কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫ |
ব্যাগ
বাস
থেকে নেমে দেখি কাঁধের ব্যাগটা নেই। খুঁজতে খুঁজতে একটি লম্বা সিঁড়ি। বাড়ি। এটি একটি
বৃদ্ধাবাস। এই বাড়িটা খুব চেনা। এখানে রবীন্দ্রনাথ থাকে মানে যে রবীন্দ্রনাথ অনেক গানটান
লিখেছেন। একটি ছোট্ট ঘরে চারু মজুমদার। কয়েকটা ঘর খালি। ব্যাগেও কয়েকজন ছিলো। ওদের
খোঁজে এসেছি। জয়স নামে এক ভদ্রলোক, কাফকা।
কয়েকঘর
ভাড়াটে পত্রিকা হাতের রেখা মেলে ধরল। ওখানে অনেক কানাগলি। ওখানে টুকরো আর খুচরো চাঁদ
জটলা করে আছে। ব্যাগটা খোঁজাখুঁজি করি। বারান্দায় বসে কজনা শিরওঠা বুড়ি অবাক বিস্ময়ে
তাকিয়ে দেখে। ওরা বলতে পারে না আমার ব্যাগটার কথা। আরো সিঁড়ি, আরো কত ঘরে উঁকিঝুঁকি।
নীল ঝর্ণা কলম থেকে মাধবীলতা বারান্দার আলসেতে।
এলোমেলো
চাদর। বিস্বস্ত্র বিছানা। কেউ নেই ঘরে। এক কোণে মাটির কলসি। ভরা কিম্বা শূন্য। কলসি
থেকে শোনা যায় রাত হলে মুনিরা চৌধুরীর গুমরে ওঠা কান্না। দু’একটা বাদুর ডানায় হারিয়ে
যাওয়া শব্দ নিয়ে উড়ছে মাথার ওপর।
কবিতা
সিংহ বললেন, নিয়ে যাও। আছে তো অনেক পড়ে। পড়ে আছে বটে অনেক ব্যাগ, ফেলে যাওয়া ব্যাগ।
দরকারি সবকিছু সহ পড়ে আছে। শুধু আমারটা নেই। নিচ দিয়ে ট্রেন। যেন বালিগঞ্জ স্টেশনের
মতো। এখন এই শহরটা অচেনা যেখানে যা থাকার কথা তা নেই। রবীন্দ্রনাথ মোড়ে দাঁড়িয়ে অসহায়।
রাস্তারা নাম পাল্টে নিয়ে নতুন জামা পরেছে। আমি খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত একটা ব্যাগ
নিয়ে সিঁড়ি ধরে নামতে থাকি।
আর
কতো নামব! চেয়ে দেখি গায়ে নেই সুতো। এই নগ্নতা দেখেনি কেন ওরা? ওইসব বাসিন্দারা? এমনকি
শরৎবাবুও নীরব নগ্নতা বিষয়ক এই পরিস্থিতিতে। চৌরাস্তার মোড়ে লাল চোখে চাঁদ। আসন্ন আন্দোলনের
জন্য আকাশ প্রস্তুত।
সামনে
পড়ে আছে সাদা পাতা দুটি। আমার মেয়ের আঁকা ক্রেয়নের নৌকো।
পার
হয়ে যাচ্ছে কালো বেড়াল। পথটা সোজা গিয়ে মিশেছে আকাশে। আমি
কোথা
থেকে যেন বাসে উঠেছিলাম এখন আর মনে নেই। যে কোনো বাসস্টপে এখন পৌঁছে যাওয়া দরকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন