শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৯


দ্বিতীয় পৃথিবীর অনুপর্বেরা

বারান্দায় গ্রিলের গেটটায় তালা লাগিয়ে দিতে চাইছি। তাই তাড়াতাড়ি চাবিও খুঁজছি, কিন্তু আবছা অন্ধকারে হাতড়েও পাচ্ছি না। কখন থেকে কীভাবে অন্ধকার  তাও জানি না। তুমি আমাকে বাইরে বেরোতে বারণ করেছো আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে। চাবি খুঁজতে গিয়ে দেখি একটা দেড় আঙুল সাইজের মানুষ আমাদের চাবি রাখার জায়গা থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় চাবিগোছা জোড়া বারান্দার মেঝেতে ফেলে রেখে সেও কী যেন আবিষ্কার করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। চোখে পড়ে যাওয়া মাত্র ওই দেড় আঙুল নির্বাক মানুষটাকে আমি বাঁহাতে খুঁটে তুলে গ্রিলের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। মনে হচ্ছিল যেন কারো কড়ে আঙুল ধরে তাকে সরিয়ে দিচ্ছি। মানুষটা নির্বাক এই কারণেই বললাম যে, ওই দেড় আঙুলে মানুষটার থেকে কোনো স্বর শব্দ কিংবা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস কিছুই শুনতে পাইনি। তবুও সে দিব্যি নড়েচড়ে বেড়াচ্ছিলো আর পাঁচটা মানুষের মতোই।

আমাদের বাড়িটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা। সেজন্য বারান্দায় এসে দেখতে চাইলেও উপায় নেই পাঁচিলের ওপারে কী হচ্ছে। বেশ চাপা হট্টগোল শুনতে পেয়েই তুমি বাইরে বেরিয়ে গেছো দেখতে। কিন্তু এই একরাশ আবছা অন্ধকার আর বাইরের হট্টগোল আমাকে বিভ্রান্ত করে তুলেছে। বারণ করে গেছো বাইরে বেরোতে তাই আবার বারান্দা থেকে ঘরে এসে জানলার পাল্লার ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি প্রতিবেশীদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে গেল, নাকি বেপাড়ার লোকজন এসে কোনো কারণে ঝামেলা লাগিয়েছে!

আবার বারান্দায় গ্রিলের গেটটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। আলো জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না। উঠোনে তোমার স্কুটারটা স্ট্যান্ড করানো আছে। কিছু একটা যেন সিটের উপর বেয়ে উঠতে চাইছে। পাঁচিলের কাছে রাখা আছে বলে ভালো করে বুঝতে পারছি না। চোখ কুঁচকে তাকিয়ে দেখি আবার একটা দেড় আঙুল মানুষ। ওই আগের মানুষটার মতোই মুখে কথা স্বর শব্দ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসহীন। তবে এ অন্য আরেকজন। অন্য গ্রহ থেকে আসেনি। দেখতে অবিকল মানুষ এবং জামা প্যান্ট জুতো সবই পরে আছে। যেন একজন পরিপুর্ণ মানুষের মিনিয়েচার। ঝুলন সাজানোর খেলনা। সেগুলো সাজাতে তো আনন্দে ভাসতাম। কিন্তু এদের দেখে ভিতরে ভিতরে একটা অস্বস্তি উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে আমার।

তবুও বারান্দায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। দ্বিতীয় এই দেড় আঙুল মানুষ এবার বারান্দার দিকে হেঁটে আসছে। তালাটা শক্ত করে লাগানো আছে কিনা দেখতে গিয়ে দেখলাম ডানদিকের আঙটা ভেঙে গেলো এইমাত্র। তালা বাঁদিকের আঙটায় ঝুলে রইল। নিরুপায় হয়ে পাটের দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে গেটটা বাঁধতে লাগলাম যতটুক পারা যায়। বসার ঘরে সেন্টার টেবিলের উপর বাজতে থাকা ফোন তুলে বুঝলাম মাসিমা ফোন করেছেন। কথা বলতে বলতে চোখে পড়ছে সোফা আলমারি বইয়ের তাক বারান্দায় পিলারের উপর। তুমি এসে গেছো মনে করে ভুল হচ্ছে বারবার।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন