রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

অহনা তাঁতী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৪


অপুর ঘরকন্না 

 

‘আমরা নারী, আমরা পারি’।

বিজ্ঞাপনটা শুনে টিভি বন্ধ করে দিল অপু। আর একটু মুড়ি নিলে ভালো হতো। চানাচুরটা শেষ হয়ে গেছে। কাল বাজার যাওয়ার সময় মনে ছিল না। একটা জিনিসের জন্যে আজ আবার বাজার যেতে হবে।

তেলমাখা মুড়ি শেষ করে স্নানে গেল অপু। দরজা বন্ধ হতেই জানালার কার্নিশে বসা পায়রাটা উড়ে গেল। দশ মিনিট পর বেরিয়ে ভেজা চুল গামছায় জড়িয়ে রান্নাঘরে ঢুকল অপু। সব্জির র‍্যাক থেকে তিনটে আলু, একটা পেঁয়াজ, কিছু সবজি নিয়ে পিঁড়েটা টেনে বঁটিতে কাটতে বসল।

কার্নিশে দুটো পায়রা উড়ে এসে বসল। সামনের রাস্তায় একটা গাড়ি হর্ন মারতে মারতে চলে গেল। সবজি কাটা শেষ হতে একটা কড়া ধুয়ে অভেনে বসাল। তরকারিটা চাপাতে না চাপাতেই কলিংবেল বেজে উঠল।

সোফা থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলল। দুধওয়ালা। দুধের প্যাকেটটা নিয়ে সিঙ্কের কাছে রাখে। ওড়নাটা সোফায় রেখে ঠাকুরের সিংহাসনের দিকে এগিয়ে আসে। ঠাকুরকে জল ফল দিয়ে রান্নাটা কতদূর এগোল দেখে। চাল  ধুয়ে ভাত বসিয়ে দেয়। কাল রাতের বাসনগুলো এখনও সিঙ্কে পড়ে আছে। অপু বাসন মাজতে শুরু করে।

নিচের ফ্ল্যাটের রাজু সাইকেল শিখছে। বারবার ঘণ্টি বাজাচ্ছে। বাসনগুলো মেজে, তরকারিটা নামিয়ে, আর একটা তরকারি চাপিয়ে ঘর মুছতে চলে যায় অপু।

-   আমার খাবারটা দিবি তো?

-   আসছি বাবা।

ভাতের ফ্যান ঝেড়ে একটা আলু আর একটু ভাত মেখে বাবাকে খাইয়ে দিতে শুরু করে।

-   আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে! আমার খাবারটা দিলেই না, ওই বুড়োটাকে নিয়ে পড়েছ।

-   বাবার কি আর বোঝার ক্ষমতা আছে বল?

-   ঘাড় ধরে বোঝাও ঠিক বুঝবে। আজ খাবো না বাড়িতে। শোন আমার... দরজাটা জোর শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায়।

আজ ভাতটা ভালো হয়েছে।

হাসে অপু।

বাবাকে খাইয়ে পায়রাদের গম দেয় অপু। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের একসাথে খাওয়া দেখে। চুলের গামছা খুলে বারান্দায় চুল শুকাতে যায় আর ভাবে, ডিভোর্সের পর চুল শুকানোর মজাই আলাদা


২টি মন্তব্য: