কবিতার কালিমাটি ১১০ |
অপার্থিব
প্রেম এসেছিল
অকূল সিন্ধুপারে
হাজার বছর আগেও
কারুর কাছে,
এখনও সে প্রেম
পূর্ণিমা চাঁদ হয়ে
ঝুলে থাকে কোনও
বুড়ো অশ্বত্থ গাছে।
কখনও হয়তো প্রতিবাদ-সভা
রূপে
দাঁড়িয়ে পড়বে
ধর্মতলার মোড়ে,
যুবক-বয়সি সৌমিত্রর
মতো
সিগারেট হাতে
নন্দন চত্বরে।
পদ্মার বুকে
কেউ কবি হয়ে ওঠে
নদীজল যেন কারুর
গভীর দিঠি,
"আমাকে
চায়নি কোনওদিন কোনওমেয়ে"
রবীন্দ্রনাথ
লেখেন এমন চিঠি।
সেই শুধু পারে
যে কাউকে নিয়ে যেতে,
ভুবন পেরিয়ে
স্বর্গের খুব কাছে...
আঘাতের নামে
কত যে পুরস্কার
হৃদয়ে সেসব
যত্নেই রাখা আছে।
হাতে হাত রাখা
যদিও সহজ নয়
তারচে সহজ ঢেউয়ের
ওপর ঢেউ;
ছোট্ট ভ্রমণ
জলতরঙ্গ হও
এই পৃথিবীতে
থাকতে আসিনি কেউ
কালবেলা
মেয়েকে একটা
চিঠি লিখছেন জীবনানন্দ দাশ
কুয়াশার স্রোতে
ভেসে গেছে তাঁর দিনরাত-বারোমাস।
'চাকরি হারিয়ে
বুঝেছি জীবনে টাকা কত দরকার';
অভাবে অভাবে
ভেঙে গেল তাঁর ধুলোমাখা সংসার।
বালির ওপর জ্যোৎস্নার
মত প্রেম দূরে, বহুদূরে --
কাজ খুঁজছেন
তিনি সকলের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে।
শরীর ভালো না,
প্রেসিডেন্সির এত পড়াশোনা নিয়ে,
কিছুই হয়নি,
সবকিছু হয় শুধু সুপারিশ দিয়ে...
মেয়েকে একটা
চিঠি লিখছেন, বাড়ি ভাড়া বাকি আছে,
''সবকিছু ছেড়ে
চলে যেতে চাই নক্ষত্রের কাছে।''
এই শহরের বড়
কবিদের ঈর্ষা কোথায় নামে?
তাঁর লেখা যেন
চাপা পড়ে যায়, অনটন সংগ্রামে।
টাকার অভাব
বদলে দিচ্ছে তাঁর মহাপৃথিবীকে,
অন্যের পাশে
রোজই দ্যাখেন উচ্চাভিলাষী স্ত্রীকে।
তিনি কেউ নন
এই পৃথিবীর, চাইছেন চলে যেতে,
যেভাবে রৌদ্র
শুয়ে থাকে ওই ধানক্ষেতে মাথা পেতে।
মেয়েকে একটা
চিঠি লিখছেন, অভাবে অভাবে ঢেকে,
খুব বেশি তিনি
কখনও চাননি নিজের জীবন থেকে।
কিছুই পাননি,
কুয়াশার দিকে চলে গিয়েছেন ধীরে,
পাখি হয়ে যদি
ফিরতে পারেন ধানসিড়িটির তীরে।
মরণের আগে ইঁদুরের
মুখে খুদকুড়ো লেগে থাকে,
অনেকেই খুব
অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে তাঁকে।
হাঁটলে এখন
যেন হাঁপ ধরে, শহরের রোদ্দুরে,
ইনসিওরেন্স
পলিসি করান দরজায় ঘুরে ঘুরে।
কুয়াশার স্রোতে
ভেসে যায় প্রেম, দিনরাত-বারোমাস,
মেয়েকে একটা
চিঠি লিখছেন জীবননান্দ দাশ।
ভানুসিংহের চিঠি
বোটের ওপর চুপচাপ
বসে আছি
মাঝি চলে যায়
ঘরছাড়া গান গেয়ে,
আমি তো হেলায়
বড় হয়ে যাওয়া ছেলে
আমায় চায়নি
কোনওদিন কোনও মেয়ে...
রাতে পদ্মায়
দুর্যোগ চলছিল
সকালে পল্লি
দাঁড়িয়েছে ছায়া মেখে,
দুঃখ পেতেই
জন্মেছিলাম তবু
চোখ ভরে যায়
দূরে গ্রামখানি দেখে।
এবার পুজোয়
জোড়াসাঁকোতেই আছি
কূল পাচ্ছিনে
বেলার অসুখ নিয়ে;
মেয়ের বাবাকে
এখনও দেশের লোক
বিচার করবে
শুধু টাকাকড়ি দিয়ে।
বেলা নেই; আজ
সকালেই মারা গেল
আমার হাতেই
বড়ো হয়েছিল সে,
মৃত্যু তো এই
জীবনেরই এক রূপ
এত রূপ আঁকে
সে চিত্রকর কে?
কে আঁকছে তার
খেয়ালে এমন করে?
কোন ছবিঘরে
রাখা থাকে এত ছবি?
ভুবনডাঙার আকাশে
রৌদ্র-ছায়া
সাজাদপুরের
সকালের ভৈরবী।
বেলা, রাণি,
শমী, নিতু, ছুটি, বৌঠান
আর কি কখনও
দেখা হবে কোনও দেশে?
কোন সে বিদেশ?
কোন সমুদ্রপারে?
চাঁপাফুল হয়ে
কারা ফুটে আছে হেসে?
রাতে যথেষ্ট
দুর্যোগ হয়ে গেল।
পরদিন সব ফুলে
ফুলে ঢেকে দিয়ে,
মিলিয়ে যাচ্ছে
দূরের সিন্ধুপারে
শহর দাঁড়িয়ে
শ্রাবণের ছায়া নিয়ে…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন