কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫ |
শূন্যপুর ৩
প্রথমে দুটো ইঁট। তার উপর আড়াআড়ি আরও দুটো।
তার
উপর আবার সোজা দুই। আড়ে দুই। ইঁটের উপর ইঁট চাপানো শেফালি বানুর মাথায়। ক্যামেরা মুখে জুম ইন করে। বোকা হাসি।
-তোমার নাম আছে লিস্টে?
মাথা
নাড়ে।
-একাত্তরে
তো জন্মাওনি। বয়স কত?
আবার
মাথা নাড়ে। আবার বোকা হাসি।
তারপর
বলে, বাইশ। হয়ত৷
-বার্থ
সার্টিফিকেট আছে?
-নাঃ।
মা করায়নি।
-মায়ের
নাম?
-খয়েরি
বিবি।
আঙুল
তুলে দেখায়৷
অদূরে
মা-ও ইঁট তুলছে৷ সোজা দুই। আড়ে দুই৷ আবার সোজা
দুই…
ওপারে
চা বাগানের গায়ে ছায়াগাছগুলো অন্ধকার ঢালছে একটু একটু করে।
এইবার কাজ শেষ হবে আজকের মতো। খবরওয়ালা ফিরে যাবে শহরে। রাবার গাছের সারির ভেতর দিয়ে যে পথ গেছে, সেখান দিয়ে যাবে। তার আগে জেনে যাবে, লিস্টে খয়েরির নাম আছে কিনা। ভালো স্টোরি দাঁড়াবে।
- নেই।
-স্বামীর?
-স্বামী
ছেড়ে গ্যাছে। জোড়হাটে দোকান দিছে বহুদিন। বিয়েও করছে।
খয়েরি মুর্শিদাবাদ ফিরে যায়নি। যেখানে জোগাড়ের কাজ করতে গিয়ে শেখ মুস্তাক তাকে বিয়ে করে এনেছিল। পেটের মেয়ে শেফালি। সতের বছরে নাগর জুটিয়ে পালালো। উনিশে বাড়ি ফিরল। তারপর আর বিয়ে হল না।
-নিজের হাতে বানাচ্ছ, তোমাদেরও থাকতে হবে না কি এই ক্যাম্পে?
-কাইজ
না করলে খাব কী?
টাকা তোলার ডাক আসে। ক্যাশিয়ার টেবিল পাতে। ঝপাঝপ স্টিলের বাক্সে একশ- দুশ- পঞ্চাশ- কুড়ি- দশ ও হরেক খুচরো ভাগ করে। নাম ডাকে।
-অনেক লোকই দুবেলা কাজ চাইতে আসে। তাদেরও নাম নাই লিস্টে।
ক্যাশিয়ার
বলে।
টাকা
নিয়ে ফিরছে খয়েরি আর শেফালি।
কাফনের পয়সা জমাতেন অবশ্য ভারতাধিপতি ঔরঙ্গজেবও, খবরওয়ালা ভাবে। এ টাকা জমানোর নয়। দিনের খোরাকি শুধু জোগাড় হবে।
সাড়ে তিন হাত মাটির পেলে, তবে তো গোরের বিলাসিতা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন