কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯২ |
একমুঠো রোদ্দুর
ইরাবতী রোদ্দুরগুলো কুড়িয়ে জড়ো করছিল মাঠের ওপর। কয়েকদিন আগেও গাছগুলোর ভরন্ত ছায়া পড়ত মাটির ওপর। এখন ডালের শুকনো শুকনো ছায়া। ছোটছোট ডালের টুকরো কুড়িয়ে সে জড়ো করছে। মা আর বাবা একটু দূরে ছোট গাছের শুকনো ডাল ভাঙছে। রান্নার কাঠ।
বড় হবার পর, এখন তার বয়স হয়েছে সাড়ে সাত বছর। দেড় বছরের বোন সারাক্ষণ তার পায়ে পায়ে হামা টানে। তার বাবা মাকে চিৎকার করে প্রশ্ন করেছিল, এটা মেয়ে কেমন করে হল, বল?
ইরাবতীর বোনের জন্মের আগে ছেলে হবার কথা ছিল। জন্মমাত্র কী করে সে মেয়ে হয়ে গেল, এটা কেউ বুঝতে পারে নি। এজন্যে হামা টানতে শেখার পর থেকে বাবা মা কেউ তাকে কোলে নেয় নি। বাবা মায়ের কাছ থেকে সরতে সরতে সে ইরাবতীর ছায়ার সাথে জুড়ে গেছে।
বোন বসে বসে শুকনো পাতাগুলো দু’হাতে বাজিয়ে যাচ্ছিল। পরনে তার ছোট হয়ে যাওয়া ছেঁড়া ফ্রক। পা পর্যন্ত ঢেকে যায়। নাকে হালকা সর্দির রেখা। দুটো পা দুদিকে বিছিয়ে ফ্রকের ওপর পাতাগুলো গুঁড়ো করে শব্দ শুনছিল। পাতা ভাঙার খচমচ আওয়াজ খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে আর দু’ হাত দিয়ে ভাঙা টুকরোগুলো ছড়িয়ে দেয় চারপাশে। শীতের রোদ এসে পড়েছে তার গায়ে। একটা রোদ্দুর গাছের পাতার সাথে উড়ে উড়ে নীচের দিকে নেমে আসছে। সেদিকে তাকিয়ে সে চেঁচিয়ে যায়, ওই ওই ওই!
পাতাটার
ওপর রোদ চিকচিক করছে। ইরাবতী পাতার নীচে ছুটতে থাকে।
তার
বাবা রাগে একটা শুকনো কাঠের টুকরো তার দিকে ছুঁড়ে দেয়। - কাজের সময় এতো খেলা কিসের
রে?
ইরাবতী সরে গিয়ে আঘাত এড়ায়। ডালটা কুড়িয়ে
জমানো ডালের দিকে এগোয়।
তার বোন ডালের ছায়া দু’ হাতের মুঠোয়
জড়িয়ে ধরে আধো স্বরে বলে, ছায়া, ছায়া।
ইরাবতী ডালটাকে জড়ো করা ডালের স্তুপের
ওপরে রাখতে রাখতে বলে, বোকা।
বোন মুঠিটা আলগা করে তার দিকে কিছু ছুঁড়ে
দিয়ে বলে, রোদ।
একমুঠো আলো সোজা ছিটকে এসে লাগে তার
মুখে। ইরাবতী আর তার বোনের হাসিতে উজ্জ্বল রোদ্দুর ঝরে পড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন