সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

 


কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০০


অ-কথা

 

শেষ লোকটাও এইমাত্র পুটুস করে মরে গেল আশেপাশে তারপর আর কেউ  রইল নানদী একটা ছিল প্রথম দিন থেকেই, কিন্তু চলতি বছরে বেমক্কা সব খালি হয়ে যাওয়ার পর তখন থেকে নদীটাও একপাশে সেই যে রয়ে গেল বুনো হোগলা বিনবিনে মশা আর শরের ভেতরে, কেউ তাকে আর দেখতেই পেল না! ফ্যাক্টরীর পেছন দিয়ে চিমনীর বগলের নিচ দিয়ে নির্জন হিমবাহের বুকের ওপর দিয়ে এক সময় বইত নদীটা কতদিন! না জীবনানন্দ দাশ কোনোদিন এই  নদীটাকে দেখতে পাননি নদী জাতীয় তাঁর যাবতীয় কবিতা অনেক নদ নদীকে ছুঁয়ে গেছে কথাটা সত্য বটে, কিন্তু এই নদীটা কী এক অজানা কারণে বরাবরই তাঁর ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে গেছে, কিংবা তখন কার্তিকের হিম কিছু হয়ত কম ছিল এও হতে পারে বা এমনি কিছুযাইহোকডেভিড লিভিংস্টোনও একটা সময় ম্যাপ তোলপাড় করে খুঁজাছিলেন বটে দীর্ঘ মরু, তবু সময় তাঁকেও নিদারুণ হতাশ করেছিল সরালে নদীটাকে তিনিও খুঁজে পাননিভারি আজিব  না! কবি বিখ্যাত ভূ-পর্য্টক ডায়াগোনাস্টিক স্কেল ডিজিটাল কম্পাস ইত্যাদি কোনও কিছুই লাশে ভর-ভরন্ত নদী দেখতে পাননি আচ্ছা নদীর কথা তোলা থাক, পরে না হয় সময় মত খোলসা করা যাবে, আপাতত মরে যাওয়া শেষ লোকটার কথা বলা নেওয়া যাক লোকটা আসলে হঠাৎ মরে যেতে চায়নি, অমনি কোনো প্ল্যানও ছিল না, তবু সবাই মরছে দেখে নিজেরও তার শখ হল একবার তবে মরেই দেখা যাক কী হয়! সুতরাং লোকটা মরল আর কী আশ্চর্য মরে যাওয়ার পর বোঝা গেল, এ ম্যা! এ যে সত্যি সত্যিই মরে গেছে! নিঃশ্বাস টিঃশ্বাস পড়ছে না, বুক সাদা, মানে ফুসফুসটা ব্ল্যাঙ্ক, হাত পা সব ঠান্ডা যেমন হয় আর কী! কিন্তু এমনই দুর্ভাগ্য কাঁদার কেউ নেই, আর থাকবেই বা কি করে, কারণ সেইই তো ছিল লাস্ট-ম্যান এটা একটা বেশ দুঃখের ব্যাপার, মরে গেছি অথচ আমার জন্য কেউ কাঁদল না, তবে লোকটার অত দুঃখ টুঃখ ফিল হল না, মরে গেছে কি না, তাই, তবে বিরক্তি এল একটা উদাস এটাও হত না, কিন্তু বেঁচে থাকতে লোকটা একটানা বিরক্তিতে ভুগত বলে মরে ভূত হয়ে ওঠার আগে অব্দি ঐ বিরক্তিবিরক্তি ব্যাপারটার মত হয়ে রইল গেঁজে ওঠা নদী লোকটাকে ডাকল - এই! এদিকে আয়এইখানে

দীর্ঘশ্বাস মৃত উত্তর দিল - একবার মরে গেলে আর কোনো টান থাকে না

 

 


২টি মন্তব্য: