কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫ |
‘থেমে যেতে যেতে...’
সেদিন বিকেলে হেঁটে বেড়াচ্ছি মেঠো রাস্তায়। হঠাৎ বদ গন্ধ এল নাকে। সুদূরপ্রসারিত ধানক্ষেতের মধ্যিখানে শরীরপচা গন্ধ! কোভিড মাস্কের মধ্যে দিয়েও ঢুকে আসছে হনহনিয়ে। শরীরের গন্ধ। পচা শরীরের। মানুষের না হলেও কোন না কোন প্রাণীর। মরে পচে ওঠা মাংসের গন্ধ আমার ভুল হবে না।
ডানদিক বাঁদিক তাকিয়ে লক্ষ্য করতে চোখে পড়লো রাস্তার একপাশে একটা মরা কুকুরের ধড়। একাধিক দিন ধরে পচছে। নাড়িভুঁড়ি খেয়ে গেছে পাখির দল। কুকুরটার পড়ে থাকার ভঙ্গি চোখে পড়ার মত। ইংরেজিতে একটা কথা আছে: সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন। দেদার গতির মধ্যে সহসা থেমে যাওয়া। কুকুরটা অমন করেই পড়ে আছে। নাক থেকে চোখ। গন্ধ থেকে দৃশ্য।
অসাড় পচে ওঠা শরীরে এখনো গতির স্মৃতি লেগে রয়েছে। একটা কাঁটাতার পার করতে গিয়েই কি নেমে এলো মৃত্যু? পিছনের পায়ে জড়িয়ে থাকা লাল ফিতের শেষভাগ কাঁটাতারে আটকে আছে। তবে কাঁটাতারও কুকুরের মতোই ভূলুন্ঠিত। মানুষের আর কাজ কি? আমিও কল্পনা করতে লাগলাম শরীরে মৃত্যু ঘনিয়ে আসার সেই মুহূর্ত, যখন কাঁটাতারসহ কুকুর থেমে গেল প্রবল গতিজাড্যের কেন্দ্রে। কাঁটাতার ভেঙে দিল। কিন্তু তারই সঙ্গে ভেঙে গেল নিজের শরীর। নিঃসাড় হয়ে পচে উঠতে লাগলো মাংস। শরীরের অবস্থান গতিময় প্রতিরোধের স্মৃতি ধরে রাখলো পড়ন্ত সূর্যের আলোয়।
সূর্যের আলোয় পচে ওঠা সারমেয়শরীরের গন্ধ আর স্থবিরতাপ্রাপ্ত গতির চিন্তাগম্ভীরে প্রবেশ করতে গিয়ে আমার আমিটা হারিয়ে গেল। ততক্ষণে ভূপতিত কাঁটাতরের উপর সূর্য ঢলে পড়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন