কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৯ |
রেবেকা ষাটে পড়ল
আজকাল গলিতেও লরি ঢুকে পড়ছে। মুস্কিল। রাস্তার একদিকে বাড়ি তৈরি করার বালি স্টোনচিপস গাদা করা। রেবেকার সাইকেলের চাকা আরেকটু হলেই স্কিড করছিল। আজ সকালেই গাছ শিরীষ দত্ত এইসব ছাতার মাথা অণুগল্প না লিখতে। যত্তসব অণু, ঝুরো, ক্ষুদ্র, চুটকি, একখিলি পান কত যে নামের অবতারণা হবে কে জানে! সম্পাদকেরা সব এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ। পাঠা তোর গল্প, দেখি রেকমেন্ড করা যায় কিনা!
রেবেকার আজকাল সব পথ ঘাট চেনা লাগে। এই শহরতলির অচেনা বাড়িঘর রাস্তাও চেনা লাগে। কাতলাঝিল স্টেশনের লাইন পেরিয়ে ওপারে ঝিলটিকুরি আর এপারের এমআইপি কলোনি সব চষাক্ষেত্র ওর। সাইকেলের কোনো গিয়ার নেই ভাগ্যিস। পায়ের জোরটাই গিয়ার। কত কত বন্ধুর বাড়ি এখানে ওখানে রেল কলোনিতে। রীতা স্টেশনের সিগন্যাল ম্যানের সঙ্গে প্রেম করছিল। চন্দ্রা কমলের সঙ্গে প্রেম করছিল। বাড়িতে জানাজানি হতেই কড়াকড়ি অমত ইত্যাদি চাপ না নিতে পেরে স্টেশনের ওভারহেড ব্রিজ থেকে লাফ দিল চন্দ্রা কী একটা মেলট্রেনে, একেবারে ঘচাং।
রেবেকা সর্বভারতীয় রেল কলোনির মিনি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সিন্থিয়াদের বাড়ি ক্রিশ্চান উৎসবে কেক বিফ খেতে যেত। আবার কমলদের বাড়িতে সত্যনারায়ণের শিরনি খেতে যেত।
প্রায়ই কমল যুগপৎ দুটি নারীর সঙ্গে প্রেম করত এগিয়ে পিছিয়ে। রেবেকা নিজেই একবার নিজের অজান্তে দাঁড়িপাল্লার একদিকে কিছুদিন দোল খেয়েছিল। আরেক কমল ছিল সাতাশি পাড়ার। এও রেবেকাকে প্রেম নিবেদন করত। রেবেকা জানত, সাতাশি পাড়ার কমল লেখাপড়ায় তেমন ভালো না। ওই সাবধান করেছিল কমল রেবেকাকে খেলাচ্ছে বলে। অপরদিকে চন্দ্রা বলা নেই কওয়া নেই দুম করে একদিন থ্রেটনিং দিয়ে গেল রেবেকাকে। রেবেকার একেবারে গা ঘিনঘিন করছিল এই সব ঘটনায়।
রেবেকা রেশন তোলে সাপ্তাহান্তিক। সে এবারও সাইকেল করে মাল তুলতে গেছে। সবই ঠিক আছে। হঠাৎ সাইকেলটা আবোলতাবোল রাস্তা ধরে ছুটতে শুরু করে। রেবেকার কোন কন্ট্রোল নেই সাইকেলের উপর। নিজের বাড়ি বলে আর কিছু নেই। এ অবস্থায় রেবেকার মৃত মায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আশ্চর্য! রেবেকার মেয়ের মেয়ের হাত ধরে মা হেঁটে আসছে! টুবাইকে তো মা জীবদ্দশায়ও দেখে নি!
এবার রেবেকা প্যাডেল করে চলেছে। চাকা
ঘুরে চলেছে। কিন্তু এক ইঞ্চিও সাইকেল এগোচ্ছে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন