রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

পৃথা কুণ্ডু

 

অর্বাচীনের রবিযাপন (পর্ব – ৫)





একটা সময় ছিল, এই ধরুন বছর কুড়ি আগেও তার রেশ চোখে পড়ত-- যখন ‘শ্যামা, ‘চিত্রাঙ্গদা, ‘চণ্ডালিকা- এদের দেখা পাওয়া যেত পাড়ায় পাড়ায়। মানে পাড়ার ক্লাবে বা নাচ-গানের স্কুলের ফাংশনে যারা এইসব চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেত, তাদের আসল নামের বদলে চালু হয়ে যেত চরিত্রের নামগুলোই। অনেক অনামী মফস্বলের সাধারণ স্কুলেও ক্লাস নাইন-টেনে সৈয়দ মুজতবা আলি সাহেবের ‘আমি তো পয়তাল্লিশ নম্বরের কয়েদির কথা পড়াতে গিয়ে প্রায় অবধারিত ছিল শ্যামার কোটালের রেফারেন্স টেনে আনা- মাস্টারমশাই বা দিদিমণি বলে উঠতেন- “এই যে নির্দোষ লোকটিকে ধরে আনা হল, একজন অপরাধী খাড়া করতে না পারলে প্রশাসনের ব্যর্থতা ধরা পড়ে যাবে, এই ব্যাপারটার সঙ্গে তুলনা করা যায়- ‘চোর চাই যে করেই হোক... নইলে মোদের যাবে মান ফার্স্ট থেকে শুরু করে লাস্ট বেঞ্চের ছেলেমেয়েরা-- সবাই বুঝে ফেলত মুহূর্তে। বিশেষ করে লাস্ট বেঞ্চের ছেলেগুলো-- কোটালের রোলের জন্য ওদের মধ্যেই কাড়াকাড়িটা হত কিনা! তেজি স্বাধীনচেতা মেয়ে বললেই মনে পড়ত চিত্রাঙ্গদার কথা(সেই ‘দাদার কীর্তির সময় থেকেই), আর ভালবাসার জন্য আত্মত্যাগ বললেই উত্তীয়। সাধারণের রবিনামচার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল এইসব নৃত্যনাট্য।

ভালো নাচ-জানা যে বন্ধুটি বরাবর নায়িকার রোলে নামত, সে স্কুল ছাড়ার আগে একবার মজার ছলেই দুঃখ করে বলেছিল, “ধুর, এতবার স্টেজে নামলাম, একটা ভাল নায়ক পেলাম না রে। আনন্দর তো জল খাওয়া ছাড়া কিছু করারই নেই, অর্জুনটা তো আমার(মানে চিত্রাঙ্গদার)পাশে দাঁড়াবার যোগ্যই নয়, আর বজ্রসেন তো লাথি মেরে চলেই গেল। রসিকতা বাদ দিয়ে ভাবলেও কথাটা নেহাত উড়িয়ে দেবার মত নয়। নৃত্যনাট্যে বরাবর তিন কন্যেরই দাপট, নায়কদের দিকে তেমন নজর পড়ে না। অর্জুনকে নিয়ে তো আমরা অর্বাচীনের দল রীতিমত হাসাহাসি করতাম এককালে, “আহা রে, কি আমার ব্রহ্মচারী, ব্রতধারী এলেন! যেই না দেখল রূপ বদলে সুন্দরী হয়ে এসেছে, তখন ‘লহো পৌরুষগর্ব, লহো আমার সর্ব!’ বিরক্তিও লাগত- সুরূপার সঙ্গে কদিন ঘুরেটুরে যখন আবার ক্লান্তি আসে, তখন তাকেই জিজ্ঞেস করে চিত্রাঙ্গদার ব্যাপারে, “শুনি সিংহাসনা যেন সে সিংহবাহিনী/জান যদি বল প্রিয়ে, বল তার কথা। এ কেমন নায়ক রে ভাই, কি যে চায় নিজেই জানে না!

আসলে স্টেজে ‘চিত্রাঙ্গদা দেখার সময় চোখ আর কান আলাদা হয়ে যায়, মন ভেবে পায় না কার সাথে যাবে। পরে যখন শুধু এইচএমভির ক্যাসেট চালিয়ে শুনেছি একা একা, মনে হয়েছে, অর্জুনের ওপর এই বিরক্তি আসে বলেই না চিত্রাঙ্গদার মহিমা আরও বেশি করে ফুটে ওঠে! স্বাভাবিকের চেয়ে খানিক নিচু স্কেলে গেয়ে, সুরে আর অভিব্যক্তিতে এই আণ্ডারঅ্যাক্টিং ধরে রাখা কী যে কঠিন, তা যদি অর্বাচীন প্রথমেই বুঝে যেত, সে কি আর অর্বাচীন থাকত? স্রষ্টার পক্ষপাত যার ওপর, সেই চিত্রাঙ্গদার মান তো রাখতে হবে, আর অর্বাচীনের না-বোঝার সম্মান রাখার দায়ও বড় কম নয়।



তবু তোমায় ‘নায়ক ভাবতে পারিনি, অর্জুন। চিত্রাঙ্গদার দীপ্তির পাশে তো নয়ই। হয়ত জেনেবুঝেই তুমি গুটিয়ে থেকেছ কিছুটা। আর আনন্দ? জানি, দুটো গানেই তুমি যা করার করে দিয়েছ, “জল দাও আমায় জল দাও আর “যে মানব আমি সেই মানব তুমি কন্যা বলে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছ, চণ্ডালিনীর কূপ হয়েছে অকূল সমুদ্দুর- তবু তোমাকে টেনে আনার পর সে-ই পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়তে হয়, তুমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আশীর্বাদ করতে থাক, পর্দা পড়ে যায়। তুমি প্রভু হয়েই থেকে যাও, প্রিয় হতে পারো না।

তাসের দেশ এমনি ভাল লাগলেও সেভাবে দাগ কাটেনি কখনও- আর ‘মায়ার খেলাতেও দুই নায়িকার প্রাধান্য। ‘বাল্মীকিপ্রতিভায় নায়ক সবটা জুড়ে আছেন অবশ্যই, কিন্তু দস্যুদলের আদিম হুল্লোড় আর খানিক কমেডি-ভরা জমাটি নাটকের পাশে বাল্মীকির গান যেন বড় বেশি সূক্ষ্ম মনে হয়। ‘অমানিশা আজিকে, পূজা দেব কালীকে, এমনকি ‘নিয়ে আয় কৃপাণ-এ্রর সুরেও এত নরম কারুকাজ! ‘এ কেমন হল মন আমার বা ‘থাম থাম কি করিবি না হয় ঠিক আছে, কিন্তু প্রথমদিকেও তো রত্নাকরের গানের মধ্যে সেভাবে দস্যু-সর্দারের মেজাজ ফোটে না। আসলে অল্প বয়সের লেখা, সদ্য বিলেত থেকে অপেরা-ধাঁচের সুরের আমেজ নিয়ে ফিরেছেন, আর তখন নিজের গলাখানা ছিল চড়া আর মিষ্টি, তাই নিজে বাল্মীকি সেজে নামবেন বলে সেইমত সুর দিয়েছেন স্রষ্টা! অনেক বছর পরেও এইচএমভির রেকর্ডে বাল্মীকির চরিত্রে গেয়েছিলেন যিনি, নিজের গান শুনে নিজেই খুশি হতে পারেন নি, “ওটা রত্নাকর হয় নি...। ঠিকই তো। প্রথম থেকেই সরস্বতীর আশীর্বাদ পেয়ে গেলে কি আর রত্নাকর হওয়া যায়?

শ্যামা বহুবার দেখা, শোনা- অনেক ছোটবেলা থেকে। সেখানে নায়কত্বের অন্যতম দাবিদার হিসেবে উত্তীয় অনেকদিন ধরেই করুণ মুখে তাকিয়ে থেকেছে, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণটাও দিয়ে দিয়েছে- সে-দাবির কাছে মাঝে মাঝে বজ্রসেন দু এক-পা পিছিয়ে দাঁড়িয়েছে বৈকি। অবশ্য তার চরিত্রটাও তেমনি। উচ্চকিত নয়, মধ্যবিত্ত বণিক-ভদ্রলোক। আত্মসম্মানবোধ প্রবল, কিন্তু ক্ষমতা আছে যাদের হাতে, তাদের হুঙ্কারের সামনে দীনহীন অনুনয়ের সুরে ‘নই আমি নই চোর বলে মুহূর্তে সবটুকু সহানুভূতি টেনে নেয় নিজের ওপর। “অন্যায় অপবাদে আমারে ফেলো না ফাঁদে- মেরে ফেলো তাও ভাল, কিন্তু অপবাদ দিয়ো না। মধ্যবিত্তের মানসম্মান গেলে আর কী থাকে! শ্যামার করুণা নিতেও প্রথমদিকে তার বড় অস্বস্তি- “এ কি খেলা হে সুন্দরী,... কেন দাও অপমানদুখ, মোরে নিয়ে কেন, কেন, কেন এ কৌতুক।



উত্তীয় সরে যাবার পর বজ্রসেনের আসল টানাপোড়েন শুরু। এমনই মানুষ, যে প্রেমের মধ্যেও ঋণ আর শোধের হিসেব না কষে পারে না! এটা তার দোষ নয়, মূল্যবোধের একমাত্র সম্বল- সে ঋণী থাকবে না কিছুতেই। ‘প্রেমের জোয়ারের উচ্ছ্বাস কাটিয়ে বারবার জানতে চায়, “আমারে করেছ মুক্ত কি সম্পদ দিয়ে... জানি যদি, প্রিয়ে, শোধ দিব এ জীবন দিয়ে। শ্যামার অপরাধের কথা শুনে সে যখন ঘৃণায় মুখ  ফিরিয়ে নেয়, তখনও তার মধ্যে কাজ করে সেই ঋণ আর মূল্যের ভাবনা, “তোর পাপমূল্যে কেনা এ জীবন... ধিক নিঃশ্বাস মোর তোর কাছে ঋণী। কোথায় নিজের স্বচ্ছ, সৎ, নৈতিক জীবনে কালি লাগতে না দেবার আকুতি আর প্রেমিকার অপরাধকে ঘৃণা করতে চাওয়ার জ্বালায় জ্বলতে থাকা এই ভদ্রলোক, আর কোথায় পাগলাটে প্রেমিক উত্তীয়- “ন্যায় অন্যায় জানি নে জানি নে জানি নে... শুধু তোমারে জানি ওগো সুন্দরী বলে যে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারে! ঋণ, মূল্য- কথাগুলো সেও বলে (‘নেবে মোর প্রাণ ঋণ, ‘তার মূল্যের পরিমাণ), কিন্তু সে এমনই মিষ্টি করে, নিজেকে বিলিয়ে দেবার আবেগ মাখিয়ে বলা- যে সেগুলো তার মুখে নেহাত কথার কথা। অবশ্য যতই মায়া পড়ে যাক উত্তীয়র ওপর, ওকে শেষ পর্যন্ত ‘নায়ক ভাবা যায় না, কেমন যেন ভাই-ভাই মনে হয়, বলতে ইচ্ছে করে, “শ্যামা তোমার দাম দেয় নি তো কি হয়েছে ভাই, আমরা তো বুঝি!” তাহলে নায়ক বলব কাকে?

ভাবতে ভাবতে রাত আটটা বেজে যায়, আর ফাংশনে থাকা যাবে না, নৃত্যনাট্য চলছে চলুক। অগত্যা বয়স্ক অভিভাবকের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তাঁর গজগজানি কানে আসে, “কী সব নাটক! বাচ্চাদের সামনে এগুলো কেউ করায়!...ঠিক হয়েছে, মেয়েটার মার খাওয়াই উচিত!” তা উচিত, শ্যামা যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য অন্যায়, সন্দেহ নেই। কিন্তু অর্বাচীনের কেবলই মনে হতে থাকে, বজ্রসেনের শেষ গানটা শোনা হল না! ওই গানটা শুনলে কেমন যেন গুলিয়ে যায় সব, এতক্ষণের হিসেবি লোকটার গলায় ‘ক্ষমিতে পারিলাম না বলার যন্ত্রণা, হাহাকার চারিয়ে যায় শ্রোতার মনের মধ্যেও। আর বাড়ি ফিরে, রাতে বিছানায় শুয়ে অর্বাচীন উত্তীয়র কাছে শুনে শুনে তোলা গানটা গুনগুনিয়ে গেয়ে ফেলে তার স্বপ্নের নায়কের উদ্দেশে- “আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান। না, বজ্রসেন নয় কিন্তু। অনেক পরে জেনেছে অর্বাচীন, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি বলেছিলেন, তাঁর সহশিল্পীকে ‘বজ্রসেন হয়ে উঠতে হয় নি, তিনি নিজেই যেন বজ্রসেনঅন্তত সেই মঞ্চ বা স্টুডিয়োর পরিসরে, সেই গীতিনাট্য-পরিবেশে। কথাটা মেনে নিতে আপত্তি নেই, ‘শ্যামার নায়ক তিনি হতেই পারেন, তবে অর্বাচীনের নায়ক খুঁজে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ‘শাপমোচন পর্যন্ত।

তার নাম অরুণেশ্বর। শাপভ্রষ্ট গন্ধর্ব। বাইরের চেহারা শ্রীহীন, অসুন্দর। তার সব গেছে, শুধু গানটুকু ছাড়া। ‘ভুলো না- ভুলো না- ভুলো না-’ বলে সে যখন আর্তি জানায়, ‘সেদিন দুজনের মত একটা ‘হালকা প্রেম-পর্যায়ের গানও(স্বয়ং কবি এমন ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন!) কেমন ‘পূজার কাছাকাছি চলে আসে ‘কি জানি কি মহালগনে  উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে! লজ্জায় সে পূর্বজন্মের প্রিয়ার সামনে এসে দাঁড়াতে পারে না, তার বাইরের রূপ দেখে যদি সে ঘৃণা করে! সে গায়, “বাহিরে ভুল হানবে যখন, অন্তরে ভুল ভাঙবে কি?” কমলিকা সামনাসামনি দেখার জন্য জোর করলে বলে, “আমার গানেই তুমি আমাকে দেখ। আগে দেখে নাও অন্তরে, বাইরে দেখবার দিন আসবে তার পরে। নইলে ভুল হবে, খেলা যাবে ভেঙে। শুধু বাইরে থেকে দেখতে গেলে যে কতবড় ভুল হতে পারে, কমলিকা বোঝেনি আগে। সে হল রানি, তার ভুল করা সাজে। অর্বাচীনের সে সাধ্য কোথায়? বরং সে-ই তো নিজের তুচ্ছতা, অযোগ্যতা আর নিকৃষ্টতার বোঝা, আর অন্যের ভুল বোঝার দায় মাথায় নিয়ে পড়ে আছে। যে কিনা তারই হয়ে এমন অতল স্নিগ্ধতায় বলে ওঠে- ‘অসুন্দরের পরম বেদনায় সুন্দরের আহবান।... মর্ত্যের অভিশাপে স্বর্গের করুণা যখন নামে, তখনই তো সুন্দরের আবির্ভাব, তাকে ভুল বোঝার ক্ষমতা তার নেই।



জীবনটাই ভুল করার আর ভুল ভাঙার, গরমিল থেকে মিল খোঁজার। অরুণেশ্বর মিলিয়ে দিয়েছে ‘রাজা আর ‘অরূপরতনকে, গানে আর সংলাপে- যে সংলাপকে সুর থেকে আলাদা করা যায় না। বারে বারে শিখিয়েছে, ভুলের ভয়ে বীণা থামাতে নেই।  নিজের কাজটা করে যেতে হবে, সুর তুলে যেতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে, শুনতে হবে কান পেতে- “কার পদ-পরশন আশা/ তৃণে তৃণে অর্পিল ভাষা! সে অপেক্ষার শেষ এ পৃথিবীতে, এ জন্মে নাই বা হল, অনন্তে গিয়েও হতে পারে। আর তখন যদি কেউ ভুল-ভাঙানো প্রদীপ নিয়ে এসে দাঁড়ায় সামনে, তার দ্বিধা, সংকোচ মুছিয়ে দিয়ে বলতে হবে জলভরা মেঘের গভীর আন্তরিকতায়- ‘ভয় কোরো না। উল্টোদিকের মানুষটাকে যেন হার মেনে পায়ের কাছে বসতে না হয়, সে দাঁড়াক তোমার মুখোমুখি, সত্য হোক নিজের অধিকারে নিরাবরণ। তুমি যা, তুমি তা-ই।

কিন্তু ক্ষতের দাগ, ভুলের ভার আর অভিমান? সে কি এত সহজে যায়? অরুণেশ্বর কিন্তু দেখিয়েছে, শিল্পীর অভিমান না থাকাটাই তার সবচেয়ে বড় অভিমান। আর অর্বাচীনেরও তাই। এই একটা জায়গায় এসে তুচ্ছ আর মহতের ভেদ যায় ঘুচে, সুন্দর-অসুন্দর- আপেক্ষিক শব্দগুলো যায় হারিয়ে। জেগে থাকে শুধু একটাই কথা, ‘বড় বিস্ময় লাগে

 

 


৪টি মন্তব্য:

  1. যাঁর উদ্দেশে লেখা, লেখিকাকে তাঁরই প্রথম প্রকাশিত গানের কথা স্মরণ করাইঃ
    জানিতে যদি গো তুমি, পাষাণে কী ব্যথা আছে!
    গোপন বাণীটি তারই তোমার পরশ যাচে।
    কুসুমে ভরিয়া ডালা, বৃথাই গাঁথিলে মালা,
    প্রণাম করিলে শুধু, এলে না তো আরও কাছে!

    উত্তরমুছুন
  2. অদ্ভুত সুন্দর লিখেছেন, বিরূপ সমালোচনার কোন অবকাশ রাখেননি। তবু বলি, রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্যগুলো মূলতঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি আর শান্তিনিকেতনের নাচিয়ে মেয়েদের কথা ভেবেই, তাই স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ-প্রাধান্য আসেনি। শাপমোচন কিছুটা পুরনো লেখা গান সাজিয়ে আর তাসের দেশ 'একটি আষাঢ়ে গল্প' ভেঙে তৈরি করা, তাদের কথা স্বতন্ত্র, যদিও শ্যামা পরিশোধ কবিতা থেকে গড়ে তোলা। মায়ার খেলা তো মেয়েদের অভিনয়ের জন্যেই বিশেষ করে লেখা। এগুলোতে পৌরুষ তেমনভাবে সত্যিই আশা করা যায় না। যদি রক্তকরবী এভাবে ভেঙে গড়তেন (নন্দিনীর বলিষ্ঠ চরিত্র মাথায় রেখেই বলছি), বা নায়িকাহীন অচলায়তন, তাহলে হয়ত সত্যিকারের পুরুষালি (রোম্যান্টিক নয়) নায়ক পেতাম কিছু। অনেক শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  3. আমার মনে হয় লেখক এখানে ঠিক প্রচলিত অর্থে 'পুরুষ'-সন্ধান করছেন না। তিনি 'নায়ক' খুজছেন, যে 'নায়ক'-এর অর্থ আমাদের যাপনে, জীবনে, সংস্কৃতিতে অনেক গভীরে, অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের পৃথিবীতে তেমন নায়কের বড়ই অভাব।... এখানে Artist as hero-কে খোঁজা হয়েছে, যার মধ্যে গীতাভিনয়ের সার্থক শিল্পী মিশে যান অনেক সময়ই।

    উত্তরমুছুন