কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১ |
প্রতিদ্বন্দ্বী
কমল
বিশ্বাস আমাকে জোর করেই টেনে এনেছে। ১৮৯ কিলোমিটারের একটা রাইড – ওর নতুন কেনা মোটরসাইকেলে। হাতে হেলমেট নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছি। জনমনুষ্যহীন জঙ্গলের পথ।
রাস্তার
কিনারে কমলের নতুন কেনা ব্রান্ডেড মোটরসাইকেলটা। ওর কালো কুচকুচে শরীর। ঢাউস পেট, চাক্কা
লাগানো দুরন্ত দুটো পা।
কমলের
সাথে রাইডে আসাটাই আমার ভুল হয়ে গেছে। ওর নতুন কেনা মোটরসাইকেল তো কী হয়েছে? একবার বলল, আর আমিও ভ্যাবলার মতো রাজি হয়ে গেলাম! গাছের পাতারা হাওয়া দিচ্ছে, ভালো
লাগছে না – ঘরে থাকলে ফ্যানের ব্লেডের হাওয়া খেতাম।
কমল
বিশ্বাসের ঢাউস মোটরসাইকেলটা ব্রান্ডেড ‘ডালহৌসী’ কোম্পানীর। দাম মাত্র ৪২ লাখ টাকা।
কালো কুচকুচে ঢাউস মোটর সাইকেলটার সামনে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না!
আমাকে
এই নির্জন রাস্তায় একা রেখে কমল এখন জঙ্গলের আড়ালে বাঁ-হাতের কাজ সারতে গেছে। সঙ্গে
ওর ট্যিসুপেপার আর পারফিউমড স্যনিটাইজার।
কেন যে আমি ওর সাথে এই ১৮৯ কিলোমিটার রাইডে বেরিয়েছি! আসলে আমি কমলের ব্রান্ডেড মোটরসাইকেলটাকে এখন সহ্য করতে পারছি না। ওই তো! মোটরসাইকেলটা বিজ্ঞের মতো দুটো কান নেড়ে আমায় জ্ঞান দেবার চেষ্টা করছে। ওর ফোরস্ট্রোক বিশাল ইঞ্জিনের অক্লান্ত হৃৎপিন্ড! কালোকুচকুচে পেট আর মস্তিষ্কের হেডলাইটের ভেতরে ও যেন কত কিছু ক্ষমতা লুকিয়ে রেখেছে! তা না হলে এটার দাম মাত্র ৪২ লাখ হয়? ফুঃ! আমার কি হিংসা হচ্ছে? ও কি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী? ওই ৪২ লাখী যন্তরটা? নাকি কমল বিশ্বাস?
একটু আগেই, আমাকে এম্নিই দূরে দাঁড় করিয়ে, জঙ্গলের রাস্তায় এই যন্ত্রটার বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছে কমল। আমি জানি, একটু পরেই ও মোটরসাইকেলটার ছবিগুলো নিজের প্রোফাইল পিকচার আর ফেসবুকে পেষ্টাবে! যেন ৪২ লাখী মোটরসাইকেলটাই একটা আস্ত মানুষ, ওর দোস্ত। আমি কেউ নই, কিচ্ছু নই!
ওই মোটরসাইকেলটাকে দেখে আমি হিংস্র হয়ে উঠলাম। হিংসুক তো বটেই! একটা ভারী পাথর দিয়ে এক্ষুণি হেডলাইটকে ভোঁতা করে দিই!
ওই
তো ঝোপের আড়াল থেকে কমল বেরিয়ে আসছে। হতে স্যনিটাইজারের বোতল, ট্যিসুপেপার।
আরে
আমার কী হলো! আমার পা দুটো নড়ছে না কেন? আমি কেন হাঁটতে পারছি না? আমার পা দুটোকে কারা যেন টাকার শেকলে বেঁধে
রেখেছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন