শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫


লাভলি

 

লাভলিকে অনেকদিন ধরে চিনি। প্রায় চারবছর। বছর চারেক আগে ও যখন বটতলায় আমাদের আড্ডার পাশের বিউটি পার্লারে চাকরি নিয়ে এল, ওর কোলে ছ’মাসের এক বাচ্চা। ডিভোর্স হয়ে কুড়ি-বাইশের সিঙ্গল মাদার, বরের অতাপতা  কেউ জানে না, শহর বদলে এখানে চলে এল। সেই থেকে। কিন্তু কোনদিন ওর আচরণে অস্বাভাবিক কিছু আমরা লক্ষ্য করিনি। সকাল সন্ধে। মার্জিত। চা খেতে  এসে আমাদের সঙ্গে সহজভাবে কথা বলে, কাকু বলে ডাকে। ওর মেয়েকে এবার কাছেই এক কে জি স্কুলে ভর্তি করেছে। সেই লাভলি আজ সকালে এক বেয়াড়া আব্দার করল।

আড্ডা মারার সময় ও আমাকে ফাঁকা পার্লারে ডেকে নিয়ে বলল, কাকু, খুব বিপদ। আপনি বাঁচান। বললাম, আমি একা কেন? তুমি আমাদের সবার কাছে তোমার সমস্যা বল, তারপর দেখছি। ও বলল, হবে না, ছড়িয়ে যাবে। আপনি একা মানুষ, আপনার বন্ধুদের কাছে শুনেছি আপনি বিপত্নীক, কোন ছেলে-মেয়ে নেই, আপনার পক্ষেই এটা সম্ভব। কোন সন্দেহ ছাড়া। বললাম, বল, দেখি  সাহায্য করা যায় কিনা। ও বলল, একটি ছেলে আমায় ভালবাসে। কিন্তু আমি জানি মোহ কেটে গেলে এই সম্পর্ক টিকবে না। কারণ ও অবিবাহিত, আর আমি  ডিভোর্সি- এক বাচ্চার মা। তাই আমি ওকে আঘাত দিয়ে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাই। আর এই কাজে আপনিই পারবেন আমায় সাহায্য করতে কারণ আপনি একা মানুষ। বললাম, বল, শুনি, কী চাও। লাভলি আমার চোখে  চোখ রেখে বলল, কাকু, আমি এক বেশ্যা আর আপনি আমার ক্লায়েন্ট। এই অভিনয় আজ বিকেলে আপনাকে করতে হবে। চমকে উঠলাম, তুমি আমার মেয়ের বয়সী! ও বলল, কাকু, এই ছেলেটি আগে আমার যাবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত। এখন সাহস বেড়েছে। আপনারা যাবার পর মাঝে মাঝেই আজকাল পার্লারে হাজির হয়। এমনকি বিকেলেও। কয়েকবার জড়িয়ে ধরেছে। আজ বিকেলেও আসবে। ওকে বাধা দিয়ে লাভ নেই। ধাক্কা দিতে হবে। ও আসার আগেই আপনি ভেতরের বিছানায় বসে থাকবেন। আমি ব্রা-প্যান্টি পরে আপনার সামনে। ও এলে আপনি আমার দিকে একটা হাজারের নোট এগিয়ে দেবেন। আর আমি তড়িঘড়ি শার্ট পরতে শুরু করব। শুধু এইটুকু। কাকু, আমি বেশ কয়েকটা জীবন বাঁচাতে চাইছি। আমার উদ্দেশ্য সৎ।

কিছু বলার আগেই লাভলি এগিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। প্লিজ, কাকু। বহুবছর পর হঠাৎ নরম স্পর্শ। মনে হল ঝুরো ঝুরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছি।

বাড়ি ফিরে সারা দুপুর ভাবলাম। বিকেলে ওকে ফোন করলাম, আসছি।

লাভলি যেভাবে বলেছিল, ঠিক সেভাবেই করলাম। দরজার ওদিক থেকে একটা চেনা আর্তনাদ কানে এল, লাভলি, এসব কী? লাভলি চেঁচিয়ে উঠল, অর্ক, এটা  আমার বিজনেস টাইম। তোমায় বলেছি বিজনেস টাইমে কখনো বিরক্ত করবে না।

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে যুবকের দিকে তাকিয়ে দুজনেই টাইম-স্পেসে ফ্রিজ করে গেলাম। সামনে দাঁড়িয়ে আমার একমাত্র ভাইপো অর্ক, যাকে আমার সব সম্পত্তি কাল উইল করে দেব ঠিক করেছি।

 

 

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন