শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯২


‘আমি যে গান গেয়েছিলেম’ 

 

গান ভালোই গায় সমৃদ্ধি, কিন্তু কী যে হয়, মাঝে মাঝে গলাটা বেইমানি করে  বসে। কখনও বাঘের গর্জনের মতো গড়গড় শব্দ বেরিয়ে আসে, আবার কখনও স্বর বসে গিয়ে পেত্নীর শীৎকারের মতো ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ বের হয়। সমৃদ্ধি বুঝে উঠতে পারে না, যখন ভাল থাকে তখন তার কন্ঠস্বর অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও মধুর। অথচ সেই কন্ঠস্বর হঠাৎ হঠাৎ কেন এমন হঠকারিতা করে! সমৃদ্ধির গলায় লতা মঙ্গেশকর ততটা জমে না, বরং আশা ভোঁসলে সুপার্ব। সবাই তার কাছে শুনতে চায় আশা ভোঁসলের গান। তা সে কোনো ঘরোয়া পার্টিতে হোক অথবা কোনো হলের ফাংশানে। যারা তার গলায় আশার গান শুনে মুগ্ধ হয়, তারা বায়না ধরে, এবার একটা গীতা দত্ত গাও। গীতা দত্তর গান আগে গলায় তোলা ছিল না। জনগণের দাবিতে এখন বেশ কয়েকটা গীতা দত্তর গান তুলে নিয়েছে। কিন্তু ঝকমারি হচ্ছে সেই গলা। সরস্বতী পুজোর জলসায় গান গাওয়ার জন্য একমাস আগে বায়না দিয়ে রেখেছে বীণাপাণি ক্লাব। সমৃদ্ধি গান গাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। এমনকি সকালে পুজোর অঞ্জলি পর্যন্ত স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণে নিবেদন করেছে। হঠাৎ দুপুরের পর গলাটা ধপ করে বসে পড়ল। ব্যাস, কিচাইন! জলসার অনুষ্ঠান সঞ্চালিকা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন, আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় নির্ধারিত শিল্পীর পরিবর্তে এখন সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সুখ্যাতি সীনহা।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমৃদ্ধির সঙ্গে যে তবলাসঙ্গত করে, অংশুমালী, সে সমৃদ্ধি ছাড়া  আর কারও সঙ্গে বাজাতে রাজী হয় না ইদানিং। তার ধারণা সে এতটাই ভালো তবলা বাজায় যে, কোনো কন্ঠশিল্পীর গান গাওয়া ততটা ভালো না হলেও তবলা বাজিয়েই গানটা উৎরে দিতে পারে। আর ভালো কন্ঠশিল্পী হলে তো কথাই নেই। শ্রোতা ও দর্শকদের হাততালি আর থামতেই চায় না। সবাই স্বীকার করে,  অংশুমালী সত্যি সত্যিই খুব দক্ষ তবলাশিল্পী। কিন্তু যেদিন থেকে অংশুমালী সমৃদ্ধির প্রেমে পড়েছে, সেদিন থেকে মনে মনে পণ করে বসেছে, সমৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো শিল্পীর গানের সঙ্গে তবলাসঙ্গত করবে না। কেন করবে? অংশুমালী চায় না, তার সহযোগিতায় অন্য কোনো শিল্পী সমৃদ্ধিকে ছাপিয়ে যায়। গত পরপর দু’বছর বেঙ্গল ক্লাব আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রগীতি আর আধুনিক গানে সমৃদ্ধি প্রথম স্থান দখল করেছে। সমৃদ্ধির সঙ্গে  তবলা বাজিয়েছে অংশুমালী। কিন্তু এবছর গলার কারণেই সমৃদ্ধি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অংশুমালীও তবলা বাজায়নি।

কিন্তু কী যে করে সমৃদ্ধি! গলার যত্ন নেবার যতরকম পদ্ধতি আছে, সবকিছুই করে। অংশুমালীও তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। সেসবও ঠিকঠাক মেনে চলে। তবুও কেন যে বেরসিকের মতো বিগড়ে যায় গলা! সমৃদ্ধি বোঝে, তার গলা খারাপ হলে কতটা কষ্ট পায় অংশুমালী। কতটা অসহায় হয়ে পড়ে। অংশুমালীকে কষ্ট দিতে চায় না সমৃদ্ধি। অংশুমালী তাকে ভালোবাসে। সমৃদ্ধির মনে হয়, সে অংশুমালীর ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারছে না। একদিন অংশুমালীকে বলে, আমি গান গাওয়া ছেড়ে দিচ্ছি। তুমি সুখ্যাতির সঙ্গে বাজাও।  

 

 


1 টি মন্তব্য:

  1. বেশ ভালো লাগল কাজল। খুব ভালো। শেষটায় প্রেম,ভালোবাসার শব্দগুলোয় বিশ্বাস জাগানিয়া সুর। বিমল চক্রবর্তী,জামশেদপুর।

    উত্তরমুছুন