শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯২


দাঁড়িয়েই স্বপ্ন


লোকটা প্রতিদিন দুপুরবেলা বাড়ি ফেরে এক বাংলাদেশ সমান খিদে নিয়ে। বাড়ি ঢুকেই সে সোজা রান্নাঘরে ঢোকে। কোনো কাপড়চোপড় পাল্টানোর ধার ধারে না। জাস্ট হাতটা রান্নাঘরের বেসিনে ধুয়েই প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে। লোকটার খাবারের একটা প্যাটার্ন আছে। সে বসে খায় না। দাঁড়িয়ে খায়। খাবার সময় সে ফোন ধরবে না। ডানে বামে তাকাবে না। দাঁড়িয়ে এক নাগাড়ে খাবে ও স্বপ্ন দেখবে।


ঠিক এই সময়টাই তার স্বপ্ন দেখার সময়। এই সময়েই সে স্বপ্ন দেখবে বলে প্রস্তুতি নেয়, ভাবে। ঘুমের মাঝে স্বপ্ন তার কাছে জরুরি না। ভাত খেতে খেতে সে ডুব দেয় স্বপ্নের জগতে।
তার খাবার চলতে থাকে, মাথা নিচু। খেয়ে যাচ্ছে নি:শব্দে। বাইরে থেকে তাকে মনে হবে না যে, সে তখন স্বপ্নে বিভোর আছে। সবাই ভাববে একটা  লোক একাকী খাচ্ছে। অবাক হবে সে কোন ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে না। তার এই ছোট্ট জীবনের অপূর্ণতাগুলো সে তখন খান খান করে দেয় আলাদিনের চেরাগে। সব অলীক সমাধান করতে করতে সে ভেসে যায় অন্য ভূবনে।

তখনই তার পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটায় মৃদু সঙ্গীত ভেসে আসে। অনিচ্ছাস্বত্তেও বাম হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে ফোনটা বের করে আনে। একটা ছোট্ট টেক্সট মেসেজ পড়তে থাকে। সে খাওয়া ভুলে যায়।

“আচ্ছা তুমি কী বলো তো? কবি না কথক? না না, তুমি নতুন এক প্রজাতি লেখক। এ রেয়ার স্পেসিমেন (কথক কবি)। স্যুর-রিয়্যালিস্টিক তো বটেই, কিন্তু বিশ্বসাহিত্যে অনেক স্যুর-রিয়্যালিস্টিক কবি আছে অতএব ওটা বাদ। সুকুমার রায় ছিলেন নন-সেন্স কবি, কিন্তু তুমি সেরকমও নও। তাহলে তুমি কে? তুমি কী?  তোমার তো একটা ভিন্ন আইডেন্টিটি চাই, তাই না? সো ইউ আর এ কথক-কবি। ওকে? ফ্রম টুডে আই উইল অ্যাড্রেস ইউ বাই দ্য গিভেন নেম অ্যাজ আই মেনশেনড আরলিয়ার। রাজি?
বেশি বেশি করে পান্তা খেয়ে শান্ত থেকো, কেমন পিডিং পিডিং বয়।
সেই আমি
… “বিদর্ভ নগরী থেকে।”

বিদর্ভ নগরীর মানুষটার কথা ভাবতে থাকে, বিদর্ভ নগরী নিয়ে ভাবতে গিয়ে তার খাওয়া থেমে যায়। লোকটার আর খেতে ইচ্ছা করে না। ছোট শিশুর মতো খুশিতে হেসে ফেলে। বেসিনের কল ছেড়ে দেয়। হাত ধুতে যাবার সময় দেখে রান্নাঘরের জানালায় দুটো কবুতর এসে বসেছে। সে হাতের তালুতে ভাতের থালাটা নিয়ে কবুতর দুটোর দিকে বাড়িয়ে দেয়। অবাক কবুতর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে যে এই লোকটা আগে কখনো খাবার সময় ডানে বামে তাকায় না। কিন্তু আজ?

প্রাণিজগতের কেউ মানুষকে সহজে বিশ্বাস করে না বোধহয়। উড়ে গেল পশ্চিমে। খাবারের সময় আর কি কেউ স্বপ্ন দেখে?

রোদের একটা মাখন বর্শা বাইরে উহুম না উহুম না করতে করতে চলে যায় বিকেলের দিকে। আজ কি বিকেলের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক?

বিকেলটাও আচানক কথক-কবি হয়ে গেল বিদর্ভ নগরী হয়ে।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন