কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫ |
স্বপ্নের খোলাম ও মধুবনী
সত্যি'রা
শাড়িগুলো বেশ জেল্লাদার হতে হবে। বেশ চোখ ধাঁধানো রং। যেমন গোলাপী, বেগুনী, টিয়াসবুজ, কমলা, বাসন্তী ইত্যাদি। এতদিন শান্তিনিকেতনী, বেগমপুরী, মধুবনী, মলমলে অভ্যস্ত ভিন্ন রুচির এক মহিলার উপর ভার পড়েছে ওইরকম তীব্র রঙের অনেকগুলো ছাপাশাড়ি কেনার। জীবন এমন করে কত নতুন করে রং বদলাতে পারে, ভানুমতি মেলে ধরে। মলয় ওঁকে ছেড়ে গেছেন বহুদিন হল। মলয় ওর হাত ধরে জীবনের বাকি কটা দিন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু কাটালেন না। উত্তাল কাশ্মীর। চলে যেতে হয়েছে। অব্যবস্থা, রাজনীতি, আরও যে কত নিজেকে পোড়ানো!
বুড়ি বেশ্যার ঘর। কোভিড কালে লকডাউন হয় না পেটে। কে যেন এসে ঘরে ঘরে খোঁজ নিয়ে যায় ওদের। কে খায়নি বহুদিন, কার খোঁজ খদ্দের আর করবে না। কী হবে ওদের বয়সকালে? নারী দিবস আসে। ওদের মান দিতে চায় সেবক ছেলেটি। সঙ্গে আছে সামান্য একটু ওই রুচিশীলা মহিলা। যার হতে পারতো বাকিটুকু জীবনসঙ্গী মলয়। সেবক ছেলেটি মলয়ের আভাস পায়নি। মধুবনী মহিলাটি গর্ভগৃহ। গহীন অরণ্যের প্রবেশপত্র সে দেয়নি নিজের পুরুষকে ছাড়া।
অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হল। মধুবনী মহিলা তাদের মৌর্যযুগে চাণক্যের পণ কড়ি জরিমানার কথা শুনিয়েছে। যারা গণিকাদের থেকে সেবা নিয়ে তাদের ন্যায্য পাওনা দেয়নি তাদের জরিমানার কথা। রাজারাজড়ার সম্পদের মধ্যে গণিকারাও সম্পন্নতার এক একক ছিল সে কথাও শুনিয়েছে। মধুবনী মহিলাটি অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে যেসব কথা বলার সেসবই বলেছে। পরিশেষে বক্তব্যের ইতি টানতে গিয়ে মহিলাটি কেন জানি না বলেছিলো, "এখানেও খেলা হবে"। বয়সে পৌঁছবে তো সবাই। তাহলে এখানে বিশেষ কী?
কাশ্মীর থেকে মলয়ের কফিন পৌঁছালো। নিথর মধুবনী মহিলাটি। মনে পড়ে আকাশ বাতাস সাক্ষী করে তাদের গোপন বিশেষ রূপে বহন। বাহক হৃদয় আর যাবতীয় দুই শরীরের অলিগলি সুড়ঙ্গ। সেবক ছেলেটি এসে সান্ত্বনা দিতে চায়। নানা কথা বলে অবিনশ্বরতার। মধুবনী মহিলাটি কেবল বলে তাদের স্বপ্নগুলোর পরিণতি না পাওয়া পরিকল্পনাদের কথা। খবর পেয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে দিন গুজরান সেই মহিলারাও আসে। মধুবনী মহিলাকে জড়িয়ে নেয় আশ্লেষে।
নমিতার মেয়েকে সে স্কুলে পড়াতে চায়, চম্পির কচি ছেলেটাকে সে পোষ্য নিতে অনুরোধ করে, মঙ্গলার মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী কীভাবে কী হবে জানতে চায় মধুবনী মহিলাটির কাছে। বুড়ি কমলা শুধু নীরবে চোখের জল মুছে যাচ্ছিলো আঁচলে। মধুবনী মহিলা এবার ওর দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে কিছু বলে উঠলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন