বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

প্রণব চক্রবর্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প


খাঁদু মোড়লের এ জয়, গণতন্ত্রের জয় (প্রথম পর্ব)

 

[এটি আদ্যন্ত একটি কল্পকাহিনী। লেখাটির কোনও চরিত্র বা কোনও ঘটনার ক্ষুদ্র অংশের সহিত বাস্তবের কোনও চরিত্র বা কোনও ঘটনার সাযুজ্য চোখে পড়ে, সেটা নিতান্তই কাকতালীয় বলেই বিবেচিত হবে]- লেখক

 

"ফাদার অফ মডার্ন থিয়েটার" যাকে বলা হয় সেই সুইডিশ নাট্যকার তার "এনিমিজ অফ পিউপিল" নাটকে লিখেছিলেন, কমন পিউপিলস আর ইডিয়ট। আমাদের ঘরের পাগলা ঠাকুর তিনি ইবসেন পড়েননি বা পড়ারও কথা নয়, তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত, প্রায় একই কথা অন্যভাবে বলেছিলেন, লোক নয় পোক। কিন্তু এযুগে বসে রম্য রচনায় সিদ্ধহস্ত সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় তার "ছাগল" গল্পে মানুষকে দেখবার নিমিত্ত এক অসাধারণ দিকদর্শন দিলেন। চমৎকৃত হয়েছিলাম সেই পাঠে। তিনি সোজাসাপটা বলে দিলেন, "মানুষকে মানুষ ভাববি না শ্লা, ভাববি টার্গেট"। আহা, এ জ্ঞান যেন একেবার হাতেগরম মোক্ষলাভ। "মানুষকে মানুষ ভাববি না শ্লা, ভাববি টার্গেট"। ভাবা যায়! কেবল ভারতবর্ষেই খুবই কম খরচে বা একেবারেই বিনা খরচে (কারও ক্রয় করা বই বা পত্র-পুস্তিকা চেয়েচিন্তে পড়ে নিলে) জ্ঞানের এমন উজ্জ্বল মণিমুক্ত পকেট ভর্তি করে নিয়ে গিয়ে আবলুশ করা আলমারিতে গুছিয়ে রাখা যায়।... যাই হোক, এবার সরাসরি গল্পে ঢুকে যাই। দেশের স্বাধীনতা লাভের তিন-চার দশক পরের এক সীমান্তবর্তী গ্রাম। সে গ্রামের এক মোড়লকে নিয়েই এ গল্প।

প্রথম পর্ব

এমন মানুষ না হলে মোড়ল হওয়া যায়! কি বিশাল মনের মানুষ! আহা, কথাবার্তা শুনলেই মনে হবে গাঁয়ের কথা ভেবে ভেবে তার ৫৩ দিন একটানা হাগু বন্ধ। মানে ক্রিটিক্যাল কোষ্ঠকাঠিন্য। এর পরের অবস্থা তো আমাদের জানাই আছে, পায়ুদ্বারে রক্ত এবং রক্তিম ঘোড়া ছুটবে বাহ্যিখানায় চুপচাপ বসলে। তো সেই খাঁদু মোড়ল গাঁ, গলি, বাজার, মদের ভাঁটি, বেশ্যাখানা, হাসপাতাল, হাইস্কুল সবই তার যেহেতু হাতের তালুর মত জানা, সবখানেই তাকে খোঁজখবর রাখতে রাতদিন ঘুর ঘুর করতে হয়। আর কয়েক একর চাষের জমির চাষবাস, হিসেবনিকেশ কেনাবেচা এসব দেখাশোনার জন্যেই তো ঘরে পালছেন তিন বউ, আর বাইরে দু-তিন (গাঁয়ের মানুষ রক্ষিতা-টক্ষিতা বলে খুশি হয় না, তাই)মাগী। সুতরাং ঘুরে বেড়ানোর কাজ নীরস হলে চলবে না, তাকে রসে ভিজিয়ে রাখতে পারলেই তো কাজে পৌরুষ সবসময় চেগে থাকবে। তবে ঘরে বাইরে বেশ ব্যালেন্স রেখেছেন দাপটের সঙ্গেই। কারো সাহস নেই তার সামনে দাঁড়িয়ে কোন বউ বা কোন মাগী অন্য কারো নামে অভিযোগ জানাবে।

সীমান্ত সংলগ্ন এ সব গাঁয়ের লাট-বেলাট এতদিন এই মোড়লেরাই ছিলেন কিন্তু পরবতীতে রাজনীতি ঢুকে কেসটাকে কিছুটা কিমা বানাবার চেষ্টা করলেও-- এসব ঝোপজঙ্গল, সাপখোপ, মশার কামড়, কাদায় পা ডুবে যাওয়া ইত্যাদী, তার সঙ্গে এটা নেই, ওটা নেই, সেটা কোত্তে হবে, অমুকটা-তমুকটা দিতী হবে-- এসব কত সহ্য করা যায়! তাই মোড়লই ভরসা। পাঁচবছরে একবার ভোট, ভোটের আগে দু-একদিন পালা কোরে দু-একজন নেতা গোছের মানুষ শহর থেকে মাইক ভাড়া কোরে গাড়ির মাথায় চাপিয়ে খানাখন্দে ভরা গাঁয়ের রাস্তায় ভোঁ গাড়ীতে দুলতে দুলতে, গাঁয়ের খেলার মাঠে এসে পৌঁছিয়ে তেড়ে মাইকবাজী কোরে দিনে দিনেই ফিরে যায় নিরাপদ আস্তানায়। আর এই মোড়লই লাল নীল সাদা গোলাপী হলুদ বেগুনী যত রকম দল আছে সবাইয়ের ভরসা। একটা চৌকি ছড়িয়ে দেয়া আর গাঁয়ের দু-পাঁচজন ছেলে-বউ-বুড়োদের ধরেপেড়ে নিয়ে এসে চৌকির সামনে বসিয়ে দেয়া। তারপরের রগড় ভাবা যায়না, একেকজন নেতা মাইকে চেঁচাতে চেঁচাতে গলার রগ মনে হয় ছিঁড়ে যাবে, কারও চোখমুখ রক্তের মত লাল হয়ে যায়, কেউ কেউ যেন ঘেমে নেয়ে জামা কাপড় ভিজিয়ে ফেলে। আহা, সেই চেল্লানী শুনলেই সাড়া শরীর, সব পেশীটেশি কেমন চেগে ওঠে। বাচ্চারা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে, মেয়েবউরা কেমন চিতিয়ে ওঠে আর ছেলে-ছোকরারা কিছুক্ষণ শুনেই লুঙ্গি গুটিয়ে মোড়লের কাছে এসে বলে, টাকা দাও, মাথা ঘেঁটে গিয়েছে, চোলাই খাব। মোড়ল বিনা বাক্যে টাকা দিয়ে দেয় কারণ নেতারা সে টাকা মোড়লকে আগেই দিয়ে রেখেছে। আসলে এসব এলাকার ভূগোল জ্যামিতি রসায়ন একটু অন্যরকম তো হবেই। কারণ এ গাঁয়ের বেশী পরিমাণ মানুষ দিনমজুরের কাজ করে। একরোজ কামাই মানে তাদের ভাতের হাঁড়িতে টান। তাই তাদের ধরে এনে কোথাও বসাতে গেলে অদ্ধেক দিনের মজুরী তো দিতে হবেই। অদ্ধেক মানে মোড়লের আধা, মজুরের আধা। সোজা হিসেব। এবার তুই যত মাইকবাজী করে যাবি কর, সামনে সবাই সেঁটে বসে নিজেদের মধ্যে অবসর পেয়ে কথাবার্তা চালাবে ইত্যাদী।

তো এভাবেই ভালো চলছিলো, কিন্তু মোড়লের মাথা চটকে দিলো এক রঙ পার্টির লোক এসে। বলে কিনা গাঁয়ের পঞ্চায়েতে মোড়লকে ভোটে দাঁড়াতে হবে। তার সাথেই মোড়লকে বুঝিয়ে দিলো, ভোটে একবার জিতলেই তার মাথা কিভাবে আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। গাঁয়ে নানান রকম উণ্ণয়ণ করা হবে, তার জন্যে বিভিন্ন খাতে আসবে কোটি কোটি টাকা, আর সেই টাকা খরচ করবার মালিক একমাত্র পঞ্চায়েত প্রধান। মোড়লই হবে এ গাঁয়ের পঞ্চায়েত প্রধান। শুধু তাকে ভোটে জিততে হবে। পাশাপাশি সেই রঙ পার্টির নেতা তাকে এটাও বুঝিয়ে দিলো, শুধু ভোটে দাঁড়ালেই হবে না, ভোটে জিততে হবে।

-- সে ভোটে জেতায় আমার কোনো অসুবিধে হবে না।   মোড়ল বললো।

-- ভোটে জেতা অত সহজ নয় গো মোড়ল! অন্য পার্টির লোকেরাও তোমার বিরুদ্ধে লোক দাঁড় করাবে। তারা ভোটারদের হাতে এমন পয়সা ছড়াবে, তুমি দেখবে তোমার পরিচিত লোকেরাই তোমাকে ভোট না দিয়ে হারিয়ে দিয়েছে।

-- তাহলে আমাকে কি করতে হবে?

-- প্রথমে তোমার পাশে থাকবার জন্য এ গাঁয়ের যত চোর ডাকাত জুয়াড়ী মাতাল খুনী মাগীবাজ আছে সবাইকে জড়ো কোরে তোমার ছাতার তলায় নিয়ে আসতে হবে। তারাই খোঁজখবর জোগাড় করে এনে তোমাকে জানিয়ে দেবে অন্য অন্য রঙের পার্টিগুলো ভোটারদের কত টাকা দিচ্ছে এবং টাকা ছাড়াও আরও কিকি সুবিধা দিচ্ছে। সব জেনে নিয়ে, তোমাকে তাদের সবায়ের থেকে বেশি টাকা ও সুবিধে দিতে হবে, আর সেটা দিতে হবে তোমার চ্যালা চামুণ্ডাদের সামনে। যাতে টাকা পয়সা খেয়ে কেউ বেইমানী না করতে পারে।

-- আবার বেইমানী কেন করবে, করবেই বা কিভাবে? গাঁয়ের মানুষ খুব সৎ।

-- ঠিকই বলেছো, গাঁয়ের মানুষ খুব সৎ কিন্তু খুব দরিদ্র। আর সে জন্যেই অন্য পার্টির টাকাটাও তারা খেয়ে নেবে। কারণ কে কোথায় ভোট দিচ্ছে সেটা তো কেউ দেখতে যাচ্ছে না, তাই না!

-- কথাটা ঠিকই বলেছেন। আমার কাছ থেকে টাকা খেয়ে যদি অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দেয়, তবে?

-- সেই জন্যেই প্রয়োজন দাগী ক্রিমিনাল। যাদের দেখেই সাধারণ ভোটার তোমার সাথে বেইমানি করবার সাহস পাবেনা।

কথাটা শুনেই খাঁদু মোড়লের চোখ চকচক করে উঠলো। কে তাকে এবার প্রধান হওয়া ঠেকাবে, দেখা যাবে। বুকের ছাতিটাও যেন সোজা অঙ্কের হিসেবটা বুঝে একেবারে ৫৭ ইঞ্চি হয়ে গেলো। এই রঙ পার্টির খাজা নেতার কি বুদ্ধি! একেবারে অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দিলো ভোটে জেতার সহজ রাস্তা। কিন্তু খরচা তো ভালোই হবে, কে দেবে সেই টাকা, মনে মনে ভেবে যেই জিজ্ঞাসা করতে যাবে, রঙনেতা নিজেই তার উত্তর দিয়ে দিলো--

-- তা এইসব কেনাবেচা করতে যা খরচ-খরচা হবে, এই প্রথম বারের জন্য আমরাই দিয়ে দেব। আমাদের পার্টি নতুনভাবে এসব জায়গা সোনায় মুড়ে দিতে ময়দানে নেমেছে, সুতরাং তুমি তোমার কাজ দায়িত্ব নিয়ে করো, আমরা টাইম টু টাইম রসদ পৌঁছে দোবো। আমার প্রস্তাবে যদি রাজি থাকো, কাজ শুরু করবার জন্য এখুনই কিছু এডভান্স করে যাচ্ছি।

-- এখুনই?

-- আরে এসব কাজে দেরি করলে অন্য পার্টিরা ঢুকে মাঠ গরম কোরে দিলে, তুমি আর কিছু করতেই পারবে না।

-- হ্যাঁ, সেটাও সত্যি কথা। তবে...

-- তবে কিসের? তুমি এ গাঁয়ের মোড়ল, সবায়ের সঙ্গে তোমার পরিচয়। ভালো খারাপ সবাই তোমাকে একডাকে চেনে। তাছাড়া তোমার মেয়েছেলের দোষ আছে, আমাদের পার্টি সে খবরও দিয়েছে। তোমার নিজেরই তো নামে বেনামে গোটা ছয়েক মেয়েছেলে, তাদের নামিয়ে দাও ময়দানে, ভোটে জেতা কে আটকায়। দেখি, ব্যাগ বার করো, আপাতত লাখ দশেক সাথে আছে, দিয়ে যাচ্ছি। তুমি কাজ শুরু করো আবার পাঠিয়ে দেব। আর একটা কথা, এ গ্রামের যে পুলিশ ফাঁড়ি সেখানকার ছোট বড় মাঝারি কর্তাদের সাথে তোমার ভাব কেমন?

-- সে আর বলতে হবে না, আমি খবর দিলেই তারা চলে আসে।

-- বেশ। তুমি তবে এক কাজ করবে, তুমি গিয়ে তাদের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে দেখা করে তোমার ভোটে দাঁড়াবার কথাটা জানিয়ে বলবে, এই উপলক্ষ্যে তাদের কিছু উপহার দিতে চাও। দেখবে সবাই খুশি হয়ে সেটা নিতেও চাইবে। সেই সুযোগে বড় বাবুদের জন্য দশ হাজার টাকা একটা প্যাকেটে ভরে দিয়ে দেবে আর অন্যদের প্যাকেটে ভরে পাঁচহাজার দেবে। দেখো, কাকে কত দিচ্ছ অন্যেরা যেন কেউ জানতে না পারে।

-- আপনার দারুন প্যাঁচ তো! টাকা খেলে সবাই আমার জন্যে কাজ করতে বাধ্য।

-- করবেই তো। কথায় বলে টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও হাঁ করে ফেলে। বুঝলে তো! এবার লেগে পড়ো। নাও, ব্যাগটা খোলো তো, টাকাগুলো ঢুকিয়ে দিই। এখানে দশ লাখ আছে। গোনা বাণ্ডিল।

-- দশ লাখ!!! এই কত্তা, আমাকে বোকা পেয়ে মজা মারছেন না তো? আমি যদি টাকা নিয়ে বলি আপনাকে আমি চিনিইনা, কি হবে?

-- কিছুই না। আমাদের গোটা দেশ নিয়ে চলতে হয়, হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাপার। সুতরাং এসব হিসেব=নিকেশ দেখাশোনা করবার জন্যেও বিস্তর লোক আছে। তারা যেই জানবে টাকা নিয়ে তুমি বেইমানি করেছো, কাকপক্ষীও টের পাবে না, শুধু তোমার বাড়ীর সামনেই গুলিতে ঝাঁঝরা কোরে তোমার বডি ফেলে দিয়ে চলে যাবে।

-- এই, এটা কি বলছেন? আমাদের গ্রাম শান্ত গ্রাম, এখানে এসব করা যাবে না।

-- আমি কি করতে চাইছি নাকি, তুমিই তো বললে বেইমানি করার কথা। আর টাকা নিয়ে ঘ্যাঙরবাজী  করলে আমি কি ছেড়ে দেব! আমরাও তো একটা পার্টি করি, না কি!... আরে এসব ছাড়ো। ব্যাগ বার করো, টাকাটা নিয়ে যেভাবে বললাম কাজ শুরু করো। এ গাঁয়ের সবরকম ক্রিমিন্যালগুলোর বা্ড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা কোরে, তোমার ভোটে দাঁড়াবার কথা তাদের বলো। ধানাই পানাই না কোরে তাদের হাতে সরাসরি পাঁচ-দশ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বলো, তারা যেন তোমার হয়ে ভোটের কাজ করে। ব্যাস। আর এতগুলো কাঁচা টাকা একসাথে হাতে পেলে, তারা আর তোমায় ছাড়তে চাইবে না। পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াবে। তখন তাদের দিয়ে তুমি তোমার প্রয়োজন মত কাজ করিয়ে নেবে। নাও, টাকাটা নাও। আমাকে আবার অন্যখানে যেতে হবে। সাতদিন পর আবার আসব। টাকাও দিয়ে যাব আর জেনে যাব তুমি কতটা কি করতে পারলে।

(২)

মহাসেয়ানা মোড়ল এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করবে কেনো। প্রথমেই বাড়ী গিয়ে তিনবউকে ডেকে বসিয়ে সব কথা বলে, বললো, তোদেরও এবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একবার প্রধান হতে পারলে তোদের সোনায় মুড়িয়ে দেব। আমাদের জমিজমায় যত চাষাভুষো, বেগার-টেগার রোজ খাটে, সবায়ের মাথায় ঢুকিয়ে দিবি বাবুকে ভোটে জেতাতে হবে, দু-একটা মিছিল-মিটিঙেও বেরোতে হবে, তার জন্যেও তারা টাকা পাবে, আর ভোট দেয়ার জন্যে টাকা ভোটের আগে দিয়ে দেয়া হবে। তার তিন বউই হিসেব নিকেশে তুখোড়, তারাই তো জমিজমা চাষবাসের দেখাশোনা করে, ভোটের হিসেবও তারাই বুঝে নেবে। ব্যাগ থেকে টাকা গুলো বার কোরে তাদের সামনে রাখতেই সবার চোখ ছানাবড়া। সবাই মিলে গুনে দেখে, সারাজীবন চাষবাষ, মুনিশ খাটানো, জমির ফসল কেনাবেচা করেও এত টাকা কখনও তারা একসাথে চোখেও দেখেনি, ভাবতেও পারে না। সকলেরই প্রায় খাবি খাওয়ার মত অবস্থা। মোড়ল তাদের টাকাগুলো তুলে সিন্ধুকে রেখে দিতে বলে আর দায়িত্ব নিয়ে আজ থেকেই কাজ শুরু করবার ফর্মান জারি করে। সবাই মিলে কর্তার পা ধুয়ে, মুছিয়ে, খাবার দেবার জন্যে ব্যাস্ত হয়। কিন্তু খাঁদু মোড়লের এখন অনেক কাজ। সিন্দুক খুলে লাখখানেক টাকা গুণে নিয়ে ব্যাগে ভরে হনহন কোরে সোজা বেরিয়ে যায়। এপাড়া ওপাড়ায় ছড়িয়ে থাকা তার অন্য মেয়েমানুষদের সাথে দেখা করেও তাদের সব জানিয়ে তাদের আজ থেকেই কাজে নেমে পড়ার কথা জানিয়ে আসে। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে একেকজন মেয়েমানুষ খাঁদু মোড়লকে জানিয়ে দেয়, সে একাই তার বাবুকে ভোটে জিতিয়ে আনবে।

এসব কোরে যখন সন্ধ্যে নেমে গিয়েছে, মোড়ল তখন ধীরেসুস্থে মদের ভাঁটিতে গিয়ে মালিকের কাছে বসে। একটু কথাবার্তা চালাবার ফাঁকে জেনে নিতে চেষ্টা করে, তাদের গাঁয়ের সবচেয়ে খতরনক খুনোখুনি করবার লোকগুলোর নাম ও ঠিকানা। তারা এই ঠেকে আসে কিনা সেসবও জেনে নেয়। ভাঁটির মালিক গড়গড় কোরে সবায়ের নাম, বাড়ি কোনপাড়ায়, কখন কোথায় পাওয়া যায় সব জানিয়ে দেয়। মোড়ল হিসেব কোরে দেখে, জনা পনেরো এমন খুনের আসামী, ডাকাত, একলা মেয়েছেলেদের সুযোগ পেলেই বনে বাদাড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে লাঙল চষা কোরে দেয়ার মত ক্রিমিনাল গোটা গ্রামে ছড়িয়ে আছে। আর তাদের ছোট বড় মাঝারি সাগরেদ আছে আরও জনা কুড়ি কোরে। তারাই জুয়োর বোর্ড চালায়, এর তার কাছ থেকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে তোলাবাজী করে, গরীবগুর্বো মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে মেয়েছেলের দালালদের কাছে বেচে দেয়। কখনও কখনও তাদের বাবামায়ের হাতে থোকে কিছু টাকা তুলে দিয়ে ভালো বিয়ে দেবার নাম কোরে নিয়ে গিয়েও বাজারে বেচে আসে। মোড়লের কাছে ছবির মতো ভেসে ওঠে, এরা যদি তার সঙ্গে থাকে, তবে এরাই ধমকে চমকে সবাইকে দিয়ে তার নামে ভোট করিয়ে নিয়ে আসবে। কাজ সহজ হয়ে যাবে। মোড়ল ভাঁটি মালিককে তার ভোটে দাঁড়াবার সংবাদটা দিয়ে, তার হাতে হাজার পাঁচেক টাকাও তুলে দেয়। মালিকের হাত ধরে বলে, তোমার এখানে যারা আসবে, আমার হয়ে সবাইকে বোলো। মাঝে মাঝে বিনে পয়সায় আমার নাম কোরে মদও খাইয়ে দিও, প্রয়োজনে আরও টাকা আমি তোমাকে দিয়ে যাব। ভাঁটি মালিক অতগুলো টাকা একসাথে পেয়ে খুশি হয়ে বলে, আপনের কোনো চিন্তা নাই। আপনের হয়ে যা করবার আমি কোরবো।

মোড়ল সেখান থেকে বেরিয়ে রাত হয়ে যাওয়ায়, সেদিনের মত ঘরে ফিরে যায়। ভালো কোরে স্নানটান কোরে খেয়েদেয়ে সে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। তিন বউ মিলেই তাকে আদর করে হাত-পা টেপাটিপি কোরে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। পরদিন সকাল থেকেই খাঁদু মোড়ল তার পকেটের নোটবুকে টুকে রাখা ভাঁটি মালিকের দেয়া ধর্ষক, খুনি, জোচ্চোরদের নাম-ঠিকানা সম্বল কোরে অভিযানে নেমে পড়ে। যেহেতু পায়ে হেঁটে একদিনে বেশি কাজ করা যাবে না, পরিচিত এক মাল-বওয়া ট্রলির সাথে দিনচুক্তি করে তাকে বাহন হিসেবে কাজে লাগায়। মোড়লকে চাপিয়ে ট্রলিয়ালা সুদামও গাঁয়ের এমাথা ওমাথা ঢুঁড়ে ফেলে মোড়লের সাথে। গাঁয়ের সবাই দেখে খাঁদু মোড়ল ছাতা মাথায় সুদামের ট্রলিতে ধুতির কাঁছা গুটিয়ে বসে পুরো গ্রাম চষে ফেলছে। আগ্রহীরা সুদামকে জিজ্ঞেস কোরে জেনে নিয়েছে মোড়ল এবার ভোটে দাঁড়াবে, তাই এখানে ওখানে দেখা করতে যাচ্ছে। মাত্র তিনচার দিনের মধ্যেই নোটবুকে লেখা নামগুলোর কেনাবেচা শেষ। খরচাটা ভালোই হয়েছে। দাগী লোকগুলো মোড়লের সবকথা শুনে নিজেরাই একেকজন একেকরকম পরিমাণের টাকা দাবি করেছে, মোড়ল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সে টাকা তাদের হাতে তুলে দিয়ে চুক্তি পাকা করে ফেলেছে। তবে কুড়ি হাজার টাকার বেশি কেউ চায়নি। অনেকে নিজেরাই দশহাজার চেয়েছে, মোড়ল তাদের হাতে আরও পাঁচহাজার খুশি হয়ে তুলে দিয়েছে। একলপ্তে এতগুলো টাকা পেয়ে মোড়লের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম ক'রে অনেকেই দায়িত্ব নিয়ে মোড়লকে বলে দিয়েছে, ভোটে আপনি জিতে গিয়েছেন ভেবে নেন। কি করে জেতাতে হবে সেটা আমার ব্যাপার। মোড়ল তদের কথা শুনে একেবারে বুকে জড়িয়ে ধরেছে এই সব খতরনক ক্রিমিনাল গুলোকে। তাদেরই কথা মতো তাদের সাগরেদদের হাতে কিছু পয়সা তুলে দেবার জন্যে আরও দু-পাঁচ হাজার টাকা তারা নিজেরাই চেয়ে নিয়েছে মোড়লের থেকে। খাঁদু মোড়ল যেহেতু ভাঁটি মালিকের থেকে এই সাগরেদদের কথাও শুনেছিলো, সুতরাং বিনাবাক্যে তাদের চাহিদা মতো টাকা দিয়ে দিয়েছে এইসব ভয়ঙ্কর লোকগুলোর হাতে। ট্রলিয়ালা সুদাম শুধু বুঝতে পারে না, খাঁদু মোড়ল ভোটে দাঁড়াবার জন্য এইসব খুনি, ডাকাত, ধর্ষক, মেয়ে পাচারকারীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন? ভেতরে যে কর্মকাণ্ড সুদাম সেটা জানে না, মোড়ল শুধু তাকে বলেছে এ গাঁয়ের যার যারা ভোটার সবায়ের কাছে তাকে যেতে হবে সে চোর খুনি বদমাশ যেই হোক। সুদাম বুঝেছে কথাটায় যুক্তি আছে।

পরদিন স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েও রঙ-নেতার কথামতো বড়বাবুর সাথে দেখা কোরে দশহাজারী প্যাকেট তার হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে। থানাবাবু উপহার হিসেবেই সেটা তুলে নিয়ে সোজা প্যান্টের পকেটে চালান করেছেন। তারপর অন্য যে মেজো-ছোটো বন্দুকধারী যারা আছে তাদের হাতেও পাঁচহাজারী প্যাকেটগুলো তুলে দিয়ে সকলের সহযোগিতা চেয়ে সেদিনের মতো বেরিয়ে এসেছে।

মোড়লের বিয়ে না-করা মেয়েছেলেরাও কম যায় না, তারাও এর মধ্যেই বাজার, হাট, বেশ্যাপাড়া, যাত্রা পাঁচালীর আসর সব খানেই ঘুরে ঘুরে কায়দা মতো "খাঁদু মোড়লের মতো মানুষ হয় না, সে ভোটে দাঁড়ালে গরীব মানুষের অবস্থা বদলে দেবে একেবারে" বলে প্রচার শুরু করেছে। খাঁদু মোড়ল এর মধ্যেই একদিন খানকী পাড়ার মাসীর সাথে দেখা কোরে তার হাতে কড়কড়ে দশ হাজার টাকা তুলে দিয়ে তার কাছ থেকে কথা আদায় করে নিয়ে এসেছে যে, এই এলাকায় গরীব বড়লোক যে খরিদ্দারই আসবে, তার এখানকার মেয়েরা সেই খরিদ্দারদের মাথায় খাঁদু মোড়লকে ভোটে জেতানোর কথা কায়দা করে ঢুকিয়ে দেবে। মাসী পাল্টা দাবী করেছে, খাঁদু মোড়ল যেন নিজে একদিন এসে, ওদের সাথে দেখা কো্রে, প্রত্যেকের হাতে একটা কোরে শাড়ী আর দু-এক হাজার টাকা তুলে দিয়ে নিজের কথা নিজে বলে যায়। তাতে ওরা খুশি মনে মোড়লের হয়ে কাজ করবে। খাঁদু মোড়লও খুশি মনেই সে কথা মেনে নেয়। তার নিজের মেয়েছেলেদের দিয়ে জামা-কাপড়ের হাট থেকে গোটা কুড়ি সেট কাপড়-শায়া-ব্লাউজ কিনিয়ে নিয়ে একদিন দুপুরের আগে সুদামের ট্রলিতে চেপে এসে হাজির হয় মাসির দরজায়। মাসী সবাইকে ডেকে নিয়ে এসে খাঁদু মোড়লের সামনে তাদের দাঁড় করায়। মোড়ল নিজেই তার ভোটে দাঁড়ানোর কথা সবাইকে জানিয়ে দেয়। এরপর পরিকল্পনা মাফিক সবায়ের হাতে এক সেট কোরে শাড়ি ব্লাউজ এবং দুহাজার কোরে নগদ টাকা তুলে দেয়। সে সব পেয়ে সেই বাজারী মেয়েরা বিস্তর খুশি। কেউ এসে ঠকাস কোরে মোড়লের পায়ে মাথা ঠুকে প্রণাম করে, কেউ তার হাত ধরে একবার নিজের ঘরে ঢুকিয়ে নিতে চায় ইত্যাদি। শেষমেষ সবাই কথা দেয়, যে ভাবেই হোক খাঁদু মোড়লকে তারা ভোটে জেতাবেই।

ঠিক সাতদিনের মাথায় সেই রঙ-নেতা আবার এসে হাজির। মোড়লের সঙ্গে দেখা কোরে এই সাতদিনে তার কাজে যে তাদের পার্টি খুব খুশি হয়েছে, সে কথা জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি তার হাত ব্যাগ খুলে আরও দশলাখের ঝকঝকে কটা বাণ্ডিল মোড়লের চায়ের টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখে।

-- নাও, আরও দশ আছে। কেউ দেখবার আগে তুলে রাখো। কাজ চালিয়ে যাও, পরে লাগলে আবার দেয়া যাবে। টাকা খরচ করতে কোনোরকম কমতি রাখবে না কোথাও। মনে রেখো তোমার জয় মানেই আমাদেরও জয়। তোমাকে ধরেই আমরাও পা রাখব এই জেলায়, এই রাজ্যে। কাজেই জিততে তোমাকে হবেই। কদিন পর নমিনেশন জমা দিতে হবে, বিরাট মিছিল কোরে যেতে হবে সরকারি দপ্তরে। সেই মিছিল দেখেই যেন সবায়ের হাড় কেঁপে ওঠে। তোমার বিরুদ্ধে তবে আর কেউ ভোটে দাঁড়াতে সাহস পাবে না।

মোড়ল বড় বউকে ডেকে টাকাগুলো তুলে রাখতে বলে। বড় বউ এসে টাকাগুলো চোখ বড় বড় কোরে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যাবার আগেই রঙ-নেতার ডাকে পেছন ফেরে--

-- শুনুন বৌদি, দাদাকে কিন্তু ভোটে জেতাতেই হবে। আর একবার যদি জিতে যায়, আপনারাও কিন্তু রাজরাণী হয়ে দাদার সাথে ঘুরে বেড়াবেন।

কথাটা শুনেই বড় বউয়ের চোখদুটো চিকচিক করে ওঠে। সে কোন উত্তর না দিয়ে আঁচল ভরে টাকাগুলো নিয়ে ভেতর ঘরের দিকে চলে যায়।

(৩)

সবই ঠিকঠাক চলছিলো, গাঁয়ের হাট বাজার মাগীপাড়া, হাসপাতাল এমনকি স্কুলের বাচ্চাকাচ্চাও বলতে শুরু করেছে-- আমাদের গাঁয়ের খাঁদু মোড়ল এবার ভোটে দাঁড়াচ্ছে, বাপ-মা আলোচনা করছিলো সবাই মোড়লকেই ভোট দেবে। হঠাৎই একদিন গাঁয়ের কুখ্যাত খুনি ও ডাকাত গালকাটা সন্ধ্যের পর মোড়লের সাথে দেখা কোরে বলে, এ গাঁয়ের হাবলা জোতদার অন্য এক রঙের হয়ে ভোটে দাঁড়াবে বলে খুব টাকা ছড়াচ্ছে। তার কিছু কাচ্চাবাচ্চা সাগরেদকে বিস্তর টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। তার কাছেও এসেছিলো হাবলা, কিন্তু গালকাটা তাকে পাত্তা দেয়নি। মালটা হাড়কেপ্পন। আর মেয়েছেলে পেলেই যকেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার আমবাগানের ঘরে ঢুকিয়ে হাড়মাংস সেঁকে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গালকাটার দেখলাম তার ওপর খুব রাগ। সে বলল--

-- শোন মোড়ল, আমি খুনে ডাকাত হতে পারি, কিন্তু বেইমান নয়। কেউ আমার কাজে বাধা দিলে তাকে দুনিয়া থেকেই ঘাবলা করে দিই। তোমাকে আমি কথা দিয়েছি তোমাকে জেতাবই। প্রয়োজনে ওই কাচ্চাবাচ্চা সাগরেদগুলোর দুটো-একটাকে ভোগে পাঠিয়ে দিতে আমার কোন অসুবিধেই হবেনা।

-- না না, সে ঠিক আছে। গুরুর কথা অমান্য করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। তা আমাকে এখন কি করতে হবে বলো তো! আমি তো এ পথে আগে নামিনি, এসব ভোট খেলার কিছু জানিও না।

-- কিচ্ছু করতে হবেনা। শুধু যেদিন ভোটের কাগজ জমা দিতে যাবা, যাদের তুমি টাকা খাইয়েছো, সবাইকে বলবে, মালপত্তর কোমড়ে সাঁটিয়ে যেন মিছিলে আসে। আর যে যত লোক পারে সঙ্গে কোরে নিয়ে আসবে। দরকার হলে একদিনের রোজ সবায়ের হাতে তুলে দিতে হবে। ব্যাস, তারপরে দেখছি, কার মাজায় কত জোর!

-- তা গালকাটা, তুমি এক কাজ করোনা, আমার হয়ে তুমিই দায়িত্ব নিয়ে এই কাজ গুলো করো, তাতে যদি তোমাকে টাকা দিতে হয়, সে আমি দিয়ে দেব। আমি জিতলে, তোমাকে আমার এক নম্বর কাছের লোক বলে সবাইকে জানিয়ে দেব। যার যা প্রয়োজন আমার বদলে তোমাকে বললেই হবে।

-- না না মোড়ল, আমরা লেখাপড়া জানি না, খুনখারাবি করে পেট চালাই, আমি সে সব পারব নাকি?

-- নিশ্চয়ই পারবে। নেমে পড়ো, আমার হয়ে যা করবার করো।

-- এ তো বিরাট দায়িত্ব দিলে মোড়ল, দেখি কি করা যায়। তবে একটা কথা বলি, থানাবাবুদের বলে রাখতে হবে দুটো-একটা লাশ পড়ে গেলে যেন বেশি ঝামেলা না করে।

-- ঠিক আছে। তুমি তাহলে আমাদের টিমের ব্যাপারটা সামলাও, আমি ভোটারদের কি করে খুশি রাখা যায়, দেখছি।

-- মোড়ল, একটা কথা বলি, হাবলা আর তার রঙ-পার্টি কিন্তু দুহাত খুলে টাকা ছড়াচ্ছে, প্রয়োজনে তোমাকেও কিন্তু দেদার খরচা করতে হবে। আমি আগে জেনে নিই, ভোটারদের কত করে হাবলা দিচ্ছে, তারপর তুমি তার দ্বিগুণ টাকা দিয়ে আসবা। আচ্ছা তুমি তো কানাহোলা, গিল্লামাঝি, হুদুম মোল্লা, কানকাটা বিল্লা-- এদের সবায়ের সাথেই টাকার চুক্তি করেছো?

-- সবায়ের সাথে। তোমার মত টাকাই এদের সবাইকেই দিয়েছি। কেবল তোমাদের সাগরেদদের সঙ্গে আমি সরাসরি কোন চুক্তি করিনি।

-- ঠিক আছে, নাকে তেল দিয়ে বউ নিয়ে ঘুমাও। আমিই তোমার ভোটে জেতা বুঝে নেব। আর মোড়ল, তোমার যে অন্য মেয়েছেলেগুলো আছে না, যাদের তুমি ঘাপাও, খুব খাটছে গো। দেখো, ওদের ওপর যেন অবিচার না হয়।

-- ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুই এবার আমার হয়ে ময়দান একেবারে ফাঁকা করে দে তো! ওসব হাবলা, ভ্যাবলা যেন আমার ছায়াও মারাতে না পারে!

(ক্রমশ)

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন