কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৫ |
কানাগলি
অঞ্জু পেয়ারা গাছ বেয়ে উঠেছে। ওর পরনে সালোয়ার কামিজ। দুপাশে বিনুনি করা চুল। আর চুল সব সাদা। মুখটাও বুড়ি বুড়ি। পরক্ষণেই বকুলানন্দ দেখল অঞ্জু ফলসাগাছ বেয়েও উঠে পড়েছে। অঞ্জুর পা দামড়াগোছের নয়। নরম গোলাপি পা। বেড়ালের থাবার মতো পায়ের তলাটা। অঞ্জুকে শেষ দেখেছিলাম পিয়ালিগ্ৰাম স্টেশনে। অঝোর কাঁদছে পেয়ারা গাছে হেলান দিয়ে। ফাইলে কী আছে জিজ্ঞাসা করাতে বলেছিল সারাজীবনের ভুল।
হল্টসমৃদ্ধ স্টেশনগুলো পেরোতে পেরোতে ওকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে ও মনের মানুষকে খুঁজতে বেরিয়েছে। কোথায় যেন ছিল কোন গ্ৰামে কি শহরে সেটা আবছা মনে পড়ে। প্রতি রাতেই নাকি সে সব শহরের রাস্তায় শিম্পাঞ্জিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দাঁত কিড়মিড় করছেন। সে সময়ে মনে পড়ে যায় বাবার রুদ্রমূর্তির দৃশ্য। মাকে গলা টিপে মেরে ফেলতো আরেকটু হলে। মা অজ্ঞান হয়ে গেছিল।
অঞ্জুর বিয়েটা ছিল পরিস্থিতির শিকার। জীবনটাও ছিল একেবারে কম্পালসারি অংকের মতো। স্বামীকে বাইসনের সঙ্গে তুলনা দিলেই ভালো হয়। এই অঞ্জু পড়বি তো পড় এক কানাগলির প্রেমে পড়ে গেল। কোথাকার আম জাম বাগান ঘেরা এক আশ্রমে পঞ্চাশোর্ধ এই বুড়ির স্থান হয়েছে জামিলের সহযোগিতায়।
অঞ্জু বলল : জামিলের তো এই ট্রেনেই থাকার কথা। বলা ছিল প্রথম দিকের দ্বিতীয় কামরায়। উঠে দেখি জামিল সিটে বসে আছে। সহযাত্রীদের সঙ্গে কী একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া করছে।
তবে যে জামিল এসেছিল সে তরুণ। সঙ্গীতের সঙ্গে জামিল আর অঞ্জুকে আলাদা করা যেত না। এই হল অঞ্জুইমন আর এই হল জামিলবেহাগ বলে কতবার আমিই হেসে উঠেছি। অঞ্জু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে চারক্লাস পাস দেবার পর তার মাথায় লেখার ভূত চাপায় একটা খাতা ভর্তি করে বাংলা গান লিখেছিল।
স্টেশন সংলগ্ন পেয়ারাগাছ আর ফলসাগাছ তাকে সব ভুলিয়ে দিয়েছে। জামিলের কাছে যাবি না অঞ্জু? না কানাগলির কাছে যাব না। এই স্টেশনেই গুরুকূল থেকে ফেরার পথে কত চুমোচুমি... দূরের স্টেশন থেকে খবর আসত মদন আসছে... বলতে বলতে অঞ্জু বালিকার মতো ফলসাগাছে উঠে পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন