কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫ |
শরীরী
মন্দাকিনী মেসেজ পাঠিয়েছিল সিরাজকে, আজ বিকেলের পর মা-বাপি একটা বিয়ের পার্টিতে যাবে। ফ্ল্যাট খালি থাকবে। তুমি চলে আসবে কিন্তু!
অনেকদিন পরে মন্দাকিনীর আমন্ত্রণ পেল সিরাজ। ইদানীং মন্দাকিনী সিরাজকে কিছুটা এড়িয়ে চলে, তা সিরাজ বুঝতে পারে। আগের মতো শরীরী সম্পর্কের জন্য তার ডাক পড়ে না। শারীরিকভাবে তারা শেষ মিলিত হয়েছিল মাস খানেক আগে, মন্দাকিনীদের ফ্ল্যাটেই। সিরাজেরই হয়েছে মুশকিল, শরীরী তাগিদ থেকে কখন যে তার মনের তাগিদের স্ফূরণ ঘটেছে, তা বুঝতেও পারেনি। একদিন কথায় কথায় বলেছিল, আমরা কতদিন এভাবে ভেসে বেড়াব মন্দাকিনী? তার থেকে বরং আমরা একসঙ্গে থাকতে পারি!
মন্দাকিনী
হেসে বলেছিল, না, লিভ ইন আমার পোষাবে না। মা-বাপিও মেনে নেবে না।
সিরাজ
বলেছিল, তাহলে আমরা বিয়ে করি!
মন্দাকিনী
বলেছিল, সংসার-টংসার তো আরও খারাপ। হাজার কিসিমের দায় দায়িত্ব!
বিকেল ছ’টা নাগাদ সিরাজ পৌঁছে গেছিল মন্দাকিনীদের ফ্ল্যাট ক্যাম্পাসে। গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করে ফোন করল মন্দাকিনীকে। সিরাজের জানা নেই, ইতিমধ্যেই মন্দাকিনীর মা-বাপি বিয়ের পার্টির জন্য বেরিয়ে গেছেন কিনা! এখনও রওয়ানা না হয়ে থাকলে, সিরাজকে অপেক্ষা করতে হবে। সিরাজের মনে পড়ে, এর আগেও সে এই ফ্ল্যাটে মন্দাকিনীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে সবদিন তো আর ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকে না! অগত্যা তাই খুঁজে বেড়াতে হয় কোনো গোপন আস্তানা। ঘন্টা-প্রতি ভাড়ার হোটেল শহরের কিছু অঞ্চলে আছে। মন্দাকিনী সেইসব হোটেলের খোঁজ রাখে। সিরাজকে নিয়ে ঘন্টা দুয়েক বা তিনেক সেখানেই সময় কাটায়।
সিরাজ ফোন করে রিং-টোন শুনতে লাগল। একটা চালু হিন্দি ফিল্মি গান বেজেই গেল। মন্দাকিনী রিসিভ করল না। মিনিট পাঁচেক পর আবার করল, সেই একই ব্যাপার। অধৈর্য লাগল সিরাজের। মা-বাপি কি এখনও ফ্ল্যাটেই আছেন?
না, ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না। সিরাজ লিফটে চড়ে উঠে গেল চোদ্দতলায়। লিফটের বাঁ-পাশের কোণার ফ্ল্যাট মন্দাকিনীদের। সিরাজ কলিংবেলে চাপ দিল। কিন্তু কেউ দরজা খুলল না। কী মনে হতে দরজাটা ঠ্যালা দিল। দরজা খুলে গেল। সিরাজের কেমন যেন খটকা লাগল! এভাবে দরজা খোলা থাকার তো কথা নয়! ড্রয়িংরুমে ঢুকে সিরাজ ডাকল, মন্দাকিনী! কারও কোনো সাড়াশব্দ নেই। কয়েকবার ডাকার পর হঠাৎ ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো একজন সুবেশ লোক। বলল, আপনি তো সিরাজ, তাই না? মন্দাকিনী আপনার কথা বলেছিল। সিরাজ হকচকিয়ে গেল।
-আজ আপনাদের নাকি মিলিত হবার ছিল! কিন্তু আমি না জেনেই আগেভাগে চলে এসেছিলাম। আপনি আসবেন বলে মন্দাকিনী আজ আমার সঙ্গে কিছুতেই মিলিত হতে রাজি হচ্ছিল না। আমিও ছাড়ার মানুষ নই। লেগে গেল হাতাহাতি। আসলে আমরা দুজনেই আজ এক্সেস ড্রিংক করেছিলাম। আর বুঝলেন, হাতাহাতি করতে গিয়ে মন্দাকিনী আছড়ে পড়েছিল সেন্টার টেবিলের কোণায়। আর মাথাটা খুব জোরে ঠুকে যেতে এত ব্লিডিং হলো যে, মন্দাকিনী মরেই গেল। তা ভালোই হলো, আপনি এসে গেছেন। এখন আপনিই সামলান। আমি চললাম। আর দরজাটা আমি বাইরে থেকে তালা মেরে যাচ্ছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন