বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫


২০১৯

সেলফে বই রাখার জায়গা হচ্ছিল না, ট্রেড মিলের উপর বই রাখছিলাম। রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার গল্পের পোস্টমাস্টারের মতো কোন কাজে মন যায় না।  আজ সকালে জরুরি একটা কাজে বেরুতে হয়েছিল, ব্যাংকে ঢুকতে দেখি লাইন… একজনের কাছ থেকে আরেকজনের বেশ দূরে দাঁড়াতে হবে। মেঝেতে লালরেখা এঁকে দিয়েছে দাঁড়ানোর জন্য।

সবাই মাস্ক ও হাতে গ্লভস পরা। কাজ সেরে একটা গ্রোসারিতে ঢুকতে দেখি চারিদিকে ডেটলের গন্ধ। কাউন্টারের সামনে ফ্লেক্সিগ্লাস লাগানো। বোঝা গেল দূরত্ব দূরত্ব আর দূরত্ব তৈরির জন্যই।

কাউন্টারের মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসল কিনা বোঝা গেল না, মুখে মাস্ক থাকার কারণে। বড় পা ফেলে বাসায় আসতে দেখি হাঁপিয়ে গেছি। অথচ এইসব হাঁটা দূরত্ব কয়েকদিন আগেও আমার কাছে কিছুই ছিল না। বাসা থেকে ঢিল ছোঁড়ার দূরত্বে।


আজ হাঁপিয়ে গেলাম। এই কয়েকদিনে ওজন বেড়েছে। বাসায় এসে ট্রেড মিলের উপর থেকে বই সরালাম। একটা চার্ট বানিয়ে ফ্রিজে ঝোলালাম, প্রতিদিন কী কী  শরীরচর্চা করব।

বারবার হাত ধুচ্ছি। হাত ধুয়ে বেরুবার পর মনে হয় হাতের অমুক অমুক জায়গা বাদ পড়েছে। আবার প্রক্ষালন আবার…


ওরহান পামুকের ‘স্নো’ পড়া শুরু করেছি। নায়ক কা-এর সাথে কার্স নগরী ঘুরছি। একটু পড়ি আবার ইউ টিউব শুনি। একটা নতুন গান শুনি…

গায়িকা মেয়েটা বেশ মিষ্টি করে হাসে। এই মরণের কথাও সে হাসি মুখে গাইছে। বাহ!

কানাডা থেকে ইউ টিউবে লগ ইন করতে গেলেই প্রতি সময় কোভিড-১৯ বিষয়ক আপডেট জানা যায়। ভয়ে ভয়ে আপডেট দেখি। কাল দেখেছিলাম মৃত ৬৬… এখন দেখি ৯৬। বাড়ছে মৃত মানুষের মিছিল। আক্রান্ত ৮৫০০+

ঘরের কাছে নিউইয়র্কের অবস্থায় ভয়াবহ। অজানা একটা ভয় তিরতির করে বেয়ে নেমে গেল।

ল্যাপটপ বন্ধ করার আগে পত্রিকায় চোখ বুলাই। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর কানের কাছে গতরাতে মশা গুনগুন গান শুনিয়েছে। করোনা ভয়াবহতার পাশাপাশি যদি আবার ডেঙ্গু শুরু হয়, কী যে হবে দেশের! ভাবনাটা অসাড় হয়ে থাকে কিছুক্ষণ।

সেদিন কোথায় যেন পড়েছিলাম প্লেগ মহামারির সময় শেক্সপিয়ার নাকি কিং লিয়ার লিখেছিলেন, আমিও একটা উপন্যাস শুরু করেছি। লিখে আরাম পাচ্ছি। এরই মধ্যে ২৮০০০ শব্দ হয়ে গেছে। কখনো উপন্যাস লিখিনি। বুঝতে পারছি না আদৌ হচ্ছে কি না।


গৃহবন্দিকালীন কোন মাংস ভক্ষণ করছি না। কেমন যেন নিজে মাংসাশী নই ভেবে ভালো লাগছে। ফেসবুকে যে সব বন্ধুদের টিকি দেখা যায় না, তারা বেশ আনন্দের সাথে আমাকে শত শত করোনা ভিডিও দিচ্ছেন, নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ লাগে।

টম হ্যাংকসের ‘অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস’ মুভিটা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি। স্বপ্ন দেখছিলাম আমার বাসার সামনে ছোট ছোট করোনাগুলো সেনাবাহিনীর মতো মার্চপাস্ট করছে।

ট্রাম্প, বরিস জনসন, জিসেপ কন্তে, মোদী ও জাস্টিন ট্রুডো মিলে চীনের প্রেসিডেন্টকে চ্যাং দোলা করে দেখি আমার কাছে নিয়ে আসছে…

সর্বনাশ। ধড়মড় ঘুম ভাঙ্গল। ঘামছি। যাক সত্যি না।

যাই চা আনি। চা পান করতে করতে লেখাটা…

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন