শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

আরতি চন্দ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯২


দিন বদলাবে

 

লোকটাকে দেখতাম গনগনে আগুনের আঁচের মতো গরম পিচগলা রাস্তায় শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল করতে। দেখতাম আগুনের গোলার মতো চোখদুটি নিয়ে সিমেন্ট কারখানার ভাঙা চিমনিতে পুড়ে যাওয়া মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার জন্য মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে।

আমিও শ্রমিকের ছেলে। উনি আমাদের বাড়িতে আসতেন লাল-চা খেতে। বিড়ির ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বাবার সঙ্গে গল্প করতেন, স্বপ্ন দেখাতেন – এমনটা আর বেশিদিন থাকার নয়। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার দিতেই হবে। দিন বদলাবে।

আমিও মন দিয়ে শুনতাম, স্বপ্ন দেখতাম দিন বদলানোর, খুঁজতাম অভাব অনাহার থেকে মুক্তির পথ। পেয়েও গেলাম একদিন। তবে সে পথ পিচগলা রাস্তায় খালিপায়ে আন্দোলনের পথ নয়। এ পথ ভিন্ন পথ। চলে এলাম নরম কার্পেটে মোড়া ড্রয়িংরুমে বিদেশি মদের বোতল আর দামি সিগারেটের ধোঁয়ায় ভরা বদ্ধ ঘরে তৈরি হলো প্ল্যান। তারপর আমার পকেট ভরে গেল মুঠো মুঠো টাকায়।

তারপর এক কাকভোরে দেশি পিস্তলের নিশানা ভেদ করল লোকটার হৃৎপিণ্ড। মাত্র একটা অস্ফূট আর্তনাদ – ‘মা গো!’

আমি এখন ভোরের তাজা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে পেরিয়ে এলাম সবুজ মাঠ। একটু দূরেই রেলওয়ে স্টেশন…  


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন