রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

সম্রাট লস্কর

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১


মীনভাষা

 

সে মীন রাশির জাতক। সে তো অনেকেই। কিন্তু সে সবার থেকে আলাদা। বেশ ছোটোবেলা থেকেই সে বুঝতে পারে মাছেদের ভাষা। বলতে পারে না কিন্তু বুঝতে পারে ঠিকই। বাজারে গেছে বাবার সাথে, মাছওয়ালা বিক্রি করছে জ্যান্ত কাতলা। সে স্পষ্ট শুনতে পেল মাছেদের আর্তনাদ।

“কেটো না মাছটাকে, ওর লাগছে। আমি শুনতে পাচ্ছি।”

নিছক বাচ্চার কথা ভেবে কেউ ওকে পাত্তা দিল না। কিন্তু সেই দিন থেকেই ও বুঝতে পারল ও মাছেদের ভাষা বুঝতে পারে। শুরু হলো মাছ নিয়ে অবশেসন। সে মাছের কথা শুনতে চায়। মাছবাজারের নিষ্ঠুরতা তার সহ্যের বাইরে। বাবার কাছে বায়না করল একটা অ্যাকোয়ারিয়ামের। বাবা কিনেও দিলেন। বাড়িতে এল অ্যাকোয়ারিয়াম আর অনেক রঙিন মাছ।

তাদের সাথেই কাটতে লাগল সময়। মাছেরা তার সাথে নিজেদের কাহিনি বলে, এমনকি তার জীবন নিয়েও আলোচনা করে, মতামত দেয়। বিশেষত একটা গোল্ডফিশ, সেটার সাথেই বেশি কথা হয় তার।  

কিন্তু সব কিছু বদলে গেল পাশের ফ্ল্যাটের বাবাইদার জন্য। বাবাইদা সদ্য জয়েন্ট ক্লিয়ার করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুযোগ পেয়েছে। মা বাবাইদাকে বলেছে তাকে পড়া বুঝিয়ে দিতে। বাবাইদা পড়া বোঝাতে আসে, সুন্দর পড়াও বোঝায়। সে কয়েকদিনেই বাবাইদার ফ্যান হয়ে গেল। বাবাইদার সাথে অনেক গল্প। মাছেদের প্রতি, বিশেষ করে গোল্ডফিশটার প্রতি তার ভালবাসার কথা বলেছে। যদিও বলে নি যে সে মাছেদের ভাষা বুঝতে পারে। সে জানে এ সব বললে বাবাইদা তাকে পাগল ভাববে।

এক সন্ধের ফাঁকা ফ্ল্যাটে বাবাইদা যখন তাকে ছুঁল, সে স্থবির হয়ে গেল। মুখ থেকে কোনো কথাও বেরোচ্ছে না যেন। বাবাইদা আরেক ধাপ এগোতেই সে বাধা দিল।

“না!

বাবাইদা থমকে দাঁড়াল। সুবিধে হবে না বুঝতে পেরে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। দু’দিন পর অ্যাকোয়ারিয়ামে খুঁজে পাওয়া গেল না গোল্ডফিশটাকে। স্কুল থেকে ফিরে সে কান্নায় ভেঙে পড়ল। মা কিছুই বলতে পারল না কিন্তু অন্য মাছগুলো তো আছে। জানা গেল এটা কার কাজ। বাবাইদা! দুপুরে বাড়িতে এসে মায়ের অলক্ষে চুপচাপ গোল্ডফিশটাকে অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে বের করে ফেলে দিয়েছে জানলা দিয়ে। বাবাইদার ডাকে সাড়া না দেওয়ার শাস্তি।

ঠিক সেইদিন রাত্রিবেলাতেই আবাসনে এক দুর্ঘটনা ঘটল। ৭০৫ নম্বর ফ্ল্যাটের পরন্তপ যাকে বাবাই বলেই সবাই চিনত ছাদ থেকে পড়ে গেছে। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা গেছে ছেলেটি।

বাবাই মারা যাওয়ার খবর যখন এল ৭০৬ নম্বর ফ্ল্যাটে, অনিমেষ আর সুপ্রীতি দেখলেন তাদের ষোল বছরের মেয়ে অ্যাকোয়ারিয়ামের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মুখে এক অদ্ভুত হাসি। এই মেয়ে তাদের অচেনা।     


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন