কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫ |
মৃত্যুর ভাতৃসঙ্ঘ
২৯
অক্টোবর ২০৩৯ আমার জন্মশতবর্ষ: আমিই ওকে, রামরতন পাসোয়ানকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কে পিওনের
চাকরিটা পাইয়ে দিয়েছিলুম। তখন নতুন অফিস খোলা হচ্ছিল বলে তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণির প্রচুর
লোক নেয়া হচ্ছিল। আমি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে চলে গেলুম এআরডিসি, লখনউতে, যা
পরে নাবার্ডে মিশে গিয়েছিল আর আমি নাবার্ড মুম্বাইতে চলে গেলুম। রামরতন থেকে গিয়েছিল
রিজার্ভ ব্যাঙ্কে, পাটনায়। আমি যখন নতুন চাকরিতে বদলি হয়ে লখনউ চলে যাচ্ছি, তখন রামরতন
বলেছিল, স্যার, আপনার যখনই কোনো দরকার হবে আমাকে বলবেন, আমি তো আর বদলি হবো না! স্যার
আপনার জন্মের একশো বছর ২৯ অক্টোবর ২০৩৯ সালে, আমার মনে আছে, আমি যদি ততোদিন বেঁচে নাও
থাকি, আমার ছেলেকে বলে রেখেছি ওইদিন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আপনার জন্মশতবর্ষ উৎসব করতে।
মনে রেখেছে দেখছি। ভালোই। আমার সঙ্গে দেখা না হলেও জন্মশতবর্ষ করতো ওর ছেলেকে দিয়ে। আমি অবশ্য ওর কাছ থেকে একটা ভিন্ন উপহার নিয়েছি, ওকে না জানিয়ে। ওর চরিত্রটা নিয়েছি আমার ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস’ আর ‘নামগন্ধ’ উপন্যাসে। চরিত্রটা ওর বটে, কিন্তু চরিত্রের কাজকর্ম ওর কাছে শোনা ওর ভাইয়ের জীবনকাহিনী, যে মাওবাদীদের দলে ঢুকে পড়েছিল।
রামরতন পাসোয়ানের সঙ্গে আচমকা দেখা হয়ে গেল, এখানে, মুম্বাইতে। ও আমাকে চিনতে পেরেছিল, আমি পারিনি। একে চোখে কম দেখি, তার ওপর বেশির ভাগ লোকের মুখ দেখে তার নাম মনে পড়ে না।
-স্যার,
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়া আপনার উচিত হয়নি। বলল রামরতন।
রিজার্ভ
ব্যাঙ্ক কেন ছেড়েছিলুম, শুনলে ও অবাক হবে।
রামরতন কথাটা কেন বলল জানি; আর জানি বলে বেশ দমে গেলুম। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে এখন মাইনে আর পেনশন বেড়ে গেছে। নাবার্ডে পেনশন বাড়ে না, কেননা এটা সরকারি সংস্হা নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও সরকারী সংস্হা নয়, কিন্তু তাগড়া গভর্নর হলে কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারগুলোর হাত মুচড়ে নির্দিষ্ট দিকে হাঁকিয়ে দিতে পারে, যেমনটা রঘুরাম রাজন করেছিল কিংবা ইলেকশান কমিশনে যেমনটা শেসন করেছিল।
-জানি
রে! বললুম রামরতনকে। তুই পিওন হলেও, তোর পেনশন আমার চেয়ে বেশি। অন্য কেউ মনে রাখুক
বা না রাখুক, তুই যে আমার একশো বছর বয়সটা মনে রাখবি, তা জানি।
রাস্তার
সাইকেলস্টলের ইডলি আর কফি খেলুম দুজনে ভাগাভাগি করে। কাগজের কাপে, কাগজের প্লেটে, ফুটপাথে
কাঠের বেঞ্চে বসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন