্যাকেটটা নিয়ে ও সোজা ব্যালকনিতে চলে যায়।
তারপর ক্যাঁচি দিয়ে প্যাকেটটা কেটে দিতেই ওর ভেতর থেকে আরো কয়েকটা প্যাকেট বের হয়ে
আসে। জামা কাপড়ের প্যাকেট। এভাবে জামা কাপড় এলে সে ব্যাপারেও ওকে নির্দেশ দেওয়া আছে।
সঙ্গে সঙ্গে ওগুলোকে ডেটল জলে ভিজিয়ে দিতে হবে। আধঘন্টা ভেজানোর পর সাবান কাচা করে
শুকোতে দিতে হবে। প্যাকেট টেকেট গুলো দলা পাকিয়ে বাইরের বড়ো ডাস্টবিনে ফেলে আসতে হবে। য়াসমিন একে একে করোনা পেনডেমিক পিরিয়ডের সংক্রমন
রোধের যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে কাপড় কটা কেচে ফেলে। তারপর ব্যালকোনীর দড়িতে সেগুলো টাঙ্গিয়ে
দেয়। দুটো স্লিভলেস ম্যাক্সি, দুটো প্যান্টি, দুটো ব্রা।
এই সব কাপড়গুলো দেখে ওর মনে যে
খটকা লাগেনি তা নয়। মাসীমা কি এই সব জিনিস ব্যাবহার করেন? কে জানে!
এই ফ্ল্যটের বাসিন্দা মাসীমা আর
তার ছেলে। মাসিমা কয়েক মাস আগে দু হফ্তার জন্য কোলকাতায় গেছিলেন মেয়ে কাছে। তারপর
এই করোনার ঝামেলায় ফিরতে পারেন নি। সেখানেই আটকে থেকে গেছেন। তাই এখন এখানকার সংসার
সামলাচ্ছে য়াসমিন। দাদাবাবু কয়েকমাস ঘরে বসেই অফিসের কাজ করছিলো। গত এক তারিখ থেকে
তার গুরগাঁওয়ের অফিস খুলে গেছে। এখন তাকে নিয়মিত অফিস যেতে হচ্ছে। অতি অবশ্যই সমস্ত
Covid norms মেনে।
কাজ কর্ম শেষ করতে করতে রোজ চারটে
বেজে যায়। তারপর য়াসমিন ফ্ল্যাটের দরজা লক করে নিজের বাড়ি ফিরে যায়। এই ফ্ল্যাটের
এক সেট চাবি ওর কাছেই থাকে। ওর বাড়ি অবশ্যি খুব একটা দূরে নয়। হেঁটে গেলে আধঘন্টা
মাত্র। আগে অটোতে আসা যাওয়া করতো এখন এই করোনার সময়ে হেঁটেই যায়। খামোকা রিস্ক নিয়ে
কি লাভ। তার চেয়ে খানিকটা নয় হাঁটাই হলো।
অনিরুদ্ধর অফিস ছুটি হয় ছটায়। তারপর অফিসের গাড়িই তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। আসতে ঘন্টা দেড়েক লাগে। গাড়িতে বসেই হোয়াটসএ্যপ মেসেজটা পায় ও। কোলকাতা থেকে মা পাঠিয়েছে। Who is she? ব্যাস এ টুকুই। অনিরূদ্ধ এর মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারে না। ও পাল্টা ম্যাসেজ করে দেয় Who is who?
তার জবাবে একটা ছবি ঝপ করে এসে
যায়। গ্রিলের গায়ে বেয়ে ওঠা ম্যানিপ্লান্টটা দেখে অনিরূদ্ধ চিনতে পারে এটা ওদের ফ্ল্যাটের
ব্যালকনির ছবি?
এতেও বিশেষ কিছু বুঝতে পারে না
ও। শুধু ছবিটার উপরের লেখা দেখে বুঝতে পারে ছবিটা ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। অর্থাৎ ছবিটা
মা পেয়েছে অন্য কারোর কাছ থেকে। সেটাই মা অনিরূদ্ধকে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছে। কিন্তু কেনো?
অনিরূদ্ধ ভাবলো এরকম ম্যাসেজ চালাচালি না করে সরাসরি মাকে ফোন করে জেনে নেবে। ডায়াল
করার আগেই মায়ের আর একটা ম্যাসেজ এসে গেলো।
- দড়িতে ঝুলন্ত জামাগুলো কার?
আগে খেয়াল না করলেও অনিরূদ্ধ এতক্ষণে
ছবিটাতে ওর ব্যালকোনিতে কাপড় টাঙ্গানোর দড়িটাকে খেয়াল করে। সেখানে যে জামা কাপড় কটা
ঝুলছে তা দেখে ও নিজেও অবাক হয়ে যায়। তারপর ভাবে
- অবাক হবার কি আছে? এ নিশ্চয় কাজের
মেয়ে য়াসমিনের জামা কাপড়। কেচে শুকোতে দিয়েছে। মা যেনো টেলিপ্যাথিতে ওর মনের কথা জেনে
গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জবাব পাঠালো।
- ওগুলো যে য়াসমিনের নয় স্পষ্ট
বোঝা যাচ্ছে। অতো দামি বিদেশি ব্রান্ডের জামা কাপড় কেনার সাধ্য ওর হবে না। তাছাড়া
মুসলিম সমাজে ঐ রকম জামাটামা চলেও না।
এবার অনিরূদ্ধের মাথা গুলিয়ে যায়।
ও তখনকার মতো মা কে মেসেজ করে
- আমি বাড়ি ফিরে, সব খোঁজ নিয়ে
তোমাকে ফোন করছি।
তার জবাবে মেসেজ করেই
মা জবাব দিলেন
- দেখো অনি, বাবা মায়ের মুখে যেনো
চুনকালি দিও না।
বাড়ির সামনে পৌছে অনিরূদ্ধ দেখলো ঝান্ডা হাতে জনা কয়েক লোক দাড়িয়ে। তাদের মধ্যে দুজনকে চিনতে পারলো ও। রামদয়াল মিশ্রা আর দেবেন্দ্র সিং। দুজনেই এলাকার কোনো এক রাজনৈতিক দলের হোমরাচোমরা নেতা মানুষ। বাকিরা সব কমবয়েসী ছেলে ছোকরার দল। গাড়ি থেকে নামতেই ওরা অনিরূদ্ধকে ঘিরে ফেললো।
অনিরূদ্ধ হকচকিয়ে গেলো। রামদয়ালজী
ওকে আশ্বস্ত করে বরাভয় মুদ্রায় হাত তুলে জানালো
- ঘবড়াইয়ে মত। আমরা আপনার কাছে
একটা আপিল নিয়ে এসেছি। উম্মিদ হ্যায়, আপনি জরুর মানবেন সেটা। আপনার বাড়ির মহমেডান
কামওয়ালিকে এখনই বরখাস্ত করে দিন আপনি। এই এলাকা মুসলিম মুক্ত করার মুহিম চালাচ্ছি
আমরা। এখানে মুসলিম ঠেলাওয়ালা, কামওয়ালি, কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। আপনারা কোঅপরেট
করলে, কাজটা শান্তিতে হবে। নহিতো জবরদস্তি করতে হবে। বো হমলোগ নহি চাহতা।
বলে ওরা একটা কাগজ এগিয়ে দিলো।
সেটাতে জড়ানো হিন্দিতে অনেক কিছুই লেখা। ঐ কাগজের নিচে অনেকেরই সই রয়েছে। অনিরূদ্ধকেও
সই করতে বলা হোলো।
- কি লেখা আছে এতে?
- এতোক্ষন আপনিকে যা বললাম - তাই।
নিন সহি করেন।
- মেয়েটা তো খুবই ভালো ---।
- খুঁজলে উসসে ভি ভালো হিন্দু কামওয়ালি
পেয়ে যাবেন।
সই নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে
ওরা এগিয়ে যায়।
মুখ তুলে অনিরূদ্ধ দেখে ওর ব্যালকনিতে
কাপড়গুলো ঝুলছে।
লক খুলে সরাসরি ও ব্যালকনিতে চলে
আসে। ব্রা প্যান্টি সহ কাপড় কটা দেখে বুঝতে পারে এগুলো একদম নতুন। কাপড়গুলোর ট্যাগগুলোও
সরানো হয় নি। শুধু ধুয়ে শুকোতে দেওয়া হয়েছে। ট্যাগ দেখেই বুঝতে পারে এগুলো নামি বিদেশি
ব্রান্ড আর বেশ দামি।
তখনই ওর ফোনটা বেজে ওঠে। য়াসমিন
ফোন করেছে।
-দাদাবাবু কাল থেকে আমি আর কাজে
আসতে পারবো না। পার্টির লোকরা বারন করে দিয়েছে। ফ্ল্যাটের চাবি আমি কৌশল্যার হাতে
পাঠিয়ে দেবো।
অনিরূদ্ধ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে।
- সে ঠিক আছে। ব্যালকনিতে এই যে
জামাগুলো দেখছি--।
- ও গুলো তো আজকেই ডেলিভারি দিয়েছে।
মাইজী যেরকম বলেছিলেন আমি তেমন ভাবেই ভালো করে ডিটল উটল দিয়ে ধুয়ে টাঙ্গিয়ে দিয়েছি।
- আরে এগুলোতো আমাদের না।
- আমি তো নাম এডরিস মিলিয়ে তবেই
নিয়েছি।
- প্যাকেট কভার টভারগুলো যাতে
নাম টাম লেখা থাকে সেগুলো কোথায়?
- মাজী যেমন বলেছিলো। আমি সেগুলো
বাইরে গিয়ে বড়ো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।
সব্বোনাশ! এতক্ষনে তো ময়লা তোলার
গাড়ি এসে সে সব নিয়েও চলে গেছে। অনিরূদ্ধ বুঝতে পারছিলো এগুলো ভুল ডেলিভারি হয়েছে।
অন্যের জিনিস তার কাছে ডেলিভারি দিয়ে গেছে। কিন্তু এখন এগুলো কার জিনিস সেটা ও খুঁজে
বের করবে কি করে?
এসব ভাবতে ভাবতেই অনিরূদ্ধ মা কে
ফোন লাগালো।
ফোনে মা যা জানালো তার সারাংশ এই।
ঐ ছবিটা মায়ের কাছে পাঠিয়েছেন পাশের
ফ্ল্যাটের সুনন্দা কাকিমা। সাথে নাকি লিখেছেন অনিরূদ্ধের সাথে উনার বোনের মেয়ের সম্পর্কটা
যে হয় নি, সেজন্য খুব বাঁচান বেঁচে গেছেন ওরা। এরকম দুশ্চরিত্র ছেলের হাতে মেয়ে দেওয়ার
চেয়ে ....ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর পেছনের ঘটনাটা এরকম।
সুনন্দা কাকিমারা অনিরূদ্ধদের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।
কিছুদিন আগে কাকিমা উনার বোনের
মেয়ের সাথে অনিরূদ্ধের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা অনিরূদ্ধের মা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল
করে দেয়। মেয়টিকে মায়ের পছন্দ নয়। পরিবারটিকেও না। মনে হয় সেটাতে কাকিমা যথেষ্ট অপমানিত
বোধ করেছেন। এখন এভাবে তারই বদলা নিচ্ছেন। অনিরূদ্ধের মা আরও জানালেন। কাকিমা শুধু
মাত্র মাকেই জানাননি পরিচিত সকলের মধ্যে অনিরূদ্ধের চরিত্রের এ হেন পতন নিয়ে প্রচার
চালাচ্ছেন।
একটু পরেই মায়ের আবার ফোন।
- অনি। তুই নাকি য়াসমিনকে কাজ থেকে
ছাড়িয়ে দিয়েছিস?
- আরে না না। সে আবার আর এক কান্ড।
অনিরুদ্ধ মা কে সেই ঘটনার বিবরন
দেয়।
- তোর সব গালগল্প সবসময় রেডিই থাকে।
না?
- আরে বিশ্বাস না হয়, তুমি য়াসমিনকে
ফোন করে দেখো না।
- করেছিলাম। ফোন ধরেছিলো ওর পিসি।
সেই বলেছে। যে নম্বরটা ও আমাদের দিয়েছে, সে ফোনটা আসলে ওর পিসির। ওর পিসি তার ফোনটা
য়াসমিনকে ব্যাবহার করতে দিয়েছিলো। কাজ হারিয়ে য়াসমিন এখন ওর মায়ের কাছে নয়ডা চলে
গেছে।
- তার মানে তুমি আমার কথা বিশ্বাস
কোরছো না?
কোনোরকম জবাব না দিয়ে মা ফোন রেখে
দিলো।
এতো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেলো।
পরদিন অনিরুদ্ধ অফিস গেলো দুধ আর
কর্ণফ্লেকস খেয়ে। অফিসে ওকে চিন্তিত দেখে সিনিয়র কলিগ রুস্তমজী খোঁজ নিলেন।
- ক্যা হুয়া?
তারপর ভুল ডেলিভারির খবরটা শুনে
বল্লেন।
- উসমে ক্যা? তুমহি রখলো। তুম্হে জরুরত নেহি তো কিসি ঔরকো দে দেনা।
অনিরূদ্ধকে তখন, রং ডেলিভারির ফলে
উদ্ভুত পরবর্তী সমস্যাগুলোকে বিস্তারিত জানাতে হোলো।
সব শুনে রুস্তমজী বল্লেন ই বিজনেস
কোম্পানিকে ফোন লাগাও। ও লোগ কুছ উপায় বতা সকতা হ্যায়।
- কৌন সা ই কম্পানি বহি তো মালুম
নহি। য়াসমিন - মতলব মেরা ডোমেস্টিক হেল্ফ সব প্যাকেট উকেট বাহার ফেক দিয়া।
রুস্তমজী তখন সুকুমার সরকারকে ডেকে পাঠিয়ে অনিরূদ্ধের কেসটা সমাধানের জন্য দিলেন। সুকুমার সরকার এই অফিসের মুস্কিল আসান ম্যান। সব শুনে টুনে তিনি একটা সম্ভাবনার কথা বল্লেন।
- আপনি আপনাদের ওখানকার কালিবাড়ির শক্তিপদ মহারাজকে ফোন করুন না। আমার কাছে তার ফোন নাম্বার আছে। সেটা দিচ্ছি আপনাকে।
- উনি আমাকে এ ব্যাপারে কি ভাবে
সাহায্য করবেন?
- জিনিসগুলো যার উনি তাকে খুঁজে
বের করার ক্লু দিতে পারেন। ওনাদের কাছে এলাকার সবার নাম ধাম ফোন নম্বর থাকে তো। উনার
কাছ থেকে কলোনির সব সেনগুপ্তদের নাম সংগ্রহ করে খোঁজ শুরু করা যায়। কোনো সেনগুপ্ত পরিবার
থেকেই তো অর্ডারটা হয়েছে।
- এ তো খড়ের গাদায় সূচ খোঁজা।
সুকুমারবাবু একটু ভেবে বল্লেন দাড়ান।
খোঁজটা আর একটু স্পেসিফিক করে দেওয়া যাক। মোট এগারোটা তো ব্লক। প্রতিটা ব্লকের
2020 নম্বরের বাড়ির খোঁজ নিলেই হবে। আর কোন ব্লকের 2020 তে সেনগুপ্ত রয়েছে। তা দিয়েই
বোঝা যাবে।
ফক্কর গৌতম সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ন কাটলো।
তাহলেই লম্বা টেস্ট সিরিজের বদলে এটা 20-20 গেম হয়ে যাবে।
সেকেন্ড হাফে হন্তদন্ত হয়ে সুকুমার
সরকার এসে অনিরূদ্ধকে জানালো। মশাই আপনিতো ভয়ংকর এক ভদ্রমহিলার চক্করে পড়ে গেছেন। শক্তিপদ
মহারাজকে ফোন করেছিলাম। আপনার নাম বলতেই রেগে গেলেন। আপনার বিরুদ্ধে ভদ্রমহিলার অপপ্রচার
মহারাজ পর্যন্ত পৌছে গেছে। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তারপর কার্যোদ্ধার হয়েছে। এই নিন
অরবিন্দ সেনগুপ্তের নম্বর। E-2020 বাসিন্দা। আরো জেনেছি উনার একমাত্র মেয়ের নাম অনিন্দিতা।
অর্ডারটা মনে হয় উনার মেয়েরই দেওয়া।
এবার আপনি ফোন করে আরও বিস্তারিত
জেনে নিতে পারবেন।
অফিস ছুটির পর আরও একবার দেখা হোলো
সুকুমারের সাথে। এবারে আরো বড়ো ভয়ের খবরটা জানালেন তিনি। উনি খোঁজ পেয়েছেন ঐ ভদ্রমহিলার
এক ছেলে এক রাজনৈতিক দলের আই টি সেলে কাজ করে। তারা ফেক নিউজ তৈরি করে ছড়িয়ে দেবার
ব্যাপারে রিতিমতো দক্ষ। অপপ্রচার হু হু করে ছড়িয়ে দেবার সমস্তরকম টেকনিকই জানে ওরা।
সুতরাং অনিরুদ্ধর বিরুদ্ধে স্ল্যাডারিং ক্যাম্পেইন শুরু হয়ে যেতেই পারে।
- তা হলে কি কোরবো?
- উপায় একটাই। কাউন্টার প্রচার
করতে হবে। কিন্তু অতো সব করার মতো টাইম বা যোগ্যতা কি আপনার আছে? তার চেয়ে বদনামটাকেই
স্বীকার করে নিয়ে চুপ থাকুন।
এই পরামর্শ দিয়ে সুকুমার সরকার
চলে গেলেন। একরকম হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরলো অনিরূদ্ধ। নিরুৎসাহিত হয়েই সুকুমারের দেওয়া
নম্বরে ফোন করলো।
অরবিন্দ বাবু ফোন ধরে জানালেন।
ইতিমধ্যে সুকুমার তাকে সব বলেছে।
হ্যাঁ। অর্ডারটা তার মেয়েই করেছিলো।
ডেলিভারি না পেয়ে কম্প্লেন করতেই, সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি রিপ্লেসমেন্ট দিয়ে দিয়েছে।
তাই ওনাদের কোনো সমস্যা নেই। এ জন্যে অনিরূদ্ধকে যে ঝামেলয় পড়তে হয়েছে সে জন্য তিনি
দুঃখ প্রকাশ করলেন।
এরপরে মায়ের ফোন এলে, অনিরুদ্ধ
মাকে সব ডেভেলপমেন্ট জানিয়ে দিলো। মা অরবিন্দ বাবুর ফোন নাম্বারটি চেয়ে নিলেন। বোধহয়
নিজেই ফোন করে সবটা ঠিকমতো জেনে নিয়ে যাচাই নেবেন। মা য়ের কাছে অনিরূদ্ধের বিশ্বাসযোগ্যতা
এখন তলানিতে।
এদিকে কিন্তু অনিরূদ্ধের বিরুদ্ধে
অপপ্রচার ছড়ানো চলতেই থাকলো। সেই সব পোষ্টগুলিতে অনেক প্রতিবেশীরাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
দিতে লাগলো। নিরুপায় অনিরূদ্ধ সুকুমার সরকারের পরামর্শ মতো সবকিছুই মুখ বুঁজে মেনে
নিতে লাগলো।
ধীরে ধীরে মায়ের ফোনালাপ স্বাভাবিক হয়ে উঠলো।
মা বলে কথা। বাকি সবাই নিশ্চয় এতো
সহজে ভুলবে না। একদিন মা জানালেন। ইদানীং অরবিন্দ বাবুদের সাথে উনার প্রায়ই কথা হয়।
অনিন্দিতার সঙ্গেও।
অনিরূদ্ধ একদিন মা কে বললো। জামাগুলো
আমি ভালো করে ভাজটাজ করে আলমারিতে তুলে রেখেছি। আরো খানিকটা নর্মালসি ফিরলে ওদের বাড়িতে
গিয়ে ফেরত দিয়ে আসবো।
মা হেসে বললেন।
- মনে হয় তার দরকার হবে না। নর্মালসি
ফিরলে অন্য আর একটা কিছু করার কথা ভেবেছি আমরা। অবশ্যি তোর মত থাকলে তবে।
এরপর টুং টুং আওয়াজ করে অনিরূদ্ধের
ফোনে বেশ কটা মেসেজ এলো। কয়েকটা ছবি আর বায়ো ডাটা। সব অনিন্দিতার। মায়ের পাঠানো। দেখেশুনে
অপপ্রচার রোধের মায়ের এই পাকাপোক্ত পরিকল্পনাটা অনিরূদ্ধের বিশেষ পছন্দ হোলো। মনে হোলো
সবক্ষেত্রে অপপ্রচার রোধের এটাই সর্বোত্তম উপায়। উপেক্ষা এবং সৎকর্ম।
আরো কিছুদিন পরে য়াসমিন এসে হাজির।
ওদের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।
কি করে উঠলো?
ঐ দলের কয়েকজন নেতার করোনা হয়ে
গেছে। দু জনের প্লাজমা থেরাপি চলছে। প্লাজমার ডোনার কোনো রোগমুক্ত মুসলিম পেশেন্ট।
তাই আপাতত মুসলমান বিরোধীতা স্থগিত।
করোনা না মিটলেও করোনাকালের কেলেঙ্কারিটা
এভাবেই একসময় মিটে গেছিলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন