কবিতার কালিমাটি ১১১ |
তবুও আমার বিশ্ব
এক-আধটু
স্পর্শ নিয়ে
এক-আধটু
বুকের মাঝে থাকা!
এক-আধটু
মাতম নিয়ে
কারো জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া
কারো
জন্য নড়া-
এক-আধটু
একতারাতে সুরও তুলে
দুঃখ ভুলে-
পূর্ণিমা
রূপে--অন্ধ কূপে
আলো ছড়িয়ে থাকা।
এক-আধটু
পুষ্পরেণু মাখা!
এক-আধটু স্বপ্ন নিয়ে
কালের
স্রােতে বাঁচা!
ফড়িং হয়ে নাচা!
এক-আধটু
বিন্দু জলে
তৃষ্ণা
জাগে--
নদীও ডাকে
পাতালপুরী খোঁজা!
এক-আধটু
আনন্দে কি
যাবে না চোখ বোজা?
এক-আধটু
পান্তাভাত
এক-আধটু
পান্থশালা
বনাঞ্চলে প্রভাত!
এক-আধটু
ঋদ্ধ হওয়া
এক-আধটু ঋষি
এক-আধটু
উল্কি দিয়ে
উদ্দীপনায় জাগা,
অভিভূত অভিলাষে
কীর্তি
যখন আসে
এক-আধটু
নিজে নিজে
ঢাকনা তখন খুলি
এক-আধটু
ধুলি
গায়ে এসে লাগে!
এক-আধটু
বোধও জাগে!
এক-আধটু
ঘরে থাকি
এক-আধটু বাইরে!
সমুদ্রেও
যাইরে।
এক-আধটু শরম লাগে
এক-আধটু
রাগ!
নিজেকে
তবু বলতে পারি না
লোকালয় থেকে ভাগ!
মিথ্যেকে
আলকাতরায় ঢাক!
এক-আধটু
প্রণয়-প্রীতি
এক-আধটু
গীতি
এক-আধটু রীতি।
এক-আধটু
বাঁশের তৈরী
সেতুতে
পা রাখা।
এক-আধটু ঝড়ের বৈরী।
এক-আধটু
নিঃস্বার্থ
এক-আধটু নিঃস্ব
তবুও
আমার বিশ্ব!
আকাশপ্রান্ত নিয়ে বাঁচা
সুড়ঙ্গ
থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ
তাকে
আবারও সুড়ঙ্গে ঢোকানো হচ্ছে কেন?
গুহা
থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ
তাকে
আবারও গুহার ভেতর ঢোকানো হচ্ছে কেন?
খোপ
থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ
তাকে
আবারও খোপে খোপে ঢোকানো হচ্ছে কেন?
পোড়াবাড়ি
থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ
তাকে
আবারও পোড়াবাড়ির ভেতর ঢোকানো হচ্ছে কেন?
দাঁতলাগা
অবস্থা থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ
তাকে
আবারও দাঁতলাগা পরিবেশে ঢোকানো হচ্ছে কেন?
গণ্ডকূপের
শব্দহীনতা থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ
তাকে
আবারও শব্দহীনতার ভেতর ঢোকানো হচ্ছে কেন?
মিথ্যে
হয়ে যাবে-
এতদিনের সূর্যালোক নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের আকাশপ্রান্ত নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের ঘনবীথি নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের কল্লোলিনী নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের ঝুলনপূর্ণিমা নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের নবীনতা নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের প্রাণশক্তি নিয়ে বাঁচা,
মিথ্যে
হয়ে যাবে--
এতদিনের বোধভাষ্যি নিয়ে বাঁচা!
আমরা
তো বেঁচেছি অবলুপ্তি থেকে
দুর্বিপাক
ও মহাপ্রলয়ে পড়ার পরও!
আমরা
তো বেঁচেছি মৃত্যুশয্যা থেকে
অন্তিমদশায়
মর্গে থাকার পরও!
আমরা
তো বেঁচেছি ভৌতিকতা থেকে
জ্ঞানশূন্য
পাথুরে মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও!
আমরা
কি ছেড়ে দেব মানুষখেকোর কাছে
আমাদের শিশু-সন্তানদের?
আমরা
কি ছেড়ে দেব অন্ধ-টাট্টুঘোড়ার কাছে
আমাদের মাঠ ও প্রান্তর?
আমরা
কি ছেড়ে দেব বুনোকুকুরের কাছে
আমাদের কুঞ্জবন?
আমরা
কি ছেড়ে দেব শুঁয়োপোকার কাছে
আমাদের বীজ ও বীজতলা?
আমরা
কি ছেড়ে দেব কাঠপিঁপড়ের কাছে
আমাদের মাথার মগজ?
নিন্দার আদিহাট
কত
ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রয়েছে
শত্রু
আমার! কত রং জামার!
ছলচাতুরি
ও কারসাজিতে
চলেছে
তাহারা--কত রকমের কারাভানে
ভণিতা ও
ভানে!
গোলাপজলে
ধুয়েছে মুখ
কী
মার্জিত আচার!
আচার
পেলেই মুখে তুলে নিয়ে
খাবার
টেবিলে করে কুপোকাৎ! কী জাত!
সম্মুখে
কী নান্দিপাঠ!
পেছনেই নিন্দার
আদিহাট!
অন্তর্বাস
জীবন
অনেক সময়ে রূঢ় হয়ে ওঠে, আশীর্বাদ কোনো
কাজে
লাগে না, প্রতিশ্রুতিতেও বিশ্বাস থাকে না,
বিজ্ঞাপনগুলো
অক্ষরহীন হয়ে পড়ে, লাগে টাকা ও
পয়সা,
এমন রিয়েলিটি অর্থবহ হয়ে ওঠে, মূল্যবান হয়ে
ওঠে;
শেষতক জীবনের অর্থ পালটে যায়-গিরগিটির
রঙ
পাল্টানোর মতন! মাথার উপর থাকা মাতব্বরও
কোনো
কাজে লাগে না, তখন জীবনও বলে-জামাটা
পাল্টাও,
অন্তর্বাসও!
নির্যাস
সব
ধরনের সুগন্ধির চেয়ে-এখন টাকার
গন্ধ
মানুষের প্রিয়! টাকাতে যে সুগন্ধ আছে.
তা
আর কোথাও নেই! সুগন্ধ যা দিয়ে তৈরি
হয়,
ধরো-গোলাপের নির্যাস, সেই
নির্যাসের
চেয়েও অতিমাত্রায় পাগলকরা
নির্যাস
টাকায়, যা গভীর আসক্তির কারণ
হয়ে
দাঁড়িয়েছে, তাতে হৃদবিকল হওযার
কথা
জানার পরও-ভয়াবহ রকম আসক্তিতে
আমরা
অনেকে পাগলপ্রায়! পাগল হলেও
পাগলাগারদে
থাকতে হচ্ছে না, সে-কারণে
তা
আরও ভয়াবহ!
এলার্ম-শাসন
এখন
আমরা কাঁচামালে পরিণত হচ্ছি,
কলে-কারখানায়
শুধু নয়, কর্পোরেট
অফিসেও!
ঘড়ির এলার্মে ঘুম থেকে উঠি,
ঘড়ির
এলার্ম শুনে কাজের স্থল থেকে বের
হই,
এরমধ্যে কোনো ফাঁকফুকর নেই!
দাঁত
মাজি সময় ধরে, বাস ও ট্রেন ধরি
ঘড়ির
কাঁটায়, হাঁটিও সময় ধরে, আমরাও
পণ্য
ও কাঁচামাল, পুঁজির মেশিনে!
আমাদের
প্রত্যেকের পিঠে পিঠে সংযুক্ত
হয়েছে
ঘড়ি, আমরা এখন ঘড়িশাসিত,
যাকে
বলে এলার্ম-শাসন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন