কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৩ |
শূন্যপুর
-গেল তো গেল। ফিরার নাম নাই।
ইঁট
গাঁথা বারান্দা। সিমেন্ট পড়েনি৷ ইঁটে শ্যাওলা ধরেছে। বুড়ি গজগজ করে।
-ও
বাবাগো! এত চিন্তা সয় ? অ মকবুল! কম্পিউটার দুকান থেকে আইলে? রাধুরে দ্যাখলে? আমার
নাম?
-জন্মনথি
নাই ত? বাপের নথি কিছু? কত বুড়ি রিজেক্ট গেল!
আশা কম।
দাঁত
কিড়মিড় করে বুড়ি।
-রাধুরে
দেখস কি?
-দেখি
নাই।
আজ এনআরসি-র লিস্টি বেরুনোর দিন। গত লিস্টিতে বুড়ি বাদ গেল। কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি বিস্তর তারপর। আজ ফাইনাল লিস্টি। দশ টাকা দিলে কম্পিউটার দোকানের ছেলে। ভাসুরপো রাধু বলল, দেখে এসে জানাবে। সে গেল কই?
গলা
ছেড়ে কান্না আসে বুড়ির।
-নিয়া
গ্যালে না কেন আমারে? একা ফেলি গ্যালে?
রাগ সব পড়ে এক মৃত মানুষের স্মৃতির পরে। কুঁয়োপাড়ে সে লোক পড়ে যাচ্ছিল যখন, বুকে চাপ চাপ ব্যথা বলছিল। কেউ কখনও ট্রেনে জানলার ধারের সিট ছাড়েনি মালতীকে, ওই লোক ছাড়া। ভাই-দাদা-বাবাও না। বাপের-বাড়ি যায়নি বছর ত্রিশ। মৃত লোকটার বুকের ওম খোঁজে ষাট বছরের মালতী। ভয় করে। বুকে চাপ চাপ ব্যথা।
রাধু ফেরে না। মালতী কুয়োর দিকে এগোয়। থির জল। অই লোকের বুকে শান্তি ছিল। আর শান্তি জলে।
লিস্টে জেঠির নাম আছে দেখে, রাধু দু’দণ্ড শান্তি দিতে গেছিল জবাকে। জবার নাম নেই। উকিল ধরা, ট্রাইবুনাল। খরচ অনেক। জেঠিকে বললে, গহনাগুলো দেবে?
কুয়োতলার জটলা দেখে সে ঘাবড়ায়। সাইকেল দাঁড় করায়। কোমরে রশি, লুঙ্গি গুটিয়ে কাছা মারা দুজন লোক নামব নামব করছে। আধঘণ্টাটাক থ মেরে বসে থাকে রাধু। পুলিশ আসে। দেহ নিয়ে যায়।
বেলা গড়ালে রাধু উঠে দাঁড়ায়। শিকলি খোলে। একজোড়া বালা আর একখানি সরু হার। বুড়ি প্রাণে ধরে রাখত। জ্যাঠার দেওয়া। কে জানে কোথায়! খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন