রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

গোবিন্দ ধর

 

কবিতার কালিমাটি ১১১


আত্মজার জন্য

 

(১)

 

মেয়েটি বড় হয়ে গেলো তার বেড়ে ওঠা দেখিনি।

মেয়েটি বড় হয়ে যায় আমি থাকি অনেকদূরে।

মেয়েটি অনেক অনেক দূরে বড় হয়ে গেলো।

মেয়েটিকে আমি মা বলি।

মেয়েটি আমাকে বাবা ডাকে।

মেয়েটি মা।

মেয়ে তো  মা-ই।

মা-টি বড় হয়ে যায় আমি তাকে ছুঁতে পারিনি।

মেয়েটি থাকে দূরে সে আমাকে ছুঁতে পারেনি।

দূরে অনেক দূরে তাকে আমি দেখিনি।

সে আমাকে দেখেনি।

আমি বুড়ো হই একা।

সে বড় হয় একা।

পরস্পর দূরত্বে আরো দূরত্বে

বুড়ো ও বড় করে এই সময়।

 

(২)

 

মেয়েটি আমার মা।

মেয়েটি গৈরিকা।

মেয়েটি আধস্বরে বাবা ডাকলে

আমি এক আকাশ স্বপ্ন আঁকি

বুকে রাখি লাভডুব রক্ত পতাকা।

 

(৩)

 

সে দূরে বহুদূরে, আমি নেই, তার মনে।

তবুও বাবার ভেতর অচিনপাখি ডাকে

মা আয় মা আয়

বুকে থাক রক্তে-মাংসে তুই

আমার নিজস্ব পতাকার মতো।

 

(৪)

 

তিলতিল করে দূরত্ব বাড়িয়েছে সময়।

মেয়েও বড় হয় তিলতিল।

একদিন সময় এলে জানবে-তার বাবা

অবহেলা আর অসম্মানে এখন পাথর।

 

(৫)

 

বাবা তার মেয়ের থেকে দূরে নয়।

দূরে রাখে উপেক্ষা।

সে ফাঁকে সুকৌশলে তাকে যতই

গড়ে নিতে চায় সময়।

সাময়িক রূপভেদে তারও মাথায় ঢুকে যাবে বাজার।

বাজার আমাদেরকে যেরকম গড়তে চায়

সময় পেরিয়ে গেলে শূন্য পড়ে থাকে থলে।

 

(৬)

 

সময় বিরুদ্ধে গেলে সামান্য খড়কুটো

লেগে যায় পায়ে।

টেনে নামায় পথে, পথ ভিন্ন হলে

গন্তব্য ভিন্ন হয়। আমার মেয়েটি

অতিসাধারণ। তার সে মতি নেই জানবে।

তারপরেও একদিন সব অন্ধকার দূর হবে

মেয়ে জানবে কে ছিলো পথের কাঁটা।

 

(৭) 

 

মেয়েরা সাধারণত বাবার নিকট ঘুরঘুর করে।

বাবা তাদের আইকন।

মেয়েটি জানলো না প্রকৃতপক্ষে, বাবা কে!

 

বাবার অভাব ওর নেই। বাবা তার নিকট

কেউ নয়।বাবা কিছু নয়।

 

বাবা সংসারের কেউ নয়, জেনে

বড় হয়। বয়স বাড়ে,তারও।

 

(৮)

 

রোদে শুকাতে শুকাতে রোদসহ্য করানো ছিলো রুটিনওয়ার্ক।

সে চেয়ে থাকতো, বুঝতে চাইতো।

চোখের বিশ্ময় চোখে লেগে আছে।

 

এরকম রোদ সহ্য করা শিখে গেলো।

 

এখন ঝড়ের সময় ঝিলিক দিলে

ঝাপটে ধরে না, বাবাকে।

 

মেয়েটি একলা একচিলতে দুতলায়

ভাড়া বাড়ি বড় হয়।

 

ভয়ডর কত অনুভূতি সব একা একা তার।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন