সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

অচিন্ত্য দাস

 

জাপান দেশে এক অপরান্হ বেলায়




 

(মসীচিত্র ৫)  

আজ হইতে বছর কুড়ি পূর্বে কার্যসূত্রে আমাকে বেশ কয়েকবার জাপান যাইতে হইয়াছিল। দেশটি অতীব সুন্দর এবং সাধারণ জাপানি মানুষজনদের আমার খুব ভালো লাগিত। ইহারা অত্যন্ত বিনীত এবং আমার মনে হইয়াছিল ভারতীয়দের প্রতি ইহাদের আগ্রহ রহিয়াছে। যেমন একদিন টোকিওর রাস্তায় ট্যাক্সি লইয়া কোথায় যেন যাইতেছি, চালক আকারে ইঙ্গিতে জানিতে চাহিল আমি কোন দেশ হইতে আসিয়াছি। বৃদ্ধ চালক, ইংরাজি জানে না। তবু ‘ইন্ডিয়া’ বলিতে সে বুঝিয়া লইল। গাড়ির সামনে একটি খোপে একটি বুদ্ধমূর্তি দেখাইয়া ভক্তিভরে বলিল ‘বুদ্ধা … ইন্ডিয়া’। ভগবান বুদ্ধের দেশ হইতে আসিয়াছি বলিয়া মনে হইল সে আমাকে সম্মানের চোখে দেখিতেছে। নামিবার সময় দরজা খুলিয়া জাপানি কায়দায় মাথা নিচু করিয়া আমাকে একটি জাপানি চকোলেট ও একটি চন্দ্রমল্লিকা ফুল উপহার দিল। ভারি লজ্জা লাগিতেছিল – এই প্রবীণ বুদ্ধভক্ত জানিতেন না, কোথায় ভগবান বুদ্ধের বাণী আর কোথায় আমাদের দেশের মানুষজনের স্বভাব-চরিত্র!

এক শুক্রবার আমার সহিত আগত সহকর্মীগণ কার্যক্ষেত্রের পরিচিত জাপানবাসীদের কাছে আবদার ধরিল, তাহাদের টোকিওতে সপ্তাহ-শেষের ইলেক্ট্রনিক হাটে লইয়া যাইতে হবে। এই হাট আমি পূর্বেই দেখিয়াছিলাম। ফেরিওয়ালারা সবজিবিক্রেতার মতো সারে সারে ঝুড়ি লইয়া বসিয়া থাকে। তাহাদের ঝুড়িতে ‘উচ্ছে-বেগুন-পটল-মূলো’র পরিবর্তে পুরানো কম্পিউটার, টিভি,  ফোন, মিউজিক সিসটেম ইত্যাদি বোঝাই করা। জলের দরে পাওয়া যায়। তাহা নাকি দেশে আনিয়া একটু সারাইয়া লইলেই চলে। এই হাট দেখিয়া আমার ভালো লাগে নাই। মনে হইয়াছিল প্রযুক্তি ও অর্থনীতি লাফাইয়া লাফাইয়া চলিবার ফলে এই আবর্জনার জন্ম হইয়াছে। বলিলাম – “ওরা যাউক, আমার ইচ্ছা নাই”।

এক জাপানি ব্যক্তির সহিত আমার ভালো বন্ধুত্ব হইয়া গিয়াছিল, তাহাকে একান্তে বলিলাম – “এতবার এই দেশে আসিলাম কিন্তু জাপানি গ্রাম বা শহরের বাহিরের রূপ দেখি নাই। আশেপাশে কোথাও যাওয়া যাইতে পারে?”দেখিলাম সে ভারি আনন্দের সহিত রাজি হইয়া গেল।

পরদিন প্রাতঃরাশ সমাপ্ত করিয়া তাহার গাড়িতে দুইজনা যাত্রা করিলাম। শহরের  সীমানা পার হইতেই চোখ জুড়াইয়া গেল। চারিদিকের দৃশ্য আতি-মনোরম ছবির মতো। পটে লিখা না হইলেও সে ছবি কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ‘শ্যামলে শ্যামল এবং নিলীমায় নীল’! সবুজ শস্যক্ষেত্র, মাঝেসাঝে যতিচিহ্নের মতো দুটি একটি ছায়াতরু, দিগন্তরেখায় হেলান দিয়া পাহাড়ের সারি। কত জলস্রোত, কত ছোট চঞ্চল নদী বহিয়া যাইতেছে। ধূলোধোঁয়া না থাকায় – ‘শুধু নীল ঘননীল নীলাকাশ’। একবার নামিয়া দেখিলাম আমাদের দেশের শীতকালের মতো তাপমাত্রা। স্বর্গলোক কি ইহা অপেক্ষা মনোরম?

ইহাদের রাস্তা ঘরের মেঝের মতই মসৃণ। গাড়ি চলিলে মনে হয় আমরা স্থির, কেবল   চারিদিকের দৃশ্য পিছনে চলিয়া যাইতেছে। আর বলাই বাহুল্য গ্রামের রাস্তায় কোথাও চঞ্চল মুরগী, বালখিল্য ছাগল বা স্থবির ষাঁড় দেখিলাম না। মাঝেসাঝে দুএকটি পাকা বড় বাড়ি চোখে পড়িল। জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম এগুলি ইস্কুল বাড়ি। একটি ছোট উচ্চতার পাহাড়ে গাড়ি কিছুটা উঠিল তারপর গাড়ি হইতে নামিতে হইল। শ-তিনেক ফুট উপরে একটি প্যাগোডা আকৃতির মন্দির। উঠিলাম। পুরাতন দেবালয়। বুদ্ধ মূর্তি রহিয়াছে। বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তরখন্ড সজ্জিত প্রাঙ্গণটিতে অজস্র ফুল ফুটিয়া আছে। বৌদ্ধ উপাসনা গৃহটি এমনই শান্ত ও সুন্দর যে চলিয়া যাইতে পা সরে না। মনে হয় যেন অনেক পথ অতিক্রম করিয়া আশ্রয় মিলিয়াছে। এই উচ্চতা হইতে জাপান দেশের ভূপ্রকৃতি বেশ লাগিতেছে। অন্য দর্শনার্থীদের মতো আমরাও একটি ধূপ জ্বালাইয়া রাখিয়া দিলাম। মনে মনে বলিলাম “সার্থক জনম আমার, দেখিতে পাইয়াছি এই দেশ…”

ইহার পর আমাদের গন্তব্য ছিল একটি গরম জলের ঝরনা। জাপান দেশে এইরূপ  উষ্ণ নির্ঝরিণী বহু রহিয়াছে, তাহারই একটি। ভারি সুন্দর লাগিতেছিল। জায়গাটি  সমতল নহে, ছোট ও মাঝারি কিছু পাহাড় অঞ্চলটিকে ঘিরিয়া রাখিয়াছে। একটি পাথর-বাঁধানো জলাশয় রইয়াছে, ইহার তলদেশ হইতেই গরম জল ক্রমাগত আসিতেছে। ছুটির দিন বলিয়া একটু জনসমাগম হইয়াছে। জাপানি শিশুদের দেখিলেই মন ভালো হইয়া যায়। টোকিওর রাস্তায় দেখিয়াছি শিশুরা লাইন করিয়া ইস্কুল বাসে উঠিতেছে, শৃঙ্খলাবোধ দেখিবার মতো। আর এইখানে জলে লাফাইয়া ঝাঁপাইয়া সাঁতার কাটিয়া কোলকাহল করিতেছে। মা-বাবার সহিত একটি বছর চারেকের শিশু জলে নামিয়াছে। জাপানি ভাষা কিছুমাত্র না বুঝিলেও ইহাদের কথা আমি ধরিতে পারিতেছিলাম। শিশুটি বলিতেছে – “না না জলে আরও খেলিব, এখন উঠিব না”। মা বলিতেছে – “ওরে, অনেক্ষণ হইয়া গেছে, এবার ওঠ। খাইতে হইবে তাহার পর বাড়ি ফিরিতে সন্ধ্যা হইয়া যাইবে”।

আমরাও জলে নামিলাম এবং খুব স্নান করিলাম। শিশুটির মতো আমারও উঠিতে মন সরিতেছিল না, কিন্তু অতটা পথ ফিরিতে হইবে। ক্ষুধা পাইয়াছিল খুব, আমার সঙ্গী বলিল – “চল, এখানে একটি মাছের রেস্তোরা আছে। মাছ চলিবে তো?” হাসিয়া বলিলাম – “খুব চলিবে। কাঁচা মাছ হইলে একটু অসুবিধা হইবে, কিন্তু ক্ষূধার মুখে তাহাও খাইয়া লইব”। সে আশ্বস্ত করিয়া কহিল - “না, সবরকম মাছ পাইবে”।

জাপানিরা কাঁচা মাছ খাইতে ভালোবাসে। তাহাদের দেখাদেখি আমিও খাইয়া দেখিয়াছি। প্রথমদিকে অবশ্য কাঁচা মাছের সহিত সস, নুন ও গোলমরিচ মিশাইয়া ট্যাবলেটের মতো গিলিয়া ফেলিতাম – পরে একটু খাইতে শিখিয়াছিলাম।

রেস্তোরাঁর ভিতরে দেখিলাম জাপানিদের প্রথাগত সাবেকি খাইবার ব্যাবস্থা। মেঝের  উপর নিচু জলচৌকি, তাহাতে বসিতে হইবে। খাইবার টেবিল বলিয়া কিছু নাই।  প্রতি চারটি জলচৌকির মধ্যবর্তী স্থানে মেঝেতে একটি করিয়া খুপরি কাটা  রহিয়াছে। তাহার ভিতরে বৈদ্যুতিক আঁচের ব্যবস্থা, আমাদের দেশের ‘হিটার’এর মতো। উপরে লোহার জাল রহিয়াছে। পাশে রেডিওর কাঁটা ঘোরাইবার মতো চক্র, তাহার সাহায্যে আঁচ কমানো বা বাড়ানো যাইতে পারে।

জাপানিরা কাজ করিতে খুব ভালোবাসে, সারাদিন এতো কাজ করে যে পরচর্চা-পরনিন্দা জাতীয় বিনোদন ইহাদের ভিতর আছে বলিয়া মনে হয় নাই। আর ইহারা ‘নিজের চরকায়’ নিজেরাই তৈল প্রদান করে। অন্যের কাজে বিনামূল্যের উপদেশ বা নাসিকার অনধিকার প্রবেশ ইহাদের স্বভাব নহে। যাহারা খাইতে আসিয়াছে তাহারা কেহ বাটিতে সুরুয়া (স্যুপ) গরম করিতেছে, কেহ গাজর ও ব্রকোলি আগুনে অল্পস্বল্প পুড়াইয়া লইতেছে। আমরা দুটি জলচৌকিতে ব্যাগ ইত্যাদি রাখিয়া রেস্তোরাঁর অপরদিকে আসিলাম মাছ পছন্দ করিতে। দেয়ালজোড়া ঠাণ্ডা মেশিন,  তাহাতে লবণ মাখাইয়া বিভিন্ন প্রকারের মৎস্য রহিয়াছে। আমি পমফ্রেট জাতীয় মাছ পছন্দ করিলাম, আমার সাথীও তাহা লইল। হয়তো ভদ্রতা করিয়া।

এবার মাছ ঝলসাইতে হইবে। ইতিমধ্যে আমাদের সামনাসামনি এক দম্পতি আসিয়া বসিয়াছেন। ইহাদের বয়স কত হইবে? আমার মনে হইল আশি পার হইয়া  গিয়াছে। ইহারা জাপানি ভাত লইয়াছে (বেশিক্ষণ সিদ্ধ হইলে ভাত যেরূপ গলিয়া পিণ্ড হইয়া যায়, ইহাদের ভাত সেই প্রকার) সঙ্গে মৌরলা আকারের কাঁচা মাছ।

দুপুরের দিকে শুভেচ্ছা জানাইতে কী যেন বলে ইহারা তাহা চট করিয়া মনে না পড়ায়, সুপ্রভাতের জাপানি প্রতিশব্দটি বলিলাম। দুইজনেই হাসিল। বৃদ্ধা আমাকে জাপানি ভাষায় জিজ্ঞাসা করিলেন – “কোন দেশ হইতে আসিয়াছ?” একটিও অক্ষর না বুঝিতে পারিলেও, প্রশ্ন সঠিক আন্দাজ করিয়া উত্তর করিলাম “ইন্ডিয়া’।  ভারত দেশ তো উহারা বুঝিল। কিন্তু এবার জিজ্ঞাসা করিল ভারত দেশের কোন অঞ্চল। কী করা যায়?

একটি কাগজের উপর পেন দিয়া ভারতের মানচিত্র আঁকিবার প্রয়াস করিলাম। অঙ্কনশিল্প আমার আয়ত্বে কোনোকালেই ছিল না, অতএব ভারতমাতার যা রূপ হইল তাহা কহিবার নহে! মনে মনে ভারতমাতার নিকট ক্ষমা চাহিয়া দিল্লী, মুম্বাই ও কলিকাতা ফুটকি দ্বারা চিহ্নিত করিলাম। একবার ইহাদের মুখপানে চাহিয়া দেখিলাম - পীত কুঞ্চিত ত্বক, রৌপ্যবর্ণের কুন্তল, সমতল নাসিকা ও ক্ষুদ্র আকারের আঁখিতে মানচিত্র দেখিয়া কোনো সাড়া নাই। অর্থাৎ বুঝিতে পারিতেছেন না। আমি তখন মরিয়া হইয়া উত্তরের দিকে কৌণিক রেখার আকারে পর্ব্বতশীর্ষ আঁকিতে থাকিলাম এবং বাকি তিনদিক নীলবর্ণ দাগে ঘিচিপিচি করিয়া দিয়া তাহার ভিতর একটি মৎস্য আঁকিয়া ফেলিলাম। এতক্ষণে সাড়া দেখিলাম। হিমালয় এবং সাগর তাহারা চিনিয়াছে। ইহার সাহায্যে বুঝাইয়া দিলাম এই বিরাট পৃথিবীর কোন বিন্দুতে আমার ঠাঁই।

কোনো ঝুঁকি না লইয়া আমি মাছটি ভালো করিয়া বার-বি-কিউ ধরনের ঝলসাইয়া  লইলাম। নাঃ, ইহা সত্যই সুস্বাদু। তৎসহ কিছু স্যালাদ দিয়াছিল, তাহার উপর অকৃপণ হস্তে টমাটো সস্ ঢালিয়া তাহাকে ভারতীয় খাবারে পরিণত করিলাম। ইহার উপর আরেক সৌভাগ্য – একটি জাপানি মেয়ে আসিয়া একটি পাত্রে ‘সাকে’ রাখিয়া  গেল। সাকে জাপানি সুরা, ভাত হইতে প্রস্তুত। তবে তাড়ি হইতে অনেক উচ্চস্তরের পানীয়। বহুরকমের সাকে রহিয়াছে, ইহাতে দেখিলাম মৃদু জুঁইফুলের সুঘ্রাণ।

পিপাসা পাইয়াছিল – ঢকঢক করিয়া কিছুটা সাকে গিলিলাম। সামনের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও সাকে লইয়াছেন। বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করিলেন – “তোমার পুত্রকন্যা কটি, তাহারা কী করে?”

পাঠকগণ, বিশ্বাস করুন, জাপানিতে হইলেও আমি ইহার চোখের ভাষায় বেশ বুঝিয়া লইলাম। সঙ্গীর কাছে অল্পস্বল্প সাহায্য লইয়া উত্তর করিলাম যে আমার দুটি পুত্রকন্যা ও তাহারা কলেজ ও ইস্কুলে পড়িতেছে। বৃদ্ধ হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন – “পরিবারের সকলের জন্য জাপান হইতে কী লইয়া যাইবে?”

এই রে, তাহা তো এখনো কিছু ভাবা হয় নাই। রেস্তোরাঁর দেয়ালে বেশ কয়টি  জাপানি ঢঙের ছবি ঝুলিতে ছিল। আমি পট করিয়া বলিয়া দিলাম – “দু-একটি ছবি লইয়া যাইব। বাড়িতে রাখিব”। যদিও ঝোঁকের মাথায় বলিয়াছিলাম তবু সেবার  দুইটা জাপানি ছবি সত্যই কিনিয়া আনিয়াছিলাম। ফ্রেমে বাঁধাইয়া দেয়ালে টাঙাইয়া রাখিয়াছিলাম। এখনো রহিয়াছে।

বৃদ্ধার মনে হয় আমার সহিত কথা কহিতে ভালো লাগিতেছিল। আর আশ্চর্য এই যে ভাষাজ্ঞান না থাকিলেও আমি তাঁহার বক্তব্য বেশ বুঝিতে পারিতেছিলাম। সঙ্গী দোভাষির কাজ করিতেছিল।  বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিলেন – “পড়াশুনা শেষ করিয়া তাহারা কী করিবে?”

বলিলাম – “তাহা জানি না, তবে উচ্চশিক্ষা করিতে বিদেশে যাইতে পারে”।

-“বিদেশ মানে কোন দেশ?”

বলিলাম আমেরিকা হইতে পারে, আমাদের দেশ হইতে অনেকে যায়। বৃদ্ধা বলিলেন যে তাঁহার চারটি পুত্র-কন্যার ভিতর দুটি আমেরিকায় বসবাস করে।

খাওয়া প্রায় শেষ। অনেকটা সাকে পান করিয়া বেশ ঢুলুঢুলু লাগিতেছে। আহা, কী ভাগ্য করিয়া এমন একটি স্থানে এমন একটি অপরাহ্ন কাটাইতেছি! মন ভরিয়া গিয়াছে। দুটি বালক-বালিকাকে দেখিলাম, মায়ের সহিত ঝগড়া করিতেছে, এত তাড়াতাড়ি কেন জল হইতে উঠাইলে। দেখ কত বাচ্চা এখনও জলে রহিয়াছে! আচ্ছা, ইহাদের পানীয়তে কি কিছু আছে যাহাতে ভাষা আপনা হইতে মাথায় ঢুকিয়া যায়? আমার তো ধরিতে অসুবিধা হইতেছে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কথাও তো বিলক্ষণ বুঝিতে পারিতেছিলাম।

সাকে সত্যই এক শক্তিশালী সুরা। ইহার প্রভাবে মনে হইল আমার জ্ঞানচক্ষু খুলিয়া গিয়াছে। জাপান দেশে এই অপরাহ্নবেলায় আমি বিরাট একটি আবিষ্কার করিয়া বসিয়াছি। আবিষ্কারের বিবরণ সংক্ষেপে লিখিতেছি।

আজ হইতে বহুলক্ষ বৎসর অতীতে পূর্ব আফ্রিকার এক শিম্পাজি দম্পতি দেখিল  তাহাদের পুত্রকন্যারা কেমন যেন অকালপক্ব ও অতিশয় চালাক। এত বুদ্ধি কী করিয়া পাইল? শিম্পাজি বংশে তো এত চালাকির খেলা কোনোদিন দেখা যায় নাই!

আসলে এই পুত্রকন্যারাই আদিম মানব। কিন্তু এরূপ কী করিয়া হইল? সে প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞাসা করিবেন না, প্রাণীবিজ্ঞানীরা এখনো ইহার উত্তর খুঁজিতেছেন। মানবেরা সংখ্যায় বাড়িতে লাগিল এবং অসম্ভব সব কাণ্ড ঘটাইতে থাকিল। এক সময় ইহারা নৌকা তৈয়ারি করিতে শিখিল এবং সে নাও লইয়া সাগর পাড়ি দিল। পূর্ব আফ্রিকার উপকূল হইতে তাহারা নানা দেশ-মহাদেশে ছড়াইয়া গেল। আরো কয়েক লক্ষ বছর কাটিয়া গিয়াছে। নানা প্রাকৃতিক কারণে ইহাদের চেহারায় নানান আঞ্চলিক বিশেষত্ব আসিল। কেহ সাদাটে, কেহ পীতবর্ণ, কেহ কৃষ্ণকায়, কেহ বা মিশ্রিত বর্ণের। ভিন্ন ভিন্ন ভাষা হইল, ভিন্ন নিয়মকানুন, রীতি-রেওয়াজ, সংস্কৃতি।

কিন্তু সাকে পান করিয়া জাপান দেশের এই মনোরম অপরাহ্নবেলায় আমি বুঝিতে পারিয়াছি, বাহিরের রূপে বিচিত্রধরনের বির্বতন আসিলেও  শিম্পাজি বংশোদ্ভুত এই  অদ্ভুত প্রাণীটির মনের গভীরতম প্রদেশটি অভিন্ন। মানুষের অন্তরের মূল ছবিখানি – শিশুর চঞ্চলতা হইতে জীবনের শেষবেলায় পরিবারের প্রতি স্নেহের আকর্ষণ – দেশকাল নির্বিশেষে একই প্রকার।  

 

 

 

৪টি মন্তব্য: