সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কাজী জহিরুল ইসলাম

 

কবিতার কালিমাটি ১০৯


আমাকে গাছ ভেবে

 

দিনের বেলা আমি রাতের কথা লিখি

রাত্রি গাঢ় হলে আলোর খেলা শিখি

আমাকে গাছ ভেবে নারীরা ঢালে শীত

পত্র ঝরে গেলে নগ্ন দেহ জুড়ে বাজায় সঙ্গীত।

 

ভেবেছি মনে মনে গ্রীষ্মকাল এলে

আমার সারা দেহে গজাবে পত্রালি

ফাটল খুলে আমি দিয়েছি আশ্রয় কাতর পাখিদের

অথচ ওরা আজ

বুকের বল্কলে ঠোঁটের ছুরি হানে

বৈরী প্রকৃতিও নিচ্ছে প্রতিশোধ

গ্রীষ্ম ভরা কালে এখনো পাতা ঝরে

দেহের বল্কলে কালের বলিরেখা।

 

কুঁকড়ে আছি শীতে, বাতাস উত্তুরে  

হাতের কাছে এসে গ্রীষ্ম ফিরে যায়

থাকে সে দূরে দূরে।

 

মাতৃভূমি

 

হাঁসেরা ছবি আঁকে দিঘির কালো জলে

কবিতা লেখে পাখি গাছের বল্কলে

আকাশে উড়ে উড়ে কী লেখে চাতকেরা

যে পাখি উড়ে গেল হবে কি ঘরে ফেরা?

 

কাষ্ঠ-লাঙলের রূপালি ফলা দিয়ে

শ্রেষ্ঠ কবিতাটি কৃষক লেখে রোজ

মাটির খাতা খুলে।

বর্ষা ঋতু এলে মেঘের ঘন কালো

পৃষ্ঠা জুড়ে লেখে শুভ্র বলাকারা

আকাশে দুলে দুলে।

নান্দনিকতার চিত্রকল্পটি এভাবে লেখা হয়

বাংলা ভাষা জুড়ে অনাদিকাল ধরে।

শিখছি প্রতিদিন শিল্পকলা আমি

তোমার সারা দেহ নিত্য পাঠ করে।

 

তেরো'শ নদী-জল ছুটছে এঁকেবেকে

যে মহাকাব্যটি নদীরা লিখে রাখে

সূর্যসেন আর প্রীতিলতার দেশে,

তুমি কী পড়েছ তা প্রার্থনার সুরে

আবেগে দুলে দুলে গভীর ভালোবেসে?

 

সূর্য-প্রণামে ঘন্টাধ্বনি বাজে  

জোহর, মাগরেবে যে সুর ভেসে আসে

মিনার চূড়ো থেকে

সঙ্গীতের বীজ ওখানে প্রোথিত যে

তুমি কী ভুলে গেছ, শিল্পী হে নতুন?

ঘুঘুরা ডেকে ডেকে

নিরাক দুপুরের মগ্ন নীরবতা

ভাঙছে কোন রাগে কখনো ভেবেছ কী?

তেঁতুল, আম, কলা, বড়ুই গাছে গাছে

আমড়া, ভূতিজাম, চালতা, আমলকি

উপমা কবিতার ছড়ানো দেখো আছে।

 

কেওক্রাডং আর শৈলপ্রপাতে

চাকমা বালিকারা পাহাড়ে নেচে নেচে

তৈরি করে রোজ ছন্দ কবিতার

মাধবকুণ্ডতে ঝর্ণাকিশোরী গো

বইছে ছলছল দুলিয়ে অঙ্গ তার

সে-ই তো ছন্দ ও কাব্যালংকার।

 

মাতৃভূমি তুমি শ্রেষ্ঠ কবিতা হে

তোমার দেহ ঘেঁটে রত্ন করি খোঁজ

চোখের জলে আমি এ-দূর দেশে বসে

তোমাকে লিখি রোজ।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন