কলকাতায় বাংলা ছবির ‘মুক্তি-শৃঙ্খল’ ৫ম পর্ব (রাধা - পূর্ণ)
পূর্ণ
অধুনালুপ্ত ভবানীপুরের পূর্ণ সিনেমায় যত না বাংলা ছবি দেখেছি, বোধহয় তাঁর সমান বা বেশী দেখেছি ইংরেজী ছবি! বাস্তবে, পূর্ণর প্রথম স্মৃতি হলো খুব ছোটবেলায়, সম্ভবত রবিবার সকালে এখানে Son of Robin Hood দেখতে যাওয়া, যে ছবির চমক ছিল যে আদতে গল্পের কেন্দ্রে যে চরিত্র, সে রবিন হুডের ছেলে নয়, মেয়ে ডিয়ারিং হুড! জীবনে প্রথম Tarzan-কে নিয়ে ছবিও এই পূর্ণতে রবিবার সকালে দেখা!
যাইহোক, এখন বাংলা ছবির প্রসঙ্গে আসি।
দুর্বোধ্য ও ক্লান্তিকর লেগেছিল ১২ই নভেম্বর ১৯৬৫-তে মুক্তি পাওয়া সুপার হিট ‘মুখুজ্যে পরিবার’। শুধু মনে আছে, অনুপকুমার হাতে একটি বল নিয়ে (সম্ভবত মান্না দের গলায়) সারা বাড়ি ঘুরছেন আর গাইছেন, “দাদরা-কাহারবায়-চৌতালে-ঝম্পকে, পাতায়-পাতায়, ডালে-ডালে / দুনিয়ায় সবাই ঘুরছে ভাই তালে!” গান তিনি থামাতে বাধ্য হচ্ছেন যখন রান্নাঘর থেকে কোমরে কাপড় গুঁজে বেরিয়ে এসে কোন এক গুরুজন-স্থানীয়া মহিলা (ছায়া দেবী?) অনুপকুমারকে সমানে চপেটাঘাত করতে শুরু করছেন! অন্যান্যদের মধ্যে অভিনয়ে ছিলেন জহর গাঙ্গুলী।
১৯৬৬তে আমার জেদের বশবর্তী হয়ে বাবা আমায় নিয়ে যান পূর্ণতে
‘মায়াবিনী লেন’ দেখতে, কারণ ছবির পোস্টার দেখে ভেবেছিলাম এটি ভূতের গল্প! দাদা বারবার
সাবধান করেছিলেন যে গল্প একটি বস্তিকে নিয়ে, ভূতের ‘ভ’ও ছবিতে নেই। মনে করুন ছবির প্রথম
দৃশ্য, কুয়াশায় ঢাকা আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে কাঁধে বস্তার মতো কী একটা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন
বিকাশ রায় – দেখে খুব আশা করলাম ভূত আসবে! কিন্তু দাদাই ঠিক, বস্তিবাসীদের জীবন সংগ্রামের
গল্প, যে বস্তিকে ভেঙে গড়ে উঠতে চলেছে প্রাসাদ! শুধু চমক লেগেছিল চেনা মেট্রো সিনেমাকে
দেখে, যার কাছে রাস্তায় নেচে-নেচে গান করছেন একজন পুরুষ ও এক মহিলা, “দুনিয়াটা সব ভিতরে
কালো, বাইরেতে চুনকাম” (পুরুষকণ্ঠ সম্ভবত সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের)। আর নায়কের (নির্মলকুমার?)
মুখে অপ্রত্যাশিতভাবে খুব চেনা কণ্ঠে গান, “ওগো মায়াবিনী লেন”! বলে দিতে হবে কি, কার
কণ্ঠ? বাবা অবশ্য ছবিটি দেখে খুবই বিরক্ত হয়ে
আমাকে ভর্ৎসনা করেছিলেন।
১৯৬৭ সালে অক্টোবর মাসে (মুক্তির তারিখ ২৯শে সেপ্টেম্বর) ৬০ সালে ‘সখের চোর’ আর ৬৫ সালে ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’-এর পর সত্যজিৎ ও উত্তম একসঙ্গে আমার সিনেমা-দেখার ভুবনে আবির্ভূত হন ‘চিড়িয়াখানা’তে (পূর্ণ)! বুঝতেই পারছেন কেন এই ছবি দেখার অনুমতি মিলেছিলঃ গোয়েন্দা কাহিনী যে! আর প্রথম দর্শনেই উত্তমকুমার আমাকে অভিভূত করেছিলেন! অথচ, তাঁর বা সত্যজিতের অতি বড় ভক্তও দাবী করবেননা যে দু’জনের শ্রেষ্ঠ ছবিগুলির মধ্যে ‘চিড়িয়াখানা’ পড়ে!
সম্ভবত ১৯৬৮ বা ৬৯-এ পূর্ণতে মা আমার ইচ্ছাতেই নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছেন পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত ১৯৪৯ সালের দেশাত্মবোধক ছবি ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’, যার অন্যতম সম্পদ একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি।
১৯৭২-এর শেষে এরপর দেখি আমার প্রথম (আংশিক) রঙিন বাংলা ছবি,
অরুন্ধতী দেবী পরিচালিত ‘পদিপিসীর বর্মিবাক্স’, পূর্ণতে। (এর আগে বাংলা ছবিতে রং দেখেছি
প্রথম বোধহয় ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’-এর শেষ দৃশ্যে)। এখনকার সিনেমায় বা ধারাবাহিকে
অতীতকে সাধারণত দেখানো হয় সাদা-কালোয় বা সেপিয়ায়, বর্তমান থাকে ‘স্বাভাবিক’ভাবে রঙিন।
আর ৭২ সালে বর্তমানের ঘটনা দেখানো হয়েছিল তখন বাংলা ছবির রীতি মেনে প্রত্যাশিত সাদা-কালোয়। আর যে মুহূর্তে পাঁচুমামা (চিন্ময় রায়)
পদিপিসীর সম্বন্ধে স্মৃতিচারণ আরম্ভ করলেন, ছবি হয়ে উঠল রঙিন! অন্যদের অতীতকথনের সময়ও
রঙিন চিত্রগ্রহণ ব্যবহৃত হয়েছে। পদিপিসীরূপী ছায়া দেবী দক্ষ অভিনেত্রী, কিন্তু বর্তমানের
পদ্মা দেবীর অভিনয়ের পাশে তাঁর কাজ একটু মোটা দাগের লেগেছিল। আর অতীতের চরিত্রে দ্বিজু
ভাওয়াল (?) এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের কীর্তিকলাপও অত্যধিক স্থূলরুচির মনে হয়েছে। দুই
ক্ষেত্রেই পরিচালিকা আরেকটু সংযত অভিনয় দাবি করতে পারতেন।
সত্তরের দশকেই পূর্ণতে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম শ্রীমতী পিকচার্স-এর পুনর্মুক্তি প্রাপ্ত, শরৎচন্দ্রের কাহিনি অবলম্বনে কানন দেবী, কমল মিত্র, জহর গাঙ্গুলী, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য প্রমুখ অভিনীত ‘নব বিধান’। ‘অগ্নীশ্বর’ দেখেছি অনেক পরে, ৮০-র দশকের গোড়ায়, যখন পূর্ণতেই ছবিটি (পুন)র্মুক্তি পায়, যেমন ৭৫-এ প্রথম পেয়েছিল। অনেকদিক দিয়েই প্রশংসনীয় ছবি, কিন্তু প্রথমার্ধে উত্তমকুমার খানিকটা অতি-অভিনয় করেননি কি? ঐ চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে থাকা! পরে শুনেছি উত্তম সজ্ঞানেই এ কাজ করেছিলেন, বাস্তব জীবনে তাঁর দেখা কোন একজনের অনুকরণে। তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে উত্তমের অভিনয় অনেক বেশী স্বাভাবিক। আমার কাছে বিশেষ আকর্ষণ অবশ্যই ছিল হেমন্তকন্ঠে “পুরানো সেই দিনের কথা” আর তাঁর গাওয়া দুটি দ্বিজেন্দ্রগীতির মধ্যে একটিঃ “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা”। ছবিটি মার সঙ্গে দেখেছিলাম ‘ডবল শো’-এ। এর আগের প্রদর্শনীতে পাশেই ভারতীতে দেখেছিলাম ‘সপ্তপদী’।
কোন এক সময় পূর্ণতে দেখি পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত ১৯৫৪ সালের ছবি ঢুলি। ১৯৭৪/৭৫-এ দেবী চৌধুরাণী-রূপে মহানায়িকা মন কাড়েননি একেবারেই। কিন্তু এবার অনুভব করি সুচিত্রা সেনের মুগ্ধ-করা সৌন্দর্য এবং তাঁর অভিনয় ক্ষমতা। এটিই সম্ভবত একমাত্র ছবি যা’তে সুচিত্রা সেন এবং মালা সিনহা একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। ছবির নাম জানা ছিল ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ‘ত্রিনয়নী দুর্গা’ গানটির জন্যে। দেখতে গিয়ে টাইটেল কার্ডে উপরি পাওনাঃ নেপথ্য শিল্পীদের তালিকায় ‘ধনঞ্জয়’-এর পরেই সেই ‘হেমন্ত’! মেরুদণ্ডহীন নায়কের পাশে মহানায়িকা অপাত্রের প্রতি নীরব ভালোবাসায় দীপ্ত! এমনকি উচ্ছল কিশোরী ছাত্রীর ভূমিকায় মালাও মন কেড়েছেন।
পূর্ণতে শেষবার গেছি আশির দশকের গোড়ায়। আগেই বলেছি যে এখানে বাংলা ছবির পাশাপাশি দেখতাম ইংরেজী ছবি। কিন্তু এই শেষবার শ্যামাপ্রসাদ কলেজের দুই বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মীকে নিয়ে দেখতে যাই একটি পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত ষাটের দশকের হিন্দী ছবিঃ আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস ও নাটক And Then There Were None অনুপ্রাণিত ‘গুমনাম’।
কালিঘাট-ভবানীপুর অঞ্চল ছিল বাংলা ছবির জায়গা। সবার আগে হিন্দী ছবির কাছে আত্মসমর্পণ করে যদুবাবুর বাজারের লাগোয়া রূপালী। এখানে কোনদিন বাংলা ছবি চলতেই দেখিনি, যদিও শুনেছি যে এককালে এখানে বাংলা ছবিই আসত। এরপর বাংলা ছবির ফাঁকে ফাঁকে হিন্দী ছবি দেখানো শুরু করে বসুশ্রী, ঊজ্জ্বলা, ইন্দিরা, ভারতী। হিন্দী ছবি না দেখানোর ব্যাপারে দৃঢ় ছিল পূর্ণ এবং মিনার-বিজলী-ছবিঘর ‘চেন’। আশির দশকে এই প্রতিরোধ শেষ হয়ে যায়। আগেই বলেছি, বিজলীতে দুপুরের শো-তে এই সময় দেখেছি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রযোজিত এবং সুরারোপিত ‘কোহরা’। আর এবার পূর্ণ আনলো আদ্যোপান্ত বোম্বাই ঘরানার ছবি ‘গুমনাম’। লক্ষ্যণীয় যে ‘কোহরা’ এবং ‘গুমনাম’ দুটিই বিদেশী কাহিনি-অনুপ্রাণিত।
রাধা
১২ই জুন ১৯৬৪ তারিখে মা লিখছেন যে আমাকে ‘বীরেশ্বর বিবেকানন্দ’ দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বয়স তখন সাত। বাবা ভারতীয় সৈন্যদলে থাকার সুবাদে আমরা তখন থাকতাম ১ নং বালিগঞ্জ ময়দান ক্যাম্পে। সেখান থেকে বাংলা ছবি দেখার এলাকা ছিল দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আর কালিঘাট এলাকার হলগুলো। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটলো। যে আত্মীয়া ছবিটি দেখার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি উত্তর কলকাতার একটি ইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তিনি টিকিট কাটলেন হাতিবাগানের রাধায় (এটিও আর নেই!)। মা লিখছেন যে আমার সেই কাকা (‘দেড়শো খকার কাণ্ডে’-র খলনায়ক জটাধর বক্সী যাঁর মতো দেখতে) বলছেন, “দূর। দূর, কী ওসব দেখবি?” আমার উত্তরঃ “এত মহান্ পুরুষ ছিলেন – অমন করে বলছ? বললে পাপ হয় জানো?” যাবার আগে আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! আমি তো দরজার পেছনে লুকিয়ে! মা ক্ষেপে গিয়ে আমাকে ‘ইডিয়ট’ বলায় যে মাসীমা সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর কাছে ভর্ৎসিতা হন! মনে আছে, রাধায় বেশ ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে লাগছিল, মানে এটা সেই সময় যখন অল্প কিছু দিনের জন্যে বাংলা ছবির হলগুলো দর্শক-স্বাচ্ছন্দের কথা ভেবে নিজেদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করে! কিছু উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বাংলা ছবির হলে অনেকদিন অবধি রবিবার সকালে বাঙালি দর্শকদের জন্যে ইংরেজী ছবি দেখানো হতো। রাধাতেও এই নিয়ম মেনে মূল ছবির আগে দেখানো হলো David and Goliath-এর ট্রেলর। মূল ছবিটি, মা লিখছেন, বিরতি পর্যন্ত বেশ উপভোগ করেছিলাম। জীবনী-পুস্তকে পড়া নরেনের দামাল শৈশবের ঘটনা মনে আছে, যেভাবে তাঁকে শান্ত করতে মাথায় জল ঢালতে হতো, তা দেখলাম। ঠাকুর রামকৃষ্ণরূপী গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে তখন কিছুটা বিদঘুটে আর হাস্যকরই মনে হয়েছিল, কারণ জীবনী-বইগুলিতে তাঁর বাণীই থাকতো, তাঁর তথাকথিত ক্ষ্যাপামির বর্ণনা নয়। অভিনেতার গলায় একটি শ্যামাসংগীতও ছিল মনে পড়ে, গেয়েছিলেন বোধহয় ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। আরও মজা পেয়েছিলাম একটি অজানা ঘটনা দেখে। ঠাকুর মা’র নাম করতে-করতে শয্যায় বসেই “ওরে বাবারে, জ্বলে গেলুম, পুড়ে গেলুম” বলে উঠে পড়লেন। সম্ভবত নরেনই তাঁকে যাচাই করার জন্যে খাটে টাকা রেখেছিলেন! তবে ছবির শেষটা একটু বিভ্রান্ত করেছিল। মা আমার মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেনঃ “ ‘তোর অনেক কাজ আছে!’ তারপর পাথরের উপর একটা ওঁ লেখা – কী মানে হয়?”
১৯৬৫ সালে বাবা ভারতীয় সৈন্যদল থেকে অবসর নিয়ে Voltas কোম্পানীতে
যোগ দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬-এর জুন মাস অবধি আমাদের ঠিকানা ছিল মধ্য
কলকাতার রাসেল স্ট্রীটে, কোম্পানীর ফ্ল্যাট। Voltasথেকে বাবা অবসর নেন ঐ ৭৬-এর ফেব্রুয়ারীতেই,
কিন্তু কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ, অতি সৌজন্য-সহকারে আমাদের ১৫ই জুলাই অবধি ফ্ল্যাটে থাকার
অনুমতি দেন, যাতে আমি Part 1 পরীক্ষা নির্বিঘ্নে শেষ করতে পারি। এর মধ্যে ধীরে-ধীরে
আমাদের জিনিসপত্র সরতে থাকে বাবার তৈরি আমাদের নিজস্ব ‘সল্ট লেক’ (বিধান নগর)-এর বাড়িতে।
এর পরেই আস্তে-আস্তে উত্তর কলকাতার সিনেমা-হলগুলোতে যাওয়া শুরু করেছিলাম। ওপরে বলেছি যে ষাটের দশকে রাধায় ‘বীরেশ্বর বিবেকানন্দ’ দেখা ছিল স্থানের দিক দিয়ে ব্যতিক্রমী, কারণ তখন বাংলা ছবি দেখা হতো দক্ষিণের ভবানীপুর-কালিঘাট অঞ্চলে। এতদিনে শ্যামবাজারের মিনারে দেখেছি সেই ১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’, আর আবার রাধায় ১৯৬৩ সালের ‘পলাতক’, যাতে ‘যাত্রিক’ নামের আড়ালে হেমন্তর সঙ্গে প্রথম জুটি বেঁধেছিলেন তরুণ মজুমদার। গান পাগল করেছিল, তৃপ্ত করেছিল, কিন্তু অনুপকুমার-অভিনীত মূল চরিত্রটির প্রতি খুব-একটা সহানুভূতি বোধ করিনি। তার ক্ষ্যাপামির জন্যে মানসিকভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে একের পর এক চরিত্র, ‘হরে’রূপিনী সন্ধ্যা রায় থেকে যাত্রাদলের গোলাপ (অনুভা গুপ্ত) আর বসন্তের স্নেহময় দাদা-বৌদি (অসিতবরণ-ভারতী দেবী) অবধি! তবে “জীবনপুরের পথিক রে ভাই” আমার গলায় ধ্বনিত হয়েছে প্রেসিডেন্সী কলেজে প্রমোদদা’র ক্যান্টিনে, তার হিন্দি রূপান্তরটি – “জনম সে বনজারা হুঁ বন্ধু” – লক্ষ্নৌ-এর ‘মোতি মহল’ ক্যাম্পাসে, এবং সবশেষে আবার বাংলা গানটি সাগরপারের অক্সফোর্ড শহরে এক ‘পাব’-এ!
১৯৯৩ সালে আমার বিয়ে হয়। সে বছর ১লা বৈশাখ উপলক্ষে আমরা স্থির করি সিনেমায় ‘ডবল শো’ দেখব! দুপুর বা ম্যাটিনির শোতে যাই হাতিবাগানের রাধায় – আমার জীবনে এই তৃতীয় ও শেষবার! ছবির নাম রক্তের স্বাদ। অভিনয়ে দেবশ্রী রায়, প্রসেনজিৎ, সুপ্রিয়া দেবী, দিলীপ রায়, জর্জ বেকার, অনামিকা সাহা, চিত্রা সেন প্রমুখ। কলকাতার বাইরে কোন এক মফস্বল শহরে একের পর এক মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। দেহগুলি সব রক্তশূন্য। আর প্রায় প্রত্যেকটির ধারে-কাছে দেখা গেছে শহরের হাসপাতাল/নার্সিং হোমের ডাক্তার-দম্পতির (সুপ্রিয়া দেবী-দিলীপ রায়) অনাথা আত্মীয়া দেবশ্রী রায়কে! অবস্থা এমন পর্যায় পৌঁছোয় যে মানসিক-ভাবে বিপর্যস্ত দেবশ্রী মনে করতে থাকে যে সে সত্যিই ‘ড্রাকুলা’ হয়ে গেছে! নবাগত যুবক প্রসেনজিৎ অবশেষে রহস্যের বেশ চমকে দেওয়া কিনারা করে, যদিও সমাধানের ব্যাখ্যায় খানিকটা গোঁজামিল আছে! ব্রিটিশ বন্ধু এবং ভ্যাম্পায়ার-বিশেষজ্ঞ Andy Boylan ছবিটির একটি মনোজ্ঞ সমালোচনা লিখেছেন। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
https://taliesinttlg.blogspot.com/2018/08/rakter-swad-review.html
শেষপর্বে লিখব কিছু একক প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে।
(ক্রমশ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন