কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৪ |
অভিনেত্রী
জিনাতকে তো চেনেন আপনারা? নিশ্চয়ই চেনেন।
জিনাত আমন। বলিউডের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা-অভিনেত্রী। আমি অবশ্য অন্য এক জিনাতের কথা
বলছি। জিনাত বেগম। তাকেও আপনারা সবাই চেনেন। সিনেমা না করলেও এই শহরে একদা দাপটের সঙ্গে
অনেক অভিনয় করেছে নাটকে। যে কোনো নাটকে মুখ্য নারীচরিত্র রূপায়ণে জিনাত বেগমকেই বেছে
নেওয়া হতো। জিনাত অবশ্য প্রথম থেকেই নামের সঙ্গে ‘বেগম’ ব্যবহার করত না। পিতৃদত্ত পদবী
‘খান’ ব্যবহার করত। তবে এটা আমার মনে আছে যে,
অবিবাহিত থাকাকালীনই সে তার নামের সঙ্গে জুড়েছিল
‘বেগম’। সবাই অবাক। একী! বাদশার খোঁজ নেই, আর বেগম বনে গেল রাতারাতি! বিয়ে না করে কোনো
মেয়ে বেগম হয় নাকি? হ্যাঁ হয়। জিনাত তা করে দেখিয়েছিল। আসলে সেবছর শহরের প্রখ্যাত ড্রামাক্লাব
‘সৃজন’ মঞ্চস্থ করেছিল বিমল মিত্রের ‘বেগম
মেরী বিশ্বাস’। আর সেই নাটকে বেগমের চরিত্রটি মঞ্চস্থ করেছিল জিনাত। অসাধারণ অভিনয়ে
মঞ্চ কাঁপিয়ে দিয়েছিল জিনাত। অনেকে বলেন, জিনাত নাকি ফাটিয়ে দিয়েছিল। আর এর ঠিক পরেই
জিনাত তার নামের পাশে জুড়ে দিল ‘বেগম’।
আমরা আশা করেছিলাম, অদূর ভবিষ্যতে জিনাত
কলকাতার নাট্যমঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাবে। জিনাত সেই চেষ্টাও করেছিল। কলকাতার
গ্রুপ থিয়েটারে যোগদান করেছিল। কিছু কিছু নাটকে অভিনয়ও করেছিল। কিন্তু যে স্বপ্ন চোখে
নিয়ে কলকাতায় এসেছিল, ক্রমশ তা ফিকে হতে শুরু করল। নাটকের মুখ্য নারীচরিত্রে অভিনয়ের
সুযোগ আর সেভাবে পেল না। আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকল নাটকজীবন থেকে।
আর ঠিক এখান থেকেই শুরু হলো জিনাত বেগমের
আসল গল্প। নাটকের মঞ্চ থেকে অনেক দূরে সংসারের আজব মঞ্চে। নাটকেরই এক সহকর্মী তাকে
জানালো, তার এক পরিচিতজনের একজন বউ প্রয়োজন। সত্যিকারের বউ নয়, নকল বউ। সেই ব্যক্তির
মানে অপরেশের মায়ের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোনোদিন তিনি মারা যেতে পারেন। বাবা
আগেই মারা গেছেন। সংসারে আর কেউ নেই। অপরেশও সত্যি বিয়ে করতে অপারগ তার শারীরিক কিছু
অসুবিধের কারণে। অথচ মা জেদ ধরে বসেছেন, তিনি
অবিলম্বে পুত্রবধূর মুখ দেখতে চান। এদিকে অপরেশ তার অসুবিধের কথা মা’কে জানাতেও পারছে
না। কিন্তু মৃত্যুর আগে মায়ের শেষ ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে চায় না অপরেশ। তাই তার একটা বউ
চাই, নকল বউ। মা যে ক’দিন বেঁচে থাকবেন, সেই ক’দিনের জন্য। এই কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে
সে একটা বিরাট অঙ্কের টাকা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
জিনাত রীতিমতো রোমাঞ্চিত হলো এই কাজের
প্রস্তাব পেয়ে। সে রাজী হয়ে গেল। প্রথমত হিউম্যানিটি গ্রাউন্ড। এক মৃত্যুপথযাত্রী মা’কে
জীবনের শেষ ক’টাদিন শান্তিতে রাখা। দ্বিতীয়ত টাকার অঙ্কটাও যথেষ্ঠ লোভনীয়। তৃতীয়ত সম্পর্কটা
যৌনতাবর্জিত। এবং চতুর্থত এটা এমন একটা চ্যালেঞ্জ, যেখানে নকল বউয়ের রোলটা আসল বউয়ের
মতো অভিনীত হবে। মা এই আশ্বাসে মারা যাবেন যে, তিনি তাঁর আদরের ছেলেকে ভাসিয়ে দিয়ে
বিদায় নিচ্ছেন না, বরং ছেলের জন্য গুছিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন একটা সংসার, একটা নম্র শিক্ষিত
সুন্দরী বউ।
বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅভিনন্দন।