সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

দেবযানী বসু

 


কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০০


চক্রধরপুরের অফিসে একটানা তিনবছর


'প্রেমবন্ধন'এর মতো চক্রধরপুরের অফিসে একটানা তিনবছর বদলি ছিল কাজলকান্তি। গাড়ি দুর্ঘটনার পর একমাস টানা কোমায় ছিল। সঙ্গে পেটে আলসার ও শিরদাঁড়ার হাড়ের স্থানচ্যুতি। মাথায় আঘাত। মরতে মরতে বেঁচে গেছে। কাজলকান্তি রিপোর্টগুলো নাড়াচাড়া করে। এই বৃদ্ধ বয়সে তার হাই সুগার, প্রেসার, সোডিয়াম পটাশিয়ামের গন্ডগোল। কী অসুখ যে নেই তার!

এই গল্পের সময়টা অবশ্য স্মার্ট ফোনের নয়। তার অফিসের রিটায়ারমেন্টের আর একবছর বাকি। নতুন ঝকঝকে মোবাইলটার দিকে কাজলকান্তি তাকিয়ে থাকে। পুরনো ফোনটার কথা স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে বলে গন্ডগোলে হারিয়ে গেছে। তাই নাম্বারটা ব্লক করা আছে।

আজ পাঁচমাস বাদে সে অল্প অল্প হাঁটাচলা করে। স্ত্রী মধুরিমার সেবায় সে বেঁচে উঠেছে, এটা তার দৃঢ় বিশ্বাস। আর অফিস থেকে সে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধাও  পেয়েছে। একমাত্র মেয়ে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত, বিবাহিত। আজ মধুরিমা নীল ষষ্ঠীর  পুজো দিতে গেছে। চলাফেরা করতে করতে মেয়ের ঘরে ঢুকে উদ্দেশ্যহীনভাবে  ড্রয়ার ঘাঁটতে পুরনো মোবাইলটা অক্ষতভাবে পেয়ে যায়। মেসেজবক্স দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায় দেবাঞ্জনাকে। এত কল এত মেসেজ দেবাঞ্জনার  একতরফা! মধুরিমা সব পড়েছে তাহলে। কাজলকান্তির হাত কাঁপছে। সে মোবাইল অফ করে যথাস্থানে রেখে দেয়।

দেবাঞ্জনা চল্লিশের কোঠায়। মাধ্যমিক পাস। সুশ্রী ফর্সা লাবণ্যময়ী। স্বামী পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় অফিসার্স কোয়ার্টারে রান্নার কাজ করত। দেবাঞ্জনার সঙ্গে কাটানো অজস্র জলতরঙ্গময় সময় তার একটু একটু করে মনে পড়ে যাচ্ছে। দেবাঞ্জনাকে আর ফোন করা যাবে না। মধুরিমাকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাহলে দেবাঞ্জনা মারা গেছে। কাজলকান্তি নিজে মরেছে কি বেঁচে আছে কে জানে! কী  যেন নেই! কী যেন নেই! কাজলকান্তি পথের দিকে তাকিয়ে রইল উৎকন্ঠা নিয়ে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন