কবিতার কালিমাটি ১১০ |
জানি এ শুধু সরলরেখা
একদিন আসাটাই ভুল হয়ে যায়। সেদিন দুপুর ছেড়ে চলে যেতে চাই আমিও — সেদিন বৃষ্টি হয় আর জলের কম্পনে ভাসতে থাকে ছায়া। ছায়া তখনও ভিটের উপরে — হাইব্রিড গাছের গায়ে লেপটে থাকা কাঠবেড়ালি গোঁফে তা দিতে দিতে অন্য কোথাও যেতে পারে না আর — অথবা নীরবে ডুবে যায় অনটনে
স্বপন ঘেঁষা ঝোপঝাড় আর গাছপালার ভিতর থেকে আমি জেনে গেছি গ্রীষ্মঋতু। সেখানে আশ্রিত সম্পর্কেরা হাতে হাত রাখতে চায় না শেষ চিহ্নে — বৈঁচি ফলের আলপনায় শাকভাজার গন্ধ — জানি এ শুধু সরলরেখা। একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য কোথাও চলে যেতে পারে — হৃদয় তো অতলান্ত কিছু ফুল - দাঁড়িয়ে থাকে শব্দহীন।
অনন্ত মারা গেছে
অনন্ত মারা গেছে। চারপেয়ে খাটের বাতাসে কালিন্দী গন্ধ — কখন যে আছড়ে পড়ল ললিত-সুর — বুঝতে পারল না তার বউ। তারপর সব শেষ। বাকি রাতটায় শুধু কান্না। প্রতিবেশীদের নিয়ে বসন্ত কাঠ কাটতে কাটতে রাত কাবার করে দেয়। ভোর হতেই দুঃখটা ছোঁয়াচে হয়ে যায়। পোষা পায়রারা ঝাঁপিয়ে পড়ে পথে — এবং তারা এলোমেলো ভাবে আশ্রয় নিতে থাকে শিরীষ গাছের শাখা প্রশাখায় —
শুকনো বাঁশপাতায় শিশির জমেছে খুব। ঘুমপায়ে পা পড়লেই ঠাণ্ডভাবটা মাথায় বিদ্যুৎ খেলে — আমি অনন্তের কাছাকাছি যেতে চাই, সমস্ত চোখগুলোর সম্মতিতে থাকে মৌনতা। সেখানে চিবুক ছুঁয়ে আছে গুঁড়ো গুঁড়ো পলিমাটির সততা। চিতার আগুনে পুড়ে যাওয়ার আগে ছায়া সংগ্রহ করতে চাই — আর হাড়মাসের দধিচী।
বুকভার অপেক্ষারা এবড়োখেবড়ো
কাকের পালক খসে পড়ল বাঁশের বেঞ্চিতে। করবী ডালে ঝোলানো কয়েকটা ছেঁড়া বস্তার গায়ে হলুদ বোলতার চাক — সুবলের দ্বিতীয় পক্ষের বউ ভিজে কাপড়ে টুকটাপ ফুল তুলে, গাইতে থাকে বৃন্দাবন — নামটি টগরী হলেও বুকভার অপেক্ষারা এবড়োখেবড়ো — আমাদের হা-ভাতে গাঁ থেকে উড়ে যায় আঁকিবুঁকি সুশান্ত; ধানিজমিতে তীব্র হতে থাকে রৌদ্র —
বলতে পারিনি নতুন ভাতের কথা। জামফুল ভাসার সাথে সাথেই আমি চোখ তুলে দেখেছি গোল গোল তরঙ্গ — সুধাংশুর খোলা রান্নাঘর থেকে ভাত ফোটার গন্ধ আসে — তার কোন রচনা নেই। দূরত্ব মাপতে মাপতে বাঁধ পর্যন্ত একটা পথ বানাই — পথের ধারে জলাশয় নিয়ে মরা ঘাসে শুরু করি দিক নির্ণয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন