কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬ |
বসন্ত
খুচরো কিছু প্লাস্টিকের বড় বড় শিট এলোমেলো পড়ে রয়েছে, কে বা কারা এগুলো এখানে ফেলে দিয়ে গেছে, না রেখে গেছে, জানা নেই। কারণ প্লাস্টিকের এইসব বড় শিট করোনায় মৃত পেশেন্টদের আগাপাশতলা ভালো করে মুড়িয়ে অন্তিম ক্রিয়া করমের জন্য বার্নিংঘাটের উদ্দেশে পাঠানো হয়, সরকারী নিয়ম এটাই। তাছাড়া ছোঁয়াছুঁয়িরও একটা ব্যাপার থাকেই। বডি ভালো করে এইসব শিটে মোড়ানো হয় বলে কোভিডটা অত আর ছড়িয়ে যাওয়ার চান্স থাকে না। ফাল্গুনের বারো তারিখ আজ। শুকনো বাতাসে কিছু ধুলো উড়ে বেড়াচ্ছে খেয়াল খুশী মত, সেইসঙ্গে একটু আম-মুকুলের ঝাঁঝ, পুরুষমশা আর বিনবিনে মাছির ছোট ছোট বাচ্চা। মাছির বাচ্চা এইরকম না ঠান্ডা না গরম ওয়েদারে আপনা-আপনি জন্মায়, স্বেদজ কীট এগুলো, বিবর্তনের আদি ধাপে এদের জন্মবৃত্তান্ত লেখা আছে। এককোষী কলায় উদ্ভিজ্জ জাতীয়রা জন্মায়, দুইকোষী কলায় স্বেদজ জাতীয় অর্থাৎ মাছি-মশা। তিনকোষীতে অন্ডজ প্রাণ অর্থাৎ ডিম ফুটে যে সব প্রাণী জন্মায় যেমন পাখি-কুমীর-সাপ ইত্যাদি। কিন্তু মাঝ ফাল্গুনের এই উদাস হাওয়ায় মাছির খুদি খুদি বাচ্চাগুলোকে উড়তে দেখে বিবর্তন বিজ্ঞান এসব বুকিশ শব্দ মগজে আসে না। কয়েকটা মাছি একটা প্লাস্টিকের ওপর আলতো চক্কর কাটছে, কিছু চেপে বসেছে এককোণায়। কেন যে বসেছে কে জানে! খাবারদাবার তো কিচ্ছু লেগে নেই কোথাও! তবে হ্যাঁ, লালচে পিঁপড়ে কতগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে কখনো শিটগুলোর ভেতরে, কখনো অনায়াসে সুরসুর করে ঢুকে যাচ্ছে লাইন করে। পিঁপড়ে পুরান–লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র, পড়া হয়নি। পিঁপড়েদের জীবন বৃত্তান্ত খাদ্যাভাস এসব নিয়েই লেখা বোধহয়। হ্যাঁ লিখতে ভুলে যাচ্ছি, পিঁপড়েও অন্ডজ প্রাণী। হাওয়ার চোটে পিঁপড়গুলোর চলন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
নাহ্ এতগুলো প্লাস্টিক শিট কী করে এল এখানে পরিষ্কার হচ্ছে না। আনন্দদা দেখলেই মুখ ঘোরাবে। বাগানের কাজ করতে আসে আনন্দদা প্রতি সপ্তায়। বিড়ি টানার অভ্যাস খুব আর সেইসঙ্গে আপন মনে বকর-বকর একটানা… গেল হপ্তায় অমনি করেই মালতীলতাটা নিকেশ করে দিয়েছে কখন তার নিজেরও খেয়াল ছিল না। বুড়ো হয়ে গেছে, ভালো দেখতেও পায় না। এদিকে ঝেঁপে কুঁড়ি এসেছিল ডালে ডালে, মৌমাছি ওড়ে, ঘুরে ঘুরে ভ্রমরও আসে এই সময়টায়। বিশেষত গত দেড়-দুই বছরে প্রকৃতির একটু আধটু বাড় বাড়ন্ত হয়েছে, সে যে কারণেই হোক। নিম ফুলেরও মধু হয় বলে জানি, অম্বিকাদের গাঁয়ে, দেয় ওরা এক শিশি করে, এবারে কথা হয়নি এখনো, তবে মধু দেবে।
এ মাসটায় গাঁ ঘরে বিয়ে
শাদির চাপ যাচ্ছে খুব বলছিল অম্বিকা, মনে পড়ল। দোল পরবের পরে পরেই মন্ডা-মেঠাই ফুরিয়ে যায় না, আমরা রেখে দিই কিছু আলাদা
তুলে, একে তাকে দেওয়া চলে তারপর আরো
বেশ কয়েকদিন। অম্বিকা এলে জিবে গজাটা
পাবে, ঘরেই বানানো আমার, কিন্তু ঐ প্লাস্টিক শিটগুলো চোখে পড়লে যে কারুরই
চোখ ভুরু কুঁচকে উঠতে পারে, সেটাই এক্সপেক্টেড।
কী করি শিটগুলো নিয়ে, চটপট ভাবতে হবে…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন