কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৫ |
দেয়ালা
দেওয়ালে
হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল শ্রুতি। ল্যাপটপ খোলা। তার নীল আলো মেখে যখন সে চোখ খুলল,
তখন রাত কটা কে জানে! প্রথমেই মনে পড়ল, মশারি টাঙানো হয়নি। পাশেই তরী ঘুমোচ্ছে অঘোরে।
তরীর গালে এক ভারিক্কি মশা। রক্ত শুষে ফুলেছে এতই, উড়তে পারছে না! শ্রুতি ঝাঁপিয়ে হাত
নেড়ে সরিয়ে দেয় মা অ্যানোফিলিসকে। টয়লেট থেকে সুদল এনে লাগিয়ে দেয় ঘুমন্ত মেয়ের গালে।
মুখ দিয়ে 'চুক' শব্দ বেরোয় অজান্তে। এসময় ডেঙ্গির বাড়-বাড়ন্ত। অথচ মশারি টাঙাতে ল্যাদ
হয়। কী প্রচণ্ড খারাপ মা সে! সন্দেহ নেই তাতে।
সবাই
সেসব জানে অবশ্য। সংসার টিকিয়ে রাখতে পারেনি। 'মেয়ের মুখ চেয়ে'-ও পারেনি। তার উপর চব্বিশ
ঘণ্টা সাহচর্য দিতে পারে না মেয়েকে। টিফিনটুকুও বানিয়ে দেয় না। সকালে তাড়া বড়। ছুটতে
ছুটতে অফিসের গাড়ি। বাড়ি ফিরেও তথৈবচ। তরীর হোমওয়ার্ক নিয়ে ঘন্টাখানেক বসতে না বসতেই
মাথা টিপটিপ করে। খিদে পায়। ঘুম পায়। ক্লান্ত
লাগে। কাজে ভুল হয়ে যায়। মশারি না টাঙিয়ে ঘুমিয়েও পড়ে। ভালো মায়েরা এমন হয় কি? মা হিসেবে
সে ডাহা ফেইল। সক্কলে জানে সে কথা। আসন্ন সন্তানের মঙ্গল চেয়ে তরীর রক্ত শুষছিল যে
মশাটা, সে-ও তার চেয়ে দায়িত্বশীল মা।
বাবার
দায়-দায়িত্বের খুঁত পাওয়া যায় না ওদিকে। ভিজিটিং রাইটস অনুযায়ী মাসে একবার দেখা। গিফট। আদর। জগত সংসার সাক্ষী, ভালো বাবা। তরীও জানবে
বড় হলে। ভাল বাবা। মন্দ মা।
মশারির
প্রান্ত গুঁজে শ্রুতি বালিশে মাথা রাখে। ঘুমন্ত তরীকে দেখে এক দৃষ্টিতে। বড় হলে তরীও
জানবে অবধারিত সেসব সত্য, যা সবাই জানে?
হঠাৎ
তখনই ছোট ছোট যাদু-হাত তার গলা জড়িয়ে ধরে।
দেয়ালায় ভিজে যায় শ্রুতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন