বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

অশোক তাঁতী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫


উপন্যাসের ভেতরে

হ্যালো, আমি বলছি। হ্যালো! চেঁচালাম। কেউ শুনতে পেলো বলে মনে হল না। ফোন করতে পারছি না। সঙ্গে মোবাইলটা নেই।

ট্রেন চলছে। তার একটা উদাস করা একঘেয়ে শব্দে বাতাস ভারী হয়ে আছে। জানালার ধারে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে। এখন উপায় নেই। ট্রেনের বাইরের কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। মোবাইলটা চার্জ করতে দেওয়া কাল হয়ে গেল। বেশ অসহায় লাগছে, আর কতক্ষণ থামিয়ে রাখতে পারবো জানি না।

আগে লোকে দূরপাল্লার ট্রেনে চাপলে সঙ্গে একটা উপন্যাস, নিদেন পক্ষে মোটা কোনো ম্যাগাজিন নিয়ে যেত। বেড়ানো মানে হোল্ডলে রম্যানি বীক্ষ্য। এখন দুচোখ মোবাইলে। সেখানেই সব সুন্দরের দর্শন। শুধু এই মহিলা। ট্রেনে চাপার পর বইতে চোখ! আমারই লেখা। সুন্দরী পাঠিকা কার না ভালো লাগে। কিছুটা পড়ার পর খোস গপ্পো করা যাবে ভেবে একটু ঝিমিয়ে নেবার কথা ভাবলাম। আর এখন…

বাঁ হাতে কলার চেপে আছে। -এই শালা আমাদের নিয়ে যা ইচ্ছে করেছিস, আমরা কি পুতুল?

-বিশ্বাস করো ভাই কোনো চরিত্রের মধ্যে একটা পরকীয়া না ঢোকাতে পারলে পাঠক পড়বে কেন? টিভি সিরিয়ালে দেখি চারগণ্ডা করে প্রেম। তিনটে বিয়ে। বিয়ের ব্যাপারটা অবাস্তব।

-চোপ। কে তোকে তুমি বলার পারমিশান দিয়েছে? আর সিরিয়ালওয়ালাদের জন্যে  আপ্রাণ চেষ্টা দেখতেই পাচ্ছি।

-ভাই তুমি আমার তৈরি চরিত্র। একটা চরিত্রেকে তার চূড়ান্ত গন্ত্যব্যের দিকে  পাঠাতে গেলে এটা দরকার।

-আমি গল্পের চরিত্র বলে যা ইচ্ছে করার স্বাধীনতা কে দিয়েছে?

পেছন থেকে ঋতু বলে উঠল, আমার নাম প্রথমে ছিল আফসানা। কোনও ভয়ে গল্পটা কিছুদূর এগোনর পর কেটে ঋতু করে দিয়েছে।

ঋতু আমার পাঞ্জাবীটা পেছন থেকে খামচে ধরে। - বদলাতে হবে এই ঝুটা গল্প। শুধু চালাকি করে লেখক হওয়া যাবে না।

বাধ্য হয়ে নিজের উপন্যাসের ভেতরটা পাল্টাতে থাকি। তবে বেশ সমস্যা হচ্ছে। আমার পাঠিকা মাঝেমাঝে পাতা উল্টে পেছনের দিকেটা পড়ে নিচ্ছে। তার নিজের স্মৃতির ওপর ভরসা থাকছে না। নিজের পড়া উপন্যাস এমন মুহুর্মুহু বদলে যাচ্ছে কেমন করে বুঝতে পারছে না।

রাতের খাবার দিতে আসছে। আমার খাবারটা সিটের ওপর রেখে দিয়ে গেল। মহিলা একবার চোখ কুঁচকে তাকিয়ে বই খুলে চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবতে বসলেন। বইয়ের এইসব আজব ঘটনা মনে মনে একবার ঝালিয়ে নিতে বসলেন বুঝলাম। তারপর একবার বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে বইটা বন্ধ করলেন। অন্ধকার নেমে এলো। সব চরিত্রগুলো চুপ হয়ে গেল। জানি না এখান থেকে বের হতে পারবো কিনা, অন্তত খাবার সময়টুকু শান্তিতে ভাবার সময় পাবো।


২টি মন্তব্য: